মেয়েটার ডান্স দেখে প্রেমে পড়েছিলাম। এরপর তিন বছর রিলেশনের পর আজ বিয়ে করলাম।
আমি বাসর ঘরে প্রবেশ করলাম। বিপাশা বঁধূ সেঁজে খাটে বসে আছে। আমাকে দেখে বিপাশা খাট থেকে নেমে নমস্কার করলো। আমি বিপাশাকে তুললাম। নিজেকে খুবই ভাগ্যবান মনে হচ্ছে।
বাসর রাতে স্ত্রীর যেকোন ইচ্ছে পূরণ করতে হয়। তাই আমি বিপাশাকে বললাম,
বলো তুমি কি চাও? যা চাইবে তাই দিব।
বিপাশা বলল,
আমাকে সাউন্ড বক্স কিনে দিবে। সেই সাউন্ড বক্স চালিয়ে ডান্স প্রাকটিস করব।
যেহেতু বিপাশার নাচ দেখে তাকে ভালো লেগেছে। তাই কোনকিছু না ভেবে বললাম,
ঠিক আছে কিনে দেব। যতখুশি নাচ প্রাকটিস কইরো।
বিপাশা বেশ খুশি হলো। সারাদিন বিয়ের দৌড়া দৌড়িতে শরীরটা খুব ক্লান্ত লাগছিল। তাই বিলম্ব না করে দুজনে শুয়ে পড়লাম।
শরীর ক্লান্ত তাই তারাতারি ঘুম এসে গেল।
রাত কয়টা বাজে ঠিক বলতে পারব না। হঠাৎ করে, ও মা গো বলে চিৎকার করে ঘুম ভেঙে ধরফর করে উঠলাম। কেউ আমায় ঘুসি মারছে বলে মনে হলো। বুঝতে পারলাম, ঠোঁট কেটে গেছে, একটা দাঁতে ব্যাথা করছে। লাইট জ্বালিয়ে দেখলাম, বিপাশা ঘুমাচ্ছে। তাহলে ঘুসিটা মারল কে।
হয়ত আমার মনের ভুল, স্বপ্ন দেখছিলাম। রুমে কেউ নেই যে, ঘুসি মারবে। খাটের নীচ চেক করে, লাইট অফ করে শুয়ে পড়লাম।
মাত্র ঘুম এসেছে, ঠিক তখনই আবারও ও মা গো বলে চিৎকার করে উঠলাম। নাকে খুব ব্যাথা করছে। মনে হচ্ছে, নাকে কেউ ঘুসি মারছে।
আমার চিৎকারের শব্দে বিপাশাও জেগে গেছে। বিপাশা বলল, কি হয়েছে? চিৎকার করলে কেন?
আমি নাক ধরে বসে আছি। মৃদু স্বরে বললাম,
আমাকে কে যেন ঘুসি মারছে নাকে।
বিপাশা হাসতে হাসতে বলল,
এই ঘরে কি কেউ আছে যে, ঘুসি মারবে? স্বপ্নে কেউ ঘুসি মারছে, তুমি ভাবছ বাস্তবে।
আমার নাক দেখিয়ে বললাম,
“এই দেখো, নাক ফুলে গেছে।
বিপাশা অবাক হয়ে বলল,
ও মা, তাই তো। নাক ফুলে লাল হয়ে গেছে। কিন্তু ঘুসি কে মারবে। দরজা, জানালা সব বন্ধ।
ছোট সময়ে ভূত প্রেতের কথা শুনেছি। এমনও তো হতে পারে, এটা কোন ভূতের কাজ। কেমন যেন ভয় ভয় করছিল। রাত বেশি বাকি ছিলনা, তাই আর ঘুমালাম না। বাকি রাত টুকু বিপাশা আর আমি গল্প করে কাটিয়ে দিলাম।
পরদিন সকালে আমার নাক ফুলে গেছে বেশ। লজ্জায় রুম থেকে বের হতে পারছি না। বাসর রাতে নাক ফুলে গেছে, এটা নিয়ে বেশ হাসি তামাশাও হচ্ছে।
দিনটা কোন রকমে কেটে গেল। আবার সেই ভয়ের রাত এলো। ভয়ে ভয়ে শুয়ে পড়লাম। ঘুম আসল বেশ দেরিতে। মাঝ রাত্রিতে গত রাতের মতো চিৎকার করে উঠলাম। এইবার আমার চোখ গেছে। চোখে ঘুসি মারছে। ডান চোখে দেখতে পারছিনা।
বিপাশাও জেগে গেছে। বলল, কি হলো?
আমি বললাম, চোখে কে যেন ঘুসি মারছে।
বিপাশা এবার কিছুটা ভিতু স্বরে বলল,
আমাকে তো মারল না। শুধু তোমাকে মারে!
কিছুক্ষন পর শুয়ে পড়লাম। বিপাশা ঘুমিয়ে পড়ছে। আমার ঘুম আসল না। জেগে আছি। বাইরের লাইটের আলোয় রুম কিছুটা আলোকিত, সবই দেখা যায়। আমি ঘুমের ভান করে শুয়ে রইলাম। আর চোখে চেয়ে আছি দেখার জন্য, কি ঘটে।
এভাবে বেশ কিছুক্ষন চেয়ে আছি। হঠাৎ দেখি, বিপাশার হাত নড়ছে। আমি শোয়া থেকে উঠে বসলাম। OMG এটা আমি কি দেখছি। বিপাশা হাত দিয়ে আমার দিকে ঘুসি মারার মতো করছে। তার দুই হাত দুই দিকে ছুড়ে মারছে।
বেশ কিছুক্ষন পর বুঝতে পারলাম, বিপাশা এটা ইচ্ছে করে করছে না। দিনের বেলা নাচের প্রাকটিস করে, তাই ঘুমের মধ্যেও হাত নরাচরা করছে। কিন্তু এমন চলতে থাকলে তো জীবন শেষ হয়ে যাবে আমার, বৌ এর হাতে মার খেতে খেতে।
আমি সোফায় গিয়ে শুয়ে পড়লাম। মনে মনে ভাবলাম, এই নিয়ে বিপাশাকে কিছু বলব না। কারণ, এটা সে ইচ্ছে করে করছে না, ঘুমের মধ্যে করছে। এরচেয়ে ভালো, কাল ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করব।
পরদিন সকালে, Dr.Pk এর কাছে গেলাম। ফোলা নাক, আর ফোলা চোখ দেখিয়ে, পুরো ঘটনা খুলে বললাম।
ঘটনা শুনে Dr.Pk বলল,
এটা এমন কোন জটিল সমস্যা না। এরকম হতেই পারে। এটা খুবই সাধারণ ব্যাপার। এই সমস্যা সমাধানের জন্য, আপনার বউ এর নাচের প্রাকটিস বন্ধ করে দিন, আর আপনি বউ থেকে রাতে আলাদা ঘুমান।
নাচের প্রাকটিস বন্ধ করা যাবে, কিন্তু নতুন বউ থেকে আলাদা ঘুমাবো এটা কি মানা যায়। বিয়ে করছি কি বউ থেকে আলাদা ঘুমানোর জন্য নাকি। আমি বিরক্ত হয়ে বললাম,
“নাচের প্রাকটিস বন্ধ করা যাবে, কিন্তু বউ ছাড়া ঘুমাতে পারব না। বিকল্প কিছু করেন?”
মাথা চুলকাতে চুলকাতে Dr.Pk বলল,
“তাহলে এক কাজ করুন, মাথায় হেলমেট পড়ে ঘুমান।”
হাস্যকর হলেও, বুদ্ধিটা খারাপ না। বউ ছাড়া ঘুমানোর চেয়ে, হেলমেট পড়ে বউ এর সাথে ঘুমানো ভালো। বাড়িতে আসার পথে, হেলমেট কিনে নিয়ে আসলাম।
বাড়ি এসে রুমে ডুকতেই দেখি, বিপাশা পা উচু করে আছে। আমি বললাম,
কি হয়েছে? পা উচু করে আছ কেন?
বিপাশা বলল, ইউটুব থেকে দারুন এক নাচ শিখলাম, পায়ের নাচ। হাত নড়বে না, শুধু পা দিয়েই নাচতে হবে।
রাতে ঘুমানোর আগে, মাথায় হেলমেট পড়লাম। বিপাশা আমার মাথায় হেলমেট দেখে, হাসতে হাসতে বলল, “হেলমেট পড়ে ঘুমায়! এই প্রথম দেখলাম।”
আমি বললাম,
“সামনে বিশ্বকাপ খেলা, যদি চান্স পেয়ে যাই। আমি তো, ইউকেট কিপার। আর ইউকেট কিপারের মাথায় সব সময় হেলমেট থাকতে হয়। তাই আগে থেকে অভ্যাস করছি, পরে যেন অসুবিধা না হয়।”
মাথায় হেলমেট পড়ে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়লাম। কপালে দূঃখ থাকলে যা হয়, মাঝরাত্রিতে ও মা গো বলে চিৎকার করে উঠলাম। এমন জায়গায় লাথি মারছে, দম নিতে পারছি না, শ্বাসকষ্ট হচ্ছে।
চিৎকারে বিপাশা জেগে গেছে। আমি কোন রকমে বললাম, “বিধবা হইতে না চাইলে, আমার নাক আটকে ধরো, দম আটকে গেছে, শ্বাস নিতে পারছি না।”
বিপাশা আমার নাক চেপে ধরল। খুবজোর বেঁচে গেছি, শ্বাস নিতে পারছি এবার। তবে, যেখানে লাথি মারা হয়েছে, সেখানে ধরে বসে আছি, খুব ব্যাথা করছে।
রাগ করে সোফায় গিয়ে শুয়ে পড়লাম।
এরপর আর কোন রাতে এমন ঘটনা ঘটেনি আমার সাথে। এই ঘটনার পর থেকে আমি অনেক সচেতন হয়ে যাই। এখন ঘুমানোর আগে,
“মাথায় হেলমেট, বুকে বুলেট পেপার আর নীচে গার্ড পড়ে ঘুমাই।”
রম্য গল্পঃ # ডান্সিং বউ
– সুবোধ মন্ডল
অন্যরকম বউ গল্পের লিংক