রিহানের আম্মুর চুল হালকা কুঁকড়ানো হলেও যথেষ্ট লম্বা এবং কালার ন্যাচারালি ব্ল্যাক। আমার শার্টের বোতামে যে চুলটি পাওয়া গেছে সেটি রিবন্ডিং করা স্ট্রেইট চুল। চুলটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১ ফুট যেখানে রিহানের আম্মুর চুলের এভারেজ লেংথ ২ ফুট। সুতরাং চুলটি রিহানের আম্মুর নয় সেটি মোটামুটি নিশ্চিত।
চুল বিষয়ে রিহানের আম্মু এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেনি। তবে জব্দকৃত চুলটি সে হেফাজতে নিয়েছে। পুঙ্খানুপুঙ্খ বিচার বিশ্লেষণের জন্য তার কিছুটা সময় দরকার। শতভাগ নিশ্চিত না হয়ে একশানে যাবে বলে মনে হচ্ছে না।
প্রাপ্ত চুলটি তিফার আম্মুর চুলের সাথে দৈর্ঘ্যে কিছুটা মিল থাকলেও কালারে মিল নাই। উনার চুল অসাধারণ মিহি এবং সিল্কি। সুইটি ভাবির চুলের আকার আকৃতি এমন না, প্রীতি ভাবি থাকেন তিন তলায় তার চুল আমার শার্টের বোতামে গেঁথে যাওয়ার মতো নৈকট্য এখনো লাভ করতে পারেনি।
তাহলে চুলটি কার? এলো কোত্থেকে?
বাতাসে ঝড়ের পূর্বাভাস, রিহান বাসা পরিত্যগের পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। ঝড় শুরু হলেই সে অদৃশ্য হয়ে যাবে। আমার দুর্দিনে বেআদবটাকে কোন দিন পাশে পাইনি। এই বয়সে এতো স্বার্থপরতা কোত্থেকে শিখেছে কে জানে। আমি কি তোর দুর্দিনের পাশে থাকিনিরে বদমাইশ।
জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আমাকে রিহানের আম্মুর সুরম্য কক্ষে ডাকা হয়েছে। সুনশান নিরব রুমের ফ্যান অফ তবে এসি বাড়িয়ে তাপমাত্রা ১৮ ডিগ্রী সেলসিয়াসে নামানো হয়েছে। দরজা বন্ধ কিন্তু এখনো লক করা হয়নি। টেবিলের উপর স্বচ্ছ কাচের গ্লাসে এক গ্লাস ঠান্ডা পানি রাখা আছে। জিজ্ঞাসাবাদের সময় পরিস্থিতি ভিন্নখাতে চলে গেলে মুখে পানি ছিটানো হবে ।
আবু গারিব কারাগারের মতো একটা আবহ তৈরি হয়েছে। আমি বুকে হাত রেখে all is well জপছি।
হঠাৎ বাসার সদর দরজা খোলার শব্দ শুনা গেল। বড়ই গম্ভীর সে ধ্বনি, যমদূত মনে হয় চলে এসেছে। কিন্তু না, আমাদের ইমিডিয়েট নিচের ফ্লাটের জোবাইদা গুলশান আরা ভাবির কণ্ঠ শুনা যাচ্ছে।
উনার তো এমন সময় আসার কথা না। তাছাড়া রিহানের আম্মুর সাথে উনার সম্পর্ক অত্যন্ত খারাপ। এমন সময় জোবাইদা ভাবি আসার নেপথ্যে কারণ কী?
রিহানের আম্মু এগিয়ে গিয়ে জোবাইদা ভাবিকে রিসিভ করলেন। কক্ষ ত্যাগের অনুমতি না থাকায় আমি রুম থেকেই তাদের কথপোকথন শুনার চেষ্টা করছি।
আলাপচারিতার এক পর্যায়ে জোবাইদা ভাবি আমার বাদামি রঙের থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট ও সানি জী’র পোট্রের্ট করা আন্ডারওয়্যারটা রিহানের আম্মুর হাতে দিয়ে বললেন,
– অনি ভাইয়া ভুল করে আমাদের বাসায় ফেলে চলে আসছেন।
এসব আমি কী শুনছি?
আমি কখন জোবাইদা ভাবির রুমে গেলাম? জীবনে তো অনেক যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি কিন্তু যুদ্ধশেষে অস্ত্র ফেলে চলে এসেছি এমন নজির নাই। অনেক বড় ষড়যন্ত্র হচ্ছে আমাকে নিয়ে। রিহানের আম্মুকে বিষয়টি বুঝিয়ে বলা দরকার। কিন্তু তাকে বুঝানোর সাধ্য কার?
বদরাগী মহিলা কিচেনের দিকে যাচ্ছে কেন? এখন যদি আমাকে পিস পিস করে গুম করে ফেলে স্বাক্ষী দেওয়ার মতোও কেউ নাই! গুমট অন্ধকার ঘিরে ধরেছে আমাকে। রিহান তুই কইরে বাপ?
ধারাবাহিক রহস্য উপন্যাস
“চুলের গল্প ”
to be continued
জোবাইদা ভাবির চুল অনেকটা কদ্দুস বয়াতির বাবরি চুলের মতো! আমাকে ফাঁসানো চুলটি কোনো ভাবেই জোবাইদা ভাবির নয়। তাছাড়া আমার রুচির এতো অধঃপতন হয়নি যে জোবাইদা ভাবির রুক্ষ শুষ্ক চুল শার্টের বোতামে গেঁথে রিহানের আম্মুর কাছে ধরা খাবো। তিফার আম্মু হলেও একটা কথা ছিল।
বিষয়টি রিহানের আম্মুকে সবিস্তারে আলোচনা পূর্বক বুঝানোর চেষ্টা করছি কিন্তু সে বুঝতে পারঙ্গম হচ্ছে না। নিজের স্বামীর কথা যে নারী সহজে উপলব্ধি করতে পারেনা তার সম্পর্কে বিশেষ কিছু বলার নাই।
একরোখা মহিলাকে শত বুঝিয়েও চুল সমস্যার কোনো সমাধান হয়নি বরং সমস্যা আরো ঘনীভূত হয়েছে। তার সুকঠিন জেরার মুখে পতিত হয়েছি।
একের পর এক প্রশ্নবানে জর্জরিত করছে। উত্তর লুকানোর কোন স্কোপ নাই। তার হাতে সুপারি কাটার একটা ধারালো যাতি দেখা যাচ্ছে।
ভংচং উত্তর দিলে আমার দেহের বিশেষ বর্ধিতাংশ কেটে ফরমালিন মিশ্রিত জলে চুবিয়ে কৌটায় ভরে রাখবে বলে হুশিয়ারী উচ্চারণ করেছে।
জলজ্যান্ত মানুষের দেহাবশেষ দিয়ে এই প্রথম পৃথিবীতে কোন দৃষ্টান্ত স্হাপন হতে যাচ্ছে। রিহানের আম্মুর ধারনা আমার জীবাশ্ম জনসম্মুখে প্রদর্শন করলে পৃথিবীর অন্যান্যদের সুশিক্ষা হবে।
রিহানের আম্মু এক কথার মানুষ, সে মুখে বলেছে কিন্তু বাস্তবায়ন করেনি এমনটা হয়নি ৷ অনেক বড় মুসিবতে পতিত হয়েছি, পরিত্রাণের উপাই এখনো অজানা।
বদ মহিলা ঠাণ্ডা দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
– তাহলে তুমি বলতে চাচ্ছো চুলটি জোবাইদা ভাবির নয়?
– একজেক্টলি, উনার চুল আমার শার্টের বোতামে কেন আটকাবে?
– তাহলে চুলটি এলো কোত্থেকে?
– সেটা আমারও প্রশ্ন, চুলটি এলো কোত্থেকে?
– প্রশ্নের উত্তর প্রশ্ন দিয়ে দিবে না অনি! সত্যি করে বলো কোথায় গিয়েছিলে ?
– বিশ্বাস করো বাসা আর অফিস ছাড়া আমি কোথাও যাইনা!
– তাহলে কি হাওয়া থেকে চুলটি তোমার গায়ে লেগেছে?
– হ্যাঁ হতেও পারে, এই নিরস নগরের কোনো বেখেয়ালি তন্বীর ভঙ্গুর কেশ উড়তে উড়তে আমার বুকের বোতামে আঁটকে গেছে।
রিহানের আম্মু আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না। টেবিলে রাখা সুপারি কাটার যাতি নিয়ে আমার দিকে ধাবিত হলো। আমি দেহের বর্ধিতাংশ রক্ষার্থে দৌঁড়ে গৃহ ত্যাগ করতে গিয়ে সদর দরজায় ধাক্কা খেয়ে ভূলুণ্ঠিত হলাম।
রিহানের নির্মম মাদার আমার উপর চেপে বসে অস্ত্রোপচার করতে উদ্ধত হয়েছে। ঠিক এমন সময় দেব দূতের মতো চারতলার রোজার আম্মুর উদয় হলো।
রোজার আম্মুর হাতে আমার শার্টের মতো একটা ফুল হাতা নীল শার্ট। তিনি শার্টিটি রিহানের আম্মুর হাতে দিয়ে বললেন,
– স্যরি ভাবি, ছাদে কাপড় শুকাতে দিয়েছিলাম। আমার মেয়ে ভুল করে তার বাবার শার্ট ভেবে অনি ভাইয়ার শার্ট নিয়ে গেছে। এইযে অনি ভাইয়ের শার্ট রোজার আব্বুর শার্টটা মনে হয় আপনাদের বাসায়!
আমি জোড়ে নিঃশ্বাস নিয়ে নিজের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ চেক করলাম। না কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি, ঈশ্বরের কৃপায় সবই অক্ষত আছে। বড় বিপদ থেকে পরিত্রাণ মিলেছে। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন
রহস্য উপন্যাস
চুলের গল্প