#প্রণয়ের আসক্তি
পর্ব ১৬
#Writer_Mousumi_Aker
.
মৃথিলা মাত্রই শাওয়ার নিয়ে বের হয়েছে শাড়ির কুচি ঠিক করতে করতে।মৃথিলার পরণে নীল শাড়ি, এলোমেলো কুচি গুলো একজায়গা করে গুজে নেওয়ার সময় ফর্সা পেটের আংশিক দেখা গেলো।নিরবের দৃষ্টি তাৎক্ষনাত মৃথিলার পেটে গিয়ে স্হির হলো।নিরব দ্রুত দৃষ্টি সংযত করলো
।সে মৃথিলাকে কামনার দৃষ্টিতে দেখে না। নিরব দুই প্যান্টের পকেটে হাত গুজে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ওয়াশ রুমের একটু সামনেই।সে মৃথিলার বের হওয়ার জন্যই অপেক্ষা করছিলো।ওয়াশ রুমের দরজা খুলতেই ওয়াশ রুম থেকে সদ্য বের হওয়া নীল প*রীকে দেখে নিরবের দু’চোখ আটকে গেলো।নিরবের দু’ঠোঁটের মাঝে কিঞ্চিত ফাঁকা,চোখ ভরা মুগ্ধতা,নিরব অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে মৃথিলার দিকে।মৃথিলার সৌন্দর্যে পা*গ*ল প্রায় নিরব।নিরব যে কতটা মুগ্ধ মৃথিলার রুপে সেটা তার মুখের অদল দেখেই বোঝা যায়।সেকেন্ডে সেকেন্ডে যেনো মৃথিলার সৌন্দর্য বেড়েই চলেছে নিরবের চোখে।মৃথিলার সমস্ত শরীরে পানি মুক্তার দানার মতো চিকচিক করছে।মাথায় গামছা বা টাওয়াল কিছুই নেই।চুলের পানি ঝরে ব্লাউজের পেছন টা সম্পূর্ণ ভিজে গিয়েছে।মৃথিলা হাত দিয়ে চিপড়ে চিপড়ে চুলের পানি ফেলছে,পানি ফ্লোরে পড়ছে।মৃথিলার মাথায় অনেক চুল তাই পানিও বেশী।ফ্লোরে খানিকটা জায়গা জুড়েই পানি পড়লো।নিরব অনমনে তাকিয়ে আছে মৃথিলার দিকে।মৃথিলাকে দেখার তৃষ্ণা যেনো মিটছেই না তার।মৃথিলার নিরবের দিকে খেয়াল নেই সে আপণমনে চুল চিপড়ে যাচ্ছে।এরপর ড্রেসিন টেবিলের দিকে আগাতেই ফ্লোরে পড়া পানিতে পা স্লিপ করে উল্টে পড়ে যেতেই নিরব দ্রুত ধরে ফেললো।মৃথিলার মসৃণ কোমরে নিরবের হাত আর নিরবের শার্ট খামছে ধরে রেখেছে মৃথিলা।দৃশ্যটা সিনেমার মতোই সুন্দর। দুজন ই দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে কারো মুখে কোনো কথা নেই।এভাবে কিছুক্ষণ কেটে গেলো।মৃথিলা লজ্জা পাচ্ছে খুব।সে এভাবে পড়ে গেলো আর নিরব তাকে কোমর জড়িয়ে ধরলো এটা ভেবেই লজ্জায় মরে যাচ্ছে সে।মৃথিলা এবার ওঠার চেষ্টা করলো।নিরব তার হাত ধরে খাটের উপর বসালো আর বললো,
‘এভাবে ভেজা ফ্লোরে কেউ পা রাখে।এক্ষুনি অঘটন ঘটে যেতো। ‘
মৃথিলার কন্ঠ আর স্বভাবে সব সময় নম্রতা।শান্ত চোখে নিরবের মুখের দিকে তাকালো।মৃথিলার মুখ ভরা মায়া।এই মায়াবী মুখের দিকে তাকালেই নিরব যেনো বারেবার হারিয়ে যায়।
মৃথিলা শান্ত কন্ঠে বললো,
‘আমি খেয়াল করিনি।’
‘ভেজা চুলে ব্লাউজ ভিজে গিয়েছে ঠান্ডা লাগবে তখন কি হবে।’
‘আমি খেয়াল করিনি।’
‘আমি কিন্তু সব ই খেয়াল করছি।টাওয়াল ছাড়া গোসলে কেনো গিয়েছো?’
‘গোসল শেষ করে খেয়াল করেছি টাওয়াল নেই।আমার তো কোনো টাওয়াল নেই এখানে।’
‘আমাকে একবার বললে কি হতো।’
মৃথিলা চুপ আছে।নিরব বেলকনি থেকে টাওয়াল নিয়ে এলো।মৃথিলার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,
‘চুল মুছে নাও।’
মৃথিলা হাত বাড়িয়ে চুল মুছতে মুছতে বললো,
‘আমার জন্য আপনার খুব অসুবিধা হচ্ছে তাইনা?
‘কেনো?’
‘আমার জন্য বাইরে যেতে পারছেন না।সারাক্ষণ চোখের সামনে রেখেছেন।গৃহবন্ধী হয়ে আছেন।’
নিরব স্বভাবসুলভ হেসে বললো,
‘শুনেছি ছেলেরা নতুন বিয়ে করলে গৃহবন্ধী হয়ে যায়।’
‘কে বলেছে?’
‘কত দেখেছি।ফ্রেন্ডরা বিয়ে করলে আর ঘর থেকে বেরোয় না।’
‘কেনো তারা কি করে?’
‘শুনবে?’
‘হুম শুনবো।’
‘দুষ্টু কথা কিন্তু পরে রাগ করতে পারবে না।’
‘কই আমাকে তো দুষ্টু কথা বলেন না।’
‘দায়িত্ব নিয়েছি তোমার,তোমার খেয়াল তো রাখতেই হবে তাইনা?দুষ্টু কথা বলার সময় হলে আমিও বলবো।’
‘আপনি তো ভালো মানুষ দুষ্টু কথা কিভাবে বলবেন।’
‘বউ কে দুষ্টু কথা বললে কেউ খারাপ হয়না।আমি তখন ও ভালো থাকবো।’
মৃথিলা চুল মুছছে আর হাসছে।হাসি মুখে ভীষণ স্নিগ্ধ দেখাচ্ছে তাকে।নিরব একটু একটু করে মৃথিলার দিকে এগোচ্ছে।মৃথিলা নিরবের এগিয়ে আসার কারণ বুঝছে না।মৃথিলা সন্দিহান ভাবে তাকিয়ে আছে নিরবের দিকে।চোখ দুটো বড় বড় আর টানা টানা।নিরব মৃথিলার সম্পূর্ণ কাছে এসে বললো,
‘এভাবে চুলের পানি যবেনা।’
নিরব মৃথিলার মাথায় তার দুই হাতের উপর হাত রাখলো।মৃথিলার আঙুলের ভাজে আঙুল রেখে একটু শক্তভাবে ধরে চুলের পানি মুছে দিচ্ছে।এটা কি চুলের পানি মুছে দেওয়ার নাকি হাত স্পর্শ করার বাহানা।নিরব পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ অনুভূতি পাচ্ছে মৃথিলার আঙুলের ভাজে আঙুল রেখে ।দুজনের মাঝে কিছু একটা হচ্ছে।কোনো এক অজানা অনুভূতি। অনুভূতি গুলো খুব দ্রুত হচ্ছে বলে কেউ উপলব্ধি করতে পারছেনা।কিন্তু নিরব বুঝতে পারছে মৃথিলাকে সে ভালবেসে ফেলেছে।এই অনুভূতির নাম ভালবাসার অনুভূতি।
মৃথিলা বললো,
‘ভেজা শাড়িটা ধুয়ে নিয়ে আসি, নাড়তে হবে।’
‘তোমাকে ঝুঁকে কিছুই করতে হবেনা।রোজ গোসল করে শাড়ি রেখে দিবা আরিফা ধুয়ে দিবে।’
‘ছিঃনিজের পরণের কাপড় কাজের মানুষ কে দিয়ে ধোয়াতে নেই।তার খারাপ লাগবে।কাজ করে বলে কি পরণের কাপড় ও ধুয়ে দিবে।’
‘তোমার খারাপ লাগলে থাক। আমি ধুয়ে দিবো।’
‘এমা না,এটা তো আরো ছিঃ।’
‘কোনো ছিঃটি না।এখানে চুপচাপ বসো তুমি।’
নিরব তিনতলা থেকে ঝুঁকে আরিফাকে ডাকলো।
‘আরিফা কোথায় গেলি।’
নিচে থেকে আরিফা উত্তর দিলো,
‘আমারে ডাকতাছেন ভাইজান।’
‘ হ্যাঁ ‘
‘কিছু লাগবো ভাইজান।ভাবি ভালো আছে।’
‘ফ্রিজ থেকে ফল নিয়ে আয় উপরে।আর ভাবিকে দেখে যা।’
আরিফা কিছুক্ষণ পরেই এক প্লেট ভর্তি ফল নিয়ে এলো।দরজায় এসে বললো,
‘ভাইজান আসবো।’
‘হ্যাঁ আয়।’
‘এইযে সব রকম ফল নিয়া আইছি ভাইজান।’
‘ফলের প্লেট তোর ভাবিকে দে।আর শোন আজ থেকে সারাক্ষণ ভাবির সাথে থাকবি।ওর যা লাগে দিবি ওকে।আমি ব্যাক্তিগত ভাবে তোকে প্রতি মাসে পাঁচ হাজার টাকা বেশী দিবো।’
‘না ভাইজান আমি এমনি ভাবির সব কাজ করে দিবো।এর জন্য টাকা লাগবে না।’
‘বেশী না বুঝে এখন যা তুই।’
আরিফা চলে গেলো।
নিরব মৃথিলাকে বললো,
‘এখন থেকে ঠিক ভাবে খাবে।তুমি খাও আমি তোমার শাড়ি ধুয়ে নিয়ে আসি।’
মৃথিলার খারাপ লাগছে।একটা মানুষ তার জন্য এত কষ্ট করছে।
নিরব মৃথিলার শাড়ি ধুয়ে সুন্দর করে বেলকনিতে নেড়ে দিলো।
এরই মাঝে নিরা এসে বললো,
‘দাদা ভাই আসবো।’
‘আসবি সেটা জিজ্ঞেস করা লাগছে কখন থেকে।’
মৃথিলা হেসে বললো,
‘নিরা এসো এখানে।এতক্ষণ আসো নি কেনো?ফল খাও।’.
‘ভাবি তুমি ঘুমিয়েছো তাই ডাকিনি।’
‘কে বললো?’
‘সুপ্তি আপু।’
‘সুপ্তি কোথায়?’
‘আমার রুমেই আছে।আপুকে রেখে দিবো।খুব ভালো লেগেছে আমার আপুকে।’
‘তাই রেখে দাও।
‘তোমার এখন কেমন লাগছে ভাবি।”
‘অনেক ভালো।
‘তুমি আর ভয় পাবেনা,কেউ কিছুই বলবে না।মীজান আঙ্কেল অনুতপ্ত।আন্টি আর আঙ্কেল তোমার কাছে ক্ষমা চাইতে চাইছে।প্লিজ ভাবি তাদের ক্ষমা করে দাও।আর দাদা ভাইকে বলোনা একটু রাগ কমাতে।’
‘আসলে উনাদের রাগ করা স্বাভাবিক নিরা।আমার তাদের জন্য খুব খারাপ লাগছে।নবনিতার জন্য সত্যি আমার খারাপ লাগছে নিরা।’
‘আরে ভাবি নবনিতার জন্য খারাপ লেগে লাভ নেই।ওসব মেয়েদের খারাপ লাগেনা বুঝলে।আঙ্কেল আন্টি বার বার মাফ চাইছে তাই মাফ করতে বলছি।’
‘ওভাবে বলেনা নিরা মেয়েরা খারাপ হলেও প্রিয়জনের ভাগ কাউকে দিতে পারেনা।’
নিরব বললো,
‘নিরা উনারা এখনো যান নি।’
‘উনারা এখনো যায় নি দাদাভাই।প্লিজ ক্ষমা করে দাও না।’
‘নিরা বললে সাত খু**ন মাফ।’
‘থ্যাংকিউ দাদা ভাই।উনাদের ভেতরে ডকবো বাইরে অপেক্ষা করছে।’
‘হ্যাঁ ডাক।’
‘আমার মিষ্টি দাদা ভাই টা।’
নিরা মীজান মুন্সি আর তার ওয়াইফ কে ডাকলো ভেতরে।মীজান মুন্সী ভেতরে এসে নিরবের কাছে খুব বিনয়ের সাথে ক্ষমা চাইলো।মৃথিলাকেও মেয়ে বলে সম্মোধন করে খুব অনুনয়-বিনয় করে ক্ষমা চাইলো।মৃথিলা হাসি মুখে ক্ষমা করে দিলো।নিরব মন থেকে ক্ষমা করতে পারলো না।ভদ্রতা রক্ষার্থে ক্ষমা করলো।সব কিছুই আবার স্বাভাবিক হয়ে গেলো।
কেটে গেলো তিনদিন।তিনদিন পর সুপ্তি বাড়িতে চলে গেলো।রিফাত ও নিজের বাড়িতে চলে গেলো তার ডিউটি ও আছে।সবাই আবার যার যার কাজে ব্যাস্ত হয়ে পড়লো।পরিস্হিতি যেনো পুরোটায় স্বাভাবিক।সুপ্তি বাড়িতে যাবার দু’দিন পরে সন্ধ্যায় নিরার কাছে ফোন করে জানালো সে নিরা আর মৃথিলার জন্য আচার বানিয়েছে।যেনো তাদের বাড়ির পাশের বাজারে দেখা করে।
নিরা নিরবের থেকে পারমিশন নিয়ে বাইরে গেলো।কেননা নিরব ও ভাবছিলো মৃথিলার একটু ঘুরাঘুরির প্রয়োজন আছে।বাড়ির গাড়ি নিয়েই বের হলো দুজন।
বাড়িতে ফিরতে রাত দশটা বাজলো।মৃথিলা রুমে প্রবেশ করেই শুনতে পেলো নিরব ফোনে বলছে খুব টেনশনের সাথে,
‘কে ওই মেয়ে দুটো যারা ছদ্মবেশে এতগুলো না*রী পাচার করে যাচ্ছে।শহরের অলিগলিতে সব জায়গা তল্লাসী করো কুইক।আজ আবার তিনটা মেয়ের খু**ন করে বাকি মেয়ে গুলো নিয়ে পালালো।দুইটা মেয়ে শহর জুড়ে এতগুলো খু**ন ক রে বেড়াচ্ছে। আমি যেভাই হোক ওই মেয়ে দুইটা কে চাই।আমার হাতে খু**ন হবে ওই দুইটা মেয়ে।’
চল্মবে?…