#প্রণয়ের আসক্তি
পর্ব ১২
#writer_Mousumi_Akter
”ফুলসজ্জার মতো একটা গুরুত্বপূর্ণ রাতে কেউ বউ এর চুমু না খেয়ে বিরিয়ানি খায়।”
কথাটা মৃথিলার কানে পৌছাতেই মৃথিলার মুখে বিরিয়ানি আঁটকে গেলো।নাকে, মাথায় ভাত চলে গেলো।মৃথিলার কাশি শুরু হলো।লজ্জায় দমবন্ধ হওয়া কাশি।ছেলেদের বন্ধুজাতি কি এতটা ফাজিল হয়।মৃথিলা কাশতে কাশতে চোখ বড় বড় করে নিরবের দিকে তাকালো।কাশতে কাশতে চোখে পানি চলে এলো।নিরব মৃথিলার দিকে তাকিয়ে দ্রুত পানির গ্লাস মৃথিলার ঠোঁটের উপর নিয়ে ধরলো।মৃথিলা দুই ঠোঁট কিছুটা ফঁকা করে দ্রুত পানি খেয়ে নিলো।কাশতে কাশতে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছে সে।নিরব মৃথিলার মাথার তালুতে হাত দিয়ে আস্তে আস্তে করে থাপ্পড় দিচ্ছে।পানি খাওয়ার পরবর্তী কিছু সময় পর্যন্ত তার শুকনো কাশি হয়েছে।বার বার গলা ঝেড়েছে,মনে হচ্ছে গলায় কিছু একটা আঁটকে আছে।
কিছুক্ষণ আগেই নিরব বিরিয়ানির প্যাকেট খুলে মৃথিলার সামনে পরিবেশন করেছিলো খাওয়ার জন্য।মৃথিলাকে খাওয়ার জন্য বলেছিলো।কিন্তু একা খেতে সংকোচ লাগার জন্য মৃথিলা একা খাবেনা বলে বায়না ধরেছিলো।নিরব এ সুযোগ হাত ছাড়া করেনি খাওয়ায় সঙ্গ দিয়েছে মৃথিলার সাথে।নিরব এটাই চাইছিলো তার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ রাতে বউ এর সাথে এক সাথে খাবার খেতে।এতে নাকি ভালবাসা বাড়ে।যদিও তাদের মাঝে এসব কিছুই নেই।তবে নিরবের উদ্দেশ্য সফল বউ এর সাথে প্রথন দিনেই একসাথে খাবার খেতে পেরেছে।খাবার খাওয়ার মধ্য হঠাত তার একটা বন্ধু কল করে।রিফাতের কাছে শুনেছে হঠাত বিয়ে হয়ে গিয়েছে নিরবের।নিরবের বন্ধু জিজ্ঞেস করলো,
‘ কি করছিস নিরব।’
খুব স্বাভাবিক ভাবে উত্তর দিলো,
‘বিরিয়ানি খাচ্ছি।’ফোনের লাউড স্পীকার অন ই ছিলো।
‘বাসর রাতে বউ এর চুমু না খেয়ে বিরিয়ানি খাচ্ছিস।তো এটা কোন বিরিয়ানি।স্পেশাল কিছু।’
‘শালা তুই গভেট না হলে বাসর রাতে কল দিয়ে জিজ্ঞেস করিস কি করছি।’
আর সেটা শুনেই মৃথিলার লজ্জায় অক্কা পাওয়ার অবস্থা।নাকে ভাত গিয়ে কাশি শুরু। নিরব বিষয় টা বুঝতে পেরে দ্রুত ফোন কেটে ফোন অফ করে দিলো।নিরব ও বেশ লজ্জা পেয়ে গেলো।মাথা চুলকাতে চুলকাতে বললো,
‘সরি আমার ফোন খোলা রাখা উচিত হয়নি।আসলে বন্ধু গুলো অনেক ক্লোজ তো।একটু বেশী ফ্রি আমরা।তাই এমন মজা করেছে।ওর বিয়ের রাতেও আমরা ফোন করে অনেক মজা করেছিলাম।’
‘আপনিও।’মৃথিলা বেশ সন্দিহান ভাবে বললো।মৃথিলার ধারণা নিরব হয়তো কিছুই বোঝেনা।
‘না মানে বন্ধু তো।বলাই যায় সব। ব্যাপার নাহ।’
‘আপনার বন্ধুরা খুব ফাজিল। কিন্তু আপনিও ফাজিল সেটা বুঝতে পারিনি।’
‘আরে না না।আমি ফাজিল না।জাস্ট বন্ধুদের সাথে একটু মজা করি।’
‘ঘুম পেয়েছে তোমার।’
‘আমার কখনো ঘুম পায় না।যার প্রিয়জন দিনের পর দিন ইগনোর করে সে কিভাবে ঘুমোতে পারে।’
‘প্রিয়রা কখনো ইগনোর করে না মেয়ে।প্রিয় কাউকে ইগনোর করার ক্ষমতা কোনো মানুষের ই থাকে না।’
‘তাহলে সে আমাকে ইগনোর করে কেনো?”
‘এটাও আমাকে বলে দিতে হবে।’
‘বলুন না কেনো?’
‘অপ্রিয় না হলে কেউ কাউকে ইগনোর বা অবহেলা করা যায় না।যে তোমাকে ইগনোর করছে অবহেলা করছে তুমি তো তার কাছে প্রিয় কেউ না বা গুরুত্বপূর্ণ কেউ না।বরং তোমার উপস্হিতি তার কাছে বিরক্ত লাগে।সো এমন কাউকে ভেবে কষ্ট পাওয়াটাও বোকামি মেয়ে।’
‘কষ্ট পাবোনা কিভাবে বলুন।প্রথম ভালবাসা কি ভোলা যায়।’
‘সেটা ভালবাসা হলে কখনোই ভোলা যায় না।তোমাকে বুঝতে হবে সেটা কি ভালবাসা ছিলো নাকি শুধুই মোহ ছিলো।অপরপক্ষের সাজানো কোনো গেম ছিলো যেটা ভালবাসার গুটি হিসাবে তোমার সামনে ধরেছিলো।প্রথম আর শেষ বলে কিছু নেই মেয়ে।সত্যিকারের ভালবাসা যে কোনো সময়ে আসতে পারে জীবনে।’
‘কি করবো আমি।’
‘তোমাকে কিছুই করতে হবেনা।সময়ের সাথে সাথে সব বদলে যাবে।মনের মাঝে জোর করে কাউকে ঢুকানো যায়না আবার জোর করে কাউকে বের করাও যায় না।এটা নিজ থেকেই হয়ে যাবে।’
‘আমি কি কোনদিন আমার এই ভয়ঙ্কর অতীত ভুলতে পারবো।’
‘তোমার থেকেও ভয়ঙ্কর অতীত ছিলো নাবিলার।মেয়েটা সেই অতীত ভুলে বাঁচতে চেয়েছিলো পারেনি।আমি রক্ষা করতে পারিনি।কিন্তু তোমাকে পারতে হবে। নাবিলার মতো তোমার জীবন আমি হতে দিবোনা।’
‘নাবিলা কে?’
‘উফস দেখেছো।সারাদিন নাবিলার কেস নিয়ে পড়ে থেকে আমি তোমাকেও নাবিলার গল্প শোনাচ্ছি।’
‘কে আপনার প্রেমিকা ছিলো। ‘
‘না।’
‘তাহলে কে নবনিতা উনি আপনার প্রেমিকা।’
‘না।’
‘তাহলে?’
‘মিস প্রেমিকার সাথে কোনো একদিন পরিচয় করাবো।’
‘তাহলে নবনিতা? ওই আপুর সাথে বিয়ে ঠিক ছিলো কেনো প্রেমিকা থাকতেও।’
‘বিয়ে ঠিক হওয়ার পরেই প্রেমিকা এসেছে জীবনে।’
‘তাহলে আমাকে বিয়ে করলেন, সে কষ্ট পাবেনা।’
‘না খুশি হবে।সে খুব ভালো মেয়ে।’
‘এমন প্রেমিকাও আছে।’
‘মিস প্রেমিকার কথা বাদ থাক।
তোমাকে দারূণ কিছু দেখাতে চাই।দেখবে?’
“হ্যাঁ দেখবো।’
‘দাঁড়াও রুমের লাইট টা অফ করে নেই।ভ*য় পেওনা লাইট অফ করলে অন্ধকার হয়ে যাবে।’
‘না পাবো না।অফ করুন।’
‘আমাকে ভ*য় পাবেনা।’
‘একটুও না।’
নিরব উঠে গিয়ে রুমের লাইট অফ করতেই রুম জুড়ে জোনাক পোকা উড়ে বেড়াচ্ছে।মৃথিলা জাস্ট অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।এত এত জোনাক পোকা কোথা থেকে এলো।মৃথিলার গাল ভরা হাসি।হাসতে হাসতে বললো,
‘এত জোনাকি কোথায় পেলেন।’
‘এগুলো আমাদের ঘেরের পাড় থেকে বয়্যাম ভরে নিয়ে এসছি।বাইরের লাল নীল কৃত্রিম আলোর থেকে এটা বেষ্ট না।’
‘ভীষন সুন্দর, সত্যি।’
নিরব বললো,
‘এবার আর একটু সুন্দর কিছু দেখায় তোমাকে ওয়েট।’
নিরব আস্তে করে বেলকনির দরজা খুলে পর্দা তুললো।পর্দা তুলতেই অন্ধকার ঘরে জোসনায় ভরে গেলো।মৃথিলা রুম থেকে বেরিয়ে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ালো।বেলকনির এক পাশে পর্দার ছায়া পড়েছে তাছাড়া পুরাটায় জোসনা।মৃথিলার মন নিমিষেই ভালো হয়ে গেলো।
নিরব অপলক নয়নে মৃথিলা দেখছে।বিড়বিড় করে বলছে,
‘তোমার সারা অঙ্গে জোসনা মাখা।আজীবন দেখলেও দেখার তৃষ্ণা মিটবে না।’
মৃথিলা বললো,
‘কিছু বললেন।’
‘বললাম আজকের জোসনার নাম জোনক জ্বলা জোসনা দিলে কেমন হয়।’
‘খুব ভালো হয়।’
দুজনে বেশ কিছুক্ষণ বেলকনিতে দাঁড়িয়ে জোসনা উপভোগ করলো।
মৃথিলার মনে হয় ঘুম পাচ্ছে।নিরব বললো,
‘এবার ঘুমোনো উচিত তোমার।
মৃথিলা এই ভারী শাড়ি টা চেঞ্জ করে নাও।রুমের সাথে আমার ওয়াশ রুম আছে।আজ থেকে ওটা তোমার।ওখানে গিয়ে চেঞ্জ করে নাও।’
‘কোন শাড়িটা পরবো।’
‘আমাকে বললে? ‘বলবো,
‘বলুন।’
‘কালো টা পরো।’
‘আমিও ভেবেছিলাম হয়তো কালো টায় বলবেন।’
নিরব মৃদু হাসলো।মৃথিলা ওয়াশ রুমে গিয়ে কালো রঙের সুতি শাড়ি টা পরে আসলো।মৃথিলা শরীরের গঠন মধ্যবর্তী।খুব চিকন ও না খুব মোটা ও না।কালো শাড়িতে যেনো বেশী উজ্জ্বল দেখাচ্ছে মৃথিলাকে।নিরব অবাক চোখে তাকিয়ে আছে মৃথিলার দিকে।মাথায় লাল গোলাপের গাজরা টা এখনো আছে।চোখ সরানো যাচ্ছেনা মৃথিলার থেকে।মৃথিলা রুমে এসে গায়ের সব গহনা খুলে খুলে বিছানায় রাখছে।নিরব সে দৃশ্য ভীষণ ভাবে উপভোগ করছে।আলমারি থেকে ট্রাউজার আর কালো গেঞ্জি নিয়ে নিরব নিজেও ওয়াশ রুমে গেলো।৫-৭ মিনিট পরে বেরিয়ে এলো।পায়ের গোড়ালির উপর ট্রাউজার পরা।পরনে কালো গেঞ্জিতে নিরব কে সুন্দর দেখাচ্ছে।মৃথিলা তাকিয়ে দেখছে নিরব কে।নিরব বন্ধ করে রাখা ফোনটা অন করতে করতে বললো,
‘এইবার ঘুমিয়ে পড়ো।’
‘আপনি ঘুমোবেন কোথায়?’
‘ঘুমোবো কোথাও একটা।তুমি আরামে ঘুমোও।’
‘বেশী দূরে যাবেন না প্লিজ।আমার ভ*য় লাগবে।’
‘তুমি কার কাছে আছো জানো।ভ*য় বলে কিছুই এখানে আসবে না।’
‘তবুও। ”
‘নিচে ঘুমোচ্ছি।’
‘খাটেই ঘুমোন সমস্যা নেই।’
‘তোমার অস্বস্তি হোক চাইনা।আমি ঘুমোলে তোমার ঘুম আসবে না গুমিয়ে পড়ো।’
নিরব ফোন অন করে স্ক্রল করতে করতে ঘুমিয়ে গেলো।মৃথিলা খাটে গুটি সুটি মেরে ঘুমিয়ে পড়লো।
রাত দুইটায় নিরবের ফোন ভুম ভুম করে বাজছে।নিরব ঘুমের ঘরে ফোন রিসিভ করতেই ওপাস থেকে মেয়েলী কন্ঠ বলে উঠলো,
‘হাই হ্যান্ডসাম,হাউ আর ইউ?কি ভেবেছিলে আজ বিয়ে করেছো বলে কল দিবোনা।নতুন বউ কে কি সব ফাঁস করে দিবো।’
চলবে?…