#প্রণয়ের আসক্তি
পর্ব ৩৭
#writer_Mousumi_Akter
শাড়ির আঁচলের দিকে খানিক টা ছে’ড়া, গায়ের রং ধবধবে সাদা, হাতে একটা ছবি নিয়ে বেখেয়ালি ভাবে হেঁটে চলেছে একজন মহিলা।মৃথিলা মহিলার হাত চেপে ধরল।মহিলাটি হঠাত কেঁপে উঠে বলল, ‘কে তুমি?ওহ! আমাকে মে’ রে ফেলার জন্য তোকে পাঠিয়েছে তাইনা?আমাকে মা’ র’ বি তুই।’
মৃথিলা মহিলাকে জড়িয়ে ধরে বলল, ‘না মা আপনাকে আমি মা’ র’ ব না।আপনি একটুও ভ’ য় পাবেন না।’
‘ছাড়ো আমাকে,ছ’ ল’ না করছো তুমি।এসব বলে আমাকে নিয়ে যাবে তুমি।ছাড়ো আমাকে।’
‘আমাকে বিশ্বাস করুণ মা।আপনি যাদের ভ’ য়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।আমিও তাদের ভ’ য়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি।আমি নিলয়ের বন্ধু মা।’
মহিলাটি হু’হু’ শব্দ করে কেঁদে উঠল।এবার সে মৃথিলাকে ভরসা পেলো।মৃথিলাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে বলল, ‘আমার নিলয় মা,আমার নিলয় কে মে’ রে ফেলেছে।ওদের বাড়ির মেয়েকে ভালবাসত বলে আমার নিলয় কে মে’ রে ফেলেছে।এখন আমাকেও মে’ রে ফেলবে।এই দুঃখিনী মায়ের কষ্ট কেউ কোনদিন জানতে ও চায় নি মা।’
‘আপনাকে আমি বহুদিন ধরে খুজে চলেছি,কিন্তু কোথাও পাই নি মা।’
‘আজ বহুদিন বাদে কেউ আমাকে মা ডাকছে। ‘
‘আমার ও যে মা নেই মা।কিন্তু আপনি কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলেন।’
‘না হলে আমাকে মে’ রে ফেলতো মা।ওই যে দেখো ও বাড়ির ছেলে নিরব।’
মৃথিলা পেছনে তাকিয়ে দেখে বড় বট গাছের নিচে নিরব দাঁড়িয়ে আছে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তার দিকেই তাকিয়ে আছে।মৃথিলার চারপাশ ঘিরে পুলিশ রয়েছে।মৃথিলার বুঝতে বাকি নেই এখন তাকে জেলের চারদেওয়ালে বন্দি হতে হবে।নিরব তাকে আর ছাড়বে না।তার অসম্পূর্ণ কাজ আর সম্পূর্ণ হলোনা।মৃথিলা সোজা নিরবের কাছে হেঁটে গেলো।নিরবের সামনে বুকে হাত বেঁধে দাঁড়ালো।চোখ দিয়ে আগুন ঝরছে মৃথিলার।রাগের তীব্র মাত্রা নিয়ে বলল, ‘পারলে সুট করুণ আমায়।আমার মত এতটুকু একটা মেয়ের জন্য এত ফোর্স লাগে।আপনি ন ডিপার্টমেন্টের সব থেকে ট্যালেন্ট অফিসার।’
নিরব কোনো কথা বলল না মৃদু হাসল না।নিরবের এ হাসি মৃথিলাকে আরো যন্ত্রণা দিচ্ছে।মৃথিলা নিরবের কাছ থেকে পি’স্ত’ল টা কেড়ে নিয়ে নিজের মাথায় ধরে বলল,
‘আপনার মতো অসৎ অফিসারের কাছে নিজেকে তুলে দেওয়ার থেকে নিজের জীবন বিসর্জন দেওয়া উত্তম।’
নিরব এবার মৃথিলাকে জড়িয়ে ধরে অশ্রুসিক্ত নয়নে বলল,
‘আমি মিস ইউ প্রিয়দর্শিনী।’
মৃথিলা আচমকা যেনো আকাশ থেকে পড়ল।নিরব যে এই মুহুর্তে এমন কিছু করবে মৃথিলা বুঝতে পারে নি।এটা মৃথিলার ধারণার ও বাহিরে ছিলো।যেখানে চারপাশ জুড়ে পুলিশ মৃথিলাকে এরেস্ট করার কথা সেখানে নিরব কিনা তাকে জড়িয়ে ধরেছে।
মৃথিলা নিরবের শক্ত বাঁধণ থেকে ছোটার চেষ্টা করতে করতে বলল, ‘ছাড়ুন আমাকে ছিঃ কি নির্লজ্জ আপনি।চারদিকে সবাই দেখছে।’
‘আমার ভেতরে সেসব কোনো বোধ শক্তি নেই।কে দেখছে,কে কি ভাবছে।আমার তোমাকে লাগবে সেটা হাঁটে হোক,বাজারে হোক, নির্জনে হোক আমার তোমাকেই লাগবে।’
মৃথিলা নিরব কে ধাক্কা মারল এবার বেশ জোরের সাথেই।তারপর মহিলার হাত ধরে হাঁটা দিলো।নিরব মৃথিলার হাত টেনে ধরে ব্যাকুল কন্ঠে বলল,
‘মৃথিলা দাঁড়াও।’
মৃথিলা হাত ঝাড়ি মেরে ফেলে দিয়ে বলল,
‘হাউ ডেয়ার ইউ বাস্টার্ড। ‘
‘কষ্ট হচ্ছে,ভীষণ কষ্ট হচ্ছে আমার।গা’লি দাও,আমাকে মে’ রে ফেলো তবুও আমার হয়ে থাকো।’
‘কে আপনি?’
‘যাকে এত ঘৃণা করতে চেয়েও বারবার ব্যার্থ হচ্ছো আমি সেই সৌভাগ্যবান পুরুষ। ‘
‘আপনাকে চিনিনা আমি।কি আশ্চর্য এইভাবে তাকিয়ে কি দেখছেন এইভাবে।’
‘দীর্ঘ একটা জীবন মনে হচ্ছে তোমাকে আমি দেখিনা।দেখতে দাও আমাকে মন ভরে।তোমার প্রতি আমার ভীষণ আসক্তি।তোমাকে দেখার আসক্তি,ছোঁয়ার আসক্তি,কাছে পাওয়ার আসক্তি, যা আমার এই জীবনে শেষ হবেনা।কিছুই শেষ হবেনা এই জীবনে।’
‘আমার পথ ছাড়ুন আপনি।আপনাকে আমি চিনিনা।’
‘আমার সাথে না গেলে আমি বাধ্য হবো তুলে নিয়ে যেতে।চারদিকে তাকিয়ে দেখো।’
‘লোকজন নিয়ে এসছেন,ক্ষমতার পাওয়ার দেখাচ্ছেন।’
‘দেখাচ্ছি,তবে ভালবাসার পাওয়ার।প্রয়োজনে সারাজীবন বন্ধি করে রাখব তবুও আমার কাছেই রাখব।’
‘একজন অনেস্ট অফিসার হয়ে একজন খু* নী কে আপনার আইনে আটকে না রেখে আপনার আদালতে আটকে রাখবেন।এই আপনার আইন।’
‘তোমার সব কলঙ্ক মুছে দিবো আমি।তোমাকে আমি পৃথিবীর চোখে খু* নী প্রমানিত হতে দিবোনা।’
‘কিভাবে?’
‘সেটা না হয় আমার উপর ছেড়ে দাও।’
নিরব কথাটা বলেই আলিয়াকে বলল, ‘মৃথিলার হাতে হাতকড়া লাগিয়ে শান্তির নীড়ে নিয়ে চলো।’
আলেয়া মৃথিলার হাতে হাতকড়া লাগিয়ে গাড়িতে ওঠালো।সাথে ওই মহিলাকেও গাড়িতে ওঠালো।শান্তির নীড়ে নিয়ে মৃথিলাকে নিজেদের বেডরুমে আটকে রাখল নিরব।নিজেও সারাদিন রুমেই বসে আছে মৃথিলার দিকে তাকিয়ে।যেনো দীর্ঘ জীবনের দেখার আকাঙ্খা মেটাচ্ছে।রাত বারোটা বাজে।মৃথিলা নিরব কে বলল, ‘আমি ওয়াশ রুমে যেতে চাই।’
নিরব উঠে এসে পায়ের শিকল খুলে বলল,
‘চলো।’
মৃথিলা বিরক্ত হয়ে বলল, ‘আপনিও সাথে যাবেন।’
‘যাবো কিন্তু কিছু দেখব না।’
‘অসভ্য লোক।’
‘এই সভ্য ছেলেকে অসভ্য করেছো তুমি।’
‘আমার হাত ছেড়ে দিন পালাবো না।’
‘তুমি চাইলেও পালাতে পারবেনা।বলো ভালবাসো।’
‘বাসিনা। ‘
‘মিথ্যা বললে এর মানে ভালবাসো।’
নিরব হাত খুলে দিলো।মৃথিলা ওয়াশ রুম থেকে বেরিয়ে বলল,
‘সেই আন্টি কোথায়?’
‘পাশের রুমেই আছে।’
‘আমার ওনার সাথে কথা আছে, যাবো?’
‘যাও।’
মৃথিলা গিয়ে দেখল মহিলাটি নিলয়ের ছবি নিয়ে কাঁদছে।মৃথিলা কাধে হাত রেখে বলল, ‘যে রাতে নিলয় আর নিরা খু*ন হয় আপনিও উপস্হিত ছিলেন।আপনাকে সুপ্তি দেখেছিলো ওই রাতে আপনি বাড়ি থেকে বেরোচ্ছেন।আপনার একটি ছবিও সুপ্তি ফোনে তুলেছিলো।আমাকে খুলে বলুন কি হয়েছিলো।’
‘ওই রাতে নিলয় নিরার সাথে দেখা করতে এসেছিলো।রহমত মানে নিলয়ের বাপ যে এই বাড়িতে কাজ কাম করে আমি বা নিলয় কেউ জানতাম না।সে রাতে রহমত যখন নিলয় কে দেখে বাপ-ছেলে দুজনেই অবাক হয়ে যায়।নিলয়ের বাপ আমাদের মিথ্যা বলেছিলো।সে বলেছিলো সে বিদেশ আছে।মোটা অঙ্কের টাকা পাঠাত বাড়িতে।নিলয় দেশেই নিজের বাবাকে দেখে আমাকে ফোন করে।আমিও সে রাতে এই বাড়িতে পৌছে যায়।নিলয় এর কথা সত্য কিনা জানার জন্য।নিলয়ের বাবা তখন আমার হাতে একটা কাগজ দিয়ে বলে এই চিঠিটার মাঝে অনেক বড় প্রমাণ আছে।আমাকে ইসহাক ভাই পুড়িয়ে ফেলতে দিয়েছিলো কিন্তু আমি রেখে দিয়েছিলাম।চিঠি একদিন তুমি তার আসল মালিকের কাছে পৌছে দিও।আর এখন এখান থেকে যাও।আমি এখানে কেনো কি করছি পরে তোমাকে জানাবো।’
আমি গাছের ঝোপ ঝাড়ে লুকিয়ে পড়ি।নিলয়ের বাবা নিলয় আর নিরা কে বুঝিয়ে যাচ্ছে। তারা যেনো এখান থেকে চলে যায়।মানে ওই ঘেরের পাড় থেকে।নিলয় এর বাবা কোন ভাবেই চাচ্ছিলো না নিলয় আর নিরা ওখানে থাকুক।এর কারণ আমি বুঝতে পারছিলাম না।ঠিক তখন ই দশ -বারোজন মুখে কালো কাপড় বাঁধা।৫-৬ টা মেয়ের মুখ আর হাত বেঁধে এনে নিলয় এর বাবার সামনে এনে ফেলে দিয়ে বলল,
‘ভাই এইগুলা আজ রাতেই পাচার করতে হবে।’
নিলয় তখন অবাক হয়ে তার বাবাকে বলে, ‘বাবা তুমি মানে তুমি এসবের সাথে জড়িত।’
নিরা বলল, ‘রহমত চাচা আপনি তাহলে এসব করেন।আমি এখনি দাদা ভাইকে জানাচ্ছি।ছাড়ুন মেয়ে গুলোকে।’
নিরা যখন ই ছুটে পালিয়ে আসার চেষ্টা করল নিরব কে সবটা জানানোর জন্য তখন ই নিলয়ের বাবা নিরা কে মে*রে ফেলল।এই ঘটনা দেখে ইসহাক হাসানের মাথা খারাপ হয়ে যায়।সে আমার নিলয় কেও মে*রে ফেলে সাথে নিলয় এর বাবাকেও।আমি সেদিন থেকে পা*গ-লের মতো হয়ে গিয়েছি।আমি ভাবতে পারিনি আমার স্বামি এতটা খারাপ।সে একজন পাচারকারী।নিরার বাবা ওই খারাপ মানুষ টাকে মেরেছিলো আমার দুঃখ ছিলো না।আমার নিলয়কে কেনো মা*র*ল।নিলয়ের বাবা মৃত্যুর সময় বলে গিয়েছিলো ইসহাক তোর সেই চিঠি আমি পোড়ায় নি।ওটা আমার স্ত্রীর কাছে আছে আর সে একদিন ওটা চিঠির মালিকের কাছে পৌছে দিবে।সেখান থেকে ওরা আমাকে খুজে চলেছে।আমাকে মা*র*তে চাই।’
মৃথিলার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।নিরা আর নিলয়ের জন্য ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।মৃথিলা আগেই অনুমান করেছিলো এই বাড়ি থেকেই কিছু একটা গড়বড় হয়ে নিরার প্রা*ণ গিয়েছে।মৃথিলা নিলয়ের মা’কে পাঠালো সেই চিঠি আনার জন্য।কি ছিলো ওই চিঠিতে সেটাই জানার অপেক্ষা।
আজ রাতেই মৃথিলা এই শান্তির নীড়ে আগুন জ্বালিয়ে সব শেষ করে দিবে বলে ভেবে রেখেছে।
চলবে……..