বিমূর্ত প্রতিশোধ
পর্ব ২
তারানা মরিয়ম খান(রিনি)
পরের দিনের ঘটনায় আমি খুবই আহত হলাম।আমার জা মানে লীনা ভাবী অত্যন্ত রাগী মুড নিয়ে আমায় বললেন–স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক আগানোর ক্ষেত্রে স্ত্রীর থেকে স্বামীর আগ্রহটাই বেশি থাকে এবং থাকা উচিত।আর তুমি!!ছি ছি ছি!!সিয়াম আমাকে বলতেই আমিতো লজ্জায় শেষ।সিয়ামও লজ্জায় মরো মরো অবস্থা। সেতো রীতিমতো আমাকেই দোষারোপ করতে লাগলো। ভাবীর কথাগুলো শুনে লজ্জায় আমার চোখে পানি চলে আসে।আমি কি বলবো ভেবে পাচ্ছিলাম না।তাই আস্তে করে শুধু বললাম ‘সরি’। আর অমন হবেনা।তিনি আমায় কাধে হাত রেখে বললেন–বিয়ে যেহেতু করেছেই ধরাতো দিতেই হবে।তুমি কোন টেনশন নিয়োনা।দেখো হঠাৎ একদিন তোমার ফাদে নিজেকে আটকে নিবে।তখন কিন্তু চাইলেও ছাড়াতে পারবেনা। হি হি হি!
সেদিনের পর থেকে আমি আর উনার জন্য অপেক্ষা করিনি।নিজের মত করে খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়ে পড়তাম।তিনিও উনার মতো সোফায় বসে লেপটপে কাজ করতেন।কিন্তু প্রায়ই মধ্যরাতে যখন হঠাৎ করে আমার ঘুম ভেংগে যেতো,আমি ওনাকে ঘরের কোথাও খুজে পেতাম না।পর পর বেশ কদিন ধরে এমন হওয়ায় আমি সাহস করে উনাকে খুজতে বের হলাম।খুজতে খুজতে ভাবীর রুমের কাছা কাছি চলে আসলাম।ওমা”!!সেখানে বিছানা খালি পরে আছে।না আছে ভাবী না আছে বড় ভাই!!বিছানাটা সকালে যেমন দেখেছিলাম,তেমনই পরিপাটি আছে।হঠাৎ আমার মাথায় আরেকটি বিষয় গুতাগুতি আরম্ভ করলো।এই এতদিনে একদিনও আমি আমার ভাসুরকে দেখতে পাইনি!ব্যাপারটা মনে হতেই বুকটা কেমন যেনো ভার ভার লাগছে।খুজতে খুজতে আমি বাসার সর্বশেষ কর্নারের রুমটার কাছা কাছি যেতেই কেমন যেনো গুণ গুণাণীর শব্দ কানে আসলো। আমি আস্তে করে জানালার ফাঁক দিয়ে উঁকি দিলাম।আর যা দেখলাম তাতে আমার মাথায় প্রচন্ড চক্কর খেতে লাগলো। এ আমি কি দেখলাম!!!আমার বর ও তার ভাবী মিলে আদিম খেলায় মত্ত।ওদের দেখে আমি কতক্ষণ স্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে রইলাম।আমার হার্ট প্রচন্ডরকম হিট করতে লাগলো। সারা শরীর ঘেমে একাকার।প্রচন্ড যন্ত্রনায় আমি মৃদু চিৎকার করে উঠলাম। কিন্তু দু’জন দু’জনকে নিয়ে এতটাই মগ্ন ছিলো যে,আমার চিৎকার তাদের কান অবধি পৌছায়নি।আমি দ্রুত আমার রুমে চলে এলাম।মাথা ভন ভন করে ঘুরছে।বমি বমি ভাব হচ্ছে।দ্রুত ওয়াশরুমে যেতে না যেতেই হর হর করে বমি করে দিলাম।দাড়িয়ে থাকার শক্তটুকুও হারিয়ে ফেলেছি।কোনমতে কমোডে বসলাম।কতক্ষণ ধরে চিৎকার করে কাদলাম আর বাবাকে গালি দিলাম তা ঠিক মনে নেই।তবে আমি আমার সিদ্ধান্ত যা নেবার নিয়ে ফেললাম।আমি আর তার সাথে রিলেশন রাখবো না।তাকে ছেড়ে দিব, ডিভোর্স দিবো!তবে সেই সাথে সাথে প্রতিজ্ঞা করলাম । যার জন্য আমি বুক ভরে ভালোবাসা জমিয়ে রেখেছিলাম সুদে আসলে ভরিয়ে দিবো বলে।সে কিনা —–??? ছিহ!! আমি তার প্রতিশোধ নিবো! খুন করে হলেও নিবো!যা আছে কপালে।
সকাল থেকেই আমার মন খারাপ।সকালের নাস্তাও করিনি।করবোই বা কি করে? মহিলাকে দেখলেই আমার বমি আসে।ওনার রান্না করা খাবার খাবো কি করে? আমার মন খারাপ বুঝতে পেরে তিনি আমায় শপিংয়ে নিয়ে যেতে চাইলেন। আমি উনার কথা না শুনে পাল্টা জিজ্ঞেস করলাম –ভাইয়া কি বাসায় আসেন না? বিয়ের পর একদিনও যে দেখলাম না।আমার প্রশ্নে তিনি কিছুটা থত মত হলেন।তড়িঘড়ি করেই জবাব দেন –ও চিটাগং থাকে, মাসে একবার বাসায় আসে।জরুরী কাজ থাকায় এবার একটু লেইট হচ্ছে।আমি পুনরায় জিজ্ঞেস করার আগেই তিনি চট করে আমার সামনে থেকে চলে এলেন।আমিও ব্যাপারটা এখানেই স্টপ করে দিলাম।সারাদিন আর কথা হয়নি উনার সাথে।অসুস্থতার কথা বলে সারাদিনই শুয়ে রইলাম।
প্রতিদিনের মতো আমি আমার মত করে ঘুমিয়ে পরলাম। উনি সোফায় বসে লেপটপ চালানোর ঢং এ ব্যাস্ত। মাঝ রাতে কারো গাঢ় স্পর্শে আমার ঘুম ভেংগে গেলো।তাকাতেই দেখি তিনি আমায় কাছে টানার চেষ্টা করছেন।ওনার স্পর্শে আমার গা গুলিয়ে উঠলেও আমি স্বাভাবিকভাবে ছাড়াতে ছাড়াতে বললাম—–আমার পিরিয়ড চলছে।উনি বিরক্তির ভংগিতে বললেন—-ধ্যাৎ!!কতদিন পর বউয়ের কাছে আসলাম।আর এখনই বালের পিরিয়ড চলছে!কথাটা বলেই অন্য পাশ ফিরে শুয়ে রইলেন। পাশা পাশি আমিও ভাবছি কীভাবে এ নরক থেকে মুক্তি পাবো।
দেবর ভাবীর রোমান্স আমি বহু শুনেছি।কিন্তু এমনটি যে আমার ক্ষেত্রেও ঘটবে সেটা কল্পনাতেও আসেনি।বিকৃত রুচির দু’জনকে দেখলেই আমার গা গুলিয়ে উঠে, বমি আসে।ইচ্ছেতো করে দু’জনেরটা কেটে আগুন ধরিয়ে দিই।তোরা যখন এমনটা করবি,তাহলে আমার জীবনটা কেন নস্ট করলি?
আমি এ কদিনে কথায় কথায় সবার সম্পর্কে একটু একটু জেনেছি। তাই পরদিন বান্ধবীর ক্যাম্পাসে যাবার নাম করে বাসা থেকে বের হলাম।ভাবী ডাইনী প্রথম রাজি না হলেও পরে কি মনে করে রাজি হলেন।তবে তিনি আমার সংগে ওনার দেবরকে নিয়ে যেতে বলেই ওনাকে কল করতে নেন।আমি দ্রুত মোবাইল কেড়ে নিয়ে ওনাকে জড়িয়ে ধরি।সাত পাচ বুঝিয়ে দ্রুত বাসা থেকে বের হই।
ধানমন্ডি স্কলে যাই প্রথম।সেখানে আমার ননাস অর্থাৎ আমাদের বড় আপার সাথে সাক্ষাৎ করি।আমার পরিচয় দিতেই তিনি আমায় লোকজনের কাছ থেকে কিছুটা আড়ালে নিয়ে এলেন।আড়ালে যেতেই আমি ওনাকে জড়িয়ে কান্না করে দেই।তিনি আমার চোখ মুছিয়ে দিয়ে আধাবেলার ছুটি নিয়ে আমাকে বাসায় নিয়ে এলেন।তিনি আমার কথা শোনার পাশাপাশি এমন কিছু বললেন যা শুনে রীতিমতো স্তব্ধ হয়ে রইলাম।ওনার কাছ থেকে জানলাম ভাইয়া ও ভাবীর চার বছরের রিলেশনের পর বিয়ে হয়।বিয়ের চার মাসের মাথায় ভাইয়া উনার অফিস থেকে দু’মাসের জন্য ট্রেনিং এ কোরিয়া যান।সেখান থেকে ফেরার পরই টের পান সব এলোমেলো হয়ে গেছে।বাড়ির মান সম্মানের দিকে তাকিয়ে টু শব্দও করেন নি।দু’বছরের বিবাহিত জীবনের এক বছর ধরে বড় আপার বাসায়ই থাকেন।সিয়াম মানে আমার বর অত্যন্ত উচুমানের বেয়াদব বলে ভাইয়াও আর সে বাড়িতে যাননি। আরো অনেক অনেক অজানা তথ্য জানার পাশাপাশি এতটুকু বুঝতে পারলাম উনারাও দেবর ভাবীর প্রতি অনেক অসন্তুষ্ট। বড় আপা আমাকে এমন কিছু পরামর্শ দেন যাতে আমার স্পস্ট মনে হল তিনিও দু’জনের উচিৎ শিক্ষা দিতে চান।আমিও বেশ খুশি হলাম।কারণ আমার প্রতিশোধ নেয়ার পথ যেন অনেকাংশে সহজ হয়ে এলো।
চলবে….