কালোবউ পর্ব ২
লেখিকাঃ মেঘ কন্যা তিলোত্তমা (ছদ্মনাম)
.
মেঘলাঃ (হঠাৎ খেয়াল করলাম সে বিছানা থেকে ওঠে আমার দিকে আসছে। এখন কী আবার মারবে নাকি?? নাকি নিজের অধিকার চাইবে?? নাহ আমাকে পাশ কাটিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল। একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো। এদিকে কপাল থেকে যে রক্ত বের হচ্ছে সেদিকে আমার খেয়াল নেই। সারাদিনের ধকল, ক্ষুধা আর এখনকার আঘাত শরীর নিতে পারলো না। চোখের সামনে সব ঝাপসা হয়ে এলো আর কিছু মনে নেই। )
আকাশঃ আর কারো মায়ায় জড়াবো না আমি। সব মেয়ে ঐ কালনাগিনীর মতো। আর এই মেয়েতো ঐ ছলনাময়ীর বোনই। এখন আমার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য শুধু টাকা। যার জন্য ও আমাকে একা ফেলে গেছে। টাকার পাহাড় গড়ে তুলবো আমি। খুব ভালবাসতে না তোমার এই বোনকে। এবার দেখো তোমার এত আদরের বোনের সাথে কী হয়??
(আকাশ ওয়াশরুমের আয়নার সামনে দাড়িয়ে কথাগুলো বলে বেড়িয়ে এলো। একবার নিজের সদ্য বিয়ে করা বউয়ের দিকে তাকাতে চেয়েও তাকালো না। বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো। সকালে ফজরের নামাজের আগে ঘুম ভাঙলো আকাশের। ওয়াশরুম থেকে ওযু করে নামাজের জন্য চলে গেল মসজিদে। একবার মেঘলাকে ডাকতে চেয়েও ডাকলো না। নামাজ পড়ে গার্ডেনে জিম করতে লাগলো। এটা তার প্রতিদিনের রুটিন। রুমে এলো সকাল ৮ টা বাজে। এসে দেখলো মেঘলা কাল রাতে যেভাবে শুয়ে ছিলো এখনো সেভাবেই শুয়ে আছে।)
আকাশঃ এই মেয়ে ওঠো এটা তোমার বাবার বাড়ি না যে নাক ডেকে বেলা ১০ টা পর্যন্ত ঘুমাবে। ওঠো বলছি।
মেঘলাঃ…..
আকাশঃ এই মেয়ে শুনতে পাচ্ছো না।
(অনেক ডাকার পর যখন কোন সারাশব্দ পেলো না তখন আকাশ ভয় পেয়ে গেলো)
আকাশঃ মরে গেলো নাকি (ভাবতেই ভেতরটা অজানা কারণে কেঁপে ওঠলো) নাহ শ্বাসতো চলছে(নাকের কাছে হাত নিয়ে)। তার মানে ঘুমাচ্ছে ।
(সে যে অজ্ঞান হয়ে আছে বুঝতে পারলো না।পাশের টেবিলে রাখা পানির জগের পুরো পানিটাই মেঘলার মুখে মারলো।)
মেঘলাঃ( ঠান্ডা পানির স্পর্শ পেয়ে আসতে আসতে চোখ খুলে দেখি উনি সামনে দাড়িয়ে আসে পানির জগ হাতে। উঠার শক্তি পাচ্ছি না।)
আকাশঃ নিজেকে কী মহারানী মনে হয়? বেলা ১০ টা পর্যন্ত আপনি ঘুমাবেন আর বাড়ির কাজ আপনার বাবার পাঠানো কাজের লোক করবে। ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে যেন দেখি পুরো রুম গুছানো।
মেঘলাঃ (কথাটা বলে উনি হনহনিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে ঠাস করে দরজা বন্ধ করে দিলেন। শরীরটা এতো দুর্বল কেনো লাগছে? সারারাত কী আমি সেন্সলেস ছিলাম?? এতো ভাবার সময় নেই। কোন রকমে ওঠে রুমটা সুন্দর করে গুছিয়ে নিলাম এটা ভালোই পারি । গুছানোর সময় খেয়াল করলাম রুমটা অনেক সুন্দর, সব ব্লাক আর হোয়াইট। ওয়ালে সুন্দর সুন্দর পেইন্টিং। একটা বড় বেড, বেডের পাশে একটা ছোট সাইড টেবিল, একপাশে একটা আলমারি, ডেসিং টেবিলে অনেক রকমের কসমেটিক সব ছেলেদের, ছেলেরা এতো কসমেটিক ইউজ করে?? একটা বড় সোফা। মেঘলার বেডের কাজ হয়ে যাবে সোফা দিয়ে। একপাশে একটা বুক সেলফে অনেক বই বেশির ভাগ ইংরেজি বই, পাশেই কাঁচের দরজা হয়তো বেলকনিতে যাওয়ার। সবশেষে চোখ গেলো বেডের ওপর দেয়ালে আকাশের বড় একটা ছবিতে। কত সুন্দর লাগছে আকাশে, ঠোঁটের কোণে মিষ্টি হাসি। হয়তো এই হাসিটা সরাসরি দেখার সৌভাগ্য আমার হবে না। চোখের কোন থেকে এক বিন্দু পানি গড়িয়ে যাবার আগে মুছে নিলাম। ১ ঘন্টা হলো ওয়াশরুমে ঢুকেছে। ছেলে মানুষের গোসল করতে এত সময় লাগে। আমারতো ওয়াশরুম যাওয়া খুব দরকার কী করি ?? ঘুরতেই ডেসিং টেবিলের আয়নায় নিজের চেহারা দেখে নিজেই ভয় পেয়ে গেলাম। কপালে রক্ত শুকিয়ে আসে, কাজল লেপ্টে পুরো মুখ আরো কালো লাগছে। পুরো মুখের মেকআপ নষ্ট হয়ে পেত্নীর মত লাগছে। এখন আমাকে যে দেখবে নিশ্চিত হার্টঅ্যাটাক করে মারা যাবে। উনি বাহিরে আসার আগেই আমি বরং বেলকনিতে চলে যাই। এমনি বলছে উনার সামনে না যেতে। এই চেহারা নিয়ে উনার সামনে পড়লে এখনি বাড়ি থেকে বের করে দিবে । বেলকনিতে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই মাথাটা ঘুরে উঠলো।
আকাশঃ শাওয়ার নিয়ে বাইরে আসতেই দেখি মেয়েটা মাথা ঘুরে পড়ে যাচ্ছে।…
চলবে”””””