আমার তুমি
সিজন ২ পর্ব ৪
তানিশা সুলতানা
“কপাল ঠিক কি পরিমাণ ফাঁটা হলে হনুমানের ভাইয়ের সাথে নিজের আপন চাচাতো বোনের বিয়ে ঠিক হতে পারে? ভেবে দেখ
এই ফাঁটা কপাল নিয়ে আমি করবো টা কি? বিয়েতে কতো মজা করবো ভেবেছিলাম। আপির সাথে মেচিং করে হলুদের কাপড় কিনবো। লেহেঙ্গারটাও দুজন এক রকম কিনবো। আপির দেবরদের সাথে চুটিয়ে প্রেম করবো। এখন এসব কিছুই হবে না?
আমি এই দুঃখ কোথায় লুকাবো? কি করবো আমি? আমার কপাল এতোটা ফেঁটে গেলো কিভাবে?
তুলতুল আর তিথি ক্যাম্পাসের ঘাসের ওপর বসে আছে। ক্লাস চলছে ওদের। কিন্তু তুলতুল তিথিকে ক্লাসে যেতে দেয় নি। দুঃখের কথা শোনানোর জন্য এখানে বসিয়ে রেখেছে।
তুলতুল গাল ফুলিয়ে বসে আছে।
” মন খারাপ করছিস কেনো? সায়ান ক্রাশ তো হেব্বি স্মার্ট। তুই ওনার সাথেই চুটিয়ে প্রেম করিস।
তিথি তুলতুলের পিঠে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে৷ মুখের ওপর পড়ে থাকা বেবি হেয়ার গুলো ফুঁস করে ফু দিয়ে উড়িয়ে দেয় তুলতুল।
“কি বললি তুই? ওই গোমড়ামুখো হনুমানের সাথে প্রেম করবো? তাও আমি?
হুহহহ পাগলা কুত্তায় কাম*ড়ি*য়েছে আমায়? যদিও লোকটা দেখতে মন্দ না। কিন্তু স্বভাব তো ভালো না। আমি যদি ওনার সাথে প্রেম করতে যাই। ধরে প্রপোজ করলাম। উনি কি বলবে বল তো?
” শোন তুলা তোর প্রতি আমার কোনো ইন্টারেস্ট নেই। কি ভেবেছিস এভাবে আমায় ইমপ্রেস করবি? ঠাটিয়ে একটা থা*প্প*ড় মেরে সব গুলো দাঁত ফেলে দেবো তোর। ইডিয়েট একটা। যা এখান থেকে”
তিথি ফিক করে হেসে ফেলে। তুলতুল চোখ পাকিয়ে তাকায় তিথির দিকে।
“মজা লাগছে তোর? আমার দুঃখের কথা তোকে শুনিয়ে ভুল করেছি আমি। মাপ করে দিস্তা আর কখনোই বলবো না তোকে। তুইও আমার বিরোধী দলের। আমার কেউ নেই। কেউ ভালোবাসে না আমায়। আমি এতিম। এতিম খানায় দিয়ো আসিস আমায়। থাকবোই না কারো সাথে। কেউ দেখতে পারে না আমায়। সবার দুচোখের বি*ষ আমি। আমার দুঃখ বোঝার মতো কেউ নেই। সবাই শুধু মজা নিতে পারে। কেউ দুঃখের কথা শুনে শান্তনা দিতে পারে না।
বলবোই কারো কাছে দুঃখের কথা। নিজের কথা নিজের পেটেই রাখবো।
প্রলাপ বকতে থাকে তুলতুল। তিথি দুই কানে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে থাকে। কিচ্ছু বলার নেই কিছু বলতে গেলে রেডিও আরও জোরে বেজে উঠবে।
“আসসালামু আলাইকুম ভাবি।
লম্বা চওড়া একটা ছেলে ওদের সামনে এসে দাঁড়িয়ে এক গাল হেসে বলে।
তুলতুল ভ্রু কুচকে তাকায়। তিথি কান থেকে হাত নামিয়ে ছেলেটার দিকে তাকায়। তুলতুল সালামের জবাব দেয়।
” আমি আপনার কোন ভাইয়ের বউ চান্দু? যেই দেখলেন সুন্দরী দুটো মেয়ে বসে আছে তখন এসে আত্মীয় বানিয়ে দিলেন? তাও চাচি ফুফু খালা বললে মেনে নিতাম। কিন্তু তা না ডিরেক্ট ভাবি?
আল্লাহ
জীবনে প্রেম করার জন্য একটা ছেলে খুঁজে পেলাম না বিয়ে তো দুরের কথা। আর উনি কি না জামাই বানিয়ে দিলো। ভাগ্যিস জামাই পর্যন্ত থেমেছে। যদি ভাবি না ডেকে বলতো “ওমুক ভাইয়ের দশ বাচ্চার জননী ” তখন মানসম্মান কোথায় থাকতো আমার? কে বিয়ে করতো আমায়? ফাঁটা কপাল একদম তরমুজের মতো হয়ে যেতো।
তুলতুল বলে। ছেলেটা থমথমে খেয়ে যায়। তিথি কপালে হাত দেয়। তুলতুল কথা বলতে বলতে হাঁপিয়ে গেছে। তাই জোরে জোরে শ্বাস টানছে।
” ভাবি সায়ান ভাই আপনাকে শিশু পার্কে যেতে বলেছে।
ছেলেটা রিনরিনিয়ে বলে। তুলতুল চোখ বড়বড় করে তাকায়। ওই হনুমান এসেছে? এখন কি হবে? কেনো এসেছে? দুই দিন দেখা হয় না ওই বজ্জাতের সাথে। দুটো দিন তো ভালোই ছিলো।
“সায়ান ফায়ানকে চিনি না আমি। যাবো না। আর আপনার ফায়ান ভাইকে বলে দিয়েন তুলতুল ওনাকে অভিশাপ দিয়েছে। ওনার মাথার চুল পড়ে যাবে। বউ পাবে না উনি।
আমাকে যেনো আর না ডাকে। আমি যাবোই না। আর যদি বলে তুলতুল না আসলে তুলতুলের খবর আছে। তাহলে ওনাকে বলে দিবেন
তুলতুলও বলেছে ” একদম ভয় পাই না ওনাকে। কি করবে উনি? যা করার করে নিতে বইলেন”
তুলতুল দাঁত কটমট করে বলে। ছেলেটা শুকনো ঢোক গিলে।
“জ্বী ভাবি।
” কিসের ভাবি হ্যাঁ? কার ভাবি? আমি অবিবাহিত। নেইমারের স্বপ্নের প্রেমিকা। আমাকে একদম ভাবি বললে এক ঘু*ষিতে না ফাটিয়ে দেবো। বলে দিলাম।
তুলতুল উঠে দাঁড়িয়ে কলেজ ড্রেসের থ্রি কোয়াটার হাতা গুটাতে গুটাতে বলে। ছেলেটা ফাঁকা গলায় ঢোক গিলে এক দৌড় দেয়। তিথিও উঠে দাঁড়ায়।
“এটা কি করলি তুই?
” ভালোই করলাম। মনের কথা আমার। সামনে তো বলতে পারি না। তাই এখন বললাম।
শোন না বান্ধবী। আমি এখন বাসায় চলে যাবো কলেজের পেছনের রাস্তা দিয়ে। ওই হনুমান যে পরিমাণ বজ্জাত। এখুনু আসবে আমাকে খুঁজতে। আর পেয়ে গেলেই হালুম করে গি*লে ফেলবে। আমার বাবা এতো তাড়াতাড়ি ১৫ পুএের জননী হওয়ার আগেই শহিদ হওয়ার কোনে ইচ্ছে নেই। আমি পালাই
ব্যাগটা শক্ত করে ধরেই কলেজের পেছন দিকে দৌড় দেয় তুলতুল। তিথি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। এই মেয়েটার ননস্টপ বকবকানিতে মাথা ধরে গেছে ওর।
এতো তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরলে মা ঝাঁড়ু পেটা করবে।
” বলবে ক্লাস মিস দিয়ে বাড়ি এসেছিস? তোর পিঠে আজ আমি খুন্তি ভাংবো।”
নাহহ বাবা এতোটা রিস্ক নিয়ে বাসায় যাওয়া একদম ঠিক হবে না।
তুলতুল দুই পাশে দুটো বিনুনি করা চুল গুলো পেছনে ঠেলে লাফাতে লাফাতে হাঁটতে থাকে রাস্তার পাশ দিয়ে।
একটু আগাতেই দেখা হয়ে যায় হিমুর সাথে। কি সুন্দর মাঞ্জা দিয়ে একটা মেয়ের সাথে বসে আছে। যদি দুজনের মাঝখানে অনেকখানি দুরুত্ব।তবুও দুর থেকে পিক তুললে একদম কাপল মনে হবে।
দারুণ একটা সুযোগ এসেছে বিয়ে ভাঙার। এই মেয়েটার সাথে যদি হিমু বাবুর কাপল পিক তুলে বাসার সবাইকে দেখানো হয় তাহলে এক চান্সে বিয়ে ভেঙে দেবে। আহা কি আনন্দ আকাশ বাতাসে।
মেয়েটা বোরকা পড়ে আছে। তুলতুল ফটাফট করেকটা পিক তুলে নেয়। তারপর এগিয়ে যেতে নেয় ওনাদের দিকে।
“কি রে পুচকি তুই এখানে?
পেছন থেকে তুলতুলের মাথায় গাট্টা মেরে বলে তুলতুলের ভাই তন্ময়। (পাপ্পু পাল্টে তন্মম দিলাম)
তুলতুল মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে ভাইয়ের দিকে চোখ মুখ কুঁচকে তাকায়।
” সব সময় শুধু থা*প্প*ড় কেনো দাও? ভালোই বাসো না। যাক তোমার ভালোবাসা আমার দরকার নেই।
দাভাই জাস্ট মাথাটা একটু নিচু করো। তোমার কাছে একটা সিক্রেট শেয়ার করি।
তন্ময়ের শার্টের কলার ধরে টান দিয়ে মাথাটা নিচু করে তুলতুল। তন্ময় ভ্রু কুচকে বোনের কান্ড দেখছে।
“সামনে যে কাপল দেখছো না? ওই ছেলেটা আপির উডবি। দেখছো কেমন লুচ্চা? বউ থাকার পরেও অন্য মেয়ের সাথে নিকনিক করছে? এই বিয়ে ভাঙতে হবে ভাইয়া। আপির কপালটা পুরতে দেওয়া যাবে না
তুলতুল ফিসফিস করে বলে।
” কি বলছিস তুই এসব? হিমু সাথে ওই মেয়ে আমাদের তনু।
তন্ময় বলে।
“হ্যাঁ আমিও তাই বলছি (তুলতুল তন্ময়ের কথা খেয়াল করে)
কিহহহহ এটা আপি?
চোখ বড়বড় করে বলে তুলতুল।
” হ্যাঁ এটা তনু। আমিও এসেছি তনুর সাথে। সায়ানের জন্য দাঁড়িয়ে আছি। ও আসলেই যাবো সবাই মিলে জার্সি কিনতে।
এক হাতে তুলতুলে জড়িয়ে ধরে হাঁটতে হাঁটতে বলে সায়ান। তুলতুল থেমে যায়। চোখ দুটো গোলগোল করে শুকনো ঢোক গিলে। তার মানে যে কোনো মুহুর্তে এখানে সায়ান বাবাজি চলে আসবে?
পালাতে হবে তুলতুলকে। তখন ছেলেটার কাছে যা যা বলছে যদি ছেলেটা পাই টু পাই বলে দেয়। তাহলে তো সায়ান তুলতুলকে আস্ত গি*লে খাবে।
“দাঁড়িয়ে গেলি কেনো? তুই ও যাবি আমাদের সাথে। চল
তন্ময় তুলতুলের হাত ধরে বলে।
” তোর ক্লাস আছে বলে মা পই পই করে বলে দিয়েছিল তোকে না জানাতে। অবশ্য তোর জন্যও কিনে নিতাম। এখন যখন তুই ক্লাস মিস দিয়েই ফেলেছিস তখন তুই যাবি আমাদের সাথে।
ভাইয়ের কথা শুনে রীতিমতো গলা শুকিয়ে যাচ্ছে তুলতুলের। “যেখানে বাঘের ভয়,সেখানেই সন্ধা হয়”
তনু মুখ বাঁকিয়ে বসে আছে।
“সেই দিন আদু ভাই হয়ে বাড়িতে গেলো আর আজকে শাহরুখ খান সেজে এসেছে। ভাব দেখে গা জ্বলে যায়”
তনু বিরবির করে বলে। মা কাকিমা ধরে বেঁধপ বোর কা পড়িয়ে তন্ময়ের সাথে পাঠিয়ে দিলো যদি তনু আগে জানতো এই ছেলে আসবে তাহলে কখনোই আসতো না।
এখানে এসে দেখে এই মহাশয় এখানে বসে আছে।
তখন আর কি করতো? বাধ্য হয়ে বসে আছে। আবার তন্ময় ওকে বসিয়ে রেখে কোথায় গেলো?
তখন থেকে বসে আছে কিন্তু লোকটা একটা কথাও বলে নি। তবুও বলে নি। ভাব ওয়ালা লোক জনপদের সাথে আবার তনু কম কথা বলে।
“ভাইয়া পেট ব্যাথা করছে। টয়লেট যাবো। তোমাদের সাথে যেতে পারবো না।
তুলতুল দুই মিনিট ভেবে এটাই এনেছে মাথায়। এইটা ছাড়া বাঁচার চান্স নাই।
তুলতুল কথা শেষ করে পাশে তাকিয়ে দেখে সায়ান দাঁড়িয়ে আছে। লজ্জায় কান গরম হয়ে যায় তুলতুলের। একে এখনি আসতে হলো?
মাথা নিচু করে দাঁতে দাঁত চেপে দাঁড়ায় তুলতুল। এই লজ্জা থেকে এখন রেহাই নেই।
চলবে…..