#প্রণয়ের আসক্তি
#Writer_Mousumi_Akter
৭.
‘আর ইউ নারভাস মিস সুপ্তি?’
সুপ্তি ওড়নার মুড়ো দুই হাতের মুঠোতে নিয়ে কচলাতে কচলাতে বললো,
‘না স্যার না।’
‘তাহলে কি ভ*য় পাচ্ছেন।’
‘না স্যার।’
‘আপনাকে আনইজি লাগছে কেনো এতটা?’
‘না’তো স্যার।’
রিফাত সুপ্তির দিকে অভিজ্ঞ নয়নে তাকালো আর বললো,
‘আমার সাথে আপনি একটু ইজি হওয়ার চেষ্টা করুণ।আমাদের যাত্রা অনেক দীর্ঘ হবে ভাগ্য থাকলে।তাই আপনি আমাকে সহজভাবে এক্সেপ্ট করুণ।’
‘মা’মানে?’
‘মানে হলো নীলাভ এর সাথে মৃথিলার বিয়ে হলে আপনার আর আমার তো আজীবন ই দেখা হবে তাইনা।সেই সূত্রে যাত্রা টা দীর্ঘ হবে।’
‘ওহ আচ্ছা।’বলেই সুপ্তি একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিলো।সুপ্তি ভীতু মন ভেবেছিলো রিফাত হয়তো তাকে জেলে দিতে চাইছে। রিফাত একটু উঠে গেলো।পার্কের গেটেই একটা রেস্টুরেন্ট আছে।রিফাত রেস্টুরেন্টে গিয়ে কিছু অর্ডার দিয়ে আবার ব্যাক এলো।আবার ও সুপ্তির সামনে বসলো।দুই হাত থুতনিতে ঠেকিয়ে সুপ্তির মুখশ্রী পর্যবেক্ষণ করে করে প্রশ্ন করলো,
‘আচ্ছা মৃথিলাকে আপনি কতদিন থেকে চিনেন।’
‘খুব ছোট বেলা থেকেই চিনি।’
‘এক ই জায়গা বাসা।’
‘হুম একই জায়গা বাসা।’
‘মৃথিলার মামা-মামির অবস্থা কেমন?মৃথিলাকে কেমন চোখে দেখতো।’
‘মৃথিলার মামা মাঠে কাজ করেন,মামি বাড়িতে গৃহিনী।মৃথিলার মা খুব ছোটবেলাতে মারা যায়।বাবা অন্য বিয়ে করে মৃথিলার খোজ খবর নেন নি।মৃথিলার জীবন টা ভয়ানক রকম কষ্টের।যে মেয়ে মা-বাবার ভালবাসা পায় নি মামা-মামির সংসারে মানুষ তার জীবন টা কেমন হয় আশা করি বুঝতে পারছেন।এমন আছে দুইদিন পরেও খেতে দিয়েছে ওর মামি।কখনো স্কুলে যেতে দেয় নি।বই খাতা কিছুই কিনে দেয় নি।তবে মৃথিলা ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট বৃত্তির টাকা আর স্যার দের সাহায্য সহযোগিতায় নিজের লেখাপড়া চালিয়েছে।স্কুল বা কলেজে কখনো যেতে দেয় নি মামা মামি।স্কুল -কলেজে না গিয়েই বাড়িতে লেখাপড়া করেও অত্যান্ত ভালো রেজাল্ট করেছে।সারাদিন মামির কাজ করেছে।প্রচন্ড মার ও খেয়েছে।মাঝে মাঝে আমাকে জড়িয়ে ধরে খুব কাঁদতো।ওর কষ্ট শেয়ার করার মতো একমাত্র আমি আছি।আমি ছাড়া ওর আর কেউ নেই স্যার।যদি বিশ্বাস না করেন ওর পিঠে দেখবেন কয়েক জায়গা খুন্তির স্যাকার জন্য কালো হয়ে আছে।এই অত্যাচার গুলো সত্য নাকি মিথ্যা তার প্রুভ ওর শরীরেই আছে।মৃথিলা সব সময় চাইতো মামা-মামির ওই অশান্তির জীবন থেকে মুক্তি পেতে।কিন্তু কে দিবে মুক্তি।এই সমাজ অসহায় দের পক্ষে নেই।রোজ সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করতো কেউ আসুক অন্তত কেউতো আসুক যে বিলাসীতা না দিক একটু মানসিক শান্তি দিক।কিন্তু কি দূর্ভাগ্য দেখুন।যার কপালে সুখ নেই তার কপালে কি কখনো ভালো মানুষ আসে।হঠাত নীলাভ এলো মৃথিলার জীবনে।নীলাভ মৃথিলার রূপে পা*গ*ল ছিলো।রাস্তার মোড়ে ফ্রেন্ড দের নিয়ে আড্ডা দিতো।আমি আর মৃথিলা রোজ ওখান দিয়ে যেতাম।সেখান থেকে মৃথিলাকে দেখে প্রপোজ করে নীলাভ।নীলাভ এর ভালবাসায় মৃথিলা নতুন করে জীবনে স্বপ্ন দেখার সাহস পায়।নীলাভ বলেছিলো মৃথিলাকে ওই কষ্টের জীবন থেকে নিয়ে আসবে।মৃথিলা শুধু ওই একটা আশাতেই বেঁচে ছিলো।নীলাভ কে আমার কোনদিন ভালো মনে হয়নি।আমি নিষেধ করতাম মিথু এভাবে বিশ্বাস করাটা বোকামি হবে।আমার কথা শোনেনি।বিয়ের নামে নীলাভ মিথুর সাথে অনেক কিছুই করেছে।মিথু বলে ওর সাথে আরেকবার জীবন কাটানোর কথা ভাবছে, আমি হলে থুথু ও ফেলতাম না ওর নামের উপর।স্যার নীলাভ এর মিথ্যায় আপনাদের মৃথিলাকে সন্দেহ হচ্ছে।মৃথিলার মতো নিশ্পাপ আর ভিতু মেয়েকে নীলাভ সন্দেহের পাল্লায় দাঁড় করিয়েছে।আমি জানি আপনারা মৃথিলা কে সন্দেহ করে ইনফরমেশন নিতে এসছেন।আমার সাথে চলুন স্যার আপনার সব সন্দেহ দূর হয়ে যাবে।’
‘কোথায় যাবো?’
‘মৃথিলার মামা-মামির বাসায়।ওখানে গেলেই আপনার সব টা ক্লিয়ার হয়ে যাবে।আপনারা অকারণেই মৃথিলাকে সন্দেহ করছেন।জানেন স্যার অনেক সময়,
আমরা যা ভাবি তা ঘটে না
যা ঘটে আমরা তা কল্পনাও করতে পারিনা।
আমরা৷ যা দেখি তা সত্য হয়না
যা দেখিনা তা সত্য হয়ে যায়।
সেভাবেই মৃথিলা উড়ে আসা একটা মেয়ে বলেই আপনাদের সন্দেহ হচ্ছে।হাজার হাজার ক্রাইম দেখতে দেখতে আপনার চোখ এখন যা দেখে তাই ই ক্রাইম এর মতো লাগে।’
রিফাত যেনো এতক্ষণ কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলো।সুপ্তির বর্ণনায় রিফাত এর হৃদয় কেঁপে উঠলো।ভেতর টা কেঁদে উঠলো।চোখ ভিজে এলো।একটা মেয়ের জীবনে এতটা কষ্ট।অথচ মেয়েটাকে ভুল ভাবছে।কিছুক্ষণের মাঝেই একটা ছেলে কফি, চিকের ফ্রাই,সস, নুডুলস নিয়ে এলো।রিফাত সুপ্তির দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,
‘খেয়ে নিন দুপুর হয়ে গিয়েছে।’
সুপ্তি চোখের পানি মুছে নিলো।মৃথিলার প্রতি সে একটু বেশী আবেগপ্রবন।মৃথিলাকে নিজের বোনের মতো ভাবে।নিজের খাবার মৃথিলাকে খাইয়েছে।নিজের জীবনের সব কিছু মৃথিলার সাথেই শেয়ার করেছে।তাই মৃথিলার জীবনের করূণ কাহিনী বর্ণণা করতে গিয়ে সুপ্তির চোখ অশ্রুসিক্ত হলো।
রিফাত সুপ্তির দিকে তাকিয়ে বললো,
‘প্লিজ কুল,খেয়ে নিন।’
‘আমি কিছুই খাবো না স্যার।’
‘টাকা গুলো নষ্ট হবে,এখানে খাবারের দাম প্রচুর।আমার এত কষ্টের টাকা নষ্ট হতে দিবেন কেনো।মনে কি দয়া মায়া কিছুই নেই।’
সুপ্তিকে হাসাতে রিফাত এসব বললো।সুপ্তি ফিক করে হেসে দিলো।
রিফাত সুপ্তির সমস্ত বয়ান রেকর্ড করে নিলো সুপ্তির অজান্তেই।
খাওয়া শেষে রিফাত বললো,
‘ওকে চলুন মৃথিলার মামা-মামির বাসায়।’
রিফাত এর বাইকে উঠে সুপ্তি মৃথিলার মামা-মামির বাসার দিকে রওনা হলো।বাতাসে সুপ্তির এলোমেলো চুল বারবার রিফাতের চোখে মুখে গিয়ে পড়ছে।রিফাত হাত দিয়ে বারবার চুল গুলো সরাচ্ছে।বাইক চালাতে ভারী অসুবিধা হচ্ছে তার।মেয়েদের চুলের শ্যাম্পুর ঘাণে মিষ্টি মিষ্টি একটা ভাব আছে।রিফাত বেশ কয়েক বার সুপ্তির চুলের ঘ্রাণ নিলো।সম্ভব হলে সে খোলা চুলের মেয়েকে বাইকে নিয়ে বাকি জীবন ড্রাইভ করেই পার করে দিতো।কিন্তু সেটা সম্ভব নয়।তাকে তার দায়িত্ব পালন করতে হবে।
রিফাত বাইক স্লো করে বললো,
‘ম্যাডাম আপনার চুল গুলোর জন্য আমার একটু অসুবিধা হচ্ছে বাইক চালাতে।যদি একটু বাঁধতেন ভালো হতো।’
সুপ্তি বেশ লজ্জা পেয়ে বললো,
‘সরি স্যার।’
‘আমিও সরি,বিকজ খোলা চুল বাঁধতে বলাটা অন্যায়।আপনাকে সুন্দর লাগছে।কিন্তু বাইক চালানোর অসুবিধার জন্য বাঁধতে বলছি।’
‘না স্যার ঠিক আছে।’
সুপ্তি চুল গুলো হাত খোপা করে নিলো।কপালে গুড়ো গুড়ো চুল গুলোর জন্য এবার আরো বেশী সুন্দর দেখাচ্ছে তাকে।নিরব আয়নায় পর্যবেক্ষণ করলো সেই ন্যাচারাল সৌন্দর্য।
বেলা দুইটার দিকে সুপ্তি আর রিফাত একটা গ্রামে প্রবেশ করলো।গ্রামের রাস্তাঘাট এখনো কাঁচা আছে।কারেন্ট নেই সব বাড়িতে।বেশ অনুন্নত এই গ্রাম।রিফাত আর সুপ্তি এই ধুলো কাঁদার রাস্তা দিয়ে সোজা মৃথিলার মামা বাড়িতে প্রবেশ করলো।রিফাত বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে সুপ্তি ভেতরে প্রবেশ করলো।
একটা টিনের চালার বাড়ি। টিনের ঘরে দুই রুম সম্ভবত। একটা গোয়াল ঘর আর একটা ছনের চালার রান্নাঘর।উঠণ ঝাড়ু দিচ্ছে মৃথিলার মামি।
সুপ্তি মৃথিলার মামিকে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
‘চাচিমা আপনার যে ননদের মেয়ে থাকতো সে কোথায়?’
মৃথিলার মামি ঝা**ড়ু উঁচু করে খিটমিট কন্ঠে বললো,
‘তুমি কে শুনি?ওই দুঃচরিত্রা কোন নাগরের কাছে গেছিলো এখন বাচ্চা হবে।সে নাকি এখন আর নিবেনা।আমার এমনি অভাবের সংসার তার উপর ওই আপদ আমার ঘাড়ে।খায় তো কম না খরচ টা আসে কোথা থেকে।ঝা*টা মে*রে বিদায় করেছি আমার বাড়ির ত্রিসামানা থেকে।দয়া করে তুমিও বিদায় হও আমার বাড়ি থেকে।এর আগে ১০০ জন ওর হয়ে দালালি করতে আইছে আমি কারো কথা শুনিনি।ও মেয়েকে ওর মামু ঘরে তুললে ওর মামুর কপালে আগে ঝা**টা দিবো।’
রিফাত সুপ্তিকে ইশারা করে বললো,
‘বেরিয়ে আসুন।’
সুপ্তি বেরিয়ে এলো।রাস্তায় একজন মহিলা দাঁড়ানো। রিফাত মহিলার কাছে জিজ্ঞেস করলো,
‘আচ্ছা আন্টি এই বাড়ি যে মেয়েটা থাকতো ওর মামা -মামি কেমন ছিলো আর মেয়েটা কেমন ছিলো।’
‘মেয়েটা যে কি ভালো ছিলো।এমন শান্ত শিষ্ট ভালো মেয়ে দুনিয়ায় এর একটাও নেই।কপাল খারাপ এমন দা*জ্জা*ল এর বাড়িতে এসে পড়েছে।কি মার টায় না মারতো।মেয়েটাকে গরুর মতো মারতো।কতদিন মেয়েটার চিল্লানো শুনে ছুটে গিয়েছি।মা মা করে কাঁদতো।কেউ এগিয়ে গেলে ওর মামি খুব খারাপ ব্যবহার করতো।মা ‘মরা মেয়েটার খুব কষ্ট ছিলো বাবা।’
রিফট আশে পাশে কয়েকজনের কাছে জিজ্ঞেস করলো কিন্তু সবাই একই কথা বললো।
চলবে?..
(সবাই রেসপেন্স করবেন প্লিজ।)