মিরপুর থেকে বাসে চড়ে অফিসে যাচ্ছি। আমার পাশের সিটে এক ভদ্রলোক বসেছেন। লোকটার বয়স খুব বেশি না। পয়ত্রিশ চল্লিশ হবে। মাথার কয়েকটা চুলে পাক ধরেছে। অফিস টাইমে বাসে প্রচন্ড ভির থাকে। অনেকেই দাঁড়িয়ে আছে!
পাশের সিটের ভদ্রলোক ঘুমাচ্ছেন! লোকটাকে দেখতে ভালো লাগছে! কী আরাম করে ঘুমাচ্ছেন। হঠাৎ লোকটার ঘুম ভেঙে গেল। উঠেই আমার দিকে ঘুমঘুম চোখে তাকাল। তারপর পকেটে হাত দিলেন।
লোকটা চিৎকার করে উঠলেন, “আমার মোবাইল! “
আমি কিছুটা ভয় পেয়ে গেলাম চিৎকার শুনে। আমি হতবাক হয়ে লোকটার দিকে তাকিয়ে রইলাম।
“কী হয়েছে ভাই? “
আশেপাশের বেশ কয়েকজন লোক এগিয়ে আসল।
লোকটা বললেন, “আমার মোবাইল পাচ্ছি না!”
বাস থেকে একজন লোকও নামেনি। কাজেই মোবাইল বাসের মধ্যেই আছে। দুই-তিন জন ইয়ংছেলে বাস ড্রাইভারকে বাস সাইড করতে বলল। সবাই ছেলেগুলোর সাথে সায় দিলো। বাস সাইড করা হলো।
ইয়ংছেলেগুলো বাস থেকে দ্রুত নেমে দরজায় দাঁড়িয়ে পড়ল। একে একে সবাইকে নামতে হবে। একজন করে লোক নামছে আর ওরা চেক করছে।
সবাই নেমে গেছে। বাসের মধ্যে আমি আর মোবাইলের মালিক বসে আছি। পাশের লোকটা আমার দিকে এমনভাবে তাকাচ্ছেন যেন আমিই চোর! মোবাইলটা আমার পকেটেই আছে!
নীচে দাঁড়ান প্রতিটালোক আমার দিকে তাকিয়ে আছে। মোবাইলটা আমার পকেটেই পাওয়া যাবে। তারপর শুরু করবে রামধোলাই! সবার হাবভাব দেখে আমার কেমন ভয় লাগছে! পকেটে হাত দিয়ে দেখতেও ভয় লাগছে। মুভিতে দেখেছি মোবাইল চুরি না করেও পকেটে মোবাইল পাওয়া যায়। আমার মনে হচ্ছে লোকটার মোবাইল আমার পকেটে পাওয়া যাবে! আমার মোবাইলই নাই! একটু দূরে দাঁড়ান একজন গুন্ডা মার্কা লোক। লম্বায় ছয়ফিটের কাছাকাছি হবে। আমার দিকে কেমন করে তাকিয়ে হাতের আঙুল ফোটাচ্ছে! তামিল মুভি দেখে দেখে মানুষজন খুবই উত্তেজিত হয়ে গেছে!
ছেলেগুলো বলল, “তাড়াতাড়ি আসেন।”
আমাকে চেক করা হলো কিন্তু মোবাইল পাওয়া গেল না! লোকগুলো কেমন হতাশ হয়ে গেল। মোবাইল পাওয়া যায়নি তাই হতাশ না-কি ধোলাইটা দেয়া হলো না!
আমি ছেলেগুলোকে বললাম, “ওনার নাম্বারে একটা কল দাও।”
লোকটা এগিয়ে এসে নাম্বার বলল। একটা ছেলে মোবাইলে নাম্বার উঠিয়ে কল দিলো। ছেলেটা বলল, “রিং হচ্ছে। “
মোবাইলের রিংটোনের কোনো শব্দ পাওয়া যাচ্ছে না! সবাই ছেলেটার দিকে তাকিয়ে আছে। ছেলেটা কয়েকবার কল দিলো।
ছেলেটা উত্তেজিত হয়ে বলল, “রিসিভ করছে!”
লাউডস্পিকার চালু করল। আমরা সবাই শোনার জন্য এগিয়ে কাছে আসলাম।
একজন মহিলা বিরক্ত হয়ে বললেন, “হ্যালো! কে?”
আমার পাশে দাঁড়ান ভদ্রলোক মাথা নিচু করে বললেন, “স্যরি, এটা আমার স্ত্রী! “