আমার তুমি
সিজন ২ পর্ব ১২ (প্রপোজ)
#তানিশা সুলতানা
সায়ান তুলতুলকে নিয়ে অনেক জায়গা ঘুরে শেষমেশ এসে বাইক থামায় এমপির বাড়ির সামনে। সমানে মাথা ঘুরছে তুলতুলের। এখানেই যদি আসবে তাহলে এতোটা পথ ঘুরে শহরের মাঝখান দিয়ে কেনো আনলো?
নিশ্চয় বাইকের তেল বেশি হয়ে গেছিলো কমানোর জন্য এমনটা করলো।
মানতেই হবে এমপির টাকা আছে। নাহলে কি আর অপচয় করতো?
তুলতুল বাইক থেকে নেমে টুপ করে এক দৌড়ে ভেতরে ঢুকে যায়। সুমুর রুমে গিয়ে দরজা আটকে দেবে এটাই মতলব ছিলো তুলতুলের। কিন্তু দরজা ওবদি এসেই থেমে যায় তুলতুল।
সুমু তন্ময়ের হাত ধরে একদম বাড়ির ভেতরে ঢুকে গেছে। তন্ময় বিষ্ময়কর চোখে তাকিয়ে আছে। সুমু কি করতে চাইছে সেটাই বোঝার চেষ্টা করছে।
এই সময়টা সবাই বাড়িতেই থাকে। তিন ভাই বসে নির্বাচনের আলোচনা করছিলো।
“বাবা
সুমু একদম সালমান এমপির সামনে দাঁড়ায়। চমকে তাকিয়ে থাকে তিন ভাই। সুমুর দাদাভাই আব্দুল্লাহ সবেই রুম থেকে বের হয়েছিলো ছেলেদের সাথে সময় কাটাবে বলে। নাতনীর হাতের মুঠোয় অন্য একটা হাত দেখে খানিকটা অবাক হয়। তিন ভাই আর দুই বোনের একটাই মেয়ে। এই বংশে মেয়ে খুবই কম। খুব আদরের সুমু।
তন্ময় মাথা নিচু করে আছে। সুমুর হাতের মুঠোয় থেকে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নেবে সেটারও শক্তি হারিয়েছে ফেলেছে।
“বোনু কি হয়েছে? কিছু বলবে?
আব্দুল্লাহ সিঙ্গেল সোফায় বসে মুচকি হেসে বলে। সুমু ছেড়ে দেয় তন্ময়ের হাত। বাবা আর কাকার মাঝখানে বসে পড়ে। সালমান মেয়েকে বুকে টেনে নেয়। তন্ময় কি করবে বুঝতে পারছে না?
” মা কিছু বলবা?
সুলাইমান (সুমুর ছোট কাকা) বলে।
“আমি এই ছেলেটার পেছনে পড়ে আছি দুই বছর যাবত। এই ছেলেটা আমাকে পাত্তা দেয় না। এতো এতো মেসেজ দেই রিপ্লাই দেয় না। কল করলেও রিসিভ করে না। দেখা হলেও মাথা নিচু করে চলে যায়। আমি ওকে দেখার জন্য ওর ভার্সিটিতেও যাই।
এতোদিন আমি জানতাম না ও কেনো আমায় ইগনোর করে। কিন্তু আজকে জানতে পারলাম। আমি তো ভাবতাম ও আমাকে নিয়ে কিছু ফিলই করে না। তাই তো ভেবে ফেলেছিলাম ওকে আর বিরক্ত করবো না।
কিন্তু একটু আগে জানতে পারলাম। ও আমাকে নিয়ে ফিল করে। কিন্তু আমি এমপির মেয়ে বলে আমার সাথে মিশে না। আমার নিয়ে ভাবনা আসলেও মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে।
একদমে কথা গুলো বলে সুমু। বাবা কাকারা আর দাদাভাই মনোযোগ দিয়ে শুনছে সুমুর কথা। ওনারা বাকরুদ্ধ হয়ে যায় সুমুর কথা শুনে। ততখনে সায়ান ও চলে আসে। তুলতুল সায়ানের পাশে দাঁড়িয়ে আছে। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকা ভাইটার দিকে তাকিয়ে আছে।
তন্ময় লজ্জায় মরে যাচ্ছে। এই মেয়েকে ঠাস ঠাস করে দুটো থা*প্প*ড় দিতে ইচ্ছে করছে।
আব্দুল্লাহ কিছু বলতে চায় সুমু থামিয়ে দেয়।
“দাদাভাই আমার বলা শেষ হয় নি। আরও বলতে চাই আমি।
আব্দুল্লাহ চোখের ইশারায় সম্মতি দেয়।
” বাবা আমি চাইলে ওকে বলতে পারতাম। আমার বড়বাবা বাবা ছোট বাবা দাদাভাই সবাই আমার পছন্দকে সম্মান করবে। টিচারের ছেলে বলে কখনোই অবহেলা করবে না। কারণ আমার পরিবার টাকা দেখে মানুষের বিচার করে না মানুষের মানুষত্ব দেখে বিচার করে।
কিন্তু আমি সেটা না বলে ওকে টেনে বাড়িতে নিয়ে এসেছি। যাতে ও নিজেই রিলাইজ করতে পারে। ওর মধ্যে কোনো সংশয় যাতে না থাকে।
এবার বাবা বলো আমাদের সম্পর্কটা কি এগোনো উচিৎ? না কি ভেঙে দেওয়া?
আমি জানি তোমরা বলবে ভেঙে দেওয়া। কিন্তু আমি পারবো না। আমি এই মুহুর্তে বিয়ে করতে চাই তন্ময়কে।
তন্ময় বড়বড় চোখ করে তাকায়। একটা ধা*ক্কা খায় সবাই। সায়ান বুকে হাত গুঁজে দাঁড়ায়। তুলতুল মনে মনে লাফাচ্ছে। এতো সাহসী সুমু? ভাবা যায়? কিভাবে কোনো ভয় ছাড়াই ভালোবাসার কথা বলে দিলো। ইসসস
সালমান মাথায় হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে। কি বলবে বুঝতে পারছে না। সুলাইমান চোয়াল শক্ত করে ফেলে। আনোয়ার শান্ত চোখে তাকায় সুমুর দিকে।
আব্দুল্লাহ শুকনো কাশি দিয়ে গলা পরিষ্কার করে নেয়।
কিছু বলবে তখনই তন্ময় বলে ওঠে
“আই এম রিয়েলি সরি। আমি জানতাম না ও এসব বলবে। আমি বিয়ে
তন্ময়কে কথা শেষ করতে দেয় না সুমু। বাবার পাশ থেকে উঠে তন্ময়ের আঙুলের ভাজে নিজের আঙুল দেয়। তন্ময় শুকনো ঢোক গিলে। সায়ান ভ্রু কুচকে ফেলে। সায়ানের বোন সায়ানের থেকেও এক কাঠি উপরে।
“বাবা আমি ওকে ভীষণ ভালোবাসি। আমি বিয়ে করবোই। আর আজকেই। এখনই। তুমি তোমার মেয়ের ইচ্ছে পূরণ করবে না?
সুমু শান্ত গলায় বলে। সুলাইমান উঠে দাঁড়ায়। সালমান সুলাইমানের হাত ধরে। চোখের ইশারায় শান্ত হতে বলে। সুলাইমান হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ফেলে।
সায়ান বাবা কাকাদের অবস্থা বুঝতে পারে।
” বোনু তুই আমার সাথে আয়। বসে কথা বলি আমরা?
সায়ান সুমুকে জড়িয়ে ধরে বলে।
“নাহহ আমি বসবো না। আমি বিয়ে করতে চাই। আর এখনই। আই নিড তন্ময়। আই লাভ হিম।
সুমু সায়ানের শার্ট খামচে ধরে বলে। তন্ময়ের হাত ছেড়ে দেয়।
“ভাবার জন্য একটু সময় তো দেবে সোনা? তুমি আমাদের অনেক সাধনার ফল। কলিজার টুকরা। আদরের পুতুল আমাদের। তোমার মুখে হাসি ফোটানোর জন্য আমরা সব করতে পারি। তোমার যেটায় ভালো হবে আমরা সেটাই করবো।
আনোয়ার সুমুর মাথায় হাত বুলিয়ে বলে।
” আমার ভালো তন্ময়ে। আমি ওকে ছাড়া একটুও ভালো থাকতে পারবো না। ট্রাস্ট মি।
হেসে ফেলে আনোয়ার। সুমুও হেসে জড়িয়ে ধরে বড়বাবাকে। তন্ময় এখনো একটু পর পর শুকনো ঢোক গিলছে। কি একটা মারাক্তক অবস্থা?
সায়ান ফোঁস করে শ্বাস টানে।
তুলতুল খুশিতে গদগদ হয়ে যায়। বাহহহ এই না হলো মেয়ে। কি সাহস?
তুলতুলকেও এখন থেকে সাহসী হতে হবে।
“তোমরা ভেতরে যাও।
সুমু পেছন ফিরে তুলতুলকে দেখে বেশ খুশি হয়। তুলতুলের হাত ধরে ওপরের দিকে দৌড় দেয়। সায়ান তন্ময়কেও যেতে বলে।
তারপর বাবা কাকাদের সাথে নির্বাচনের বিষয়ে আলোচনা করে ওপরে যায়।
তন্ময় সোজা এই বাড়ির ছাঁদে চলে যায়। ভীষণ রাগ হচ্ছে ওর। বড়দের মুখের ওপর কথা বলতে শেখায় নি বাবা মা। সুমুকে একটা আ*ছা*ড় দিতে ইচ্ছে করছে। নিজের মাথা ঠান্ডা করার জন্যই ছাঁদে যাওয়া। আপাতত সেখানে কেউ বিরক্ত করবে না।
তুলতুল বেশ সাহস নিয়ে এসেছে সায়ানের রুমে। সুমুর সাথে গল্প করছিলো হঠাৎ করে ইচ্ছে হলো সায়ানকে এক পলক দেখার। এরকম ইচ্ছে কেনো হলো জানা নেই তুলতুলের।
সুমু মা কাকিমাদের জানাতে গেছে এই খবর।
খুব ধীরে ধীরে পা ফেলছে তুলতুল যাতে সায়ান বুঝতে না পারে। জাস্ট এক পলক দেখেই চলে যাবে এমনটাই উদ্দেশ্য তুলতুলের।
পুরোপুরি রুমে ঢুকে যেতেই খট করে শব্দ হয়ে বন্ধ হয়ে যায় দরজা। চমকে ওঠে তুলতুল৷ দুই কানে হাত দিয়ে চিৎকার করার প্রস্তুতি নিয়েছে তখনই
চলবে……..