এক মুঠো কাঁচের চুরি
পর্ব ৩৪
লেখিকাঃ Fabiha Bushra Nimu – ফাবিহা বুশরা নিমু
তানহা দরজা খুলে দিতেই ইফাদ হনহন করে বাসার মধ্যে প্রবেশ করল।তানহার সাথে কোনো কথা না বলে,নিজের রুমে চলে গেল।তানহা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ইফাদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।তানহা দরজা বন্ধ করে,রান্না ঘরের দিকে গেল।
ইফাদ ফ্রেশ হয়ে এসে ড্রয়িং রুমে বসলো।
–তানহা এই তানহা।
ইফাদের ডাক শুনে তানহা কাজ ফেলে দৌড়ে আসলো।ইফাদের সামনে এসে দাঁড়িয়ে আছে।তানহাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ইফাদ বলল।
–এভাবে সংয়ের মতো দাঁড়িয়ে আছো কেনো?আমার খুব ক্ষুদা লেগেছে।তাড়াতাড়ি খাবার নিয়ে আসো।তানহা ইফাদের কথা মতো তড়িঘড়ি করে রান্না ঘরে গেল।খাবার নিয়ে এসে,ইফাদের সামনে হাজির হলো।ইফাদ খাচ্ছে,তানহা গালে হাত দিয়ে,ইফাদের সামনে বসে আছে।ইফাদ ভ্রু কুঁচকে তাকালো।
–ওভাবে গালে হাত দিয়ে বসে আছো কেনো?খেয়েছো কিছু।শুনলাম দু’দিন ধরে নাকি না খেয়ে আছো।
–তোমাকে কে বলছে?
–আমি তোমার থেকে জানতে চেয়েছি।প্রশ্ন করতে বলি নাই।কথা কম বলো।চুপ খেয়ে নাও।বলেই এক লোকমা ভাত তানহার মুখের সামনে ধরলো।
–আমার ক্ষুদা নেই।আমার খেতে ইচ্ছে করছে না।তোমার ক্ষুদা লেগেছে।তুমি খাও।
ইফাদ তানহার কথার কোনো উওর দিল না।আগের ন্যায় বসে আছে।ইফাদের দিকে তাকিয়ে ভয়ে,তড়িঘড়ি করে এক লোকমা ভাত মুখে পুরে নিল তানহা।ইফাদ নিজেও খেল।তানহাকে-ও খাইয়ে দিল।খাওয়া শেষ করে কোনো কথা না বলে ইফাদ উঠে চলে গেল।
চৌধুরী অফিসে আজকে খুশির মেলা লেগেছে।সবার অধরের কোণে হাসির রেখা বিদ্যমান।ফাইয়াজ সবার কথা শুনছে।নিজের সাধ্য মতো সবার মনের ইচ্ছে পূর্ণ করে দেওয়ার চেষ্টা করছে।ফাইয়াজ আর অভি এবার চৈতালির কাছে আসলো।
–আপনার কি চাই চৈতালি।বলল ফাইয়াজ।
#এক_মুঠো_কাঁচের_চুরি চাই।
–শুধু এক মুঠো কাঁচের চুড়ি আর কিছু লাগবে না।ভেবে দেখেন এমন সুযোগ আর আসবে না।আপনি চাইলে আমাকে চেয়ে নিতে পারেন।আমাকে বিয়ে করে-ও নিতে পারেন।আমি কিন্তু কিছু মনে করবো না।
চৈতালি ভ্রু কুঁচকে তাকালো।অভি মুখ চেপে হাসছে।ফাইয়াজ গম্ভীর হয়ে চৈতালির দিকে তাকিয়ে আছে।এমন ভাব করছে,বিশাল বড় সিরিয়াস কথা বলেছে সে।
–আমার জীবন নষ্ট করার শখ হয়েছে।এই বয়সে বিয়ে করে নিজের জীবন নষ্ট করবো।আগে নিজে সফল হব।পরিবার যদি বিয়ে দিতে চায়।তাহলে করবো।না হলে করবো না।ছেলে মানুষকে আমার একদম বিশ্বাস নেই।এরা এক একটা বিশ্বাসঘাতক।
–কাঁচের চুড়ি নিতে হলে,আমার সাথে বাহিরে যেতে হবে।আমি তো’ চুড়ি সাথে করে নিয়ে আসি নাই।
–তো কাউকে পাঠিয়ে দিন।সামান্য চুড়ি নিয়ে আসার জন্য,আমাকে কেনো বাহিরে যেতে হবে।
–চুড়ি কি আমি পড়ব।চুড়ি কিনতে হলে,হাতের মাপের প্রয়োজন হয়।
–তো’ আমার হাতের মাপ নিয়ে যান।
–কি দিয়ে নিয়ে যাব।আপনি মাপটা দিয়ে দেন।
চৈতালি আশেপাশে তাকিয়ে কিছু পেল না।অসহায় দৃষ্টিতে ফাইয়াজের দিকে তাকালো।ফাইয়াজ এখনো আগের মতো গম্ভীর মুখ করে আছে।
–আমি কালকে আপনাকে হাতের মাপ এনে দেই।
–জ্বী না ম্যাডাম অফারটা শুধু আজকের জন্য প্রযোজ্য।নিতে হলে আজকেই নিতে হবে।কালকে পাবেন না।
চৈতালি কিছু একটা ভাবলো।তারপরে ধীর কণ্ঠে বলল।
–আমার কিছু লাগবে না স্যার।আপনি অন্যদের দেখুন।ফাইয়াজ কোনো কথা না বলে সামনের দিকে এগিয়ে গেল।কি ডোন্ট কেয়ার ভাব তার।চৈতালি মন খারাপ করে ফেলল।কেনো মন খারাপ করল সে,নিজে-ও জানে না।বাহিরের চিন্তা বাদ দিয়ে নিজের কাজে মনযোগ দিল।সবাইকে সবার মন মতো উপহার দিয়ে,নিজের কেবিনে চলে ফাইয়াজ।একটু পরে একগাদা ফাইল এসে পড়ল চৈতালি কেবিনে,চৈতালি চোখ বড় বড় করে তাকালো।অভিকে দেখে প্রশ্ন করল।
–স্যার এত গুলো কাজ একদিনে কিভাবে করবো।
–আমি কি করে বলবো বলো।ফাইয়াজের কথা অমান্য করেছো।শাস্তি তো’ তোমাকে পেতেই হবে।
–এটা কেমন কথা স্যার।উনি এভাবে আমার সাথে অন্যায় করতে পারেন না।উনাকে গিয়ে বলুন।আমি ওনার অফিসে আর কাজ করবো না।কিছু হলেই নিজের ইচ্ছে মতো কাজ বাড়িয়ে দেয়।এতে মাথার ওপরে কি পরিমান চাপ পরে উনি কি তা জানেন না?
–জানি বলেই একটা সহজ কথা বললাম।তুমি সহজে রাজি হলে না।তাই আমি’ও কঠিন পথ অবলম্বন করলাম।
–অফিসে এত স্টাফ থাকতে,আপনি সব সময় আমার সাথে কেনো লাগেন বলেন তো’।
–কারন তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।তুমি আমার প্রশ্নের উত্তর দিলেই,আমি আর তোমাকে বিরক্ত করবো না।
–আচ্ছা বেশ চলুন।আজকে যা যা প্রশ্ন আছে।সব করবেন।আপনার সব প্রশ্নের উত্তর দিব।আজকের পরে থেকে আপনি আর আমাকে বিরক্ত করতে পারবেন না।আপনি আপনার মতো আমি আমার মতো।বলেই দু’জন বাহিরে হাঁটা শুরু করলো।
রোদের মধ্যে ফুটপাতের রাস্তা ধরে হাঁটছে চৈতালি আর ফাইয়াজ।ফাইয়াজের ফর্সা মুখখানা রোদে লাল হয়ে আসছে।কোথায় থেকে শুরু করবে ভেবে অর্ধেক রাস্তা হেঁটে ফেলছে।
–চৈতালি ইফাদ ভাইয়ার সাথে আমাকে দেখা করিয়ে দিবে।
–এই বুইড়া কাকু আপনি আবির স্যারের ফ্রেন্ড হয়ে,আমার ভাইয়াকে ভাইয়া বলে ডাকেন কেনো?আমার ভাইয়া আপনার ছোট নাম ধরে ডাকবেন।আমার ভাইয়া মোটেও আপনার মতো বুড়ো না।চৈতালির কথা শুনে,ফাইয়াজ ভ্রু কুঁচকে ফেলে।
–কে কাকু?এই তোমাকে কে বলেছে,একসাথে পড়লেই তার বয়সী হয়ে যায়।আবির আর আমি একসাথে পড়াশোনা করেছি ঠিকি।কিন্তু আবির আমার চার বছরের বড়।তোমার আবির স্যার তো’ জাতির বুড়ো।আমাদের সময় শিশু শ্রেণী ছিল।বাম হাত মাথার ওপরে দিয়ে ডান কান ধরতে হবে।যে,ধরতে পারবে না।তাকে স্কুলে নেওয়া হবে না।আমার তখন চার বছর বয়স ছিল।কান হাতে পাই নাই বলে,আমাকে স্কুল থেকে বের করে দিয়েছিল।বাসায় এসে খুব কান্না করে ছিলাম।পরে আব্বু আমাকে কেজি স্কুলে নিয়ে গিয়ে ছিল ভর্তি করার জন্য।আমি ছোট থেকেই অনেক লম্বা ছিলাম।আমার বয়স তখন চার ছিল।আমাকে দেখে বোঝার উপায় ছিল না।দেখে মন হতো ছয় কি সাত বছর বয়স।ছোট বেলা থেকেই আমি অনেক বকবক করতাম।প্রশ্ন করে আম্মুর মাথা খেতাম।তাই আম্মু বলেছিল কত বকবক করতে পারিস স্কুলে গিয়ে বকবক কর।আম্মু আমাকে বাসায় পড়াতো।না পারলে কি মার টাই না দিত ভাই।আমাকে ওয়ানে ভর্তি করে দিল।তখন থেকেই আবিরকে আমি পেয়েছি।তার থেকেই জানা সে,শিশু শ্রেণিতে পড়েছে,কেজি স্কুলে এসে প্লে,নার্সারি পড়েছে তারপরে ওয়ানে এসেছে।কেজিতে পড়লে বাচ্চারা এমনিতেই দুই বছর পিছিয়ে যায়।সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গুলো আছে না।ওখানে সোজা ওয়ান থেকে পড়তে হতো।সেটা আমাদের সময় হতো।এখন হয় কি না জানি না।এখন যুগ বদলেছে।সবকিছু পরিবর্তন হয়েছে।এসবের প্রচলন আমাদের সময় ছিল।আবির আমার মতো ওয়ান থেকে পড়াশোনা করলে অনেক আগেই তার পড়াশোনা শেষ করে ফেলতো।আর ইফাদ ভাইয়ার কথা বলছো।ইফাদ ভাইয়া আর আমি কয়েক মাসের ছোট বড় হব।তোমার ভাইয়াকে আমি ইফাদ বলেই ডাকতাম।কিন্তু ভাইয়া আমার থেকে কয়েক মাসের বড়।ইফাদ বলার কারনে পুতুল আপু আমাকে বকেছিল।তাই ভাইয়া বলি।আমাকে তোমার ভাইয়ার বয়সী ধরতে পারো।
–ছোট একটা কথা জানতে চাইলাম।পুরো ইতিহাস শুনিয়ে দিলেন।মনে হচ্ছে বহুদিন পরে,মন খুলে কারো সাথে কথা বলছেন।পুতুল আপুটা কে?
ফাইয়াজ কথা ঘুরিয়ে বলল।
–ঐ দেখো চুড়ির দোকান।তোমার পছন্দ মতো চুড়ি কিনে নাও।দু’জন মিলে চুড়ির দোকানে গেল।চৈতালি পছন্দ মতো কয়েকটা চুড়ি নিল।ফাইয়াজ চুড়ি আলাকে বলল।
–আপনি আপনার চুড়ির ডালা টাই ওর হাতে ধরিয়ে দিন।আমি আপনাকে আপনার মূল্য বুঝিয়ে দিচ্ছি।চৈতালি অবাক হয়ে ফাইয়াজের দিকে তাকালো।এই প্রথম কেউ তাকে এত গুলো চুড়ি কিনে দিল।মেয়েরা ছোট ছোট উপহার পেতে খুব বেশিই ভালোবাসে।চৈতালির খুশি দেখার মতো।তড়িঘড়ি করে চুড়ির ডালাটা হাতে তুলে নিল।খুশিতে দু-চোখ চকচক করছে।চৈতালির দিকে তাকিয়ে ফাইয়াজ মলিন হাসলো।
–চৈতালি ফুচকা খাবে।
–আমাকে এসব কথা বলে লাভ নেই।এসব কথায় আর গলি না।
–আমি জানি তুমি অন্য কাউকে ভালোবাসো।একজনকে ভালোবাসলে আর কাউকে ভালো লাগবে না।এটাই স্বাভাবিক।
–পৃথিবীতে আমার পরিবার ছাড়া আমি আর কাউকে ভালোবাসি না।
–ব্যক্তিগত প্রশ্ন করতে পারি।
–না।
–আচ্ছা চলো ফুচকা খাই।বলেই রাস্তা পার হতে লাগলো।খুব সুন্দর করে রাস্তা পার হলো ফাইয়াজ।ফাইয়াজের এত সুন্দর করে রাস্তা পার করে দেওয়ার ব্যাপারটা দেখে চৈতালি মুগ্ধ হলো।বিষয়টা তার বেশ ভালো লেগেছে।আরো একটা জিনিস চৈতালি খেয়াল করেছে।ফাইয়াজ তার থেকে যথেষ্ট দূরত্ব মেন্টেন করে।চৈতালির এসব ভাবনা দেখে,নিজের ওপরেই রাগ হলো।নিজেই নিজের ধিক্কার জানালো।এসব সে,কি ভাবছে।ফাইয়াজ ফুচকা বানাতে বলল।চৈতালি দুষ্টু হেসে বলল।
–মামা আপনার দোকানে যত ঝাল আছে।সব ঝাল আজকে ফুচকার মধ্যে দিবেন।চৈতালির কথা শুনে,ফাইয়াজ ভ্রু কুঁচকে তাকালো।চৈতালি অন্য দিকে তাকিয়ে আছে।
–তুমি খুব বেশি ঝাল খাও।
–জ্বী না আজকে ফুচকা আপনি খাবেন।আর বিলটা আমি দিব।বুঝছেন সাদা বিড়াল।বলেই জিভে কামড় দিল।ফুচকা খেয়ে ফাইয়াজের মুখটা দেখার মতো ছিল।বেচারা ঝাল খেয়ে চোখ-মুখ দেখার মতো লাল হয়ে গেছে।চেয়ারে বসে আছে ফাইয়াজ।ঝাল নিয়ন্ত্রণ হবার অপেক্ষা করছে।ফাইয়াজের দিকে তাকিয়ে চৈতালির মায়া হলো।দৌড়ে গিয়ে আইসক্রিম নিয়ে এসে দিল।
–আইসক্রিমটা খান ঝাল কিছুটা কমে যাবে।ফাইয়াজ কোনো কথা না বলে সামনে দিকে হাঁটা দিল।চৈতালি হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।সাথে করে নিয়ে আসলো।এখন সাদা বিড়ালটা আমাকে রেখেই চলে গেল।চৈতালি-ও অফিসের দিকে গেল।
ফজরের আজান কানে আসতেই তানহা উঠে বসলো।ইফাদ আগেই উঠে অজু করে এসে,মাথায় টুপি পড়ছে।তানহা সেদিকে তাকিয়ে আছে।একটু অবাক হয়েছে বটে।মানুষটা প্রয়োজন ছাড়া তার সাথে কথা বলছে না।অন্য দিন আগে উঠলে-ও শুইয়ে থাকে,তানহা কখন তাকে ডেকে তুলবে।তানহার সাথে একটু দুষ্টুৃৃমি করবে।তানহা ভালোবাসে বুঝিয়ে দিবে।উঠে লক্ষি ছেলের মতো নামাজ পড়তে যাবে।আগের দিনের মতো আজকের দিনটা অন্য রকম।তানহা মনে মনে খুব কষ্ট পেল।তবুও ইফাদকে বুঝতে দিল না।উঠে এসে বলল।
–তুমি আগেই উঠে পড়েছো।
–হ্যাঁ জাগা পেয়েছি।তাই উঠে পড়েছি।
–অন্যদিন জাগা পেলে-ও শুইয়ে থাকতে।
–আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে,আমি আসছি।বলেই ইফাদ চলে গেল।তানহা ইফাদের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে নিজেও অজু করে নামাজে দাঁড়িয়ে গেল।
চৈতালি অফিসে আসলো।অন্য দিনের তুলনায় মনে হচ্ছে,আজকে কিছু একটা হচ্ছে না তার সাথে।ফাইয়াজ কথা রেখেছে।সে,সত্যি আর চৈতালিকে বিরক্ত করছে না।চৈতালির আগেই অফিসে এসেছে।নিজের রুম থেকে একবারো বের হয় নাই।চৈতালি মনে মনে হাসলো।আগে যদি জানতাম ফুচকার ঝাল এতটা কাজে দিবে।তাহলে আগেই সাদা বিড়ালটাকে ঝাল খাইয়ে দিতাম।সারাদিন পেরিয়ে বিকেল হয়ে গেল।ফাইয়াজের দেখা মিলল না।চৈতালি অবশ্য শান্তিতে আছে।
দরজায় কলিং বেলে বেজে উঠলো।তানহা দরজা খুলে দিল।রিয়াদ এসেছে।দুই বন্ধু মিলে,ঐ যে,রুমে প্রবেশ করেছে।বাহিরে বের হবার নাম নেই।সন্ধ্যা হয়ে গেছে।চৈতালি-ও বাসায় চলে আসছে।তানহাকে মুখ গোমড়া করে বসে থাকতে দেখে বলল।
–ভাবি তোমার কি হয়েছে।
–কিছু হয় নাই।তোমার ভাইয়ার বন্ধু এসেছে,বিকেলে এসে রুমে দরজা দিয়েছে।এখনো রুম থেকে বের হবার নাম নাই।
–ও দু’টো এমনই।তুমি আমার রুমে আসো।দু’জন একসাথে নামাজ পড়ে নেই।দু’জন মিলে চলে গেল।নামাজ পড়ে এসে তানহার চোখ কপালে উঠে গেল।
ইফাদ আর রিয়াদ মিলে,চারটা ব্যাগ বের করে,একদম তৈরি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।রোকেয়া বেগম আর চৈতালি ভ্রু কুঁচকে ইফাদ আর রিয়াদের দিকে তাকিয়ে আছে।তানহা ইফাদের দিকে এগিয়ে গেল।তখনই রিয়াদ বলে উঠলো।
–ইফাদ সবাই চলে এসেছে।সবাইকে বলে বেড়িয়ে পড়।সময় হয়ে এসেছে।আমাদের তাড়াতাড়ি যেতে হবে।
–যেতে হবে মানে,আপনারা কোথায় যাবেন?
–কেনো ভাবি ইফাদ আপনাকে কিছু বলে নাই।রিয়াদের কথা শুনে তানহা ইফাদের দিকে তাকালো।
–কোথায় যাবে তুমি?
–ইফাদ কোথায় যাচ্ছিস।আমাদের তো’ কিছু বলিস নাই।
–আসলে আম্মু আমি আবার বিদেশে চলে যাচ্ছি।তোমাদের বলবো বলা হয়ে উঠে নাই।আজকে আমাকে যেতে হবে।তোমারা সবাই আমার জন্য দোয়া করো।আমি যেনো ভালোভাবে পৌঁছাতে পারি।ইফাদের কথা শুনে,তানহার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল।চৈতালি আর রোকেয়া বেগম যথেষ্ট অবাক হয়েছে।তাদের মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে।
–ইফাদ তুই আমাদের সাথে ফাজলামি করছিস।তুই আবার বিদেশে যাবি।আমাদের মতামত নেওয়ার প্রয়োজন মনে করেছিলি।আমরা আদৌও রাজি কি না।তুই এভাবে নিজে নিজে সিদ্ধান্ত নিতে পারিস না।
–ভাইয়া নিশ্চয়ই তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে।ভাবি দু’দিন ধরে না খেয়ে আছে।শুনে ঝড়ের গতিতে বাসায় চলে আসলে,আর তুমি ভাবিকে ছাড়া মাসের পর মাস বছরের পর বছর কিভাবে থাকবে।
–আমাকে যেতে হবে।আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে।ইফাদ ব্যাগ হাতে নিয়ে এগোতে যাবে।তানহা আশেপাশের সবকিছু ভুলে ইফাদকে জড়িয়ে ধরলো।কান্না করতে করতে বলল।
–আমি তোমাকে যেতে দিব না।তুমি এভাবে চলে যেতে পারো না।আমি কি ভুল করেছি।আমাকে বলো।আমি শুধরে নিব।তবুও তুমি আমাকে একা রেখে চলে যেও না।তোমাকে ছাড়া আমি থাকতে পারবো না।আমার দম বন্ধ হয়ে আসবে।তুমি থেকে যাও।না হলে আমাকে তোমার সাথে নিয়ে যাও।
–তানহা কি হচ্ছে,এখানে আম্মু আছে।ছাড়ো আমাকে।
–আমি তোমাকে যেতে দিব না।আমাকে ছেড়ে এভাবে চলে যেও না।তুমি না বলেছিলে,আর কখনো বিদেশে চলে যাবে না।তাহলে হঠাৎ করে সিদ্ধান্ত নিলে কেনো?ইফাদ তানহাকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে।তানহা আরো আষ্ঠেপৃষ্ঠে ইফাদকে আঁকড়ে ধরছে।ইফাদ এবার ধমকে উঠলো।
–তানহা তুমি কি ছোট বাচ্চা।এভাবে বাচ্চাদের মতো করছো কেনো?আমি যাওয়ার দরকার মনে করছি।তাই যাচ্ছি।পাগলামি বাদ দিয়ে নিজরে রুমে যাও।ইফাদের ধমকে কেঁপে উঠলো তানহা।রোকেয়া বেগম ছেলেকে চোখের গরম দেখালেন।ইফাদ দৃষ্টি নত করে রিয়াদকে নিয়ে বেড়িয়ে পড়ল।তানহা অসহায় দৃষ্টিতে ইফাদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।এক মুহূর্ত ড্রয়িং রুমে দাঁড়াল না।নিজের রুমে এসে দরজা লাগিয়ে দিয়ে,হাউমাউ করে কান্না করে দিল।
চলবে…..