#শেষ .
#দ্বিতীয়_প্রহর
#Yasira_Abisha (#Fatha)
১০ বছর পরে প্রাক্তন প্রেমিকের সাথে দেখা হতে যাচ্ছে আজকে। ঠিক তার একার সাথে না, সাথে তার স্ত্রীর সাথেও আজ দেখা হবে আমার। নিজেকে ঠিক রাখাটা খুব বেশি কঠিন হয়ে যাবে? নাকি নিজেকে সামলে রাখতে পারবো?
কথাটা ভেবেই কলিজার পানি শুকিয়ে আসছে,
পুরো দশটা বছর নিজেকে যেভাবে আগলে রেখেছি আজকেও আমার ওমনই থাকতে হবে।
এসব কথা ভাবতে ভাবতেই রুহি তৈরি হয়ে নিলো আজকে বিকেলে অনুষ্ঠান শুরু হতে যাচ্ছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকবার রুনা, লাবিবা আর সামিয়া রুহিকে ভিডিও কল করেছে। আসলে বান্ধুবীদেরকে না বললেও সবাই কিছুটা বুঝতে পারছে যেহেতু ইরাদ আসবে আর তার স্ত্রীও আসবে ব্যাপারটা কিছুটা রুহির জন্য বিব্রতকর হতে পারে তবুও রুহি যেনো আসে এটা কনফার্ম করার জন্য বারবার ওরা রুহিকে কল করে দেখছিলো। আর কেনই বা ইরাদের সামনে রুহি বুঝাবে ও কষ্টে আছে? যে রুহির আত্নসম্মানের মর্যাদা দেয়নি তাকে কঠিনভাবে ভালোবাসলেও রুহি প্রকাশ করতে রাজি না। নিজেকে দুর্বল বলে আরো ১০ বছর আগেই রুহি ধরা দেয় নি যখন বাচ্চা বয়স ছিলো, নিজের ভালোবাসার মানুষকে ছাড়া সবকিছুই শূন্য লাগতো। নিজেকে সামলে নেওয়া ছিলো একহাত দিয়ে পাহাড় ধাক্কায় এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নেওয়ার মতো ছিলো। তবুও তো রুহি থেকেছে ইরাদকে ছাড়া তাই না? আর আজ তো ইরাদ অন্যের হয়েই গেছে। রুহির ইরাদ না ও, ও এখন অন্যজনের ইরাদ আর পরনারীর স্বামীর দিকে নজর দেওয়াটা রুহির রুচিতেই নেই, হোক না সে রুহির সবচেয়ে প্রিয় কেউ?
.
ইরাদ আজকে অফিস থেকে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে এসেছে। এদিকে তমা সকাল থেকেই বেশ ব্যাস্ত সে কি পড়বে না পড়বে এগুলো নিয়ে, ইরাদের স্কুল লাইফের সব বন্ধুবান্ধবদের সাথে আজ দেখা হবে। এমন না তমা ইরাদের বন্ধুদের চিনে না, সে মুটামুটি অনেককেই চিনে কিন্তু ইরাদ স্কুল জীবনে কেমন ছিলো সেটা জানার খুব ইচ্ছা তমার। নরমালি ইরাদ কিছুটা রিসার্ভড থাকে। কিন্তু ইরাদ বন্ধুদের সাথে খুব হাসে আবার মাঝে মধ্যে তমার সাথেও দুস্টুমি করে, তবে খুব কম। এমনিতে কিছু কিছু সময় মানুষের স্বামীরা স্ত্রীদের অনেক রকম ছলাকলা দেখে আরো কাছে টেনে নেয়, খুনসুটি করে তমা ভাবে ইরাদ হয়তো অতটা রোমান্টিক না তাই সে এগুলোতে পাত্তা দেয় না কারণ বিয়ের পর থেকে তমা ইরাদকে এরকমই দেখে এসেছে।
বিয়ের পর পর তমার কাছে এই জিনিস গুলো খারাপ লাগতো কিন্তু সবাই সব রকম হয় না ইরাদ হয়তো তেমনটা পছন্দ করেনা তাই করে না। আর তমার মা বলেছে নাটক ছবিতে যেমন স্বামী দেখা যায় এগুলো শুধু নাটকেই শোভা পায়, বাস্তব জীবনে এমনটা হয় না। ইরাদ ৫টা পুরো দিচ্ছে তমাকে, খাওয়া-পরার কোনো সমস্যা দিচ্ছে না মানুষের সামনে সম্মান দিচ্ছে, রাতেও একজন স্ত্রীকে যেভাবে কাছে টেনে নিতে হয়ে তাও করছে তো এতো কিছুর পরে ইরাদের প্রতি কোনো ধরনের খোব কাজ করছে না তমার। এতো কিছুর পরে নাহয় ইরাদের কম কথা বলাকে উপেক্ষা করাই যায়। তমার রাতে চাঁদ দেখতে যাওয়ার বায়না ইরাদ না শুনলে সেটাও মানাই যায়। বৃষ্টিতে হাত ধরে না ভিজতে চাইলে সেটাও মেনেই নেওয়া যায়।তাই তমা এগুলো নিয়ে কষ্ট পায় না। এখন তমার ধারণা, বউরা রান্না ঘরে কাজ করবে আর স্বামী এসে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরাটা এটা সিনেমাতেই হয়। এগুলো হচ্ছে এক্সট্রা আহ্লাদ যা বাস্তব জীবনে ঘটে না। এসব ভেবে তমা আনমনে হাসছে,
-তমা
ইরাদের ডাকে পেছন ফিরে তমা তাকালো
– চলে আসছো?
– হ্যাঁ ৪টার দিকে বেড় হবো
– ঠিক আছে, আচ্ছা আমার সাথে আসো জলদি
এই বলে তমা ড্রয়িং রুমে সোফার কুশন গুলো সাজানো শেষ করে ইরাদকে হাত ধরে টেনে বেডরুমে নিয়ে গেলো। এবং আলমারি থেকে ২টা কাতান শাড়ি হাতে নিয়ে কনফিউজড চেহারা বানিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
– কোন শাড়িটা আজকে মানাবে আমাকে?
ইরাদ কপাল কুচকে বললো
– মেয়েদের এগুলো তো আমি ওতো ভালো বুঝিনা, তোমার যেটা ভালো লাগে সেটাই মানাবে।
– না না তুমি বলো
কিছুটা আশাবাদী হয়ে আবারো ইরাদকে বলতে বলে তমা।
এবার ইরাদ শাড়ি দুটো ভালো মতো লক্ষ্য করে বললো,
– এই লাল গোলাপি কাতানটা সুন্দর।
তমার মুখে এখন একটা হাসির রেখা ফুটে উঠলো যদিও ও চাচ্ছিলো কালো নীল কাতানটা পড়তে কিন্তু ইরাদের কথায় এই শাড়ীটাই হাতে নিয়ে রেডি হতে চলে গেলো। ইরাদ মুচকি হাসলো, সাথে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ও বেরিয়ে এলো। আজ রুহিও আসবে, এতো বছর পর দেখাটা হতে যাচ্ছে, ইচ্ছে করছিলো না একদমই অনুষ্ঠানে যাওয়ার। কিন্তু যেতে হবে বন্ধুদের জোরজারিতে। এতো গুলো বছরে রুহি কোনাদিন কোনো বন্ধুদের বিয়ে বা অন্যকোনো মিলনায়তনে আসে নি। তবে শুনেছে আজকের প্রোগ্রামে নাকি সবাই আসবে ক্লাসের। তাহলেও রুহিও আসবে, রুহি বেশ ফেমাস একজন ডাক্তার। ওকে মুটামুটি সবাই চিনে,টিভিতে বিভিন্ন ইন্টারভিউতে যাওয়া পরে ২-৩টা বিজ্ঞাপনেও কাজ করা হয়েছে রুহির। এই সুবাদে ইরাদের চোখে ও রুহি পড়েছে। তাই যদি বলে রুহিকে ১০ বছর পরে দেখবে আজকে তাহলে ভুল হবে। তবে রুহিকে দেখলে ইরাদ যরটা দ্রুত সম্ভব ততটা নিজের চোখ আড়াল করে ফেলতো। কেনো যেনো রুহিকে দেখলে বুকের ভেতর একটা ব্যাথা করে, অজানা ব্যাথা। একটা অভিমান একটা রাগ কাজ করে।আজকে ইরাদের পুরোটা বদলে রেখে গেছে রুহি, ভালোবাসা জিনিসটা তো ইরাদের মাথায়ই ঢুকতো না। সেই ইরাদ পুরো রোমিও হয়ে গিয়েছিলো রুহির প্রেমে হাবুডুবু খেয়ে, ঘন্টার পর ঘন্টার চাঁদের দিকে তাকিয়ে রুহির ছবি বুকে জড়িয়ে ইরাদ কত সময় পার করে দিতো। রুহিকে দেখার জন্য হুটহাট বাড়ির নিচে চলে আসতো। এক ঝলক রুহিকে দেখলে অস্থির মনটায় একটা শীতলতা বিরাজ করতে শুরু করতো। রুহির একটা হাসির ঝলক ইরাদের কলিজা ঠান্ডা করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিলো। মেয়েটার মাথাটা বুকে নিয়ে জীবনের যতো কষ্ট ছিলো সব দূর হয়ে যেতো এক মুহুর্তেই। রুহির পাশে থাকলে সবকিছুই সুন্দর লাগতো। কেনো এসবকিছু শুরু হয়েছিলো? যখন ওদের এক হওয়া ছিলোই না ভাগ্যে? এই উত্তরটা কারোই জানা নেই, হয়তো জানা থাকলে আজকে দুজনের সুখী হওয়ার মুখোশ পড়ে থাকতে হতো না। জীবনটা কতো অদ্ভুত। ইরাদের যা চাওয়া ছিলো সবই ইরাদের আছে। রুহিও তো জীবনের সবগুলো চাওয়াই পরিপূর্ণ করতে পেরেছে তবুও কি যেনো নেই যার কারণে তারা পরিপূর্ণ সুখী হতে পারে নি। বিকেল ঘনিয়ে এসেছে তমা রেডি হয়ে গেছে ইরাদ ও রেডি।
ইরাদ সাদা একটা টার্টেল নেকের টিশার্ট এর ওপরে ব্রাউন কালারের একটা ব্লেজার গায়ে জড়িয়েছে সাথে ব্রাউন প্যান্ট, বেশ আকর্ষণীয় দেখাচ্ছে ওকে। প্রায় ঘন্টা খানিকের মধ্যে ইরাদ আর তমা পৌঁছে গেলো সেন্টারে। প্রথমে খুব অস্থির লাগছিলো ইরাদের। সব কিছুই তো স্বাভাবিক তবুও রুহির আগমন কি রকম মুহুর্ত পর্যন্ত নিয়ে যাবে ইরাদের হৃহৃদয়ের রাজ্য। যে রাজ্যে শক্ত পাথর দিয়ে দেয়াল দিয়ে রেখেছে ইরাদ। সবটা ভাবতে ভাবতে ইরাদ সেন্টারে এসেই চোখ বুলিয়ে নিলো চারিদিকে, নাহ রুহি নেই কোথাও তবে সবার সাথে এতো বছর পর দেখা হচ্ছে মুটামুটি সবাই যার যার স্বামী স্ত্রীদের নিয়ে এসেছে। সবাই কতোটা বদলে গিয়েছে। কিছু কিছু ছেলেমেয়ে আবার আগের মতোই রয়ে গেছে তাদের যেনো কিশোর কাল রয়েই গেছে আবার কারো একদম বয়সটা ঠিকঠাক হয়ে গেছে। স্মিতা ও রাহুল একসাথে পড়াশোনা করতো না শুধু বরং তাদের মধ্যে প্রেম হয়েছিলো যার সুবাদে আজ তাড়া বিবাহিত ও। এই একটা জুটিকে সবাই ফেখে বেশ খুশি। ওরা এসেছে সাথে ওদের ৪ বছরের মেয়ে আশফিকে নিয়ে। এরকম মুটামুটি সবাই চলে এসেছে ইরাদ একটা কোণে দাঁড়িয়ে কথা বলছে রাহুলের সাথে। প্রায় সন্ধ্যা গড়িয়ে আসছে, সবাই বেশ হাসিখুশি একে অপরের সাথে খোস গল্প করতে ব্যাস্ত। এমন সময় ইরাদের চোখ গুলো মেইন এন্টারেন্সের দিকে পড়ে৷ তাকিয়ে দেখে রুহি ঢুকছে। আজ ও হাটার তেজ ঠিক তেমনি আছে, তবে চেহারার সেই ইনোসেন্সটা কমে নি কোনোদিক থেকে…….
চলবে,,