#প্রণয়ের আসক্তি
পর্ব ১৩
#writer_Mousumi_Akter
১৫.
”র*ক্ত নিয়ে খেলতে খুব ভালো লাগে তাইনা অফিসার।একজন অনেস্ট অফিসার দিনের আলোয় সম্মানের সাথে ঘুরে বেড়াচ্ছে।আর রাতের আঁধারে একজন র*ক্তখোর।তোমার নববধু কোথায় সে কি ভাবছে তার একজন সৎ,অনেস্ট,মহান পুরুষের সাথে বিয়ে হয়েছে।ইস খুব আফসোস লাগছে সেই দিনটার কথা ভেবে।যেদিন তোমার সুন্দরী বউ জানতে পারবে তার ফেরেশতার মতো হাজবেন্ড একজন হাহাহাহা।”
পৈচাশিক হাসিতে ফোনের ওপাস কেঁপে উঠলো।এই হাসিটা নিরব কে যন্ত্রণা দিচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে।নিরব এর যন্ত্রণা ফোনের ওপাশের মেয়েটা বোধহয় বুঝতে পেরেই পৈচাশিক আনন্দ পায়।আবার ও কল এলো নিরবের ফোনে।নিরব আবার ও ফোন রিসিভ করলো।ফোন রিসিভ করতেই ওপাস থেকে মেয়েটি আবার বললো,
“কি রাগ হচ্ছে খুব।সত্য টা শুনলে বুঝি রাগ হয় তাইনা বাস্টার্ড। “
আজ আবার সেই কন্ঠস্বরের মেয়ে।পনেরো সেকেন্ডের মাঝে ফোনটা আবার কেটে গেলো।
নিরব চিৎকার দিয়ে বললো,
“হু আর ইউ বাস্টার্ড। আই উইল কি**ল ইউ। পারলে আমার সামনে আয়।জ্যান্ত কু**ত্তা দিয়ে খা*ও*য়া*বো বাস্টার্ড। “
নিরব ফ্লোরে একটা চাঁদর বিছিয়ে সুয়েছিলো।দ্রুত সোয়া থেকে উঠে বসলো।বার বার ট্রাই করার পরেও সেই নাম্বারে আর কল ঢোকে না।শ্বাসকষ্টে হাঁপাচ্ছে সে।নিঃশ্বাস নিতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।ইনহেলার খুজছে হাত দিয়ে হাতড়ে। আশে পাশে ইনহেলার নেই কোথাও।নিরব খুব কষ্টের সাথে উঠে ড্রেসিন টেবিলের সামনে গেলো ঢুলতে ঢুলতে।একটু হলেই পড়ে যেতো।ড্রেসিন টেবিলের ড্রয়ার খুলে ইনহেলার বের করে গালে নাকে দিয়ে শ্বাস নিলো।তারপর ও বেশ কিছুক্ষণ হাঁপালো।এখন একটু স্বাভাবিক লাগছে নিরবের।কষ্ট কম হচ্ছে।জগ থেকে গ্লাসে পানি ঢেলে এক গ্লাস পানি খেলো।অতঃপর মৃথিলার দিকে তাকালো।মৃথিলা নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছে।নিরবের বিছানা বালিশ,কোল বালিশ সব কিছুর দখলদার আজ অন্য একটা মেয়ে।অথচ মেয়েট জোর করে কোনো কিছুর ই দখল করে নি।এটা তার অধিকারে পেয়েছে।ফুলে ফুলে সাজানো খাটে ফুলের থেকেও মিষ্টি আর সুন্দর একটা মেয়ে সুয়ে আছে।যার ঠোঁট গোলাপের পাপড়ির মতো স্বচ্ছ।মনে হচ্ছে কতদিন মেয়েটা নিশ্চিন্তে ঘুমোয় নি।
নিরবের আর ঘুম আসছে না।ল্যাপটপ নিয়ে বেলকনিতে গিয়ে টুল নিয়ে বসলো।টুলের সামনে একটা টি-টেবিল।টি-টেবিলে ল্যাপটপ রেখে ল্যাপটপ এর সাটার টা উঁচু করলো।নাবিলার কেস নিয়ে আবার ও নিরব ঘাটাঘাটি শুরু করলো।এই উড়ো কল টা কে করে।নাবিলা মা*রা যাবার পর থেকেই এই কল টা আসা শুরু হয়েছে।প্রায় ভোর হয়ে এসছে।মৃথিলা ঠান্ডায় কেমন জড়সড় হয়ে এসছে।হাত পা গুটিয়ে কাঁপছে।নিরব উঠে গিয়ে এসি বন্ধ করে দিলো।ফ্যান ছেড়ে রেগুলেটর এর ভলিউম কমিয়ে দিলো।গায়ে একটা কাঁথা দিয়ে দিলো।মৃথিলা কাঁথাট গায়ে দিতেই টেনে নিয়ে বেশ আরামের সাথে কোল বালিশ টা জড়িয়ে ধরে ঘুমোলো।নিরবের মৃথিলাকে ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছা করছে খুব কিন্তু সাহস পাচ্ছেনা। মৃথিলা যদি তাকে চরিত্রহীন ভাবে।অথচ এই ছুঁয়ে দেখাটার মাঝে কোনো পাপ নেই।প্রিয়তমার শরীরের একটু ঘ্রাণ নেওয়ার তৃষ্ণাতে নিরব ভয়ে ভয়ে মৃথিলার কপাল স্পর্শ করলো চোখ বন্ধ করে।নিরবের হৃদপিন্ড এর কম্পন বেড়ে চলেছে সহস্র গতিবেগে।এমন ধড়ফড় করে নি আগে কখনো তার বুকের মাঝে।প্রচন্ড গতি বেগে লাফিয়ে চলেছে।আর কিছুক্ষণ এমন হলে নিরবের প*রা*ণ ধুকপুক করতে করতে বেরিয়ে আসবে।নিরব হাত সরিয়ে আনলো দ্রুত।তারপর মৃথিলার কপাল স্পর্শ করা জায়গাতে চুমু খেলো
।তার মনে হলো এটা মৃথিলার কপালেই দিয়েছে।হঠাত ই সে মৃথিলাকে এতটা ভয়ংকর ভাবে ভালবেসে ফেলবে ভঝতেও পারেনি।স্ত্রী নামক মানুষ টার সাথে নাকি মানুষ বিয়ের প্রথম রাতেই খুব ঘনিষ্ট হয়ে যায়।অথচ নিরব তার স্ত্রীর কপাল ছুঁয়ে ই অস্বাভাবিক কম্পনে বাঁচছে না।নিরব আবার গিয়ে বেলকনিতে বসলো।সেদিনের কথা ভাবছে।নাবিলা সে রাতে অন্ধকারে ছুটছিলো।আর তখন ই দেখা হয় নাবিলার সাথে।নাবিলা কে নিয়ে ভাবতে ভাবতে প্রায় ভোর হয়ে এসছে।নিরব তখন ও ঘুমোয় নি।সিগারেট টেনে যাচ্ছে।নিরব চেয়ারে গা এলিয়ে টি -টেবিলে পা উঠিয়ে চোখ বন্ধ করে এক হাত কপালে দিয়ে সুয়ে আছে।মুখে জলন্ত সিগারেট তো আছেই।মৃথিলার ততক্ষণে ঘুম ভেঙে গিয়েছে।ঘুম ভাঙতেই নিজের কাপড় ঠিক করে নিয়ে নিচে তাকালো।কিন্তু শুধু চাঁদর আর বালিশ পড়ে আছে নিরব নেই।মৃথিলা এদিক ওদিক উঁকি ঝুকি মেরে দেখলো বেলকনির দরজা খোলা।নিরবের ফর্সা পা আর কালো ট্রাউজার দেখা যাচ্ছে।মৃথিলা বেলকনির দিকে এগিয়ে গিয়ে দেখলো নিরব চোখ বন্ধ করে কপালে হাত দিয়ে গা এলিয়ে সুয়ে আছে।জ্বলন্ত সিগারেট টা পুড়তে পুড়তে শেষ প্রায়।আর একটু হলেই নিরবের ঠোঁট পুড়ে যাবে।
মৃথিলা দ্রুত নিরবের ঠোঁট থেকে সিগারেট টা নিয়ে ফেলে দিলো আর বললো,
‘আল্লাহ আর একটু হলেই মুখ পুড়ে যেতো আপনার।’
মৃথিলার মিষ্টি কন্ঠ কানে যেতেই নিরব এর মস্তিষ্ক চড়া দিয়ে উঠলো।নিরব চোখ মেলে তাকালো আর দেখলো সদ্য ফোটা গোলাপের ন্যায় খুব ভোরে মৃথিলা দাঁড়িয়ে আছে গোলাপের মতো মুখ নিয়ে তার সামনে।নিরব মৃদু মৃদু চাহনিতে মৃথিলাকে দেখছে।এত সুন্দর মেয়ে কি আর দ্বীতীয়টা আছে এই পৃথিবীতে। হয়তো আছে তবে মৃথিলার থেকে নেই।
নিরব মুগ্ধ নয়নে মৃথিলার দিকে তাকিয়ে বললো,
‘তুমি উঠে পড়েছো?’
‘উঠবোনা? ভোর হয়েছে পাখি কিচিরমিচির করছে এখন কি আর বিছানায় থাকা যায়।’
‘এখনকার যুগের কোনো মেয়েই তো দশটার আগে ঘুম থেকে ওঠে না।সারারাত ফেসবুকিং করে বেলা দশ বা বারোটায় ঘুম থেকে ওঠে।’
‘আমি তো কোনো আলালের ঘরের দুলালী না।আমাকে খুব ভোরে উঠে গরুর পল কাটা থেকে শুরু করে উঠান ঝাড়ু,রান্না সব ই করতে হয়েছে।আজ তাও একটু লেট করেই উঠেছি।অন্যদিন আরো দু’ঘন্টা আগে উঠতে হতো।আজকের সকাল টা পৃথিলার শ্রেষ্ট সকাল আমার জন্য।”
নিরব মনে মনে বললো,
‘আজ থেকে প্রতিটা সকাল ই শ্রেষ্ঠ সকাল হবে তোমার জন্য প্রিয়দর্শিনী।আজ থেকে তোমার একটা নাম।দিলাম আমি প্রিয়দর্শিনী।’
মৃথিলা বললো,
‘কিছু ভাবছেন।’
নিরব এবার চেয়ার থেকে সোজা হয়ে উঠে বসলো।আড়মোড়া ভেঙে বড় বড় দুইটা হাই তুলে বললো,
‘অনেক কষ্ট গিয়েছে তাইনা জীবনে?’
‘ব্যাঙের কি জ্বর সর্দি হয়।আমার ও তাই ।’
নিরব মৃথিলার দিকে তাকালো।মৃথিলার হঠাত মন খারাপ হয়ে গেলো।নিরব বললো,
‘মন খারাপ তোমার।’
‘সবার জীবন কত সুন্দর তাইনা?আমাএ জীবন কেমন এলোমেলো।কেউ নেই আমার জীবনে।আমাকে ভালবাসার মতো কেউ নেই।আর কেউ কোনদিন ভাল বাসবেও না।আমার মা- বাবা নেই প্রিয় কেউ নেই।’
‘তুমি হঠাত কারো চোখে বিশ্বসুন্দরী হয়ে যাবে।তুমি হঠাত কারো মন ভালোর কারণ হয়ে যাবে।তুমি হঠাত কারো জীবনের বেঁচে থাকার কারণ হয়ে যাবে।তুমি কারো নির্জন দুপুরের একলা থাকার সঙ্গী হবে।তুমি একদিন কারো পৃথিবী হয়ে যাবে।যে প্রতি বর্ষায় তোমাকে একগুচ্ছ কদম উপহার দিতে৷ ভুলবে না।যে কৃষ্ণচূড়ার শহরে গিয়ে ভাববে তুমি ছাড়া কৃষ্ণচূড়ার বর্ণ ভীষণ ফিকে লাগছে।তুমি কারো বিষন্ন মনের প্রশান্তির কারণ হয়ে যাবে।
হ্যাঁ তোমাকেই বলছি।তুমি না বলো তোমার কেউ নেই।কেউ তোমাকে ভালবাসে না।’
‘সত্যি এমন হবে কোনদিন।’
‘না হওয়ার চান্স নেই।’
‘আপনি কি সারারাত ঘুমোন নি।’
‘হ্যাঁ ঘুমিয়েছি।’
‘তাহলে এত গুলো শেষ হওয়া সিগারেট পড়ে থাকতো না।’
‘ও এমনি ই।’
‘এত সিগারেট খান কেনো?’
‘এর আগে তো কেউ এমন প্রশ্ন করে নি।তাই ভেবে দেখিনি।’
‘আমি করলাম।সিগারেট খেলে আপনার ক্ষতি হবে।’
‘এটাও কেউ আগে বলেনি যে আমার ক্ষতি হবে।’
‘কেউ বলেনি।’
‘না,কোনো মেয়ে যদি কেয়ার নিয়ে আগে বলতো নিশ্চয়ই খেতাম না।’
‘আমি নিষেধ করলে শুনবেন।’
‘একবার নিষেধ করেই দেখো অবাধ্য হই কিনা।’
‘ঠিক আছে আর খাবেন না।’
‘তুমি না প্রিয়দর্শিনী যেদিন বলবে আর খাবোনা।’
‘সরি আমিতো কেউনা।’
নিরব হাসলো মৃথিলার কথায়।
সকাল আটটায় বাড়িতে দুজন প্রবেশ করলো।তারা খুব থমথমে মুডে প্রবেশ করলো সাথে নবনিতাও আছে।তারা সোজাসুজি ইসহাক হাসান আর ইরিনা হাসানের রুমে প্রবেশ করলো।সেখানে কি কথা হচ্ছে কেউ জানেনা।
মৃথিলা রান্নাঘরে আরিফা আর রাহিলার সাথে রান্নায় সাহায্য করছে।আরিফা মৃথিলাকে বললো,
‘ভাবিগো আফনে রান্নাঘরে নিরব ভাইজান আমাগো ছা*ড়*বো না।খুব রাগ করবো।’
‘ক্যানো উনি কি খুব রাগি।’
‘আরে না খুব ই ভালা মানুষ। তবে উনি যা বলে অইডায় করে।আর বেঈমান গো দেখতে পারে না।একদম গু*লি কইরা দেয়।’
‘ভালো মানুষ আবার গু*লি করে নাকি।’
‘খারাপ মানুষ গো গু★লি করে।’
রাহিলা বললো,
‘নিরব বাবাজান এর মতো ছেলে হয়না।মা স্বামিরে আঁচলে বাইন্ধা রাইখো।’
‘উনি তো আর আমাকে পছন্দ করে বিয়ে করেন নি।একটা সমস্যায় পড়েই বিয়ে করেছেন।উনাকে বাঁধতে চাইনা খালা।’
‘শোনো মেয়ে বিয়ে হলো পবিত্র সম্পর্ক।এই সম্পর্ক কে হেলা ফেলা কইরোনা।যেভাবেই হোক বিয়ে কিন্তু হইছে।আর আইডায় সত্য। এই হলদীর রং না যে উঠে যাবে।’
আরিফা এক গ্লাস দুধ দিলো মৃথিলার হাতে।দিয়ে বললো,’এ সময়ে বেশী বেশী দুধ খেতে হয় বুঝলে।’
মৃথিলা দুধের গ্লাস মুখে দিতে যেতেই কেউ একটা পিস্তল ঠেকালো মৃথিলার কপালে।মৃথিলার হাত থেকে দুধের গ্লাস পড়ে গেলো।মৃথিলা ওয়াল ঘেষে দাঁড়ালো,ভয়ে চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে আছে।
চলবে?….