গার্লফ্রেন্ডের সাথে ফোনে কথা বলছিলাম। এরই মধ্যে বার বার মারুফার ফোন আসতে আগল।
ফোনটা কেটে দিয়ে, মারুফার ফোন রিসিভ করলাম…
— হ্যাঁ মারুফা বল?
— কই তুই?
— বাড়িতে। ফোন দিছিস কেন?
— একটু থানায় আয় এখুনি। ঝামেলা হয়ে গেছে। সাক্ষী দিতে হবে। তুই চলে আয় দ্রুত।
থানার কথা শুনেই গলাটা শুকিয়ে গেল। মিন মিন করে বললাম, কিসের সাক্ষী?
— রাকিব কে খুঁজে পাচ্ছিনা তিনদিন ধরে। থানায় আসছি। তুই চলে আয়। ফোন রাখি, দেরি করিসনা।
হ্যালো হ্যালো, কিছু বলার আগেই ফোন কেটে গেল।
মারুফা হলো, স্কুল জীবনের ক্লোজ বান্ধবী। খুবই মর্ডান মেয়ে। শেয়ার’ইট এর মতো ফাস্ট। কত পোলারে ছ্যাকা দিছে, তার হিসেব নেই।
একমাস আগে রাকিবের সাথে পারিবারিক ভাবে বিয়ে হয়েছে। শেয়ার’ইট এর মতো ফাস্ট বান্ধবী আমার শেষমেস এমন ছেলের সাথে বিয়ে হয়েছে, কি আর বলব। সে প্রসঙ্গ নাহয় এখন থাক।
আমি থানার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম……
আমি শিওর, রাকিব যদি পলায় থাকে, তাহলে একমাত্র মারুফার অত্যাচারে জন্যই পলাইছে। নিরিহ বেচারার উপর বান্ধবী আমার কতইনা অত্যাচার করছে, কে জানে।
বিশ মিনিটের মধ্যে থানায় পৌছে গেলাম। গিয়ে দেখি, মারুফা মন খারাপ করে বসে আছে।
আমি মারুফাকে শান্তনা দিয়ে বললাম,
চিন্তা করিসনা। পুলিশ খুঁজে বের করে দিবে।
পুলিশের কাছে গিয়ে সমস্তকিছু বলার পর পুলিশ বলল, “রাকিবকে খুঁজে বের করতে হলে, তার ফটো লাগবে। একটা ফটো দিন?”
মারুফা বলল, “ওর কোন ফটো নাই। মোবাইলে যে ফটো ছিল, সেগুলো কয়দিন আগে ডিলিট করে দিছি।”
পুলিশ বলল, “তাহলে বাসায় থেকে ফটো নিয়ে আসেন?”
সবাইকে অবাক করে মারুফা বলল,
“বাসায় ওর কোন ফটো নাই। কয়দিন আগে চুলার উপর নুডুস রান্না করছিলাম, এমন সময় এক বান্ধবী ফোন করে বলল, ওরা শপিং করতে যাবে। আমি দ্রুত রেডি হয়ে শপিং করতে যাই। চুলার উপর নুডুসের কথা ভুলে যাই। রাতে বাসায় এসে দেখি ঘরে আগুন লেগে সবকিছু পুড়ে গেছে।”
আমার গলা শুকিয়ে আসছিল মারুফার কথা শুনে। আস্তে করে বললাম,
“রাকিবের ফেসবুক আইডি থেকে ফটো বের কর?”
মারুফা গোমরা মুখ করে বলল,
“পাঁচদিন আগে লুকাই লুকাই ওর ফেসবুক পাসওয়ার্ড চুরি করছি। তারপর ওর আইডি লগইন করে, ওর সকল পিক ডিলিট করে দিছি, আর ওর প্রোফাইল পিক ডিলিট করে, একটা পিচ্চি বাবুর পিক দিছি।”
টেবিলের উপর থেকে জলের গ্লাস নিয়ে ঢক ঢক জল খেলাম। মারুফার কথা শুনে, আমার নিজেরই পালাইতে ইচ্ছে করছে।
পাশ থেকে পুলিশ বিরক্ত হয়ে বলল,
“তাহলে, তার পুরো বিবরণ বলেন?”
মারুফা এবার আগ্রহ নিয়ে বলতে শুরু করল,
“ওর উচ্চতা ৬ ফুট ২ ইঞ্চি। স্লিম বডি। মাথা ভর্তি চুল। গায়ের রঙ ফর্সা। মুখে চাপ দাড়ি।”
মারুফার কথা শুনে আমার মুখ হা হয়ে গেল। মারুফাকে ইশারা করে, বাইরে আসতে বললাম।
বাইরে এসে ফিস ফিস করে বললাম,
“ওই তোর মাথা ঠিক আছে? তোর জামাইর উচ্চতা তো ৪ ফুটের একটু ওপরে। স্লিম মানে! তোর জামাই তো পেট মোটা, কোমড় কম করে হলেও ৪৫ হবে। তোর জামাইর তো মাথা টাক, মাথা ভর্তি চুল পাইলি কই! গায়ের রং তো কুচকুচে কালা। আর মুখে তো খোঁচা খোঁচা ছাগল দাড়ি, চাপদাড়ি পাইলি কই?।”
মারুফা আমাকে থামিয়ে দিয়ে বলল,
“চুপ কর গাধা। তোর মতো বোকা আমি জীবনে দেখিনাই। আরে হাবলু, ওই পেটকুরে ফিরে পেতে কে চায়, ওর যেনে খুশি চলে যাক। এই জন্যই তো ওর ফটো দেইনাই। পুলিশকে এমন ভাবে বিবরণ দিছি যাতে, আমার পছন্দ মতো খুঁজে নিয়ে আসে।”
বান্ধবীর কথা শুনে ছকেট হয়ে গেলাম।
রম্য গল্পঃ মডার্ন বান্ধবী
– সুবোধ মন্ডল