বিমূর্ত প্রতিশোধ
পর্ব ৬
তারানা মরিয়ম খান (রিনি)
চোখটা মাত্রই লেগেছিল। হঠাৎ কেউ শক্ত করে জরিয়ে ধরতেই ভয়ে কেপে উঠলাম। আমাকে ভয় পেতে দেখেই সাইম পাশ ফেরাতে ফেরাতে বলছে-
—-আরেহ,পাগলি!আমি!!তোমার সাইম!!
“” তোমার সাইম””ছোট দুটো শব্দই যথেষ্ট ছিলো ঐ মুহূর্তে আমাকে পাগল করার জন্য। তবু্ও একটু ভাব নিয়ে তাকালাম তার দিকে।সাইমের মায়াবী চাহনি দেখে বুকের ভেতরটায় টিপ টিপ করতে লাগলো। আমাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে-
“” আজকে আমাকে একটু আদর করবেন “” আমার বলা কথাটা রিপিট করে কপালে আলতো করে তার ঠোঁটের স্পর্শ একে দেয়।তারপর আমাকে বুকে চেপে নিয়ে বলতে থাকে —আদর করবো!! অ-নে-ক আদর করবো!! সারাজীবন আদর করবো!!আল্লাহ যতদিন বাচিয়ে রাখবে ততদিন আদর করে যাব!!আদরের জিনিসই তো তুমি আমার!!কিন্তু একটা শর্ত!! আমার প্রশ্নের অপেক্ষা না করে নিজেই বলে ফেলে –আজ থেকে কোন আপনি টাপনি বলা যাবে না!!টোটালি নিষেধ!! এখন থেকে শুধুই তুমি”!
নাও,এবার বলো, তুমি আমায় অনেক আদর করে দিবে!
সাথে সাথেই জিভ কেটে বললাম—আমি পারবো না!লজ্জা করে!
—ইশ!!!কি আমার লজ্জাবতী লতাগো!!আদরের আবদার করে এখন আবার লজ্জা পাচ্ছেন!!
আমি কিছু বলতে যাবো।সেই সুযোগ আর হয়ে উঠেনি।তার আগেই সে আমাকে ছোটো ছোটো চুমুতে ভরিয়ে দিতে লাগলো। যদিও স্বামীর আদর সম্পর্কে আমার ধারণা নেই।তবে দু’একজন বান্ধবীর কাছ থেকে কিছুটা জানতে পেরেছি।কিন্তু সাইমের আদরে বন্যতার কোন ছাপই ছিলোনা।তারপরও সাইমের প্রতিটি স্পর্শে আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি।পাগল করে দিচ্ছে আমায় সাইম।এত্তো ফিলিংস আমার কোত্থেকে আসলো??? আমিও সাইমকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে পাগলের মতো রেসপন্স করছি।আমার ২৫ বছরের জীবনে তিল তিল করে জমানো ভালোবাসাটুকু আমি উজাড় করে সাইমকে দিচ্ছি।সাইমই যে তার পুর্ণ হকদার।তাইতো সুদে আসলে মিলিয়ে দিচ্ছি।ক্রমে ক্রমে সাইম আমাকে ভালোবাসার শেষ সীমানায় নিয়ে গেলো।নিয়ে গেলো ভালোবাসার সর্বোচ্চ শিখরে।
আজ আমি তৃপ্ত,পরিতৃপ্ত!পুর্নাঙ্গ নারী। আমি খুশি!অনেক খুশি!!খুশিতে চোখে পানি চলে এসেছে।খোদার কাছে লাখো, কুটি শুকরিয়া, সাইমের মতো অমন ভদ্র মানুষের ভালোবাসায় আমার কুমারী জীবনের অবসান ঘটে। আমি আজ পুর্ণাংগ নারী! ভাবতেই সাইমকে ফের চুমু খেতে আরম্ভ করলাম।সাইমও আমার কপালে ছোট্ট করে চুমু একে দিয়ে হাসতে হাসতে বলতে লাগলো —করছো কি???আমার টুনটুনি পাখি!!আমার ইনএকটিভ ইন্সট্রুমেন্ট গুলাতো ফের একটিভ হয়ে যাচ্ছে!!আবার কিছু হলে কিন্তু আমাকে দোষ দিতে পারবা না!!হা হা হা!!!
আমি লজ্জায় সাইমের বুকে বিড়াল ছানার মতো গুটিয়ে শুয়ে রইলাম। সাইম আমার চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে।আমরা দু’জনেই চুপচাপ শুয়ে আছি।এভাবে কিছুক্ষণ থাকার পর সাইম বলতে লাগলো —আমরা দুজন মিলে এমন একটা রাজ্য বানাবো, যেটার মূল ভিত্তি হবে বিশ্বাসযোগ্য ভালোবাসা। আমরা ঝগড়াঝাটি করবো, রাগারাগি করবো, মান অভিমানও করবো। কিন্তু কখনো কেউ কাউকে ছেড়ে যাবো না।ঝগড়াঝাটি, মান অভিমান যা-ই থাকুক না কেন, দিন শেষে আমাদের স্থান হবে একই বেডে,একজন আরেকজনের বাহুবন্ধনে।তুমি রাগ করলে আমি চুপ থাকবো আর আমি রাগ করলে তুমি চুপ থাকবে।উভয়ই সম্পর্কের শতভাগ যত্ন নিবো।সম্পর্কটিকে এমন ভাবে পাকাপোক্ত করবো, মৃত্যু নামক ঝড় ব্যাতিত আর কোনো ঝড়ই যেনো আমাদেরকে আলাদা করতে না পারে।
তার কথাগুলো আমার এত্তো ভালো লাগছিলো যে,আমি আবেগে বলেই ফেলি–আপনার কি খেয়ে দেয়ে কোন কাজ নেই??সারাক্ষণ আমাকে পাগল বানানোর পরিকল্পনা!! একবার ভালোবেশে,আরেকবার মিস্টি মিস্টি কথা বলে!!
সে হেসে আবার চুমু খেতে খেতে বলে –শুধু কি তোমাকে পাগল বানানো!! আমার নিজেরও যে পাগল হতে ইচ্ছে করছে!! আসো!!আরেকটু কাছে এসো!!
—আমিতো কাছেই, আপনার বুকের মধ্যে!!
—উহুম!!আরোও কাছে!!আরো অ-ন-ক কাছে!!!
—আর কতোটুকু কাছে???
—ততটুকু কাছে!! যতটুকু কাছে এলে তোমার নিঃশ্বাস আর আমার নিঃশ্বাসের মধ্যে কোন পার্থক্যই থাকবেনা!! তোমার হৃদ স্পন্দন আর আমার হৃদ স্পন্দন মিশে একাকার হয়ে যাবে ততটুকু কাছে এসো!!
এবার সত্যিই আমি পাগল হয়ে গেছি।সাইমের বুক থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে সাইমের চোখে, মুখে, নাকে, ঠোঁটে পাগলের মতো চুমু খাচ্ছি।ফলে যা হবার ছিলো আবার তা-ই হলো। সাইম আর আমি আবারও ভালোবাসার সাগরে ডুবে যেতে লাগলাম।
সকাল হতেই দু’জন ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করতে বসলাম। গতকালের ঘটনায় দুজন এতটাই লজ্জা পাচ্ছি যে একজন আরেকজনের দিকে তাকাতেই পারছিনা। আমিতো এই অজুহাত সেই অজুহাত দেখিয়ে সাইমের কাছ থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছি।নাস্তা করতে বসেও মাথা নিচু করে খেয়ে যাচ্ছি।আড় চোখে সাইমের দিকে তাকাতেই দেখি সেও কেমন করে যেন তাকিয়ে আছে।আমি কিচেনে কাজের কথা বলে চলে আসলাম। বেশি সময় পার হয়নি, সাইম পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে আমার ঘাড়ে নাক ঘষতে থাকে।নাক ঘষতে ঘষতে অভিমানী স্বরে বলে—এটা কিন্তু একদমই ঠিক হচ্ছেনা!!তুমিই প্রথম বলেছিলে আদর করে দিতে!!আদর খেয়ে এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছো!!
আমি সাইমের দিক ফিরে শার্টে র বোতাম খুলে আবার লাগিয়ে দিতে দিতে বললাম—ঠিক আছে জনাব,এখন থেকে আর আদর করতে বলবো না!
—-ইশ!!!সখ কতো!! বললেই হলো!! ঠিক আছে এখন থেকে তোমার বলতে হবে না!!গতরাতে আদরের লাইসেন্স পেয়ে ফেলেছি!!! হা হা হা!!
দুজনেই দু’জনকে জড়িয়ে ধরলাম।
আমাদের গোছগাছ কৃত জিনিসপত্র গুলো তে আবার চোখ বুলিয়ে নিলাম।দেখে নিলাম কোন কিছু বাদ পরেছে কিনা।ফ্লাইট এর দু’ঘন্টা আগেই আমরা চলে এলাম এয়ারপোর্টে। আমাদের আসার কিছুক্ষণ বাদেই বড় আপা ও দুলাভাই চলে এলেন।আমাদের দুজনের চোখেই পানি।বড় আপা দুজনের মাথা ই হাত বুলিয়ে দিতেই কান্নার বেগ বেড়ে গেলো। বড় আপাও কাদতে লাগলেন।আমাদের সবাইকে কাদতে দেখে দুলা ভাই বলতে লাগলেন –কাদছো কেনো??নো কান্নাকাটি ডু ফর্তি!!
বড় আপার দিকে তাকিয়ে–তুমি কাদছো কেন বেগম?? তুমি তো আর বিদেশে যাচ্ছো না!!
বড় আপা কটমট করে দুলা ভাইয়ের দিকে তাকাতেই তিনি পাটির সবগুলো দাত বের করে হাসি দিয়ে বলেন–আমি যাবার কথা বলি নাই তো!!বলেছি তোমার স্কুল বন্ধ থাকলে তো, তুমিও কিছুদিনের জন্য বিদেশ থেকে ঘুরে আসতে পারতে।হি হি হি!!
খালি শুধু শুধু আমায় ভুল বোঝো!!
বড় আপা ফের চোখ রাংগাতেই দুলাভাই পুনরায়
আমাদের দিকে তাকিয়ে বলেন —দেখ ভাই ও বোন আমার!!দুজন যাচ্ছো।ফিরে কিন্তু দুজনে আসা যাবে না!আসতে হবে কিন্তু দুয়ে দুয়ে চার, চারে চারে আট,আটে আটে ষোলো!! না না!!!বেশি হয়ে যাচ্ছে!দুয়ে দুয়ে চারজন মিলে আসলেই হবে!!দুলা ভাই এর কথা শুনে আমরা সবাই জোরে হেসে দিলাম।
চলবে.
.