কালোবউ পর্ব ৩
লেখিকাঃ Tahmina Toma
মেঘ কন্যা তিলোত্তমা (ছদ্মনাম)
.
আকাশঃ (ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে দেখি মেয়েটা মাথা ঘুরে পড়ে যাচ্ছে। দৌড়ে গিয়ে ধরলাম)
মেঘলাঃ (পড়ে যাওয়ার আগেই উনি ধরে ফেললেন। আমি কী স্বপ্ন দেখছি?? না সত্যি। একটা মিষ্টি গন্ধ নাকে এসে লাগছে। যখন অনুভব করলাম উনার ভেজা লোমশ বুকে আমার গাল লেগে আছে শরীরে যেন শিহরণ খেলে গেল। এই প্রথম কোন পুরুষের এত কাছে এলাম তাও নিজের স্বামীর। আমি ৫ ফুট ৪” লম্বা তাও উনার বুক পর্যন্ত । কত লম্বা উনি।)
আকাশঃ (মেয়েটাকে ধরতেই ওর মাথা বুকে এসে পড়লো। গাল আমার বুকে লেগে আসে। গরম নিশ্বাস বুকে লাগছে। কেমন অদ্ভুত ভালোলাগা কাজ করছে?? না না এসব আমি কী ভাবছি?? এরা সবাই বিশ্বাসঘাতক । আর এই মেয়েতো আমার যোগ্যই না। এক ঝটকায় বুক থেকে সরিয়ে নিয়ে দুই কাধ ধরলাম) এই মেয়ে কী হয়েছে?? দেখে চলতে পারো না??
মেঘলাঃ ( ঝটকায় ঘোর কেটে গেল। কিন্তু উনার দিকে তাকানো সাহস হলো না। বুকের দিকেই তাকিয়ে আছি। জিম করে বডি বানিয়েছে সিক্সপ্যাক। ফর্সা বুকে কালো কুচকুচে ভেজা লোমগুলো লেপ্টে আছে ঘোর লেগে গেছে আবার। আচ্ছা শুনেছি যে ছেলেদের বুকে লোম থাকে তাদের বুকে ভালোবাসাও নাকি অনেক বেশি থাকে। তাহলে উনার নেই কেন??)
আকাশঃ কী বলছি শুনতে পাচ্ছো না?? নাকি কথাও বলতে পারো না ??( কাধ ধরে ঝাকিয়ে)
মেঘলাঃ (এবার উনার মুখের দিকে তাকালাম। চুলগুলো কপালে পড়ে আছে। ফোটা ফোটা পানিও পড়ছে। অসম্ভব সুন্দর দুটি চোখ, হালকা নীল রঙের, বাঁশির মতো নাক, গোলাপি চিকন দুটি ঠোঁট নাড়িয়ে কথা বলছে। এককথায় অসম্ভব সুন্দর, হলিউড হিরো । আমার দেখা সেরা সুন্দর একজন পুরুষ। ছেলেরা এতো সুন্দর হয়?? আমি সত্যি উনার যোগ্য না। একবিন্দু পানি অজান্তেই গড়িয়ে পড়লো চোখ থেকে)
আকাশঃ(মেয়েটার চোখে পানি দেখে থমকে গেলাম। খেয়াল করলাম মুখের দিকে। কপালে রক্ত শুকিয়ে আছে। কাজল, মেকআপ লেপ্টে বাজে লাগছে। মুখটা শুকিয়ে গেছে এক দিনে। এতকিছুর মাঝে গভীর চোখ দুটো অসম্ভব সুন্দর। যে কোন পুরুষ ঘায়েল হয়ে যাবে একটু তাকালে। মনে হচ্ছে কত অভিযোগ জমে আছে ঐ চোখে। না তাকানো যাবে না এই চোখ। হাতটা আলগা হয়ে যেতেই আবার পড়ে যেতে নিলো। শক্ত করে ধরলাম। একি এর শরীরে দেখছি অনেক জ্বর।)
মেঘলাঃ ( কী হচ্ছে বুঝতে পারছি না?? শুধু তাকিয়ে আছি মুখের দিকে।)
আকাশঃ এই মেয়ে জ্বর এলো কীভাবে?? (জোরে ধমক দিয়ে)
মেঘলাঃ আ,,আমার ন,,নাম মে,,মেঘলা ( সেই কাল থেকে এই মেয়ে এই মেয়ে করছে)
আকাশঃ whatever,, যাক কথা বলতে পারো। জ্বর এলো কীভাবে??
মেঘলাঃ আ,,আমি ফ,,ফ্লোরে শুতে পারি না। ঠান্ডায় এলার্জি আছে।
আকাশঃ তাহলে কাল বলনি,,,,,,(বলতে গিয়েও থেমে গেলাম। নিজের ব্যবহারের কথা মনে পড়ে গেল। কেন জানি না খারাপ লাগলো।) ওকে তুমি ফ্রেশ হয়ে আসো। একা যেতে পারবে নাকি হেল্প করতে হবে?
মেঘলাঃ একাই পাড়বো।
আকাশঃ আর একটা কথা। এই রুমে কী হচ্ছে তা যেন বাইরে না যায়।
মেঘলাঃ আচ্ছা( লাগেজ খোলে প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে ওয়াশরুমে চলে এলাম। শাওয়ার ছেড়ে নিচে বসে পড়লাম। কী হচ্ছে এসব?? কালকের আকাশ কী এই আকাশ?? এই বাড়ির অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে না বাবার দেওয়া ওই সামান্য কিছু টাকার জন্য উনি আমাকে বিয়ে করছেন। তাহলে কেন হচ্ছে এসব???)
আকাশঃ (প্যান্ট আর একটা টিশার্ট পরে চুলে জেল লাগিয়ে নিচে এলাম ব্রেকফাস্ট করতে। চাঁদনি ডাইনিং টেবিলে বসে খাচ্ছে। ও আপনাদের বলাই হয়নি। আমার পরিবারে আমি, আমার মা আর আমার ছোটবোন চাঁদনি। সবাই চাঁদ বলে ডাকি। বাবা মারা গেছে ৩ বছর আগে। চাঁদনি ইন্টার ১ম বর্ষের ছাত্রী। যেমন সুন্দর তেমন মেধাবী ) মা খাবার দাও।
মা (মারিয়া খান) বস দিচ্ছি। মেঘলা কোথায়??
আকাশঃ মেঘলা কে,,, ওহ্ ঐ মেয়েটা??
মাঃ যাকে এতো জেদ করে বিয়ে করে আনলি তার নাম জানিস না??
আকাশঃ জানি (গম্ভীর গলায়) জ্বর এসেছে। খাবার আর মেডিসিন রুমে পাঠিয়ে দাও।
চাঁদঃ ভাইয়া তুই ঠিক করছিস না। একজনের শাস্তি আর একজনকে দিস না। এই মেয়েটাতো কিছু জানেও না।
আকাশঃ চাঁদ,,,,,,(ধমক দিয়ে) ছোট ছোটদের মত থাক। বড়দের বিষয়ে নাক গলাতে আসবি না ।
চাঁদঃ একদিন না পস্তাতে হয় এই ছোট মেয়ের কথা না শুনার জন্য
(চাঁদ খাওয়া অর্ধেক রেখেই ওঠে চলে গেলো। আকাশ ও রাগ করে ওঠে চেয়ার লাথি মেরে ফেলে চলে গেলো।)
মাঃ একটা কালবৈশাখী ঝড় আমার হাসিখুশি সুন্দর সংসারটাকে ভেঙে গুড়িয়ে দিলো।ছেলেটা ধংসের খেলায় মেতেছে।
(রুমে গিয়ে আকাশ থমকে গেলো মেঘলাকে দেখে)
চলবে,,,,