আসসালামু আলাইকুম।
হঠাৎ করে কেন লেখালেখি স্থগিত রাখছি সেটা বিস্তারিত লিখছি এখানে। অনেকেই ভাবছেন আমার হয়তো বিয়ে হয়ে গেছে! না, এমনটা নয়। বিয়ে হলে সেটা আমি সরাসরিই জানাব।
লেখালেখিটা আমার শখ, পড়াশোনা আমার স্বপ্ন, পরিবার আমার দায়িত্ব। এখন এই তিনটার মাঝেই আমি আটকে আছি। গত দু’দিন হয়েছে আমি জব নিয়েছি। স্বপ্ন এবং দায়িত্ব পালন করতে গেলে আমার জব করাটা জরুরী। খুব ছোটো থেকেই আমি ভাবতাম, আমাকে আত্মনির্ভরশীল হতে হবে।
আলহামদুলিল্লাহ্, সেই সময় এবং সুযোগটা আল্লাহ্ আমাকে এখনই দিয়েছেন। অনেকেই ভাবছেন, এজন্য লেখালেখি ছাড়তে হয় নাকি? আসলে এই প্রশ্নটা আপনাদের জন্য সহজ হলেও; আমার জন্য কথাটা শুনতেও কষ্টকর। কেননা লেখালেখিটা তো আমার কাছে অন্য এক ভালোবাসা! লেখালেখি থেকে দূরে থাকাটা আমার জন্য কী ভীষণ কষ্টকর হবে সেটা বোধ করি আমি কোনোভাবেই প্রকাশ করে বোঝাতে পারব না। কিন্তু শখ, স্বপ্ন আর দয়িত্বের মাঝে যেকোন একটা আমাকে স্যাক্রিফাইজ করতেই হবে।
স্বপ্ন অর্থাৎ লেখাপড়া এটা বর্তমানে আমার কাছে একটা চ্যালেঞ্জ। এবং এই চ্যালেঞ্জে আমায় যেকোনো মূল্যে জিততে হবে। সামনের ভালো দিনগুলির জন্য, লেখালেখির মানের উন্নতির জন্য হলেও পড়াশোনা করতে হবে। আর আজকের যুগে পড়াশোনার মূল্য কতটা সেটা তো আশা করি আপনাদের অজানা নয়।
দায়িত্ব! শব্দটা কী রকম ভারী ভারী না? আসলে কি, এই শব্দটার সঙ্গে দীর্ঘ ১৮ বছর পরিচিত ছিলাম না। কিন্তু যখন থেকে পরিচিত হয়েছি তখন থেকেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যেভাবেই হোক যত কষ্টই হোক পরিবারের প্রতি আমার যেই দায়িত্ব রয়েছে সেটা আমাকে পূরণ করতেই হবে। আল্লাহ্ সহায় থাকলে আমি তা পূরণও করব ইন-শা-আল্লাহ্। এখন এই দুটোকে নিজের জন্য রাখতে গিয়ে লেখালেখিকে আমার এই শখকে স্যাক্রিফাইজ করতে হচ্ছে। কেননা সারাদিন পর অফিস থেকে ফিরে লেখার মতো মন-মানসিকতা কিংবা এনার্জি কোনোটাই থাকে না। বিশ্বাস করুন, আমি চেষ্টা করেছিলাম লেখার। কিন্তু দুর্ভাগ্য! এই জায়গাটিতে আমি সফল হতে পারিনি। কেন জানেন? কারণ লেখালেখিটা আত্মাধিক বিষয়, মনের বিষয়। মনে না টানলে কোনোভাবেই দু’কলম লেখা সম্ভব নয়। অফিস থেকে ফেরার পর মস্তিষ্ক আর কাজ করতে চায় না। মস্তিষ্ক তখন তাড়া দেয় ঘুমানোর জন্য। হয়তো আমি ৩/৪ দিনে একটু একটু লিখে হলেও একটা করে পর্ব পোস্ট করতে পারতাম; কিন্তু এতে আমার পড়াশোনাটা আবার হতো না। অফিস থেকে ফিরে যেটুকু সময় মিলবে সেটা পড়াশোনার পেছনেই চলে যাবে।
এছাড়া এত গ্যাপ দিয়ে লিখতে গেলে আপনাদের যেমন পড়তে বি’র’ক্ত লাগবে, তেমনই আমারও আলসেমি লাগবে, বি’র’ক্ত লাগবে। এছাড়া লেট করে গল্প দেওয়ায় অনেকেই অনেক ধরণের কথা শোনান। যেগুলোর একচুয়ালি কোনো ভিত্তিই নেই। কারণ লেখালেখিটা নিতান্তই শখের বসে করা হয়। এখান থেকে কিন্তু আমি কোনো রকম বেনিফিট পাই না। তবুও লিখি ভালো লাগা থেকে। কিছু মানুষ ব্যতীত অনেক অনেক মানুষ আছে যারা আমায় পছন্দ করে, আমায় ভালোবাসে। কিন্তু অফিস থেকে ফিরে যখন দু’চারজনের ওরকম কটু কথা শুনব ওটাই আমাকে প্রচণ্ড আঘাত করবে। এত প্রেশার কোনোভাবেই নেওয়া সম্ভব নয়। এগুলোই হচ্ছে লেখালেখি বন্ধ রাখার কারণ।
আপনারা যেমন আমাকে ভালোবাসেন, আমিও আপনাদের ভালোবাসি। কিন্তু সময় এবং পরিস্থিতির কবলে পড়ে এরকম একটা সিদ্ধান্ত আমায় নিতে হয়েছে। বলতে পারেন নিরুপায় হয়েই। তবে হ্যাঁ, লেখালেখি যেমন আমার শখ তেমনটা আবার নে’শাও! চাইলেই কি সহজে ছাড়া সম্ভব? আল্লাহ্ চাইলে একদিন ঠিক ঠিক আমি আপনাদের মাঝে ফিরে আসব ইন-শা-আল্লাহ্।
বইয়ের প্রসঙ্গে কয়েকটা কথা বলি। “চক্ষে আমার তৃষ্ণা” বইটির ২য় খণ্ডের অর্ধেক পাণ্ডুলিপি আমার লেখা আছে। বাকিটা যদি বইমেলার আগেই শেষ করতে পারি, তাহলে ২য় খণ্ড বইমেলাতেই আসবে ইন-শা-আল্লাহ্।
এই ছিল, আপনাদের প্রশ্নের উত্তর। আজকের পর আবার কবে লিখব আমি জানিনা, কবে আপনাদের সুন্দর সুন্দর মন্তব্য পড়তে পারব সেটাও জানি না। তবে ভীষণ মিস করব আপনাদের। আপনাদের কমেন্ট সব। নতুন করে ফিরতে ফিরতে হয়তো অনেকেই আমায় ভুলে যাবেন আবার অনেকেই হয়তো মনে রাখবেন। তবে, আমি আপনাদেরকে ভুলব না। কথা দিচ্ছি, আল্লাহ্ চাইলে, একদিন ঠিক ঠিক ফিরে আসব ইন-শা-আল্লাহ্।
বিদায় নিচ্ছি আজ। আমার জন্য দু’আ করবেন। ভালো থাকবেন আপনারা। ভালোবাসি সকলকে।
মুন্নি আক্তার প্রিয়া