এক মুঠো কাঁচের চুরি
পর্ব ২২
লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu
চৈতালিকে মাটিতে ফেলে মারছে রোকেয়া বেগম।চৈতালি আর্তনাদ শুনে ইফাদ এগিয়ে আসলো না।তানহা আসতে চাইলে,ইফাদ তাতে বাঁধা দেয়।মেয়েটা বড্ড বাড় বেড়েছে।একটু শাস্তির দরকার আছে।চৈতালির মায়ের হাত থেকে বাঁচতে ভাইয়ের পেছনে এসে,লুকিয়ে পড়ে।কান্না মিশ্রিত কণ্ঠে বলল।
–ভইয়া আমাকে বাঁচাও আম্মু আমাকে মেরে ফেলবে।শাস্তি যদি পেতে হয়।তাহলে আমি একা পাব কেনো?ভাবিও সমান অপরাধী।ভাবি তো’ জানতো সবকিছু।আগে কেনো বলেনি তোমাদের।আমি আবির স্যারকে বিরক্ত করতাম।স্যার আমাকে গার্ডিয়ান নিয়ে যেতে বলেছিল।আমি ভয়ে,ভাবিকে নিয়ে গিয়ে ছিলাম।আবির স্যার আমাকে রুম থেকে বের করে দিয়ে ভাবির সাথে একা কথা বলছে।প্রশ্ন করো ভাবিকে কেনো তোমাকে বলে নাই ভাইয়া।
ইফাদের দৃষ্টি তানহার দিকে গেল।তানহা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।ইফাদ তানহাকে বলল।
–আজকাল অনেক কথাই গোপন রাখছো দেখছি।তুমি না চৈতালিকে বোনের মতো ভালোবাসো।তাহলে আগে কেনো আমাকে জানাও নাই।
–ইফাদ বোনের হয়ে একদম কথা বলবি না।তানহা আমাকে আগেই সাবধান করেছিল।কিন্তু এই মেয়েকে এতটাই বিশ্বাস করতাম।যে,আমি তানহাকে বিশ্বাস করি নাই।
–মা তুমি জানো যে,অন্যায় করে।আর যে,অন্যায়কে পশ্রয় দেয়।দুজনেই সমান অপরাধী।
–চৈতালি আমি তোমার ভালোর জন্যই চুপ ছিলাম।তুমি না আমাকে বলেছিলে,আমি যেনো তোমার ভাইয়াকে কিছু না বলি।তুমি বলেছিলে আর কখনো আবির ভাইকে বিরক্ত করবে না।তোমাকে একটা সুযোগ দিয়ে ছিলাম।বন্ধুর মতো পাশে ছিলাম।নিজের স্বার্থে আঘাত পড়ল।নিজকে বাঁচাতে আমাকে দোষী বানিয়ে দিলে।
–তুমি কতটা ভালো মেয়ে,নিজের ভাইয়ের হাতে মার খাও।ঐ ভাইয়ের সাথে পরের দিন দেখা করতে চলে যাও।কলেজে গিয়ে একা একা এক রমে কথা বলো।না জানি কি কি করেছো।
–চৈতালি,,
–চিৎকার করে লাভ নেই ভাবি।উচিৎ কথা সবার গায়ে লাগে।
–তুই কার সামনে কথা বলছিস ভুলে যাচ্ছিস।আজ মেয়ে বলে বেঁচে যাচ্ছিস।আজ যে,কথা বলেছিস। দ্বিতীয় দিন তোর মুখে শুনলে,নিজের বোন বলে ছেড়ে দিব না।মারতে মারতে মাটিতে ফেলে দিব আম্মার মতো।
–এই মেয়ের মুখ যেনো আমাকে দেখতে না হয়।এই দিন দেখার আগে মরে গেলাম না কেনো?কুসন্তান পেটে ধরেছি।মরে যেতে পারিস না তুই।তোর জন্য আমার সুখের সংসারে অশান্তি হচ্ছে,তোর মুখ আমি দেখতে চাই না।ইফাদ এই মেয়েকে বলে দে।এই মেয়ে যেনো আমার মুখের সামনে না আসে।বলেই নিজের রুমে চলে গেল রোকেয়া বেগম।
–যে অন্যের ভালো সহ্য করতে পারে না।আল্লাহ-ও তার কপালে সুখ রাখে না।তুমি সবার ভালোবাসা পেয়েছো।কিন্তু তোমার স্বামীর ভালোবাটাই পাওনি।তোমার জীবনটাই তো’ বৃথা।এই মুখ নিয়ে এত বড় বড় কথা বলো কিভাবে।বলেই দৌড়ে নিজের রুমে চলে গেল।তানহা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মাথা নিচু করে কান্না করছে।মানুষের কিছু দূর্বলতা জায়গা থাকে।কেউ যদি সেই দূর্বল জায়গায় আঘাত করে,তার কথার ওপরে একটা কথা-ও বলা যায় না।অন্য সময় হলে,তানহা চৈতালিকে কষে থাপ্পড় বসিয়ে দিতো।কিন্তু চৈতালি তার সবথেকে দূর্বল জায়গায় আঘাত করেছে।কি উত্তর দিবে তানহা।পাথরের ন্যায় বাকরুদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে তানহা।ইফাদ নিজের রুমে চলে গেল।মাথা ঠান্ডা করাটা এখন বেশি জরুরি।রাগের মাথায় যদি তানহাকে উল্টা পাল্টা কিছু বলে দেয়।তানহার থেকে বেশি কষ্ট ইফাদই পাবে।ভেবেই নিজের রুমে চলে গেল।
একঘন্টার মতো তানহা ড্রয়িং রুমে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কেঁদেছে।কেউ তাকে শান্তনার বাণী শোনাতে আসে নাই।কেউ স্নেহের হাত মাথায় ওপরে রাখে নাই।আমার মনের অবস্থা কেমন,আমার কষ্ট হচ্ছে কি না কেউ জানতে চায় নাই।সবার প্রয়োজনই রয়ে গেলাম।কারো প্রিয়জন হতে পারলাম না।যেখানে আমার কোনো মূল্য নেই।আমার কোনো সন্মান নেই।আমাকে ভালোবাসার মতো কেউ নেই।সেখানে আমি পড়ে পড়ে কথা শুনতে পারবো না।আজ চৈতালি বলছে,কাল আম্মা বলবে,দুদিন পরে পুরো দুনিয়া বলবে।এভাবে বাঁচতে পারবো না।আমি যেভাবে বেঁচে আছি।এটা কোনো জীবন হতে পারে না।আমি আর এক মুহুর্ত এই বাড়িতে থাকবো না।চোখের অশ্রুকণা গুলো মুছে নিজের রুমের দিকে গেল তানহা।ইফাদ দু-চোখে হাত দিয়ে শুইয়ে আছে।তানহা কোনো শব্দ না করে আলমারির ওপর থেকে কালো রংয়ের ছোট ব্যাগটি পারলো।আলমারি থেকে বেছে বেছে তার চাচার দেওয়া জামা-কাপড় গুলো গুছিয়ে ব্যাগে তুলছে।মাথায় একদম জেদ চেপে গেছে তানহার।এই রাত করে বেড়িয়ে কোথায় যাবে।সে,জানে না।তবে এই বাড়িতে আর এক মুহুর্ত থাকবে না।আলমারি থেকে কাপড় বার করছে,আর ব্যাগের মধ্যে রাখছে।টুকটাক শব্দে ইফাদ চোখ মেলে তাকালো।তানহাকে ব্যাগ গোছাতে দেখে বলল।
–কি করছো তুমি,ব্যাগ গোছাচ্ছো কেনো?
তানহা কোনো উওর দিল না।আরেকটা জামা হাতে নিতেই ইফাদ তানহার হাত ধরে ফেলল।তানহা ঝাড়ি দিয়ে নিজের হাত সরিয়ে নিল।ব্যাগের চেইন আটকিয়ে দরজার দিকে এগোতে যাবে।পথ আটকে দাঁড়াল ইফাদ।তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তানহার দিকে তাকিয়ে আছে।তানহার হাত থেকে ব্যাগটা কেড়ে নিয়ে ড্রেসিং টেবিলের কাছে ছুরে ফেলে দিল।
–আমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে,এক পা যদি নড়েছ তাহলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।কোথায় যাচ্ছিলে,তোমার সাহস তো’ কম না।একে তো’ অন্যায় করেছো।আবার কাউকে কিছু না বলেই চলে যাচ্ছো।একটু নরম হয়েছি বলে,তোমরা সবাই মিলে সাপের পাঁচপা দেখেছো।
তানহা কোনো উওর দিল না।নিজেকে যথেষ্ট শক্ত রাখার চেষ্টা করছে।অধর কামড়ে নিজের কান্না নিয়ন্ত্রণ করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।অবাধ্য অশ্রুকণা কিছুতেই তানহাকে শক্ত থাকতে দিবে না।দুটো বেয়ে নোনাজল গড়িয়ে পড়ল।
–এই মেয়ে কাঁদছো কেনো?আমি কি মরে গিয়েছি।এভাবে কান্না করার কি আছে।
–আমি আর এই বাসায় থাকবো না।দয়া করে আমাকে যেতে দিন।এই বাসায় থেকে পড়ে পড়ে কারো কথা শুনতে পারবো না।পৃথিবীতে কেউ কারো আপন না।স্বার্থে আঘাত পড়লে,সবাই তার আসল রুপ দেখিয়ে দেয়।চৈতালি আজকে প্রমাণ করে দিল,ননদরা কখনো নিজের বোন হতে পারে না।তারা বোনের মতো হয় কিন্তু বোন হয়ে উঠতে পারে না।চৈতালি তো’ ঠিক কথায় বলেছে।আমার ভাগ্য খারাপ।তা-না হলে জন্মের আগে বাবা মারা যায়।জন্মের ছয় বছরের মাথায় মা মারা যায়।প্রয়োজন ছাড়া কেউ ভালোবাসেনি।আমি বুঝতে পেরেছি।এই বাড়িতে আমার প্রয়োজন শেষ।আপনি ভালো থাকবেন।আপনার মায়ের খেয়াল রাখবেন।আপনার বোনকে কি করবেন।সেটা আপনি ভালো জানেন,আপনার বোন বড় হয়েছে।নিজের ভালো নিজে বুঝতে শিখেছে।বেঁচে থাকতে তাকে নিয়ে আর কোনোদিন কোনো কথা বলবো না।আজকে আমি তানহা কথা দিলাম।নিজের খেয়াল রাখবেন।আম্মা জোর করে আপনার সাথে আমার বিয়েটা দিয়ে দিয়েছিল।আপনি বাধ্য হয়ে আমাকে বিয়ে করেছেন।তাই হয়তো এখনো ভালোবাসতে পারেন নাই।জোর করে সবকিছু পাওয়া গেলে-ও কখনো ভালো বাসায় পাওয়া যায় না।আমি চলে যাওয়ার পরে নিজের মন মতো মেয়ে দেখে বিয়ে করে নিবেন।একদমে কথা গুলো বলে থামলো তানহা।কথাগুলো বলার সময় মনে হচ্ছিল কেউ তার কলিজার তীর দিয়ে আঘাত করছে।যাকে ভালোবাসে তাকে,আবার বিয়ে করার কথা বলছে।আর ইফাদের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা যাবে না।আর একটু থাকলে,শব্দ করেই কেঁদে দিবে তানহা।সে,নিজেকে আর দূর্বল প্রমাণ করতে চাইছে না।তানহা উল্টো দিকে ঘুরে ব্যাগ তুলতে যাবে।তখনই ইফাদ তার হাত ধরে নিজের বুকে টেনে নেয়।তানহার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল।
–কোথায় যাবে তুমি,আমি তো’ আছি।আমাকে একা করে দিয়ে চলে যাবে।আমি কখনো নিজের মুখে বলেছি।আমি তোমাকে ভালোবাসি না।তুমি চৈতালির কথা শুনে,আমাকে রেখে চলে যাবে।একটা বার আমার কথা ভাবলে না।তুমি জানো না ইফাদ তানহাকে ছাড়া অচল।আমি মানছি আমাদের বিয়েটা আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে হয়েছে।এর জন্য আমি কখনো তোমাকে দোষারোপ করেছি।তোমাকে কথা শুনেছি।মেরেছি,বোকেছি।আমাকে বলো বিয়ে নিয়ে কোনো কথা তোমাকে শুনিয়েছি।আম্মার ওপরে রাগ করে দুই বছর যোগাযোগ রাখি নাই।দেশে এসে নিজের দায়িত্ব ভুলে যাই নাই।যথাসাধ্য তোমার সাথে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছি।তোমাকে ভালো রাখার চেষ্টা করেছি।তোমাকে আগলে রাখার চেষ্টা করেছি।তুমি যতক্ষণ আমার পাশে থাকো।তখন আমার অনেক ভালোলাগে,অদ্ভুত শান্তি লাগে।তুমি এমন একটা মেয়ে যাকে ভালো না বেসে থাকার উপায় আছে।তুমি জানো না।তোমার জামাইয়ের কোনো কিছু বলতে শরম করে।
ইফাদের কথাগুলো মধ্যে কিছু একটা ছিল।তানহা ইফাদকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কান্না করে দিলো।কোথায় আছে না।মেয়েদের স্বামী হলো মেয়েদের আসল সম্পদ।যে,মেয়ের স্বামী ভালো।সেই মেয়ের দুনিয়ায় টাই জান্নাত হয়ে উঠে।শশুর বাড়ির সবাই খারাপ হলে-ও স্বামী যদি ভালো হয়।তাহলে স্বামীর মুখের দিকে তাকিয়ে মেয়েটি সব রকমের ত্যাগ স্বীকার করতে পারে।মেয়েটি দিন শেষে গর্ব করে বলতে পারে।আমার স্বামী আল্লাহ তায়ালার দেওয়া শ্রেষ্ঠ উপহার।আর যে মেয়ের স্বামী খারাপ হয়,তার পুরো দুনিয়াটাই জাহান্নাম হয়ে উঠে।শশুর,শাশুড়ী,ননদ,দেবর ভালো হয়ে লাভ নেই।কারন মেয়েটির স্বামীই খারাপ।সারাজীবনের জন্য বরবাদ হয়ে যায় একটি মেয়ের জীবন।আমি তো’ আছি।কথাটা তানহার বুকে এসে আঘাত করেছে।সে,তো’ একটু ভালোবাসা চেয়েছিল।একটা স্নেহের হাত মাথার ওপরে চেয়েছিল।ইফাদ তানহাকে ভালোবেসে বুঝিয়ে দিল।তানহার ধারনা ভুল।ইফাদও তানহাকে ভালোবাসে।ইফাদের ভালোবাসার কাছে,চৈতালি কথাগুলো তুচ্ছ মনে হচ্ছে তানহার।ইফাদের কথাগুলো তড়িৎ গতিতে কাজ করেছে। তানহা ভেতর থেকে অদ্ভুত শান্তি অনুভব করল।কষ্ পেলে টজড়িয়ে ধরে কান্না করে যায়।এমন একটা মানুষই তো’ তানহা চেয়েছিল।তানহা কান্না করছে প্রচুর কান্না করছে।এত বছরের দুঃখ কষ্ট গুলো চোখের পানির সাথে বিসর্জন দিয়ে দিচ্ছে।ইফাদও কিছু বলছে না।মেয়টা অসংখ্য চাপা কষ্ট মনের মধ্যে নিয়ে ঘুরে বেড়ায়।আজকে ইচ্ছে মতো কান্না করে নিক।নিজেকে হালকা লাগবে।
–শুনো মেয়ে আজকে যতখুশি কান্না করে নাও।আজকের পরে থেকে কিন্তু আর কখনো কান্না করতে দিব না।ইফাদের কথা শুনে তানহা ইফাদকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।তানহার যদি উপায় থাকতো।মানুষটার বুকের মধ্যে গিয়ে লুকিয়ে থাকতো।দীর্ঘ সময় নিয়ে কান্না করেছে তানহা।শরীর একদম নেতিয়ে পড়েছে।শব্দ করে কান্না করার মতো শক্তি আর নেই তানহার।তানহাকে চুপ হয়ে যেতে দেখে ইফাদ।দু’হাতে তানহার মুখ তুলল।যত্ন সহকারে দু-চোখের পানি মুছিয়ে দিল।
–অনেক কান্না করেছো।আর কান্না করতে হবে না।আর এক ফোঁটা চোখের পানি ফেললে,আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।বলেই তানহার কপালে অধর ছুঁইয়ে দিল।তানহা একদম নিস্তব্ধ হয়ে গেল।ইফাদ তানহার হাতে ধরে বিছানার কাছে আসলো।
–বিছানায় উঠো।লক্ষি মেয়ের মতো ঘুমাবে।তানহা’কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ইফাদ ধমকে উঠলো।তানহা কিছুটা কেঁপে উঠলো।ভয়ে বিছানায় উঠে গিয়ে অন্য পাশ ফিরে শুইয়ে পড়ল।ইফাদ তানহার ফোনটা তানহার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল।
–এই নাও তোমার ফোন।অন্যদিন ফোন ব্যবহার করার জন্য পাগল হয়ে যাও।
তানহা ফোন নিয়ে বিছানার কোণে ছুরে ফেলে দিল।
–বাবা রে কি রাগ।আমি কি করেছি।তুমি আমাকে রাগ দেখাচ্ছো কেনো?তানহার থেকে কোনো উওর আসলো না।ইফাদ দু-চোখ বন্ধ করে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল।
ঘড়ির কাটা রাত দুইটা ছুঁই ছুঁই।তানহা ঘুমিয়েছে কি না বোঝা দায়।কপালে হাত রেখে ওপরের দিকে তাকিয়ে আছে ইফাদ।রাগ করে সবাই না খেয়ে শুইয়ে পড়েছে।বিষয়টা ভেতর থেকে ইফাদকে খুব করে পোড়াচ্ছে।উঠে গিয়ে রুমের লাইট জ্বালিয়ে দিল,রুম থেকে বের হয়ে মায়ের রুমে কাছে আসলো।
–আম্মু ও আম্মু একটু উঠো না।বলেই দরজা ধাক্কাতে লাগলো।রোকেয়া বেগম গম্ভীর কণ্ঠে বলল।
–কি হয়েছে।বাহিরে থেকে বলল।দরজা খুলতে পারবো না।
–আমার পায়ে প্রচন্ড ব্যথা করছে।তানহা ঔষধ কোথায় রেখেছে খুঁজে পাচ্ছি।একটু খুঁজে দিবে।পায়ের ব্যথা সহ্য করতে পারছি না।
–ইফাদ শোন আমি তোর মা।তুই আমাকে জন্মদিস নাই।আমি তোকে জন্ম দিয়েছি।তুই কি বলতে চাস।বা করতে চাস।তোর গলা শুনেই বলে দিতে পারি।তোর পায়ে ব্যথা করলে,তুই আমার রুম পর্যন্ত হেঁটে আসতে পারতি না।তাই বলছি মায়ের সাথে ছলনা করে লাভ নেই।আমি খাব না।
–ও আম্মু প্লিজ বেড়িয়ে আসো না।নিজেদের মধ্যে অশান্তি করে লাভ আছে বলো।সবাই না খেয়ে অভিমান করে আছে।বিষয়টা একদম ভালো লাগছে না।না খেয়ে নিজেকে কষ্ট দেওয়ার কোনো মানে হয় না।তুমি না খেয়ে রুহুকে কষ্ট দিচ্ছো।কেয়ামতের দিন তোমার রুহু আল্লাহর কাছে বিচার দিবে।তুই তাকে না খাইয়ে রেখে কষ্ট দিয়েছো।আমি ঠিক করেছি।আমি আবার প্রবাসে চলে যাব।মরে গেলেও ফিরে আসবো না।
মায়ের মন ছেলের মুখে এমন কথা শুনে ভেতরটা কেঁপে উঠলো।উঠে এসে দরজা খুলে দিল।ইফাদ মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে।
–তুমি ড্রয়িং রুমে এসে বসো।আমি খাবার গরম করে চৈতালি আর তানহাকে ডাকছি।রোকেয়া বেগম কোনো কথা বলল না।চুপ করে বসলো।ইফাদ খাবার গরম করতে দিয়ে চৈতালি রুমের সামনে আসলো।জোরে জোরে চৈতালির দরজা ধাক্কাতে শুরু করল।
–কিরে চৈতালি আমার কথা কানে যাচ্ছে না।দরজা খুলতে বলেছি।আমি যদি দরজা ভেঙে ভেতরে যাই।তোর অবস্থা খারাপ করে দিব।দুই মিনিট পরে চৈতালি এসে দরজা খুলে দিল।দু-চোখ লাল হয়ে আছে।চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে।দেখেই বোঝা যাচ্ছে মেয়েটা ভেতর থেকে কষ্ট পাচ্ছে।ইফাদ চৈতালির হাত ধরে বলল।
–আয় আম্মুর পাশে বস।
–খবরদার ও মেয়ে যেনো আমার পাশে না বসে।ইফাদ চৈতালিকে মায়ের থেকে দুরত্ব বজায় রেখে বসালো।চৈতালিকে বসিয়ে দিয়ে নিজের রুমে আসলো।তানহা মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে নরম কণ্ঠে বলল।
–তানহা ঘুমিয়ে গেছো।তানহার থেকে উত্তর না পেয়ে হালকা করে ধাক্কা দিল।তানহা নড়েচড়ে উঠলো।ইফাদ তানহার দুই বাহু ধরে টেনে তুলল।
–দেখি উঠো।আমার সাথে চলো।তানহাকে কিছু বলতে না দিয়ে হাত ধরে ড্রয়িং রুমে আসলো।চৈতালি আর তানহা দু’জন দু’জনকে দেখে মুখ ঘুরিয়ে নিলো।ইফাদ সব খাবার নিয়ে আসলো।নিজ হাতে সবার প্লেটে খাবার বেড়ে দিচ্ছে।কেউ খাবার খাচ্ছে।ইফাদ মায়ের মুখে এক লোকমা ভাত খাইয়ে দিল।
–থাক তোকে কষ্ট করতে হবে না।আমার নিজের হাত আছে আমি খেতে পারবো।তুই নিজে খেতে বস।তোর শরীরটা ভালো না।রাতে মনে হয় ঔষধ খাসনি।বলল রোকেয়া বেগম।
ইফাদ মাঝেখানে বসেছে।একপাশে চৈতালি আরেক পাশে তানহা।ইফাদ এক লোকমা ভাত চৈতালির মুখের সামনে ধরলো।
–দেখি ঝটপট খেয়ে নে।ঠান্ডার মধ্যে বসে থাকতে ভালো লাগছে না।চৈতালি বিনাবাক্য ভাত মুখে পুরে নিল।
ইফাদ এবার এক লোকমা ভাত তানহার মুখের দিকে ধরলো।তানহাও খেয়ে নিল।তানহা একবার খেয়ে বলল।
–আমি নিজে খেয়ে নিতে পারবো।কাউকে খাইয়ে দেওয়ার দরকার নেই।বলেই নিজের প্লেটটা নিজের কাছে এগিয়ে নিল।ইফাদ এবার চৈতালির দিকে তাকালো।চৈতালিও সোজাসাপটা উত্তর দিল।
–আমি’ও নিজ হাতে খেতে পারবো।বলেই নিজের প্লেট নিয়ে খেতে শুরু করলো।
ইফাদ নিজেও খেতে শুরু করল।সবার পেটে প্রচুর ক্ষুদা।তা সবাইকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে।রাগ করে থাকবে।তবুও আগে খেতে আসবে না।সবাই চুপচাপ খেয়ে,যে যার মতো চলে রুমে গেল।
চলবে…..