কালোবউ পর্ব ৬
লেখিকাঃ Tahmina Toma
.
মেঘলাঃ (উনার কথা শুনে সবাই খাওয়া রেখে উনার দিকে তাকালো। এরপর উনি যা বললেন অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে সবাই উনার দিকে আর আমি কিছু না বুঝে তাকিয়ে আছি)
আকাশঃ আমরা আগামীকাল ঢাকা ব্যাক করছি।
মাঃ ঢাকা ব্যাক করছি মানে??
আকাশঃ মানে আবার কী?
মাঃ ঢাকা কেন যাবো আমরা? ঐ শহরে আমাদের কিছুই অবশিষ্ট নেই। সব শেষ হয়ে গেছে।
আকাশঃ কেন যাচ্ছি গেলেই দেখতে পাবে??
মাঃ আকাশ তুই কী শুরু করেছিস??
আকাশঃ এ নিয়ে আর কথা বলতে চাই না আমি। কাল লান্স করে সবাই রেডি হয়ে নেবে।
মাঃ আকাশ শুন,,,,,
আকাশঃ( এখন আমি কিছুই বলতে চাচ্ছি না মা। আগামীকাল তোমাদের সবার জন্য একটা বড় সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে। বিশেষ করে তোমার জন্য মা। (একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে) ওঠে চলে এলাম রুমে, কিছু কাজ আছে)
মেঘলাঃ ( উনি ওঠে চলে গেলেন। মা আর চাঁদ কেমন মনমরা হয়ে গেলো। মাঝে আমি কিছুই বুঝলাম না। কী হচ্ছে এখানে? সবার মন খারাপ দেখে কিছু জিজ্ঞেস করলাম না। খাওয়া শেষে যে যার মত চলে গেল। আমি টিয়া আপুকে সাহায্য করতে চাইলাম কিন্তু অসুস্থ বলে করতে দিলো না। রুমে চলে এলাম। রুমে এসে দেখি উনি সোফায় বসে ল্যাপটপে কিছু করছে। আমি দাঁড়িয়ে ভাবছি কী করবো??)
আকাশঃ( ল্যাপটপে কাজ করছিলাম সোফায় বসে। তখন মেঘলা রুমে এলো। অনেকক্ষণ পরেও যখন কোন মুভমেন্টের আভাস পেলাম না, তখন সামনে তাকিয়ে দেখি দরজার সামনে দাড়িয়ে কিছু ভাবছে) ওখানে দাঁড়িয়ে কী ভাবছো??
মেঘলাঃ ন,,,না ম,,,মানে ইয়ে।
আকাশঃ তোমার কী স্পিকিং প্রবলেম আছে?? মানে তুমি কী কথা বলতে গেলে তোতলাও??
মেঘলাঃ ক,,,ক,,কই,,,ন,,,না,,,তো।
আকাশঃ তাহলে এখন তোতলাচ্ছো কেন? (ধমক দিয়ে)
মেঘলাঃ (উনার ধমকে চমকে উঠলাম। এই সামান্য কারণে ধমক দেওয়ার কী আছে?? কীভাবে বলবো আপনাকে দেখলে আমি ভয়ে তোতলা হয়ে যাই।)
আকাশঃ এখনো মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছো কেন?? (ধমক দিয়ে)
মেঘলাঃ (এত ধমকায় কেনো??) ত,,তা,,হলে কী করবো??
আকাশঃ ও গড এখন এটাও একে বলে দিতে হবে কী করবে( বিরক্ত হয়ে)?? তুমি না অসুস্থ, শুয়ে রেষ্ট নাও।
মেঘলাঃ ( কিন্তু শুবো কোথায়?? রাতে তো নিচে শুয়ে জ্বর হয়ে গেছে)
আকাশঃ তাও দাঁড়িয়ে আছে। আবার কী হয়েছে??
মেঘলাঃ ম,,,মানে কোথায় শুবো (মাথা নিচু করে)
আকাশঃ বেড়ে শুয়ে থাকো (গম্ভীর কণ্ঠে)।
মেঘলাঃ( চুপচাপ বেড়ে শুয়ে পড়লাম। ওয়াও কী নরম??)
আকাশঃ (আবার কাজে মন দিলাম। রাতের আগে ফাইল রেডি করে পাঠাতে হবে।)
মেঘলাঃ( অনেকক্ষণ শুয়ে আছি কিন্তু ঘুম আসছে না। সকাল থেকে শুধু শুয়ে ঘুমিয়ে থেকে পার করছি। এত ঘুমানো যায় নাকি। কিন্তু উনার ভয়ে ওঠতেও পারছি না।)
আকাশঃ( কাজ শেষ করে বেডে তাকিয়ে দেখি মেয়েটা ঘুমিয়ে আছে বাচ্চাদের মত। নিষ্পাপ লাগছে দেখতে। কিছু চুল মুখের উপর পড়ে আছে। আমার ওকে দেখতে সমস্যা হচ্ছে। অজানতেই বেডের কাছে এসে ওর পাশে বসলাম। হাত যেন একাই চলে গেল ওর মুখের ওপর পরে থাকা চুলে। সরিয়ে দিলাম চুলগুলো, সযত্নে কানের পিছনে গুঁজে দিলাম। একটা চুমু একে দিলাম কপালে। চোখ গেলো গলার তিলটাতে। আচ্ছা এটাতে একটা কিস করলে কী খুব খারাপ হবে?? খারাপ হবে কেন? ও আমার বিয়ে করা বউ। তিন কবুল বলে বিয়ে করেছি। ঠোঁট একদম তিলের কাছে এনে আবার থেমে গেলাম। না না এসব কী করছি আমি?? কী ভাবছি আমি এসব?? আমিতো ওকে কোনদিন বউয়ের অধিকার দিতে পারবো না। আমিতো ওকে ভালোবাসি না তাহলে কেন এসব ভাবছি? চট করে ওঠে এলাম ওর পাশ থেকে। ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে রেডি হয়ে বেড়িয়ে এলাম বাড়ি থেকে কিছু কাজ আছে।)
মেঘলাঃ (আছরের আযান শুনে ঘুম ভেঙে গেল। শুয়ে থাকতে থাকতে কখন ঘুমিয়ে গেছি মনে নেই। খেয়াল করে দেখি রুমে উনি নেই। ওঠে ওয়াশরুম থেকে ওজু করে এসে নামাজ পড়ে নিলাম।)
চাঁদঃ আসবো ভাবি??
মেঘলাঃ (নামাজ শেষ করতেই চাঁদের ডাক শুনলাম।) হ্যাঁ হ্যাঁ এসো।
চাঁদঃ ভাইয়া কোথায়??
মেঘলাঃ আমিতো জানি না। ঘুমানোর আগে দেখেছিলাম সোফায় বসে ল্যাপটপে কিছু করছিলো। ঘুম থেকে ওঠে দেখি রুমে নেই।
চাঁদঃ এই ভাইয়াটাও না। সারাদিন বাসায় থাকে না। কোথায় থাকে আল্লাহ জানে? আর যেটুকু সময় থাকে শুধু ল্যাপটপ নিয়ে বসে থাকে। একটা মানুষ এত পরিবর্তন কী করে হতে পারে??
মেঘলাঃ কেন কী হয়েছে??
চাঁদঃ আরে ওসব বাদ দাও। চলো তোমাকে বাড়ি ঘুরিয়ে দেখাবো।
মেঘলাঃ আচ্ছা চলো( চাঁদ আগে বাড়ির সবার রুম দেখাতে লাগলো । চাঁদের রুম দেখে আমি অবাক। মনে হচ্ছে একটা ৫ বছরের বাচ্চার রুম। টেডি দিয়ে ভর্তি। আমার রুমে একটা টেডি ছিলো আমার সমান, সেটা জড়িয়ে ঘুমাতাম। বাট চাঁদের রুম দেখে মনে হচ্ছে টেডিবিয়ারের দোকান। হাহাহা)
চাঁদঃ ভাবি তুমি হাসছো কেন??
মেঘলাঃ কই হাসছি নাতে।
চাঁদঃ আচ্ছা চলো মার রুমে নিয়ে যাই।
মেঘলাঃ( মার রুমের দরজা থেকে দেখি উনি নামাজ পড়ে জায়নামাজে বসে তসবিহ পড়ছে তাই আর রুমে গেলাম না। ওপরে মোট চারটা রুম। একদম পূর্ব পাশের রুম আকাশ মানে আমাদের, তারপরের রুমটা তালা দেওয়া। তারপর মার রুম আর শেষে চাঁদের রুম। নিচে একটা গেস্ট রুম, স্টোর রুম, টিয়া আপুর রুম আর একটা রুমে হয়তো অন্য সার্ভেন্ট থাকে, কিচেন, ডাইনিং টেবিল আর ড্রয়িংরুম। দুতলা বাড়ি কিন্তু অনেক সুন্দর আর দামি ফার্নিচার দিয়ে সাজানো।)
চাঁদঃ এবার গার্ডেনে চলো।
মেঘলাঃ আচ্ছা (বাড়ির বাইরে থেকে বাড়ির ডিজাইনটা আরো বেশী সুন্দর লাগছে। চারদিকে গাছপালা দিয়ে ঘেরা। বাড়ির সামনে দুপাশে ফুলের বাগান মাঝখানে রাস্তা বাড়িতে ঢোকার। একপাশে একটা সুইমিং পুল। একটু ভেতরে একটা গোল টেবিল উপরে ব্যাঙের ছাতা চারপাশে বসার জায়গা। চা খেতে খেতে বিকেল উপভোগ করার জন্য পার্ফেক্ট জায়গা। বাড়ির বাইরে এসে আমার পার্ক পার্ক ফিলিংস হচ্ছে।)
চাঁদঃ এবার বাড়ির পেছনে চলো।
মেঘলাঃ আরো বাকি আছে??
চাঁদঃ আসল জায়গায় দেখলে না এখনো।
মেঘলাঃ আচ্ছা চলো(বাড়ি পিছনে এসে আমি অবাক। নানা রকম ফলের গাছ। পেয়ারা দেখে মুখে জল এসে গেছে) চাঁদ,,,,,,,,পেয়ারা!!! (খুশী হয়ে ডাক দিলাম)
চাঁদঃ তোমার পছন্দ বুঝি???
মেঘলাঃ খুব,,,,,
চাঁদঃ আমিতো গাছে ওঠতে পারি না। এই গাছতো অনেক উচু (মন খারাপ করে)।
মেঘলাঃ আমি ওঠতে পারি কিন্তু নামতে পারি না (মন খারাপ করে)
চাঁদঃ হাহাহা,,,, আচ্ছা ঠিক আছে যাওয়ার সময় দারোয়ান কাকাকে ডেকে এনে পেরে নিয়ে যাবো। এখন ওই দিকে চলো।
মেঘলাঃ আচ্ছা,,, কিন্তু চাঁদ এখনতো পেয়ারার সিজন না। এত পেয়ারা কীভাবে গাছে??
চাঁদঃ এখানকার বেশীরভাগই বারোমাসি ফলের গাছ।
মেঘলাঃ ও মাই গড,,,,,, (চিৎকার করে)
চাঁদঃ আবার কী হয়েছে??
মেঘলাঃ পদ্মফুল,,,,,,,,, ( সামনে একটা ঘাট বাঁধানো পুকুর। চারপাশে নারকেল গাছ সিড়ির দুইপাশে কদম গাছ আর পুকুরে ফোটে আছে সাদা, গোলাপি আর দুর্লভ নীলপদ্ম। বাংলাদেশে সাধারণত দুই ধরনের পদ্ম ফুল পাওয়া যায় সাদা আর গোলাপি। নীল পদ্মফুল পাওয়া যায় না। কিছুদিন আগে হলুদ রঙের এক পদ্মের সন্ধান মিলেছে বাংলাদেশের কুমিল্লা জেলায় । প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে এটি বিশ্বে পদ্মফুলের সম্পুর্ণ নতুন এক প্রজাতি। সে যায় হোক) চাঁদ এখানে নীলপদ্ম এলো কীভাবে??
চাঁদঃ আমি জানি না। ভাইয়া এই পদ্মফুল পুকুরে লাগিয়েছে।
মেঘলাঃ তুমি জানো না আমি আজ কতটা খুশী। এটা আমার কতটা প্রিয় ফুল বলে বুঝাতে পারবো না। দাড়াও আমি দুটো ফুল নিয়ে আসি।
চাঁদঃ আরে আরে ভিজে যাবে। তোমার জ্বর আসবে আবার।
মেঘলাঃ (চাঁদ বলতে বলতে আমি কয়েকটা সিড়ি নেমে সিঁড়ির পাশ থেকে একটা সাদা, একটা গোলাপি আর একটা নীলপদ্ম নিলাম। কাটা দিয়ে হাত কেটে গেছে, হাটুর নিচেরটুকু ভিজে গেছে। তাতে কী ফুলতো পাইছি)
চাঁদঃ গেলেতো ভিজে। এখন চলো সন্ধ্যা হয়ে যাবে।
মেঘলাঃ হুম চলো। চাঁদ এই বাড়িটা আমার কাছে সৌখিন কোন ব্যক্তির বাগানবাড়ি মনে হচ্ছে।
চাঁদঃ হুম এটা আমাদের,,, সরি আমাদের না ভাইয়ার বাগানবাড়ি। ভাইয়ার ১৮ তম জন্মদিনে বাবা ভাইয়াকে গিফট করেছিলো। এই বাড়িটা ছিলো বলেই রাস্তায় দাড়াতে হয়নি সেদিন।
মেঘলাঃ মানে??? (অবাক হয়ে)
চাঁদঃ কিছু না।,,,,, তুমি পেয়ারা নিবে না???
মেঘলাঃ ( চাঁদ হয়তো বলতে চাইছে না তাই আমি আর জোর করলাম না। কিন্তু সবকিছু আমার কাছে কেমন রহস্যময় লাগছে। এরা সবাই আমার থেকে কিছু লোকাচ্ছে।) হুম নেবোতো।
চাঁদঃ আচ্ছা দাঁড়াও দারোয়ান কাকাকে ডেকে আনি।
মেঘলাঃ আচ্ছা,,,,, ( একটু পরই চাঁদ একা ফিরে এলো) কী হলো?? দারোয়ান কাকা কই??
চাঁদঃ উনার নাকি বয়স হয়েছে গাছে ওঠতে পারবে না। এখন চলো কাল একটা ব্যবস্তা করবো।
মেঘলাঃ না না পেয়ারা যখন দেখেছি আজই খাবো। তুমি ফুলগুলো রাখো আমি ওঠছি।
চাঁদঃ আরে তুমি না নামতে পারো না। তারওপর তোমার ড্রেস অনেকটা ভিজে গেছে, পিছলে পড়ে যাবে।
মেঘলাঃ কিছু হবে না তুমি শুধু দেখো।
চাঁদঃ আরে,,,,
মেঘলাঃ (গাছে ওঠতে লাগলাম। আসলে আমি যেটা একবার ঠিক করি করবো তবে সেটা করেই ছাড়ি। ওঠে পেয়ারা পাড়তে লাগলাম)
চাঁদঃ ভাবি ওইটা দেখো পাকা।
মেঘলাঃ এটা,,
চাঁদঃ আরে না না আর একটু সামনে,,,
আকাশঃ(গাড়ি গ্যারেজে রেখে বাড়িতে ঢুকবো তখনি চাঁদের গলার শব্দ কানে এলো। মনে হচ্ছে বাড়ির পেছন দিক থেকে। চেচিয়ে কিছু বলছে কাউকে। এই সময়ে চাঁদ বাড়ির পেছনে কী করছে?? কৌতুহল বসতো ওইদিকে গেলাম। এখানে এসে আমার চোখ কপালে। মেয়েটা গাছে ওঠে পেয়ারা পারছে আর চাঁদ নিচ থেকে দেখিয়ে দিচ্ছে। আমি মনে হয় প্রথম পুরুষ যে বিয়ের পরের দিন বউকে গাছে ওঠে পেয়ারা পারছে দেখছি। কী সৌভাগ্য আমার?? চাঁদের কাছে গেলাম) এসব কী হচ্ছে চাঁদ??? (রেগে ধমক দিয়ে)
চাঁদঃ ভ,,,,ভাইয়া আসলে
মেঘলাঃ (উনার গলার শব্দ পেয়ে নিচে তাকালাম। উনিতো দেখি অনেক রেগে গেছে। ভয়ে কাঁপতে লাগলাম। অন্যমনস্ক হতেই পা ফসকে গেলো) আআআআআআআ
চলবে,,,,,,,,,,,,,,,
সবাই আমাকে ভাইয়া ভাইয়া করছে। নিজের নাম নিয়ে কনফিউশন হয়ে গেছি। Tahmina Toma এটা কী ছেলেদের নাম ??