নতুন চাকরিতে ঢুকেছে রায়হান। কোম্পানিটা খুব একটা বড়ো না। অল্প সময় হলো শুরু হয়েছে।
কোম্পানির বস রায়হানের ইউনিভার্সিটির বড়ো ভাই। নাম সোহেল। রায়হানের তিন বছরের সিনিয়র।
রায়হান কে একদিন ডেকে বলল,” আমার কোম্পানিতে জয়েন কর। এখন হয়ত কোম্পানিটা ছোটো। একদিন ঠিক বড়ো হবে। কথা দিলাম তোকে ঠকাব না।”
রায়হান সোহেল কে ভালো করে চিনে। খুব সৎ মানুষ। ভার্সিটিতে পড়া ছাড়া কিছুই বুঝত না। সোহেল ভাইয়ের ওপরে ওর বিশ্বাস ছিলো। তাই বলার সাথে সাথে যোগ দিয়ে ফেলল।
ছোটো কোম্পানি মোট কর্মচারি দুইজন। একজন রায়হান আরেকজন আমজাদ। আমজাদ অফিসের পিয়নের কাজ করে। আর রায়হানের যে কী পোস্ট তা ও নিজেও জানে না!
এটা বছর দুয়েক আগের কথা। এখন কোম্পানি একটু বড়ো হয়েছে। এখন কর্মচারী সংখ্যা বেড়ে দশ হয়েছে।
সোহেল ভাই রায়হান কে ডেকে বলল, “তুমি একটু সুইটির সাথে দেখা কর তো।”
“সুইটি কে ভাই? “
“মেয়েটা কে আমার খুব ভলো লেগেছে! আমার হাতে এখন একটুও সময় নেই। আমাকে একটু ঢাকার বাইরে যেতে হবে। তুমি আমার হয়ে দেখা করো কেমন।”
রায়হান সুইটির সাথে দেখা করল। সুইটি মেয়েটা অসম্ভব সুন্দরী! পাঁচ ফুট পাঁচ ইঞ্চি লম্বা। গায়ের রং কাঁচা হুলুদের মতো। একটা মেয়ে এত সুন্দর হয়! সুইটিকে না দেখলে রায়হান জানতই না।
রায়হানের মনটা খারাপ হয়ে গেল। এত সুন্দর একটা মেয়ে তার না হয়ে সোহেল ভাইয়ের! ও সোহেল ভাইয়ের হয়ে দেখা করতে এসেছে। এই মেয়েটা হবে ওর বসের স্ত্রী! ভাবতেই রায়হানের কষ্ট হয়!
সময় আর কেটেছে। রায়হানদের কোম্পানি অনেক বড়ো হয়েছে। সোহেল ভাই নানা দেশে দৌড়ে বেড়ান। দেশে থাকাই হয় না। দেশের সব কিছু রায়হানই দেখাশোনা করে।
সুইটি এখন জানে রায়হানই সোহেল। কারণ এরমধ্যে বহুবার ওদের দেখা হয়েছে। রায়হান অবশ্য সোহেল ভাইয়ের কথাতেই দেখা করেছে।
সোহেল ভাই বললেন, “রায়হান একটা কাজ কর ভাই। “
“কী কাজ ভাই?”
“সুইটির পরিবার বিয়ের জন্য খুব চাপ দিচ্ছে। আমার তো দেশে আসার সময়ই হচ্ছে না। কোম্পানিটাকে আরকেটু দাঁড় করিয়ে দেশে চলে আসব। তুই আমার হয়ে সুইটিকে বিয়ে করে ফেলল। খবরদার কিছু করবি না।”
সুইটি আর রায়হানের বিয়ে হয়ে গেল। একটু ভুল হয়েছে খাতা কলমে সোহেল আর সুইটির বিয়ে হয়েছে!
অনেকদিন রায়হান আর সুইটির মধ্যে কিছুই হয়নি। রায়হান দূরে দেখেছে। সুইটি তো আর ওর বউ না। সুইটি ওর বসের বউ।
সুইটি নতুন বউ হিসাবে লজ্জায় কিছু বলেনি। কতদিন আর সহ্য করা যায়? একটা সময় চাপ দিতে থাকে।
রায়হান সবকিছু সোহেল ভাইকে বলে। সব শুনে সোহেল ভাই বলেন, আচ্ছা কর আমি যেহেতু এখনি আসতে পারছি না। তবে অবশ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিবি। খবরদার নিরাপত্তা ছাড়া যেন না হয়।”
“ওকে বস।”
সুইটি দেখে রায়হান সব সময় কড়া নিরাপত্তা মেনে চলে। ও ভেবেছে বেবি নিতে চায় না।
তিন বছর কেটে গেছে। সোহেল এখনো দেশে আসেনি। কোম্পানি এখন আর বড়ো হয়েছে। সোহেল ভাইকে ফোনেও পাওয়া যায় না। সারাক্ষন ব্যস্ত থাকে।
রায়হান বলল,” বস, কবে দেশে আসবেন? আমার তো একটা বিয়েশাদি করতে হবে। বয়স হয়ে যাচ্ছে!”
“এই তো কোম্পানিটা আরেকটু গুছিয়ে নিই। আর কিছুদিন ধর্য ধরে থাক।”
“ওকে বস।”
সুইটি বাচ্চা নিতে চাচ্ছে। পাঁচ বছর কেটে গেছে ওদের বিয়ে হয়েছে।
রায়হান সোহেল ভাই কে কল দিয়ে বলল, “বস, সুইটি তো বাচ্চা নিতে চাচ্ছে? আপনি কবে আসবেন?”
“আরেকটু গুছিয়ে নিই। এক কাজ কর একটা বাচ্চা নে। খবরদার একটার বেশি যেন না হয়। আমি খুব শীঘ্রই এসে সুইটিকে আপন করে নিবো। তুই আর কিছুদিন অপেক্ষা কর। “
“ওকে বস।”
সময় আর কেটেছে সোহেল ভাই দেশে আসেননি। কোম্পানি এখন বিশাল বড়ো হয়েছে। সোহেল ভাইয়ের সময়ই নেই। সুইটির সুন্দর একটা মেয়ে হয়েছে। রায়হান সোহেল ভাই কে ছবি পাঠিয়েছে “বস আপনার মেয়ে।”
“খুব সুন্দর হয়েছে! দেখতে তো আমার মতোই হয়েছে রে। নাকটা তো আমার মতো!”
“আপনার মেয়ে দেখতে আপনার মতোই হবে।”
“বস নাম কী রাখবেন?”
“সুস্মিতা। “
“বস দেশে আসবেন কবে? আমার তো একটা বিয়ে করতে হয় এখন? আর কিছুদিন গেলে তো মেয়েই পাব না।”
“চিন্তা করিস না। তাড়াতাড়ি এসে পড়ব। তুই আরকিছুদিন অপেক্ষা কর। কোম্পানিটা আরেকটু গুছিয়ে নিই।”
কয়েকবছর পরে রায়হান সোহেল কে আবার বলল, “বস, সুইটি আরেকটা বেবি নিতে চায়।”
একটা ছোটো শ্বাস ছেড়ে সোহেল বলল, “নে তবে এটাই লাস্ট। এরপরে আমি দেশে এসেই সব দায়িত্ব নিবো।”
“ওকে বস। দেশে আসবেন কবে? আমার তো বয়স হয়ে যাচ্ছে!”
“এসে পড়ব চিন্তা করিস না। কোম্পানিটা আরেকটু গুছিয়ে নিই। “
আজ সোহেল আর সুইটির চল্লিশতম বিবাহ বার্ষিকী। এই উপলক্ষে তার মেয়ে সুস্মিতা আর সুশি বিশাল পার্টির আয়োজন করেছে। ও সোহেল মানে রায়হান।
সোহেল ভাই তার কথা রাখেনি। রায়হান কে কিছুই দেয়নি! তার দুই মেয়ে সুস্মিতা আর সুশির নামে সব লিখে রেখে গেছেন বিদেশে মৃত্যুর আগে। রায়হান এখনো সব কিছু চালাচ্ছে সোহেল সেজে! জীবনটা তার কেটে গেল চাকরি করে!