#প্রণয়ের আসক্তি
পর্ব ৩৯
#writer_Mousumi_Akter
‘আমি ই বোধহয় পৃথিবীতে সব থেকে দূর্ভাগা নারী যাকে ভালবাসি তাকেই মা’র’তে চলেছি।ইহকালেও আমাদের পথ আলাদা পর কালেও আমাদের পথ আলাদা।আমাদের ভাগ্য ছিলোই না এক হওয়া।’
কথাটা বলে মৃথিলা নিরবের দিকে তাকালো।নিরব অশ্রুসিক্ত চোখে তাকিয়ে আছে মৃথিলার দিকে।ক্লান্ত কন্ঠে বলল, ‘একটা আফসোস নিয়ে আমাকে ম’র’তে হচ্ছে প্রিয়দর্শিনী।এই আফসোস আমার মিটল না, আমাকে তুমজ সুযোগ দিলেনা
।মরে যাবো বলে কষ্ট হচ্ছে না, কষ্ট হচ্ছে তোমার আর কোনদিন ই সত্যটা জানা হবেনা।’
‘ওকে আপনার মৃত্যুর আগে শেষ সুযোগ দিলাম।কি প্রুভ দেখাতে চান।’
নিরব মৃদু হাসল।
মৃথিলার সাথে কত গুলো ছেলে ছিলো।মৃথিলা ছেলে গুলোকে বলল,
‘তোমাদের মুক্তি আজ থেকে।কেউ কোনদিন জানতেও পারবে না তোমরা কারা ছিলে।আজীবন কৃতজ্ঞ থাকব তোমাদের প্রতি।তোমাদের সাহায্য ছাড়া কিছুই পারতাম না আমি।পালাও তোমরা,আমি পুলিশে ইনফর্ম করেছি, টাইম মতো পুলিশ পৌছে যাবে।’
ছেলে গুলো পালিয়ে গেলো তাদের আপণ ঠিকানায়।এরই মাঝে নিলয়ের মা হাজির হলো সেই চিঠি নিয়ে।মৃথিলা চিঠির ভাজ খুলে পড়া শুরু করল,
‘মিথু জীবন টা এমন হবে ভাবিনি রে।এমন খারাপ একটা জীবন কেনো আমরা পেলাম।পৃথিবীর সব থেকে খারাপ কপাল আমাদের।জানিনা এই চিঠি কোনদিন তোর কাছে যাবে কিনা।তোকে ফোনে বলার ও সুযোগ নেই।সেদিন নিরব সম্পর্কে তোকে যা বলেছিলাম সব ভুল।আমাদের মাকে নিরব মা’রে নি।যাকে বাবা বলে জেনে এসেছি ওই অমানুষ মেরেছে।তুই এই চিঠি পেলে নিরবের কাছ থেকে ভিডিও টা দেখে নিস,সেখানেই সব প্রমান আছে।আর নিরব কে জানিয়ে দিস ওর মা-বাবা ই সেই পাচারকারী দলের লিডার।যারা বিদেশ থেকে ছদ্মবেশের পোশাক এনে ব্যবহার করে।আমার ফোন করার সুযোগ নেই তাই চিঠি লিখে গেলাম।নিরব আমাকে যে পাচারকারীদের তথ্য নেওয়ার জন্য ওর বাড়িতে এনে রেখেছে সেই পাচার কারী ওর ই মা-বাবা।নিরব খুব ভাল ছেলে মিথু,খুব ভাল ছেলে।’
চিঠিটা পড়ে মৃথিলার হাত পাঁ কাঁপতে শুরু করল।কেঁদে দিয়ে নিরবের দুই বাহুতে হাত রেখে বলল,
‘কিসের ভিডিও, কোন ভিডিও,দেখান আমাকে?’
নিরব বলল, ‘আমার হাতের বাঁধন খুলে দাও।’
মৃথিলা দ্রুত হাতের বাঁধন খুলে দিলো।
নিরব নিজের বেডরুমে প্রবেশ করে ল্যাপটপ টা নিয়ে এলো।মৃথিলার সামনে প্লে করল সেই ভিডিও।ভিডিও টা মৃথিলার মায়ের।মৃথিলার মা র-ক্তা-ক্ত হয়ে পড়ে নিরব কে বলছে,
‘বাবা কে তুমি আমার মেয়ে দু’টোকে বাঁচাও তুমি।ওরা আমার মেয়ে দুটোকে বেঁচে দিয়েছে।এতদিন যাকে আমার মেয়েরা তাদের বাবা বলে জানত সে আসলে ওদের বাবা নয়।একজন পাচার কারী।আমার স্বামী প্রবাসে মারা গিয়েছিলো।মেয়ে দুটো ছোট ছিলো।সব সময় বাবা বাবা করত।মেয়েরা বুঝত না ওদের বাবা নেই।তাছাড়া আমার ও বয়স কম ছিলো আর তখন ই এই জা-নো-য়া-র আমার বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব দেয়।সে আমার মেয়েদের বাবা হয়ে থাকবে।সে আড়ালে আড়ালে মেয়েদের সাথে দেখা করে নিজেকে মেয়েদের বাপ পরিচয় দেয়।মেয়েদের কথা ভেবে আর ফ্যামিলির চাপে বিয়ে করি তার একটাই কারণ ছিলো আমার মেয়েরা তাকে বাবা ভাবত।তখন মৃথিলা কোলে আর নাবিলার আড়াই বছর বয়স।ইমরাণ আমাকে বলে ওর ফ্যামিলি মেনে নিচ্ছেনা আমাকে বিয়ে করেছে বলে তাই রাণীগঞ্জে থাকা শুরু করে।আমি বহুবার ওর বাড়িতে যেতে চেয়েছি আমাকে নেয়নি।বলেছে ওর ভাই নাকি ওর সব সম্পত্তি নিজের নামে করে নিয়েছে।যারা ওকে ফাঁকি দিয়েছে তাদের মুখ ও দেখবেনা।
রানীগঞ্জে এত মেয়ে নিঁখোজ সব ওই অমানুষ এর জন্য।রানী গঞ্জে থেকে ওই গ্রামের বিশ্বাস অর্জন করে।রিক্সায় মেয়েদের উঠিয়ে স্প্রে মারত।মেয়েরা জ্ঞান হারিয়ে ফেলত আর তখনি ও গুম করে দিতো।আমার স্বামি ও বিদেশ মারা যায়নি।ও আমার স্বামিকে মেরে আমাকে বিয়ে করতে চাইছিলো।যাতে রানীগঞ্জে এসে গরীব দুঃখীর নাটক করে থাকতে পারে।মানে ও আসলে চাইছিলো একটা পরিবার থাকুক ওর যাতে নিজেকে নিরাপদ রাখতে পারে।আমার দুই মেয়েকেও ও বেঁচে দিয়েছে।আমার মেয়েদের ও কোনদিন ভালবাসেনি।আমার মেয়েদের বাবা আর মায়ের খু*নি ওই ইমরাণ।আমি চেয়ারম্যান এর সাথে স্পষ্ট কথা বলতে শুনেছি এসব বিষয়ে।এতদিন মানুষ এসে বলত ও বাইরে ভাল ভাল খেয়ে আসে আমি ভাবতাম মানুষ মজা করছে।কিন্তু না সব ই সত্য।রাণীগঞ্জের চেয়ারম্যান এর বাড়িতে আমরা আশ্রিত ছিলাম এটা ভুল।ওই বাড়িটায় ইমরাণের।কিন্তু ইমরাণ সব বিষয়ে নাটক চালিয়ে গিয়েছে।রাণীগঞ্জের চেয়্যারম্যান জড়িত এসবের সাথে।’
ভিডিও টা শেষ করে মৃথিলা মুখে হাত দিয়ে করূণ কাঁন্নায় ভেঙে পড়ে।নিরবের দিকে তাকানোর ও সাহস পাচ্ছেনা।কাঁন্না জড়িত কন্ঠে বলে, ‘আমি ক্ষমা চাইব না আপনার কাছে,আমার সে মুখ নেই।আমি পাপি,আমি অপরাধি।আমি এখন কি করব তাও জানিনা।আমি নিজেই নিজেকে শেষ করে ফেলব।’
বলেই মৃথিলা আগুনে ঝাপ দিতে যায়।নিরব সাথে সাথে মৃথিলাকে ধরে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে।বুকের সাথে শক্তভাবে চেপে ধরে বলে তুমি একটা পবিত্র ফুল,আমি সেটা নষ্ট হতে দিবোনা।
নিরবের মা -বাবা আগুনে পুড়ে ঝলসে গিয়েছে।নিরবের কিছুই করার নেই।মা-বাবাকে তো বাঁচাবার কোনো উপায় আর নেই কিন্তু সে মৃথিলাকেও হারাতে চাইছেনা।চোখের সামনে মা-বাবার মৃত্যুর চেয়ে বেশী কষ্ট দিয়েছে নিরব কে তার মা-বাবার জঘন্য কুৎসিত রূপ।আস্তে আস্তে আগুন ছড়িয়ে পড়ছে চারদিকে।শান্তির নীড় গভীর রাতে জ্বলে উঠল।মৃথিলা আগুনে ঝাপ দেওয়ার জন্য ছটফট করছে।একই দিনে নিরব আর মৃথিলার জীবনের মোড় ঘুরে গেলো,সম্পর্কের রং বদলে গেলো।মৃথিলা জানতে পারল তার বাবার কুৎসিত চেহারার কথা।তার নিজের বাবার খু*নির জন্য নিরব কে সে কষ্ট দিয়েছে।নিরব জানল তার মা-বাবা পৃথিবীর জঘন্য মা -বাবা।নবনিতা আর তার মা কে ঘর থেকে বের করে নিলো রিফাত।নিরব মৃথিলাকে নিয়ে বেরিয়ে গেলো।নিরব আর -মৃথিলার মনের আগুন এই শান্তির নীড়ের আগুনের চেয়েও বেশী দাউ দাউ করছে।
মৃথিলা কাঁদতে কাঁদতে বলল, ‘কেনো আমাকে বাঁচলেন আপনি।বেঁচে থেকে লাভ কি আমার।এমন জীবন দিয়ে কি করব আমি।যে জীবনে বেঁচে থেকেও আপনাকে পাবো না আমি।’
‘কে বলেছে আমাকে পাবেনা।আমি তোমার মানে শুধুই তোমার।’
‘আপনি একজন অনেস্ট অফিসার,আর আমি একজন খু’নি।আমাদের জীবন ই বিপরিত প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে।’
‘তোমার এই জীবনের জন্য দায়ী আমার পরিবার,তাই এই সব কিছুর দায় ভার আমার।’
‘আ ‘আমার ফাঁ”সি হয়ে যাবে তাইনা?আপনাকে ছেড়ে আমাকে চলে যেতে হবে।আমি তো আগে ফাঁ”সির ভ*য় পাইনি।এখন পাচ্ছি কারণ এখন আমার কষ্ট হচ্ছে আপনাকে ছেড়ে যাবার কষ্ট।প্লিজ আমাকে বাঁচান,আমি মরতে চাইনা।আমি আপনার সাথে বাঁচতে চাই।’
‘তুমি আমার সাথেই বাঁচবে।আমার অস্তিত্ব আমার সন্তান তোমার পেটে।’
নিরব মৃথিলাকে শক্ত ভাবে চেপে ধরে রেখেছে নিজের বুকের সাথে।মৃথিলাও নিজের মাথা নিরবের বুকের সাথে চেপে ধরে রেখেছে।ভালবাসার এক মর্মান্তিক অবস্থানে দাঁড়িয়ে আছে দুজন।
কিছুক্ষণের মাঝেই পুলিশ আসে কয়েক গাড়ি।মৃথিলা নিশ্চিত পুলিশ তাকে গ্রেফতার করতে আসছে।সে ভ*য়ে নিরবকে আরো শক্ত ভাবে জড়িয়ে ধরে রাখে।কিন্তু সবার সব ধারণা পালটে পুলিশ এসে নিরব কে এরেস্ট করল।নিরবের হাতে হাতকড়া লাগাতেই অজানা ভ*য়ে কেঁপে উঠল মৃথিলা।নিরবের চোখে পানি।মৃথিলা অবাক হলে বলল, ‘ওকে কোথায় নিচ্ছেন?’
চলবে?..
(পাঠক মহল আমার পরীক্ষার জন্য দ্রুত শেষ করতে হচ্ছে গল্প।আরো গুছিয়ে লিখে শেষ করা উচিত ছিলো।কিন্তু গ্যাপে গ্যাপে গল্প দেওয়াটাও খুব বাজে দেখায়,পাঠকের সাথেও এটা অন্যায় হয়ে যায়।গল্পের এন্ডিং নিয়ে কেউ বিচলিত হবেন না।সব কিছু সুখের হয়না,না গল্পে না বাস্তবে।গল্পে ক্লিয়ার হয়নি কোন কোন জায়গা কমেন্টে জানাবেন।আমি নেক্সট পর্বে ক্লিয়ার করে দিবো।)