#প্রণয়ের আসক্তি পর্ব ৫
#Writer_Mousumi_আক্তের
৫.
চারদিকে শুনশান নিরবতা, নিকশ কালো অন্ধকার,গম্ভীর পরিবেশ কোথাও কেউ নেই।বাড়ির পেছনের আমবাগান থেকে শিয়ালের ডাক ভেষে আসছে।মৃথিলার গা ছমছম করছে।যেনো কোনো হরর ফিল্মের বাড়ি এই শান্তুর নীড়,পরিবেশ ট এখন এমন দেখাচ্ছে।মৃথিলার প্রচন্ড ভয় করছে উপরে যেতে।তবুও যেতে হবে নীলাভ ডেকেছে।মৃথিলা ভয় ভয় মন নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠছে।নিচ তলা থেকে উপর তলার দিকে তাকিয়ে গা শিউরে উঠলো তার।আরিফা কে অনেকবার বলেছে তার সাথে যাওয়ার জন্য।কিন্তু আরিফা যায় নি।মৃথিলা একাই যাচ্ছে।হৃদপিন্ড ভয়ে খুব জোরে ধুকপুক আওয়াজে কাঁপছে।মনে হচ্ছে তার পেছন দিয়ে কেউ আসছে।কারো পায়ের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে।কেউ যেনো জুতা পায়ে তার পিছু পিছু আসছে।মৃথিলা এক সিঁড়ি উঠেছে আর এক ঝটকায় পেছনে তাকাচ্ছে কিন্তু পেছনে কাউকে দেখতে পাচ্ছেনা।আবার আরেক সিঁড়ি উঠে পেছনে তাকাচ্ছে।একবার সামনে আরেকবার পেছনে তাকাচ্ছে।এতবড় আলিশান বাড়িটা কেমন ফাঁকা ফাঁকা, চারদিকে কোথাও কেউ নেই।পাঁচতলার সিঁড়িতে পৌছাতেই হঠাত একটা ছেলে মৃথিলার সামনে এসে দাঁড়ালো। সিঁড়ির দুই পাশে হাতলে হাত রেখে মৃথিলার পথ আটকে দাঁড়ালো।ছেলেটি কেমন করে যেনো মৃথিলাকে দেখছে।মৃথিলা এক সিঁড়ি নেমে দাঁড়ালো।ভয়ে চোখ মুখ চুপসে এসেছে মৃথিলার।হৃদপিন্ড এর কাঁপুনি দ্বিগুন গতিতে বেড়ে চলেছে।এক্ষুনি হয়তো কাঁপতে কাঁপতে সে নিচে পড়ে যাবে।ছেলেটা আরো খানিক টা ঝুঁকে মৃথিলার মুখের কাছে চলে এলো।ভন্ড হাসি দিয়ে বললো,
‘কি মামুনি দেখতে তো মাসআল্লাহ। তোমাকে দেখেই তো আমার কাজ হয়ে গিয়েছে।জীবনে অনেক মেয়ে নিয়ে বিছানায় গিয়েছি কিন্তু তোমার মতো এমন জিনিস আগে দেখিনি।’
ছেলেটি ভন্ডভাবে হেসে যাচ্ছে আর কপাল কুচকাচ্ছে তার মুখের অদলে অভদ্রতা ফুটে আছে।
মৃথিলা পেছন দিকে আরো খানিক টা ঝুঁকে গেলো।আরেক টু ঝুঁকলেই এই পাঁচতলা থেকে পড়ে সোজা নিচে চলে যাবে।মৃথিলা কাঁপা কাঁপা কন্ঠে নীলাভ কে ডাকলো।’নীলাভ কোথায় তুমি?’কিন্তু কন্ঠস্বর বেশীদূর পৌছালোনা।
ছেলেটি আবার ও ভন্ড হাসি দিয়ে বললো,
‘নীলাভ কে ডেকে কি হবে মামুনি।এসব চিজ আমরা একা খায়না ভাগ করেই খায়।নীলাভ একাই তোমাকে টেস্ট করেছে আজ আমাদের টেস্ট করানোর জন্য ডেকে এনেছে।শুনলাম অনেক ইয়াম্মি তুমি।যদি আমার ভালো লাগে রোজ ই টেস্ট করবো বাট তার আগে টেস্ট ম্যাচ তো খেলতে দাও।’
মৃথিলা এবার ভয়ে কেঁদে দিয়ে বললো,
‘নীলাভ কোথায় তুমি?’
‘আসবেনা মামুনি।কি হবে নীলাভ কে দিয়ে।তুমি আমার সাথে চলো বিছানায়।রকির বিছানায় খারাপ লাগবেনা তোমার।’
মৃথিলা কাঁদতে কাঁদতে হাত জোর করে বললো,
‘ছিঃএসব কি বলছেন আপনি।আমি ওই ধরনের মেয়ে না।প্লিজ আমাকে নীলাভ এর কাছে যেতে দিন।’
পেছন থেকে আর চারটা ছেলে ও ভন্ড ভাবে হাসতে হাসতে এসে মৃথিলাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে বললো,
‘আচ্ছা তুমি তাহলে কোন ধরনের মেয়ে।যে সুন্দর দেখতে তুমি।না জানি কতজন ডেকেছে এর আগে আর কত জনের কাছে গিয়েছো।’
মৃথিলা এসব নোংরা কথা সহ্য করতে পারছে না।এর থেকে সিঁড়ি থেকে পড়ে ম**রে যাওয়া টা বেশী ভালো হবে।ঘৃনা হচ্ছে মৃথিলার নিজের প্রতি।আজ তার এ অবস্থার জন্য সে নিজেই দায়ী।সুপ্তির নিষেধ না শুনে নীলাভ কে বিশ্বাস করেছিলো।তার খুব সাধারণ জীবন টা আজ কোথায় এসে ফেঁসে গিয়েছে।
রকি নামের ছেলেটি এগিয়ে এসে বললো,
‘এমন ভাব করছো যেনো কি সতীপানা তোমার মাঝে।পেটের বাচ্চাটা কার।নীলাভ নাকি অন্য কারো।কার কার বিছানায় গিয়েছো খেয়াল আছে তো।সিওর কিভাবে এটা নীলাভ এর বাচ্চা।বিয়ের আগে নীলাভ এর বিছানায় যেতে পেরেছো আমাদের সাথে সমস্যা কি? তোমার তো অভ্যাস ই আছে তাইনা।’
মৃথিলা এমন জঘন্য কথা সহ্য করতে পারছে না।কেউ যেনো তার নারী সত্ত্বা কে অপমান করলো।একটা মেয়ের সব থেকে দামি জিনিস তার ইজ্জত। সেই ইজ্জত ই আজ তার নিলামে উঠেছে।যে যেভাবে পারছে চরিত্র নিয়ে অপমান করছে।অঝর কাঁন্নায় ভেঙে পড়লো মৃথিলা।নিচে দিকে তাকিয়ে কাঁন্নায় ভেঙে পড়লো।এই মুহূর্তে নীলাভ কোথায়?নীলাভ কে কেনো দেখা যাচ্ছেনা।মৃথিলা অসহায় এর মতো নীলাভ কে খুজছে।নীলাভ যেনো এসে তাকে বাঁচায়।
শুধু এখানেই সীমাবদ্ধ নয়।রকি এবার মৃথিলার মুখে তর্জনী আঙুল দিয়ে স্লাইড করে বললো,
‘আহা!কি সফট।এমন চিজ আগে ছুঁয়ে দেখি নি।’
মৃথিলা এবার আরো জোরে কেঁদে নিজেকে রক্ষা করার চেষ্টা করতেই নিচে দিকে পড়ে গেলো।পড়ে যেতেই কিছু একটাতে আটকে গেলো।এক জোড়া শক্ত হাত তাকে আগলে ধরলো।ভয়ে চোখ বন্ধ করে রেখেছে মৃথিলা।মৃথিলা হয়তো বুঝতে পারেনি নিরব তাকে রক্ষা করতেই তার পিছু পিছু এসেছে।নিরবের ভয়ংকর চাহনিতে ছেলেগুলো দ্রুত পাঁচতলার বারান্দায় উঠে দাঁড়ালো।নিরব মৃথিলার মুখে হাত দিয়ে ডাকলো,
‘মৃথিলা আমি নিরব,চোখ খোলো ভয় নেই।’
মৃথিলা নিরবের কন্ঠস্বরে যেনো ভরসা পেলো।উড়ে যাওয়া আত্মাটা তার দেহে ফিরে এলো।এবার আরো জোরে কেঁদে দিলো।এই কাঁন্নাটা ভয়ের ছিলোনা। মানুষ আপণজনের কাছে গেলে নিজের কষ্ট প্রকাশ করে হৃদয় নিংড়ে যেমন কেঁদে হালকা হয় মৃথিলার এই কাঁন্নাটাও কিছুটা তেমন।নিরব মৃথিলার এমন অবস্থা দেখে রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে খুব জোরে নীলাভ কে ডাকলো।নিরবের ডাকে শান্তির নীড় ভবনের পাঁচতলা ধরে কাঁপছে ভূমিকম্পনের ন্যায়।এমন ভয়ানক হুংকার নিরব এর আগে কখনো ছাড়ে নি।নিরবের ডাকে নীলাভ ঘর থেকে দ্রুত বেরিয়ে এসে কিছুই বুঝতে পারেনা।তার বন্ধুরা ভয়ে কাঁপছে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।নিরবের চোখে অগ্নেয়গীরীর ধারা ঝরছে।মৃথিলা ও ভয়ে কাঁপছে।এসব কিছুই বোধগম্য হচ্ছে না নীলাভ এর।নীলাভ ছাদে ছিলো এত সময়।বন্ধুদের ডেকে এনেছে মৃথিলাকে দেখানোর জন্য।এ বন্ধুগুলো নীলাভ এর চব্বিসঘন্টার সঙ্গী।কিন্তু এখানে কি ঘটেছে নীলাভ কিছুই জানেনা।
নীলাভ কিছুটা হতভম্ব হয়েই প্রশ্ন করলো,
‘কি হয়েছে ভাইয়া।’
নিরব রাগে কাঁপতে কাঁপতে বললো,
‘কি হয়েছে জানোনা রাসকেল।’
‘না ভাইয়া।’
‘এই ছেলে গুলো কারা?’
‘তুমি তো চিনোই ভাইয়া।আমার ফ্রেন্ড।’
‘আমিতো তোমাকেই ঠিকভাবে চিনতে পারছিনা।তাহলে এদের কিভাবে চিনবো ‘
‘কেনো ভাইয়া ওরা কি করেছে?’
‘নিজের সন্তানের মাকে নিজের ফ্রেন্ডদের বিছানায় পাঠাচ্ছো।তুমি কোন ফ্যামিলির ছেলে ভুলে গিয়েছো।এসব নেশাখোর ছেলেরা এ বাড়িতে কেনো?এটা কি কোনো বার।’
‘ভাইয়া আ’আমি মৃথিলাকে ওদের বিছানায় পাঠাবো কেনো?এসব কি বলছো?’
নিরব ভয়ানক রাগে নিজের কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলেছে।হুংকার ছেড়ে বললো,
‘বুঝতে পারছো না তাইনা?এত কিছুর পরেও মেয়েটা তোমার জীবনে আসতে চাইছে এটাই শুকরিয়া করা উচিত।আর তুমি কিনা তোমার এসব জঞ্জাল ফ্রেন্ড দিয়ে তাকে অপমান কারাচ্ছো?
নীলাভ তার বন্ধুদের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বললো,
‘কি করেছিস তোরা।’
নিরব কখনো নারী জাতির অপমান সহ্য করতে পারেনা।কোনো রেপিস্ট দের দেখলে ভয়ানক শাস্তি দেয়।ছোট বেলা থেকেই নিরবের কাছে নারীর সম্মান সবার আগে।
নিরব মৃথিলার হাত ধরে পাঁচ তলার বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো।ছেলেগুলোর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো।রাগে খানিক টা থু ফেললো ওদের মুখের উপর।
নিরব এবার রকির গলা চেপে ধরে বললো,
‘এস আই প্রলয় হাসান নিরবের বাড়ি এটা।ইসহাক হাসানের আদর্শে গড়া এ বাড়ি।এ বাড়িতে এসে এক নারীকে অপমান করে পার পাবি।তোদের শরীরে কিসের র**ক্ত অমানুষের।মানুষের রক্ত যার শরীরে আছে সে কখনো নারীকে অপমান করেনা।আফসোস তোরা অমানুষ হয়েও মানুষের ম মতো রুপ ধরে ঘুরে বেড়াস এইজন্য অমানুষ চেনাটা ভারী অসুবিধার আজকাল।নারী দেখলেই ভোগ করতে ইচ্ছা করে।নারী কি ভোগের জিনিস।আমি তোদের প্রত্যোক কে মারবো না। জাস্ট একজন কে দিয়ে বাকিদের বোঝাবো।নেক্সট কখনো আমার সামনে কোনো নারীর ইজ্জত নিয়ে কথা বললে পরিণতি কি ভয়ংকর হবে।আর মৃথিলার দিকে একবার কুনজর দিলে চোখ উ*প*ড়ে ফেলবো।মৃথিলা এ বাড়ির সম্মান।’
রকি ভয়ে কাঁপছে।বুঝতে পারেনি নিরব এইভাএ রিয়্যাক্ট করবে।নিরব কিছুক্ষণ দম ধরে রইলো।এতে নিরবের রাগের মাত্রা আরো বেড়ে গেলো।ওয়ালে তলোয়ার বাঁধানো রয়েছে খাপের মধ্য।নিরব ওয়াল থেকে তলোয়ার বের করলো।একদম নতুন চকচক করছে।তলোয়ারের মাঝে মৃথিলার ফর্সা মুখ টা চাঁদের মতো ফুটে রয়েছে।মৃথিলা যনো সত্যি উজ্জ্বল কোনো নক্ষত্র।নিরব রকির তর্জনী আঙুল টা টেনে ধরে বললো,
এই আঙুল দিয়ে মৃথিলাকে স্পর্শ করেছিস তাইনা?বলেই আঙুল টা কে**টে ফেললো।সাথে সাথে র*ক্ত গড়িয়ে পড়লো।আঙুল টা মাটিতে পড়লো সাথে সাথে।নীলাভ সহ বাকি সবাই এই ভয়ানক দৃশ্য দেখে চিৎকার দিয়ে অন্যদিকে মুখ ঘুরে দাঁড়ালো।এই দৃশ্য দেখার ক্ষমতা সবার নেই।রকি যন্ত্রণায় ছটফট করছে।তা দেখে নিরবের বিন্দুমাত্র খারাপ লাগলো না।নীলাভ আশ্চর্য হয়ে তাকিয়ে আছে তার ভাইয়ার দিকে।এই জীবনে প্রথম একটা মেয়ের জন্য তার ভাই কারো হাতের আ*ঙ*ল ই কে*টে ফেললো।নিরব তো এমন ছেলে নয়।কারো গায়ে পর্যন্ত হাত তোলে না।তবে অস্ত্র চালাতে জানে।যখন আইনের পোশাক পরা থাকে তার ডিউটির নিয়ম অনুযায়ী সমস্ত কঠিন কাজ সে করতে পারে।এ পর্যন্ত অনেক গুকা ক্রস ফায়ার নিরবের হাতে হয়েছে।কিন্তু কোনো ধারালো অস্ত্র এই প্রথমবার চালালো।মৃথিলা র*ক্ত দেখে সেন্সলেস হয়ে পড়ে গেলো।নিরব অস্ত্র ফেলে দিয়ে মৃথিলাকে কোলে তুলে নিয়ে নিচে চলে আসলো।
চলবে…