#প্রণয়ের আসক্তি .
#writer_Mousumi_Akter
৯.
শান্তুীর নীড় ভবন আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়েছে।পুরো পাঁচতলা থেকে নিচ তলা পর্যন্ত পুরো বাড়ি লাইটিং করা হয়েছে।বাড়ির চারদিকের এলাকা পাচিল পর্যন্ত আলোয় আলোয় সাজানো হয়েছে।টিমটিম করে লাল,নীল,হলুদ,সবুজ আলো জোনাক পোকার মতো জ্বলছে আর নিভছে।শহর থেকে সব তাজা গোলাপ,রজনীগন্ধা আর গাঁদা ফুল এনে বাড়ি সাজানো হয়েছে।তাজা ফুলের ঘ্রাণে ভ্রমর গুনগুন করছে। একটাও আর্টিফিসিয়্যাল ফুল নেই।বাড়ির সামনে অনেক বড় স্টেজ করা হয়েছে।স্টেজ টা বাড়ির পাচিলের ভেতরেই।বেলুন আর ফুল দ্বারা সজ্জিত স্টেজ টির চারপাশে লাল বেনারসি টাইপের কাপড় দিয়ে ডেকরেশন করা।মৃথিলা আর নীলাভ এর গায়ে হলুদ দেওয়া হচ্ছে।আজ তাদের হলুদ সন্ধ্যা।নীলাভ এর বাকি ফ্রেন্ডরা জিসান,ভিকি,রাশেদ ওরা রকির মৃত্যুতে ভয়ে এ বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে চেয়েছিলো।কিন্তু নিরবের সন্দেহ তাদের প্রতি ও রয়েছে প্রবল।তাই নিরব আর রিফাত তাদের নীলাভ এর বিয়ে দেখার উছিলায় জোর পূর্বক এ বাড়িতে আটকে রেখেছে।বাড়ির কাজের লোক থেকে প্রত্যোকের প্রতি তদন্ত চালানো হচ্ছে তাদের অজান্তেই।মৃথিলাকে হলুদ শাড়ি লাল পেটিকোট আর ব্লাউজে যেনো আকাশ থেকে নেমে আসা সদ্য এক পরীর মতো লাগছে।গা ভর্তি ফুলের গহনা মৃথিলার, একটা মেয়ে ঠিক কতটা সুন্দর হতে পারে মৃথিলাকে না দেখলে বোঝা যাবেনা।হঠাত নীলাভ আজ মুগ্ধ হয়ে মৃথিলাকে দেখছে।মৃথিলা সত্যি এতটা সুন্দর নীলাভ এর চোখ সেই সৌন্দর্য এড়িয়ে যেতে পারেনি।নীলাভ জীবনে অনেক নারীকে ছুঁয়েছে,অনেক নারীর শরীরের ঘ্রাণ নিয়েছে কিন্তু মৃথিলার মতো এত সুন্দর নারী সে আজ ও দেখেনি।মৃথিলা খেয়াল করলো নীলাভ তার দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে।নীলাভ এর পরণে হলুদ পাঞ্জাবী আর সাদা পাজামা।নিরা মৃথিলার হাতে মেহেদী পরিয়ে দিচ্ছে।মৃথিলার দুই হাত ভরে মেহেদী পরিয়ে দিলো।মৃথিলা হাত উঁচু করে বসে আছে।এইদিকে ক্ষুদা ও লেগেছে প্রচন্ড।এ বাড়িতে এসে বিভিন্ন ঝামেলায় ঠিক একটা খাওয়া হয়নি।কিন্তু কাউকে বলতে লজ্জা পাচ্ছে।কেউ যদি এসে নিজ থেকে জোর পূর্বক তাকে খাইয়ে দিতো কিন্তু এমন কেউ তো এখানে নেই।সুপ্তি থাকলে নিশ্চয়ই তার শুকনো মুখটা দেখে বুঝে যেতো।সুপ্তি ছাড়া আর কে আছে যে তাকে বুঝতে পারে।নিরা নীলাভ এর হাতেও মেহেদী পরাচ্ছে।নীলাভ কে মেহেদী পরাতে পরাতে বললো,
‘ভাইয়া আশা করছি তুমি এবার শুধরে যাবে।এত সুন্দর বউ কপাল অনেক ভালো বলেই পাচ্ছো’
নীলাভ মৃথিলার দিকে তাকিয়ে বললো,
‘তোর ভাই কি কম সুন্দর নাকি।’
‘মোটেও মৃথিলা ভাবির মতো সুন্দর না।ভাবি অনেক বেশী সুন্দর ‘
‘ভাবি কি বশিকরণ করেছে ভাবি ভাবি করছিস।’
‘কিছু মানুষ নিজেই যাদুর মতো।তাদের মাঝে বিশেষ কিছু থাকে।তারা সহযেই তাদের সরলতা দিয়ে মানুষের ভালবাসা আদায় করে নিতে জানে।মনের ভালবাসা পৃথিবীর সব যাদু টোনা কেও হারমানায় বুঝলে।’
‘মা-বাবা আর ভাইয়া কে বুঝিয়ে বল আমি আর ভুল কিছু করবোনা।আমার পকেট খরচ যেনো বন্ধ করে না দেয়।আমিও যাদুর মতো হয়ে যাবো।আমাকে তখন ভালবাসবি তো।’
‘বাবা যদি আগেই পকেট খরচ টা বন্ধ করে দিতো তাহলে আজ আর এদিন দেখা লাগতোনা।’
মৃথিলা ফিক করে হেসে দিলো।নিরা মৃথিলার হাসি দেখে বললো,
‘ভাবি একটা কাজলের টিপ লাগিয়ে দেই তোমাকে নাহলে কার নজর লাগবে।দেখো বাড়ি ভর্তি মানুষ তোমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।আচ্ছা এরা কি আগে কখনো মেয়ে দেখে নি।’
‘কারো নজর অনেক আগেই পড়েছে নহলে এত কষ্ট কেনো হবে জীবনে।’
‘ভাবি তোমার জীবনে আর কোনো কষ্ট থাকবেনা।আমার পরিবারের ছায়া আছে তোমার মাথায়।আমি আর বড় দাদাভাই আছি একদম ই ভেবোনা বুঝলে।তোমার জীবন এই আলোর রোশনাই এর মতো রঙিন রঙিন আলোয় ভরিয়ে দিবো আমরা।আর ছোট ভাইয়াকে বড় দাদা ভালো করেই ছাড়বে।’
মৃথিলা বার বার এদিক সেদিক উঁকি দিচ্ছে।কাউকে খুজছে বোঝা যাচ্ছে।নিরা বললো,’ভাবি কাউকে খুজছো।’
মৃথিলা স্বভাবসুলভ হেসে বললো,
‘আমার বান্ধবী সুপ্তির আসার কথা ছিলো।এখনো আসলো না কেনো?কোনো বিপদ হয়নিতো আবার।’
‘দাঁড়াও বড় দাদাভাই কে খোজ নিতে বলছি।’
‘প্লিজ বলো একটু।’
এ বাড়ির চারপাশ অনেক জায়গা জুড়ে।এত বড় সীমানার বাড়ি আর দুই একটা দেখা যায় না।বাড়ির ভেতরেই আমবাগান,গরুর খামার,মাছের ঘের সব করা আছে।ঘেরের পাড়ে ছোট্ট ছোট্ট ঘর।পার্কের মতো করে রাখা।ঘেরের পাড় দেখলে মনে হবে যেনো কোনো পার্কে এসে বসে আছি।বাড়ির ভেতরেই যে বিশাল জায়গা জুড়ে মাছের ঘের রাখা হয় এটা ইসহাক হাসান ই প্রথম করেছেন।তবে এ পুকুরের মাছ মারেন না।অনেক বড় বড় মাছ এ পুকুরে।মাছের ওজন ১৫ কেজির উপরে সব। ঘেরের পাড়ে বসে আছে নিরব আর রিফাত।রিফাত সুপ্তির রেকর্ড করা সম্পূর্ণ বয়ান নিরব কে শোনালো।এমন মর্মান্তিক কাহিনী শুনে নিরব বাকরুদ্ধ।মেয়েটার জীবনে এত কষ্ট,সম্ভব হলে সে নিজের তার জীবনে রেখে দিতো।কিন্তু এটা তো আর সম্ভব নয়। মেয়েটা নিজেই তার ভাইকে ভালবাসে।নিরব চুলের মধ্য হাত দিয়ে ল্যাপটপ এ খুব মনোযোগ দিয়ে রিফাতের সাথে নাবিলার কেস টা নিয়ে ঘাটাঘাটি করছে।নিরবের পরণে কালো পাঞ্জাবী, সাদা পাজামা।ফর্সা গালে খোচা খোচা দাঁড়িতে নিরব কে অসম্ভব সুন্দর লাগছে।যে কোনো মেয়ের নজর কাড়তে বাধ্য। একজন সুদর্শণ হ্যান্ডসাম যুবকের নাম হলো নিরব।যার উপরের ঠোঁটের তিলটার জন্য পৃথিবীর সব ছেলের থেকে তাকে বেশী সুন্দর দেখায়।নাবিলার কেস নিয়ে অনেক সময় ঘাটাঘাটি করে মাথায় পেইন শুরু হলো নিরবের।সাথে সাথে সিগারেট ধরালো।নিরবের এই একটায় বাজে অভ্যাস সিগারেট খাওয়া।রিফাত নিরবের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললো,
‘নাবিলার কাহিনী টা কি নিরব?আই মিন কিছুতো আছে নাবিলার সাথে তোর।’
নিরব দীর্ঘঃনিশ্বাস ছেড়ে বললো,
‘রিলেশন তো ছিলোই, শুধু ছিলো না আজ ও আছে।’
‘সিরিয়াসলি,নাবিলার সাথে তোর।’
‘হুম সে অনেক জটিল কাহিনী।’
‘তো বল কি কাহিনী।’
‘বলছি ওয়েট।’
এরই মাঝে মতলব এসে নিরব কে বললো,
বাবাজী নিরা মা তোমাদের ডাকছে।
নিরব দ্রুত সিগারেট টা হাতের মুঠোতে নিয়ে হাত দিয়ে ধোয়া সরিয়ে নিয়ে বললো,
‘চাচা আপনি যান আমরা আসছি।’
নিরার বয়স মাত্র পনেরো ক্লাস নাইনে পড়ে।বাড়ির সব থেকে ছোট বলে নিরা ভীষণ আদরের। নিরবের ষোল বছরের ছোট নিরা আর নীলাভ এর দশ বছরের
ছোট।নিরব আর রিফাত দুজন স্টেজের কাছে গিয়ে নিরা কে বললো,
‘আমাদের ডেকেছো নিরা।’
‘হ্যাঁ দাদাভাই,ভাবির বান্ধবী সুপ্তির আসার কথা।সে এখনো আসেনি কেনো?ভাবি চিন্তা করছে।’
রিফাত বললো,’মৃথিলা চিন্তা করোনা।আমি দেখছি।’
নিরা বললো,’রিফাত ভাইয়া যাওতো তোমার বিয়াইনসাব হয় কেয়ারফুলি নিয়ে এসো।’
‘ওরে পুচকি বড় হয়ে গেছিস।’
রিফাত বেরিয়ে গেলো।নিরা নিরব কে বললো,’দাদাভাই তুমি কি তোমার বিয়েতেও কালোপাঞ্জাবী পরবে নাকি।’
নিরব হাসলো।নিরা এবার নিরব এর হাত টেনে ধরে ‘বললো আজ আমি তোমাকে মেহেদী পরিয়ে দিবো।না করতে পারবা না কিন্তু।’
‘ছেলে মানুষ মেহেদী পরলে তো মহিলা মহিলা লাগবে।’
‘এসব বাজে কথা তোমাকে পরতে হবে।’
‘আচ্ছা দে পরিয়ে দে।নিরা অন্য কারো আবদার হলে রাখতাম না।আমার একমাত্র বোন বলে আবদার টা রাখলাম।’
নিরব হাত মেলে বসে আছে। নিরা মেহেদী পরিয়ে দিচ্ছে।নিরব আড়চোখে মৃথিলার দিকে তাকালো।মৃথিলার সৌন্দর্য বর্ণনা করার ক্ষমতা নিরবের নেই।আফসোস হচ্ছে তার খারাপ ভাইয়ের সাথে মৃথিলার জীবন টা জুড়ে দিতে হচ্ছে।মৃথিলার মুখ দেখে নিরব এক নিমিষেই বুঝে গেলো মৃথিলার ক্ষুদা লেগেছে।নিরব আরিফা কে ডেকে বললো,
তোদের নতুন ভাবির ক্ষুদা লেগেছে।খেয়াল তো রাখতে পারিস নাকি।যা খাবার নিয়ে আয়।
আরিফা খাবার নিয়ে এলো।এরই মাঝে রিফাতের সাথে সুপ্তির আগমন হলো।এই এত এত মানুষের ভীড়ে এই একমাত্র মুখ তার অতি প্রিয় আর আপণ।
সুপ্তি মৃথিলাকে জড়িয়ে ধরে শুভ কামনা জানালো।আরিফার হাত থেকে খাবার নিয়ে সুপ্তি মৃথিলাকে খাইয়ে দিলো।নিরা,সুপ্তি,আর মৃথিলা তিনজনের মাঝে একটা ভাব হয়ে গেলো।ওইদিকে নবনিতা সারাক্ষণ নিরবের পিছ পিছ ঘুরেও আলাদা কথা বলার সুযোগ পাচ্ছেনা।নিরব পাত্তাই দিচ্ছেনা।নিরা ‘মৃথিলাকে বলছে ভাবি তুমি কিন্তু বাড়ির প্রথম বউ।’
নবনিতা বললো,’প্রথম হলেও আমি কিন্তু বড় বউ হবো এটাও মাথায় রাখতে হবে মৃথিলা।’
মৃথিলা স্বভাবসুলভ হাসলো।
নিরা সবাইকে ডেকে ডেকে দেখাচ্ছে তার ভাবি কত সুন্দর। ব্যাপার টা নবনিতার ভালো লাগছে না।নবনিতা বিদ্রুপ এর সাথে বলছে,
‘নিরা এমন ভাবে বলছো যেনো কোনো বিশ্বসুন্দরী। ‘
নিরব হেসে বললো,’তার থেকেও কম নয়।’
পরের দিন সকালেই বিয়ে।বিয়ের জন্য সব কিছু রেডি।কিছুক্ষণ পরেই কাজী আসবে।
চলবে?….