এক মুঠো কাঁচের চুরি
পর্ব ৬
লেখিকা Fabiha bushra nimu
দুপুর দু’টোর সময় ঘুৃম ভাঙে ইফাদে’র উঠে গোসল করে’।মা’য়ের কাছে আসলো ইফাদ’।রোকেয়া বেগম ডাইনিং রুমে বসে আছেন’।নামে-ই ডাইনিং রুম,ডাইনিং রুমে,নেই কোনো ডাইনিং টেবিল’।মাটিতে শীতল পাটি বিছিয়ে খেতে বসে সবাই’।ইফাদ’কে দেখে রোকেয়া বেগম বললেন’।
–আয় বাবা খেতে বস’।আজকে আমি নিজে হাতে তোর জন্য রান্না করছি’।
–কোথায় আমার তোমার ওপরে রাগ করে থাকার কথা’।উল্টো তুমি আমার ওপরে রাগ করে দুইটা বছর কথা বললে না’।এখন তোমার বাসায় আমার থাকাই উচিৎ না’।
–অনেক বড় বড় কথা হয়েছে’।তুই আমার ছেলে।তোর ওপরে রাগ করার অধিকার আমার আছে’।আমি তোর ওপরে রাগবো না তাহলে,আলালের ছেলে মতিনে’র ওপরে করবো’।
ইফাদ হেসে দিয়ে বলল’।
–না তুমি আমার আম্মু তুৃমি আমার ওপরে রাগ করবে’।কি’ রান্না করেছো’।জলদি খেতে দাও।আমার অনেক ক্ষুদা লেগেছে’।
–আজকে তোকে একা খেতে দিচ্ছি’।কিন্তু কাল থেকে আমাদের সাথে খাবি’।এখন আমরা সবাই মিলে একসাথে খেতে বসি’।বলেই রোকেয়া বেগম খাবার বেড়ে ইফাদে’র সামনে দিল’।ইফাদ হাত ধুইয়ে খেতে বসলো’।
–তোমাদের বাসায় এই নিয়ম কবে থেকে চালু হলো’।আগে যে,যার মতো খেয়ে নিতে’।
–তানহা আমাদের অভ্যাস বদলে দিয়েছে’।একা একা খেতে বসলে তৃপ্তি পাওয়া যায় না’।সবাই মিলে একসাথে খাবি’।দেখবি অনেক আনন্দে’র সাথে খেতে পারবি’।আর মনে তৃপ্তি-ও পাবি’।
তানহা শাশুড়ী’র জন্য গরম পানি করছে’।রোকেয়া বেগমে’র ঠান্ডা লাগা একটা ভাব।তাই তানহা রোকেয়া বেগম’কে গরম পানি করে দেয়’।ইফাদ আড়চোখে একবার তানহা’কে দেখে নিল’।তারপরে খাবার খেতে মনোযোগ দিল’।খাওয়া’র সময় কথা বলতে নেই’।রোকেয়া বেগম-ও চুপ হয়ে গেলো’।
ইফাদে’র অর্ধেক খাওয়া শেষ হয়ে গেছে’।হঠাৎ করেই রোকেয়া বেগম বলে উঠলেন’।
–সামনে শুক্রবার ইয়াদের সাত বছরে’র মৃত্যুবার্ষিকী পূর্ণ হবে’।কিছু মাদ্রাসার এতিম ছেলে নিয়ে আসিস’।আমি নিজ হাতে রান্না করে ওদের খাওয়াবো’।
ইফাদ খাওয়া বন্ধ করে দিল’।নিমিষেই চোখ দু’টো লাল হয়ে গেল’।খাবার সরিয়ে হাত ধুইয়ে ফেললো’।রোকেয়া বেগমে’র হুস আসলো’।খাওয়া’র সময় ছেলেকে কি’ কথা বলে ফেললেন’।তানহা গ্লাসে করে গরম পানি নিয়ে আসছিল’।রোকেয়া বেগমে’র কথা শুনে দাঁড়িয়ে ছিল’।ইফাদকে উঠে যেতে দেখে ইফাদে’র হাত ধরে বলল’।
–খাবার ছেড়ে যাবেন না’।সম্পূর্ণ খাবার খেয়ে যান’।
তানহার এই সময়ে আসাটা আগুনে ঘী ঢালার মতো হয়ে উঠলো’।ইফাদ কষে তানহা’র গালে থাপ্পড় বসিয়ে দিলো’।ইফাদে’র এমন আরচণে তানহা থতমত খেয়ে গেলো’।বিনা কারণে তার গায়ে হাত দিল’।তানহা রেখে গরম পানি ইফাদে বুকের মাঝামাঝি ছুড়ে মারল’।তবু’ও ইফাদে’র কোনো হেলদোল নেই’।তানহাকে উদ্দেশ্য করে বলল’।
–এই মেয়ে তোমার সাহস কি’ করে হয়।আমাকে স্পর্শ করার’।আমি তোমাকে অনুমতি দিয়েছি’।আমার ওপরে নিজের হুকুম ফলাতে চাও’।তাহলে এ’ বাসা থেকে বেড়িয়ে গিয়ে নিজরে হুকুৃমজারি করবে’।
রোকেয়া বেগমকে উদ্দেশ্য করে বলল’।
–মা’ তুমি এই মেয়েকে বাসা থেকে বের করে দাও বলে দিলাম’।এই মেয়ে যেনো’ আমার সামনে না পড়ে’।বলেই হনহন করে বেড়িয়ে গেলো ইফাদ’।রোকেয়া বেগম কান্না করতে করতে নিজের রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলেন’।তানহা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে দাঁড়িয়ে রইলে’।সবকিছু বুঝে ওঠার আগে-ই শেষ হয়ে গেলো’।
তানহা রুমে এসে গালে হাত দিয়ে মন খারাপ করে বসে আছে’।দুইটা বছর মানুষটা’কে নিয়ে কতটা স্বপ্ন দেখলাম’।আমার সব স্বপ্ন এক নিমিষেই শেষ করে দিল’।কখনো কথা বলবো না’।আগে যদি জানতাম খেতে বলার অপরাধে আমাকে মার খেতে হবে’।তাহলে পানিটা বেশি করে গরম করে নিয়ে আসতাম’।তানহাকে মারার সাধ মিটিয়ে দিতাম’।আমি আর থাকবো না এ,’ বাড়িতে’।কিন্তু বের হয়ে যাব কোথায়’।ভেবেই একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল তানহা’।দুনিয়ায় তার যাওয়া’র কোনো জায়গা নেই’।কার কাছে যাবে’।সবাই শেয়াল-শকুনে’র মতো ছিঁড়ে খাবে’।তাছাড়া চাচির হাতে কত মার খেয়েছি’।সেখানে থাকতে পেরেছি’।একটা থাপ্পড় খেয়ে থাকতে পারবো না’।আমি’ও তো গরম পানি ঢেলে দিয়েছি’।দরকার পড়লে আবার দিব’।এত সহজে হার মেনে নিব না’।বলেই শাড়ি হাতে নিয়ে গোসল করতে চলে গেলো তানহা’।
চৈতালি বাসায় এসে মন খারাপ করে বসে আছে’।কিভাবে স্যারকে নিজের মনের কথা বলবে’।স্যার যদি তাকে ফিরিয়ে দেয়’।তানহা ভাবি-ই আমাকে সাহায্য করতে পারবে’।আজকে বাসাটা এত চুপচাপ লাগছে কেনো’।চৈতালি মায়ের রুমে দরজা বন্ধ দেখতে পেলো’।তানহা গোসল করে চুল মুছতে মুছতে আসছিল’।চৈতালি তানহা’কে দাঁড় করিয়ে বলল’।
–ভাবি তোমার সাথে আমার কথা আছে’।আমাকে সাহায্য করতে হবে তোমার’।তার আগে বলো বাসায় কি হয়েছে।আম্মুর রুম বন্ধ কেনো’।
–চৈতালি এখন ভালো লাগছে না’।তুমি পরে আসো’।অনেক সকালে উঠেছি।আমার ঘুম পেয়েছে’।আমি ঘুমাবো’।
বলেই তানহা নিজের রুমের দিকে চলে গেলো’।চৈতালি অবাক হয়ে তানহা’র দিকে তাকিয়ে আছে’।বাসায় তো’ কিছু একটা হয়েছে’।কি’ হয়েছে আমাকে জানতে হবে’।চৈতালি তার’ মা’কে অনেকবার ডাকলো’।মায়ের কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে নিজের রুমে
গেলো’।
সন্ধ্যার আজান কানে আসতে-ই তানহা ধড়ফড়িয়ে উঠে বসলো’।এত সে’ কি করে ঘুমালো’।উঠে দ্রুত অজু করে এসে জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজে দাঁড়িয়ে গেলো’।পুরো বাসা অন্ধকার হয়ে আছে’।তানহা নামাজ পড়ে পুরো বাসায় আলো জ্বালিয়ে দিল’।অন্য দিন এই বাসায় আনন্দে ভরপুর থাকে’।আজ পুরো বাসাটা নিস্তব্ধ হয়ে আছে’।তানহা গিয়ে রোকেয়া বেগমকে ডাক দিল’।রোকেয়া বেগম দরজা খুলে,তানহাকে ভেতরে আসতে বলল’।তানহা ভেতরে আসতে-ই রোকেয়া বেগম বললেন’।
–ইফাদ বাসায় ফিরেছে’।
–জ্বী না আম্মা’।উনি এখনো বাসায় ফিরে নাই’।
–কেনো যে,খাওয়া’র সময় কথাটা বলতে গেলাম’।ছেলেটা আমার আজকে আর বাসায় ফিরবে না’।দেখি রিয়াদ’কে ফোন করি’।রিয়াদের কাছে গিয়েছে নাকি ইফাদ’।
খোলা আকশের নিচে বিশাল মাঠের মাঝেখানে হাত-পা ছড়িয়ে শুইয়ে আছে’ ইফাদ।তার পাশেই বসে আছে রিয়াদ’।
–আর কতক্ষণ এভাবে থাকবি’।শিশির পড়ে ঘাস ভিজে উঠতে শুরু করেছে’।চল বাসায় গিয়ে শুইয়ে থাকবি’।কি হয়েছে কিছু বলছিস-ও না’।
–আমি আগুনে পুড়ে ঝলসে মরে যাব’।তবু-ও নারীর রুপের আগুনে পুড়ে ঝলসে মরবো না’।নারী জাতি মানে-ই বিশ্বাস ঘাতক’।
–কি হয়েছে সেটা তো’ আমাকে বলবি’।সবাই কিন্তু এক না বুঝলি’।তুই মনের মধ্যে ভুল নিয়ে ঘুরে বেড়াস’।কেনো আমি রুপাকে ভালোবেসে বিয়ে করি নি’।কই রুপা তো’ আমার হাত ছেড়ে চলে যায় নাই’।বেকারত্বের সময় আমার পাশে থেকে আমাকে সাপোর্ট করেছে’।সেজন্য আমার সফলতায় সে’ এখন আমার স্ত্রী’।
–আমি আজকে একটা মেয়কে অকারণে মেরেছি’।এখন আমার ভিষণ অনুশোচনা হচ্ছে’।কি’ করবো বল’।সকালে আম্মু ভাইয়া’র কথা মনে করিয়ে দিয়েছে’।আর মেয়েটা আমার সামনে চলে এসেছিল।আমি রেগে থাপ্পড় মেরেছি’।আমি কোনো মেয়েকে সহ্য করতে পারি না’।মেয়ে মানুষ দেখলে-ই আমার রাগ উঠে যায়’।প্রতিশোধের নেশায় পাগল হয়ে যাই’।
–তুই একটা ভুল ধারনা মনে পুষে রেখেছিস’।আমি ভুল না হলে মেয়েটা তোর’ স্ত্রী।আমি বলি কি’ সময় থাকতে মূল্য দে’।হারিয়ে গেলে কেঁদে-ও আর পাবি না’।একটা সময় এসে তুই অনুভব করবি’।তুই-ও কাউকে ভালোবাসিস’।তাকে ছাড়া তোর দম বন্ধ হয়ে আসে’।তাকে দেখতে না পেলে,নিজেকে পাগল পাগল লাগে’।দেখিস ভাই।সবকিছু বুঝতে বুঝতে দেরি না হয়ে যায়’।
রিয়াদের কথা শুনে ইফাদ শব্দ করে হেসে উঠলো’।
–এই বছরের সেরা জোক্স ছিল এটা’।ইফাদ নাকি ভালোবাসবে’।তা-ও আবার কোনো মেয়েকে’।
–হাসিস না ইফাদ ভালোবাসা এমন এক সুন্দর অনুভূতি’।যার সাধ প্রতিটা মানুষ গ্রহণ করেছে’।কেউ বিশ্বাস করে মূল্য পেয়েছে’।আর কেউ বিশ্বাস করে ঠকেছে’।পৃথিবীতে ভালো মানুষ যেমন আছে’।ঠিক তেমন-ই খারাপ মানুষ-ও আছে’।তোর ভাই একটা খারাপ মানুষের পাল্লায় পড়েছিল’।তাই বলে তুই সবাইকে খারাপ ভাববি এটা কিন্তু ঠিক না’।যেদিন কাউকে ভালোবাসবি’।সেদিন তুই ঠিক থাকতে পারবি না ইফাদ’।মুহুর্তেই পাগল হয়ে যাবি’।সেদিন আমার কথা মনে পড়বে।কেউ চেয়ে-ও পায় না’।আর তুই পেয়ে-ও মূল্য দিস না’।
–একটু শান্তির জন্য তোর কাছে আসছিলাম’।এখন দেখি তুই-ও অশান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিস।থাক আমি অন্য রাস্তা দেখি’।
–রাগ করিস না’।স্যরি আমি আর কোনো কথা বলবো না’।এবার আমার বাসায় গিয়ে আমাকে উদ্ধার কর ভাই’।
দু’জন মিলে উঠে দাঁড়াল’।তখনই ইফাদের মায়ের কল আসলো’।রিয়াদ ফোন তুলে সালাম দিলো’।রোকেয়া বেগম সালামের উত্তর নিয়ে বলল’।
–রিয়াদ ইফাদ কি’ তোর কাছে আছে’।
–হ্যাঁ আন্টি ইফাদ আমার কাছে’।কতদিন পরে দেশে আসলো’।আজকে কিন্তু ইফাদ আমার কাছে থাকবে’।আপনি চিন্তা করবেন না’।
–আচ্ছা বাবা দেখে শুনে রাখিস।ছেলেটাকে আমার একটু বুঝাস।কিছু বুঝতে চায় না’।
–আপনি চিন্তা করবে না।আমি আছি না’।সময় করে একদিন আমাদের বাসায় ঘুরতে আসবেন’।আরো কিছুক্ষণ কথা বলে কল কেটে দিল রোকেয়া বেগম’।
পরের দিন সকাল বেলা চৈতালি কলেজে উদ্দেশ্য রওনা দিলো’।আগে গিয়ে গাছে আড়ালে লুকিয়ে পড়ল’।আজকে স্যার নিশ্চয়ই গাড়ি নিয়ে আসবে’।চৈতালি স্যার আই লাভ ইউ বলেই দৌড়ে দিবে’।এতক্ষণ হয়ে গেলো।আবির আসছে না দেখে চৈতালি চাতক পাখির মতো দাঁড়িয়ে আছে’।
–শোন রাফি উচ্চতায় তুই আমার মতো লম্বা’।ড্রেসটা-ও আমার পড়েছিস’।তুই মাক্স পরে যাবি।কেউ যেনো বুঝতে না পারে’।একদম আমার মতো করে হেঁটে যাবি’।আমি’ও দেখবো প্রতিদিন কে’ আমাকে বিরক্ত করে’।বলেই দু’জন বেড়িয়ে পড়ল’।অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে আবির আসলো’।চৈতালি মুখে হাসি ফুটে উঠলো’।কিন্তু পরক্ষনেই অবাক হয়ে গেলো’।আবির তো’ মাক্স পরে না’।একবার পরীক্ষা করে দেখা যাক’।চৈতালি স্যার আই লাভ ইউ বলে উঠলো’।কিন্তু রাফি তাকালো না’।গাছের আড়াল থেকে আওয়াজ পেয়ে আবির পেছনে দিয়ে গাছের আড়ালে গেলো’।রাফি তাকলো না দেখে চৈতালি আবার বলতে যাবে, স্যার তার আগেই কেউ চৈতালির কান ধরে সামনের দিকে ঘুরালো’।চৈতালি রেগে কিছু বলতে যাবে’।তখন-ই চৈতালির কথা বন্ধ হয়ে যায়’।হাত-পা কাপাকাপি শুরু হয়েছে’।হৃদপিন্ডের গতিবেগ ক্রমশ বেড়েই চলেছে’।হাত-পা অবশ হয়ে আসছে’।কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলল’।স্যার আপনি’।
চলবে…..