#প্রণয়ের আসক্তি
পর্ব ১১
#writer_Mousumi_Akter
আকাশের ক্ষয় হয়ে যাওয়া চাঁদ টা অভিমানী কিশোর-কিশোরীর মুখ ভার করে আকাশের বুকে জ্বলজ্বল করছে।হঠাত নিরব খেয়াল করলো নিরবের মাথার উপর এসে স্হির হয়েছে অভিমানে অর্ধখন্ড চাঁদ টা।ছাতার মতো নিরবের মাথার উপর দাঁড়িয়ে সোনালি আলো ছড়াচ্ছে। নিরব গম্ভীর আর নিশ্চুপ হয়ে বসে আছে গরুর খামারের পাশের হিজল গাছের সাথে হেলান দিয়ে।এক হাঁটু ভাজ করা আরেক পা মেলে দেওয়া।এক হাত টান টান করে ভাজ করা হাঁটুর উপর দিয়ে রাখা।ক্রমাগত সিগারেট টেনে যাচ্ছে নিরব।মৃথিলার কাঁন্নাভেজা করুণ মায়াবী মুখটা সেকেন্ডে সেকেন্ডে চোখের পর্দায় ভেষে উঠছে নিরবের।মেয়েটার মায়াভরা মুখটা নিমিষেই নিরবের হৃদয়ে বেদনার তোলপাড় শুরু করেছে।একটা মুহুর্তের ব্যবধানে নিরবের মনের সব কিছু যেনো এলোমেলো হয়ে গেলো।’আমি ওর দায়িত্ব নিতে চাই’ নিরব এই কথাটা যখন ই বলেছে তখন থেকেই ও শব্দটা তার শিরায় শিরায় স্পন্দন করছে। মৃথিলার জীবনের সব কষ্ট নিরব কে কষ্ট দিচ্ছে।নিরব কে বারবার আহত করছে,ব্যাথায় কাতর হচ্ছে হৃদয়।সৃষ্টিকর্তার কাছে ব্যাথিত হৃদয় নিয়ে খুব অভিমান নিয়ে আকাশের পানে তাকিয়ে বলছে নিরব, এই মেয়েটা কেনো এত কষ্ট দিলে।কেনো আরো একটা যুগ আমার সাথে দেখা করালে না।একবার যদি বুঝতে পারতাম আমার বাম পাজরের হাড়ে তৈরি আমার জীবনের ভীষণ বড় অস্তিত্বের অংশ পৃথিবীর এক কোনায় পড়ে পড়ে মানসিক অত্যাচার সহ্য করছে,পৃথিবীর সব বাঁধা,সব তুফান,সব প্রলয় অতিক্রম করে আমার কাছে নিয়ে আসতাম।এসব ভাবতে ভাবতে নিরব আবার মাথা ঝাঁকালো।সে কেনো এত বেশী চিন্তা করছে।মৃথিলার অতীত জীবনের কষ্ট কেনো তাকে এত পোড়াচ্ছে।নিরব কিছুতেই এটা সহ্য করছে না।নীলাভ কে ভেবে রাগে আরো তিক্ত হয়ে উঠছে নিরব নীলাভের প্রতি।নীলাভ কে এখন তার সব থেকে বড় শ*ত্রু মনে হচ্ছে।নীলাভের কথা ভেবে শিরা উপশিরা আগুনরূন ধারণ করছে।ভয়ংকর এক রুপ নিরবের মাঝে প্রবেশ করছে।নীলাভ কে পেলে এক্ষুনি হয়তো খু**ন করে ফেলবে।ভালবাসা যতটা কোমল হয় ততটায় হয়তো ভয়ংকর হয়।ভয়ংকর ভালবাসার শুরু কি তবে এখান থেকেই।দুই প্যাকেট সিগারেট শেষ নিরবের।এক অদৃশ্য যন্ত্রণা নিরব কে যন্ত্রণা দিচ্ছে ভয়ংকর ভাবে।
রিফাত ও সেইম একই ভাবে বসে আছে নিরবের পাশে।রিফাত নিরব কে খুব ভাল ভাবে পর্যবেক্ষণ করে বুঝার চেষ্টা করছে নিরবের কি হয়েছে।নিরবের এই গম্ভীর,কালো মেঘ জমে থাকা মুখের কারণ কি।বিয়ের আগে অন্য পুরুষের সন্তান সদ্য বিবাহিত স্ত্রীর পেটে এই কারণ টাই কি নিরব কে পোড়াচ্ছে।রিফাত আস্তে করে নিরবের ঘাড়ে হাত রাখলো বেশ শান্ত কন্ঠে বললো,
‘কি ভাবছিস নিরব।’
নিরব বেখেয়ালি ভাবে উত্তর দিলো,
‘কিছুনাতো।’
‘কেনো মিথ্যা বলছিস।চোখে মুখে যন্ত্রণা দেখছি। এই যন্ত্রণা কিসের জন্য।মৃথিলাকে বিয়ে করার জন্য।অজান্তে কি মনের বিরুদ্ধে কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিস আর সেটা ভেবে আফসোস বা কষ্ট পাচ্ছিস।’
‘ওর মতো মেয়েকে বিয়ে করার পরেও আফসোস আর কষ্ট শব্দ ট কি ভেতর থেকে কখনো আসবে।নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে হচ্ছে আমি মন থেকে ওকে গ্রহন করতে পেরেছি।ওর মতো মেয়েকে বিয়ে করতে পেরেছি।’
‘তাহলে কেনো কষ্ট পাচ্ছিস।’
‘ওর কষ্ট হচ্ছে ভেবে।’
রিফাত অবাক করা নয়নে তাকালো নিরবের দিকে।নিরব রিফাতের চাহনি দেখে বললো,
‘খুব অদ্ভুত লাগছে না তোর কাছে।কিছুক্ষণ আগে বিয়ে করা মেয়েটার জন্য আমার কষ্ট হচ্ছে।আমার ও সেইম টু সেইম অদ্ভুত লাগছে।আমি নিজেও ভাবতে পারিনি হুট করেই মেয়েটার জন্য আমার কষ্ট হবে।ব্যাপার টা কিছুদিন পরে হলেও আমি মেনে নিতাম।কারো সাথে থাকতে থাকতে কথা বলতে বলতে একটা সময় মায়ায় পড়তে হয় ভালবাসা হয়ে যায়।খুব স্বাভাবিক এই ব্যাপার টা।কিন্তু আমার সাথে খুব ই অন্যরকম কিছু ঘটে গেলো।হঠাত তার কাঁন্নায় খুব কষ্ট হচ্ছে,তার মায়াভরা মুখ বারবার মনে পড়ছে মনে হচ্ছে পৃথিবীর সব মায়া তার ওই মুখের অদলে আছে।’
রিফাত মৃদু হেসে বললো,
‘অনুভূতির সাথে কেনো যুদ্ধ করছিস।যা হচ্ছে হতে দে না।যা হচ্ছে তা এক্সেপ্ট করে নে।হাজার চেষ্টা করেও এই অনুভূতি তুই ইগনোর করতে পারবিনা।এটাই হওয়ার ছিলো নিরব।এটা তোর জীবনের প্রথম ভালবাসার অনুভূতি। ‘
‘ভালবাসা নাকি ওর কষ্ট দেখে সহানুভূতি কিছুই বুঝতে পারছি না।’
‘সহানুভূতি দেখিয়ে আমরা কারো জন্য কষ্ট পেতে পারি।কাউকে সাহায্য করতে পারি।কিন্তু সহানুভূতির জন্য কারো সাথে সারাজীবন থাকার সিদ্ধান্ত নিতে পারিনা।এটা তোর দৈবিক ভালবাসা ছিলো যেটা বুঝতে পারিস নি।মেয়েটা প্রথম দেখাতে তোর মনে জায়গা করে নিয়েছে তোর অজান্তে। তোর অজান্তে তোর মনে বসবাস শুরু করেছে।ভালবাসার জন্য সারাজীবন লাগেনা একটা মুহুর্ত ই যথেষ্ট।সেই মুহূর্ত টা মৃথিলার সাথে দেখা হওয়ার সাথেই তৈরি হয়ে গিয়েছে।এটা ভালবাসা বস।আমরা ছেলেরা শারিরীক চাহিদার কথা মাথায় রেখেই কিন্তু বিয়ে করি।আর তুই এমন একজন কে বিয়ে করেছিস যার সাথে এই মুহুর্তে এমন কিছুই সম্ভব নয়।পরিপূর্ণ বয়সে এসেও এমন সিদ্ধান্তে একটা ছেলে হয়েও প্রাউড ফিল করছি।’
‘জানিনা রিফাত তোর ধারণা কতটুকু সত্য।আমি শুধু এটুকু জানি এ জনমে নিজের সব সুখ বিসর্জন দিয়ে তারে আমার ভালো রাখতে হবে।এটা হোক সহানুভূতি বা ভালবাসা তাতে কিছুই যায় আসেনা তারে ভাল রাখাটাই গুরুত্বপূর্ণ। ‘
‘খুব সুন্দর অনুভূতি প্রকাশ করলি তুই।’
এরই মাঝে খোয়াড় দেখাশুনা করে রমিজ এসে বললো,
‘রিফাত বাবা তোমারে ডাকতাছে নিরা মা।খুব জলদী তলব।’
রিফাত উঠে গেলো।নিরা নিচের ড্রয়িং রুমে পায়চারী করছে রিফাতের জন্য।রিফাত প্রবেশ করতেই নিরা বললো,
‘ভাইয়া আপনাকে সেই কখন থেকে খুজছি।কই ছিলেন। ‘
‘আচ্ছা খুজছিলি ক্যান বুড়ি তাই বল।’
‘দাদাভাই আর ভাবির ফুলসজ্জার খাট সাজাতে হবেনা।’
‘ওহ শীট তাইতো।যারা খাট সাজায় ওদের ফোন দিচ্ছি ওয়েট কর।’
‘তারা কখন আসবে তার ঠিক নেই।চলুন না আমরা সবাই মিলে সাজিয়ে ফেলি।’
‘ফেলে দেবার দরকার নেই।সাজিয়ে রাখতে হবে।’
‘শুধু কথার ভুল ধরেন কেনো?’
‘আচ্ছ, আচ্ছা চল।কথায় কথায় এত রেগে যাস কেনো রে। ‘
নিরবের ঘর টা তাজা গোলাপ,আর রজনীগন্ধা দিয়ে সাজানো হলো। রিফাত,নিরা,সুপ্তি আর আরিফা মিলেই সাজালো।ঘরের কোনায় কোনায় কত গুলো মোমবাতি জালানো হলো।মোমবাতি গুলো বাসনের ভেতর পানি দিয়ে ছোট্ট ঝিনুকের উপর রাখা হলো।যা দেখতে খুব ই সুন্দর ছিলো।ফুলসজ্জার খাটের উপর বালিস, বালিস এর উপর সাদা তোয়ালে রাখা।তোয়ালের উপর নিরব আর মৃথিলার নাম গোলাপফুল দিয়ে লেখা হলো।। ঘর টা ফুলের ঘ্রাণে ময়ময় করছে।আহা!কি সুন্দর মিষ্টি ঘ্রাণ।নব দম্পত্তির এমন রোমান্টিক পরিবেশে এমনিতেই প্রেমের মাতাল হাওয়া বয়ে যাবে।
মৃথিলা ইরিনা হাসান আর ইসহাক হাসানের রুমে বসে আছে।ইসহাক হাসান আর ইরিনা হাসান নব পুত্রবধুকে বোঝাচ্ছেন।অতীত ভুলে নিরবের সাথে সামনে এগোনোর জন্য বলছেন।মৃথিলা ঘোমটা টেনে শ্বশুর-শ্বাশুড়ির কথা শুনছে আর মাথা নেড়ে না বা হ্যাঁ বলছে।কিছুক্ষণের মাঝেই রিফাত নিরব কে ফোন করলো রুমে আসার জন্য।নিরব সিগারেট শেষ করে বাড়িতে প্রবেশ করলো।নিরা আর সুপ্তি মৃথিলাকে ইরিনা হাসানের রুম থেমে বের করে নিয়ে আসলো।নিরব বাইরে অপেক্ষা করছে।সবাই একসাথে বাসর ঘরের দিকে রওনা হলো।
এর ই মাঝে নিরা লাফিয়ে সাবার সামনে গিয়ে হাত মেলে পথ আটকে বললো,
‘ওয়েট একটা জিনিস বাকি আছে।’
সবাই বেশ বিস্ময়ের সাথে তাকালো।
‘সুপ্তি বললো কি বাকি আছে আবার।’
নিরা নিরব কে ডাকলো,
‘দাদাভাই একটু এদিকে এসোতো।’
রিফাত আর নিরব দুজনেই এগিয়ে গেলো।বোনের আদেশ চির ধার্য।
নিরা বললো,
‘ভাবির এ বাড়ি থেকে বিয়ে হয়েছে বলে কি কোনো নিয়ম পালন হবেনা।এটা ভারী অন্যায় দাদা ভাই।’
নিরব সন্দিহান ভাবে প্রশ্ন করলো,
‘কোন নিয়ম বাদ পড়েছে নিরা।’
‘নতুন বউ কোলে তুলে ঘরে নিতে হয়।ভাবি এখন বাসর ঘরে হেঁটে যাবে না।তাই তোমাকেই কোলে তুলে নিয়ে যেতে হবে।’
‘আমাকেই।’
মৃথিলা বললো,
‘না না নিরা এসব কি বলছো?এমনিতেই উনি অনেক কিছু সহ্য করছেন।তার মাঝে এসব কষ্ট দিও না প্লিজ।’
‘আহা ভাবি দাদা ভাই পারবে।ইয়ে তোমার কি দাদা ভাই ব্যাথা পাবে বলে কষ্ট লাগছে।’
‘নিরা কি যা তা বলছো তুমি। ‘
সুপ্তি বললো,
‘আরে মিথু এত ভাবিস না।ভাইয়া ঠিক ই পারবে।আর এটা নিয়ম মানতেই হবে।’
নিরা বললো,
‘দাদাভাই কি ভাবছো? ভাবি বেশী ওজন হয়ে গেলো না।’
নিরব মৃথিলার দিকে তাকালো।পা থেকে মাথা পর্যন্ত তাকিয়ে দেখে নিয়ে বললো,
‘ও আর কতটুকু ওজন হবে।’
মৃথিলা এবার ড্যাবড্যাব চোখে নিরবের দিকে তাকালো।তাকে কি একেবারেই শুটকি ভেবেছে।সে ৫২ কেজি ওজন।এক মণ এর বেশী।এভাবে বলার কি আছে এ ও আর কতটুকু ওজন হবে।
রিফাত বললো ভাই দ্রুত ভাবিকে কোলে তুলে নে।নিরব মৃথিলাকে পাজা কোলে তুলে নিয়ে মৃথিলার মুখের দিকে তাকাতে তাকাতে সোজা রুমে প্রবেশ করলো।মৃথিলা নিরব এর বুকের সোজা পাঞ্জাবী খামছে ধরে রেখেছে।সাইড থেকে সুপ্তি,রিফাত,নিরা হাতে তালি দিয়ে যচ্ছে।নিরব মৃথিলাকে খাটের উপর বসিয়ে দিলো।ঘড়িতে রাত সাড়ে বারোটা বাজে।নিরব বললো,
‘মৃথিলার হয়তো ঘুম পাচ্ছে।তোদের জন্য বলতে পারছে না।’
রিফাত বললো,
‘ঘুম টুম কারোর ই পাচ্ছে না ভাই।ওসব আমরা বুঝি।হ্যাপি ফুলসজ্জা। কাল কি ঘুম থেকে উঠবি নাকি তিশ বছর বউ ছাড়া ঘুমিয়েছিস বলে আজ থেকে ত্রিশ বছর পরে উঠবি।’
‘এমন লুচু ছেলে তো তুই।এসব তোর দ্বারা ই সম্ভব।’
কিছুক্ষণ হাসি ঠাট্টার পরে সবাই বেরিয়ে গেলো রুম থেকে।নিরব ঘরের সিটকিনি লাগিয়ে দিলো।তাতে বেশ জোরেই শব্দ হলো।সেই শব্দে মৃথিলা কেঁপে উঠলো।বেশ জড় সড় ভাবে মৃথিলা বসলো।আর পাঁচটা বিবাহিত কাপলদের মতোই কি তার বিয়ের প্রথমরাত হবে।এমন কিছু হলেও তার কিছুই করার নেই।তার সাথে যার বিয়ে হয়েছে তার সম্পূর্ণ হক আছে।তার অধিকার আদায়ে মৃথিলা কিছুতেই বাঁধে দিতে পারবেনা।মনে ভয় থাকলে কি তা মুখে বলা লাগে।মুখ দেখলেই বোঝা যায়।
নিরবের পরণে কালো পাঞ্জাবী সোনালি সুতোর কাজ করা।একজন সুদর্শন ফর্সা গায়ের রঙের যুবক যখন কালো পাঞ্জাবী পরে তাকে নিশ্চয়ই আরো বেশী সুদর্শন লাগে।নিরবের ফর্সা গালের এই খোচা খোলা দাঁড়ির জন্য আর ঠোঁটের উপরের কালো তিলটার জন্য বেশী সুন্দর লাগে।নিরব ছোট বেলা থেকে কখনো কালো পোশাক ছাড়া পরেনা।হয়তো এটা তার প্যাশন।
নিরব এক পা উঠিয়ে হাত ভাজ করে থুতনি তে ঠেকিয়ে মৃথিলার দিকে তাকিয়ে আছে।মৃথিলা আড় চোখে সেটা বারবার পরখ করছে।কি ব্যাপার উনি এভাবে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে কেনো?ফুলসজ্জার কথা ভাবছেন নাতো।
নিরব দরজা থেকে এগিয়ে এলো।বিছানায় মৃথিলার সামনে বসে বললো,
‘মৃথিলা তুমি কি টেনশন করছো?’শান্ত চাহনি নিরবের।
‘কই নাতো।’
‘আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি।তোমার চোখে মুখে ভয়।’
”না না আপনি আছেন না।ভু*ত এর ভয় পাচ্ছিনা’
‘তুমি তো আমাকে ভয় পাচ্ছো।’
মৃথিলা থতমত খেয়ে গেলো।কি বলবে বুঝতে পারছেনা।নিরব তার সত্যটা ধরে ফেলেছে।জড়ানো কন্ঠে বললো,
‘আ,আপনাকে।কই নাতো।’
‘মিথ্যা বলছো কেনো?তুমি যে ভয়টা পাচ্ছো পেওণা প্লিজ।তাহলে নিজেকে নীলাভ এর থেকেও নিকৃষ্ট মনে হবে।’
‘কোন ভয়।’
‘ভয় পেওনা।আমি তোমাকে স্পর্শ করবো না। জোর ও করবো না কিছু নিয়ে।স্বামী হয়েছি বলে শারীরিক ক্ষুদা নিয়ে তোমাকে দেখবো না।ত্রিশ টা বছর থাকতে পেরেছি কোনো মেয়ের স্পর্শ ছাড়া।আর এখন ও পারবো।ভরসা করতে পারো।তুমি অসুস্থ। আমি জানি স্বামি হিসাবে আমার কি করা উচিত আমি তাই করবো।’
‘না মানে।’
‘ভয় পেওনা।আমি তোমার অন্ধকার জীবনের এক টুকরো আলো হতে চাই।যার আলোয় তোমার জীবনের সব অন্ধকার বিলীন হয়ে যাবে।’
‘আপনি সত্যি একটা উজ্জ্বল নক্ষত্র।যা খুব পবিত্র। কেনো আমার কলঙ্ক গায়ে মাখলেন বলুম তো।আমার জন্য আপনি নিজেও কলঙ্কিত হয়ে গেলেন।’
‘চাঁদ ও নিঁখুত নয়।চাঁদের ও কলঙ্ক আছে।তাই বলে কি কেউ জোসনা গায়ে মাখেনা।’
‘কিন্তু।’
‘থাকনা কিছু কলঙ্ক।তাতে ক্ষতি কি।’
‘নিজেকে নারী হিসাবে খুব বিশ্রী মনে হয়।কলঙ্কে কলঙ্কে ভরা আমার জীবন।’
‘আচ্ছা কলঙ্ক কি শুধু নারীর ই হয়।সম্মান কি শুধুই নারীর যায়।যে সমাজ, যে জাতি বলে সম্মান গেলে নারীর ই যায় সে সমাজ সে জাতি আঙ্গুল উঁচিয়ে দেখিয়ে দিলো পুরুষ মানুষ এর কোনো সম্মান ই নেই।যার সম্মান ই নেই তার সম্মান যাবেটা কিভাবে বলো।নারী তুমি সত্যি সবার উপরে।পুরুষের দেওয়া একটু কলঙ্কে তুমি পৃথিবীর শ্রেষ্ট সম্মান পেয়ে যাও।পৃথিবীতে মাতৃত্ত্বের সম্মানের থেকে কি বড় কোনো সম্মান আছে।সেই নারীকে সে অসম্মান করে ছুড়ে ফেলে চলে যায় আমার আইনে তাকে নিষিদ্ধ করা হোক সভ্য সমাজ থেকে।তার বেঁচে থাকার ও অধিকার নেই।’
‘আপনাকে যত দেখছি ততই মুগ্ধ হচ্ছি আমি।আপনার চিন্তা ভাবনার মতো এমন সুন্দর ভাবনা প্রতিটা ছেলের ই হোক।’
‘প্রশংসা আর করতে হবেনা।কিন্তু তোমার কি আমাকে পছন্দ হয়েছে।কখনো তো আমার মতো ছেলেকে বিয়ে করার কথা ভাবোনি।’
হঠাত এমন কথায় মৃথিলা ঘাবড়ে যায়।মৃথিলাকে ঘাবড়াতে দেখে নিরব বললো,
‘তুমি একটু বেশী ঘাবড়ে যাচ্ছো না।তোমাকে আমার সাথে স্বাভাবিক হতে হবে।আমি বলছি না স্বামি হিসাবে মেনে নাও।তবে তোমার সুবিধা অসুবিধা এসব আমার সাথে শেয়ার করার জন্য হলেও স্বাভাবিক হতে হবে।একজন বন্ধুর মতো মনে করতে হবে।’
মৃথিলা মাথা নেড়ে হ্যাঁ সূচক সম্মোধন করলো।
নিরব এবার উঠে গেলো।আলমারি টা খুললো।আর সেখান থেকে গিফট বক্স এ মোড়ানো কয়েকটা বক্স বের করে আনলো।বক্স গুলো বিছানার উপর রাখলো।মৃথিলা প্যাকিং থেকে বুঝতে পারলো এগুলো সব গিফট বক্স।নিরব বক্স এর টেপ খুলতে খুলতে বললো,
আজ আমাদের ফুলসজ্জা এ রাতে সব স্বামিরা ই বউদের কিছু গিফট করে।আমাদের বিয়েটা তো অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে হয়েছে।তাই রোমান্টিক কোনো গিফট দেওয়া যাবেনা।তাই বলে যে ভিন্ন ভাবে কিছু দেওয়া যাবেনা এমন ও কিন্তু না।তোমার ফুলসজ্জা ফুলসজ্জার মতোই হবে তবে ভিন্ন ভাবে।এতক্ষণে সব গুলো বক্স খোলা হয়ে গিয়েছে একটা বক্সে অনেক গুলো চকলেট রাখা।এত চকলেট এক সাথে মৃথিলা আগে দেখে নি।মৃথিলার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,
তোমার জন্য এগুলো।আরেক বক্স এ একটা কাজল।
কাজল টা এগিয়ে দিয়ে বললো,
‘রোজ সকালে কাজল পরবে।তোমাকে কাজল কালো চোখে খুব মানায়।’
আরেক টা বক্স এ তিনটা শাড়ি।এগিয়ে দিয়ে বললো,
‘তোমার শাড়ি ছিড়ে ফেলছিলাম।তার জন্য শাড়ি গিফট। ‘
আরেক বক্স এ বিরিয়ানি,মাংশ।মৃথিলার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,
‘এ সময়ে বেশীক্ষণ না খেয়ে থাকতে নেই।খেয়ে নাও।জানি তুমি অতটা খেয়ে পারবেনা।যতটা পারো খাও বাকিটা রেখে দিও আমি খেয়ে নিবো।’
মৃথিলা এবার আরো বেশী অবাক হয়ে নিরব এর দিকে তাকালো।কত পারফেক্ট এই মানুষ টা।
চলবে,,