.
লেখিকাঃ Tahmina Toma
কালোবউ পর্ব ৭
মেঘলাঃ (উনার গলার শব্দ পেয়ে নিচে তাকালাম। উনিতো দেখি অনেক রেগে গেছে। ভয়ে কাঁপতে লাগলাম। অন্যমনস্ক হতেই ভেজা থাকায় পা ফসকে গেলো) আআআআআআআ
আকাশঃ ( মেঘলার গলা পেয়ে আমি আর চাঁদ পিছনে তাকিয়ে দেখি মেঘলা পরে গেছে।)
চাঁদঃ ভাবি,,,,,,,,,,,
(দুর্ভাগ্যবশত সিনেমার নায়কের মত আকাশ মেঘলাকে ধরতে পারে নি। সে চাঁদের সাথে কথা বলছিলো আর আমাদের মেঘলা মনি পরে গেছে নিচে)
মেঘলাঃ ও মা গো আমার পা ভেঙে গেছে গো ( পা ধরে চিৎকার করে কান্না করছি। প্রচন্ড ব্যাথা করছে পায়ে)
চাঁদঃ দেখি কোথায় ব্যাথা পেলে??( মেঘলার কাছে গিয়ে পা ধরে)
মেঘলাঃ ও আল্লাহ গো ( চাঁদ পা ধরতেই ব্যাথায় চিৎকার করলাম)
চাঁদঃ বলেছিলাম আমি ওঠো না। এবার ঠেলা সামলাও।
আকাশঃ (ওদের কাছে গেলাম) দেখি কী হয়েছে??(মেঘলা পা ধরতে গেলে)
মেঘলাঃ একি আপনি আমার পায়ে হাত দিচ্ছেন কেন?? আমার পাপ হবে।
আকাশঃ চাঁদ দিলো তাতে পাপ হবে না। (চোখ গরম করে তাকালাম মেঘলার দিকে)
মেঘলাঃ আ,,,আসলে কারো পায়ে হাত দেওয়া ঠিক না। আর চাঁদ আমার থেকে বয়সে ছোট। আর আপনি কত বড় আবার আমার স্বামী, আপনি পায়ে হাত দিলে আমার পাপ হবে।
আকাশঃ তোমার জ্ঞনের কথা তোমার কাছে রাখো, যতসব।
মেঘলাঃ আআহ্ (উনি আমার কথা শুনলেন না। পা ধরতেই ব্যাথা পেলাম। রাগে একটু শক্ত করে ধরেছে)
চাঁদঃ ( আমি বসে বসে এদের প্রেম দেখছি হিহিহি)
আকাশঃ ( ধরাটা একটু শক্ত হয়ে গেছে তাই ব্যাথা পেয়েছে।) দেখেতো মনে হচ্ছে মচকে গেছে। এই মেয়ে তোমাকে গাছে ওঠতে কে বলেছে? (ধমক দিয়ে)
মেঘলাঃ,,,,,,,
চাঁদঃ আরে ভাইয়া না বকে দেখ ঠিক করতে পারিস কিনা।
আকাশঃ এটা কী তোর নাটক সিনেমা মনে হচ্ছে? আরেক মোচড় দিলেই ঠিক হয়ে যাবে। নাকি তোর আমাকে ডাক্তার মনে হচ্ছে?? হাড় সরে গেলে নাহয় বসানো যেত।
চাঁদঃ আরে ভাইয়া রেগে যাচ্ছিস কেন??
আকাশঃ রাগবো না তো ডান্স করবো। এই আটার বস্তা এখন আমার কোলে করে বাসায় নিয়ে যেতে হবে।
মেঘলাঃ ( অবাক হয়ে উনার দিকে তাকালাম। এই জন্য উনি রাগ করছে?? আর আমি কিনা কী ভাবছি?? একটা তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলাম নিজের ওপর) আমি একাই যেতে পারবো। চাঁদ একটু হেল্প করো। আমার হাতটা একটু ধরো।
আকাশঃ ( রাগী চোখে তাকালাম। হাটতে পারবে না তার আবার রাগ কত। কী একটু বলেছি এখন সে একাই যেতে পারবে)
মেঘলাঃ (উনার রাগী চোখ দেখে নিচের দিকে তাকালাম। উনার রাগ উপেক্ষা করে কিছু করার সাহস আমার নেই।)
আকাশঃ চাঁদ তুই দাড়িয়ে আছিস কেন? বাসায় গিয়ে ডাক্তার আঙ্কেলকে কল দে। উনার আসতেও সময় লাগবে। (আসলে আমাদের এই বাড়িটা একটু গ্রামের দিকে। চাঁদের সাথে কথা বলে মেঘলার দিকে তাকাতেই দেখি পা ধরে মুখটা কাচুমাচু করে বসে আছে। খেয়াল করলাম যেখানে ধরে আছে ব্লাড বের হচ্ছে আর হাটু থেকে সালোয়ার ভেজা) ব্লাড এলো কোথা থেকে??আর সালোয়ার ভেজা কেন ( সরু চোখে তাকিয়ে)??
মেঘলাঃ (উনার কথায় চমকে উঠলাম। এখন যদি জানে পুকুরে নেমেছিলাম আমাকে কাঁচা চিবিয়ে খাবে। এখন তোর কী হবে রে মেঘলা?? এ্যা,,,,,,)
আকাশঃ চাঁদ,,,,,, (চাঁদের হাতে মনে হয় কিছু দেখেছিলাম। চাঁদ একটু এগিয়ে গেছে তাই ডাক দিলাম)
চাঁদঃ হ্যা ভাইয়া,,
আকাশঃ ( চাঁদ এদিকে ফিরতেই ওর হাতে তিনটা পদ্মফুল চোখে পড়লো। এবার বুঝতে পারছি) কিছু না তুই যা( মেঘলার দিকে কটমট করে তাকিয়ে)
চাঁদঃ আচ্ছা,,,,
মেঘলাঃ ( উনার তাকানো দেখে ঢোক গিলে নিলাম ভয়ে। মনে মনে বলছি চাঁদ এই আজরাইলের কাছে আমাকে একা রেখে যেও না। কিন্তু মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না)
আকাশঃ হাত দেখি,,,(শান্তভাবে)
মেঘলাঃ,,,,,,,,,,
আকাশঃ হাত দেখাতে বলেছি (জোরে চিৎকার করে)
মেঘলাঃ (কাঁপতে কাঁপতে হাত এগিয়ে দিলাম)
আকাশঃ ( পদ্মফুলের কাটা দিয়ে দুটো হাতই ফালা ফালা হয়ে গেছে) লুক,,, কী অবস্থা হয়েছে হাতের। তুমি এই কাটা হাত, ভেজা ড্রেস পড়ে গাছে ওঠেছিলে। ইউ ইডিয়ট গার্ল। তোমার না জ্বর? পানিতে কেন নেমেছিলে ইস্টুপিট?? (ধমক দিয়ে)
মেঘলাঃ ( উনার ধমকে আমার আত্মারাম প্রায় খাঁচা ছাড়া হয়ে গেছিলো। পানিতে নামার জন্য কেন বকছে?? জ্বর এলে উনার সেবা করতে হবে তাই??)
আকাশঃ তোমার কোনদিন বুদ্ধি সুদ্ধি হবে না?? সবসময় ইডিয়টের মতো কাজ করো। যাতে নিজেই বিপদে পড়ো বারবার।
মেঘলাঃ এই জীবনের কোন মূল্য নেই আমার কাছে। যত তাড়াতাড়ি মুক্তি তত তাড়াতাড়ি শান্তি (বিরবির করে) (কিন্তু উনার কথা শুনে মনে হচ্ছে আগেও যে আমি এমন করেছি সেটা উনি জানেন)
আকাশঃ ( বিরবির করে বললেও সবটা স্পষ্ট শুনতে পেয়েছি। কেন জানি না প্রচন্ড খারাপ লাগলো। বুকের বা পাশে চিন চিনে ব্যাথা হচ্ছে। কিন্তু কেন?? আর কথা না বাড়িয়ে কোলে তোলে বাড়ির দিকে হাঁটা শুরু করলাম)
মেঘলাঃ (উনি আর কিছু বলছেন না। শুধু কোলে নিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। আমি তাকিয়ে আছি উনার মুখের দিকে। আচ্ছা এই রাজপুত্রটা একান্ত আমার হলে কেমন হতো?? শুধু আমাকেই ভালোবাসতো তাহলে কেমন হতো?? বিশ্বাস করেন আপনি আমাকে একটু ভালোবাসলে আপনাকে ভালোবাসায় ভরিয়ে দিতাম। আমার সব ভালোবাসা যে স্বামীর জন্য এই বুকে জমিয়ে রেখেছিলাম। কিন্তু আপনার যে প্রয়োজন নেই আমার মতো কালো মেয়ের ভালোবাসা। চোখ থেকে এক বিন্দু পানি গড়িয়ে পড়লো। হাত দিয়ে মুছে নিলাম। এই চোখটাও না যখন তখন পানি ফেলে। নিজের চোখ কাঁদে অন্যকারো জন্য, নিজের মন ভাবে অন্য কারো কথা। আজব সব কাহিনী। কালো মেয়েদের এত স্বপ্ন দেখতে নেই।)
আকাশঃ( কেন এত অনিহা তোমার নিজের প্রতি বলোতো?? নিজের একটু খেয়ালতো রাখতে পারো। নিজের জন্য না হলেও অন্যএকজনের জন্য। যে তোমাকে ছাড়া পৃথিবী অন্ধকার দেখবে।,,,,,,,, কথাটা বলে নিজেই বেকুব হয়ে গেলাম। এটা কেন বললাম আমি?? আর কার কথাই বা বললাম?? )
মাঃ কী হয়েছে বউমার?? চাঁদকে জিজ্ঞেস করলাম বউমা কোথায় বললো তোমার ছেলের সাথে আসছে। কিন্তু বউমা তোর কোলে কেন??
আকাশঃ (ভাবতে ভাবতে কখন বাসায় ঢোকে গেছি খেয়ালই করিনি। মার কথায় ভাবনা থেকে বেড়িয়ে এলাম।) তোমার আদরের নতুন বউমা পুকুরে নেমে পদ্মফুল আনতে গিয়ে হাত কেটে ড্রেস ভিজে ওঠে এসেছে। আবার সেই কাটা হাত আর ভেজা ড্রেস পরে পেয়ারা গাছে ওঠে পেয়ারা পাড়তে গিয়ে পরে গেছে। আর পরে যাওয়ায় পা মচকে গেছে।
মেঘলাঃ ( বাইরে গিয়ে ভুলেই গিয়েছিলাম আমি নতুন বউ। বাড়ির মতো মনে হয়েছিল। এখন কী যে লজ্জা লাগছে!!!! সবাই কী ভাবছে নতুন বউ কী বেহায়া??? লজ্জায় এখন আমার কান্না পাচ্ছে। কী দরকার ছিল এমন বেহায়াপনা করার??? এ্যা,,,,,,,,,,,,,)
মাঃ বউমা এমন খামখেয়ালীপনা কেউ করে??? (হালকা ধমক দিয়ে)
মেঘলাঃ( অসহায় মুখ করে মার দিকে তাকালাম)
মাঃ অন্যায় করে এখন ইনোসেন্ট মুখ বানালে বকা থেকে মাফ পাবে ভেবেছো।
মেঘলাঃ (অবাক হয়ে গেলাম মার কথা শুনে। কান্না পাচ্ছে, না না কষ্টে না সুখে। বাড়িতে যখন কোন গন্ডগোল করতাম মাও এভাবে বকতো। আপনারা আবার ভাববেন না কালো বলে একদম শান্ত আর ভদ্র মেয়ে আমি। একদম উল্টো, প্রচন্ড দুষ্টু আমি। অনেক দুষ্টুমি করতাম বাড়িতে তাই এখানেও শুরু হয়ে গেছি।)
আকাশঃ তোমার বকার হলে পরে বকো এখন রুমে যেতে দাও আমাকে। এই আটার বস্তা নিয়ে কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবো।
মাঃ ছি্ আকাশ এটা কেমন কথা?? তুই জানিস বিয়ের দিন তোর বাবা আমাকে ১ ঘন্টা কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো। তার কাজিনরা ভেতরে ঢুকতে দেয়নি। আর তার ছেলে হয়ে এই পুঁচকি একটা মেয়েকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিস না তুই। বডি কী হাওয়া দিয়ে বানিয়েছিস??
আকাশঃ মা,,,,,,,,
মেঘলাঃ( বেশ হয়েছে আমাকে আটার বস্তা বলে। আমি মাত্র ৫০ কেজি ওজন, হাইট অনুযায়ী পারফেক্ট। আর উনারতো ৮০ কেজির বেশি হবে। যেমন লম্বা তেমন বডি। ছোট খাটো একটা পাহাড় মনে হয়।)
মাঃ আচ্ছা যা রুমে নিয়ে যা। আমি দেখি চাঁদ জসিম ( ডাক্তার) ভাইকে আসতে বললো কিনা??
আকাশঃ (রুমে এনে সোজা ওয়াশরুমে নিয়ে নামালাম) দেয়াল ধরে দাঁড়াও, আমি আসছি।
মেঘলাঃ ( শুধু মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বললাম)
আকাশঃ (ওয়াশরুমে ওকে রেখে এসে ওর লাগেজ থেকে একটা নীল রঙের থ্রি-পিস বের করে ওয়াশরুমে গেলাম। ভেজা কাপড়ে থাকলে আবার জ্বর আসবে) এটা পরে নাও। আমি বাইরে আছি হয়ে গেলে ডাক দিয়ো।
মেঘলাঃ আচ্ছা। (উনি চলে যেতেই ড্রেস চেঞ্জ করে নিলাম। একটু অসুবিধা হলেও কিছু করার নেই।) হয়ে গেছে।
আকাশঃ (বাহ্ আমার প্রিয় রঙের ড্রেসে ভালোই লাগছে। একবার তাকিয়ে আবার কোলে করে রুমে এনে বেডে শুইয়ে দিলাম।) এখানে থাকো আমি দেখছি ডাক্তার আঙ্কেল আসছে কিনা??
ডাক্তারঃ তোমার যেতে হবে না আকাশ। আমি চলে এসেছি।
আকাশঃ ওহ্ আঙ্কেল এসে গেছেন।
ডাক্তারঃ হুম। দেখি মামনী কোথায় লেগেছে?? (মেঘলার পাশে বসে)
মেঘলাঃ (পা দেখিয়ে দিলাম। পাশে উনি, মা আর চাঁদ দাঁড়িয়ে আছে)
ডাক্তারঃ হুম চোট ভালোই লেগেছে। ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছি সাতদিন পর খোলে দিবো। আর কোন প্রকার চাপ যেন পায়ে না লাগে। তাহলে কিন্তু প্রবলেম বাড়বে। আর এই মেডিসিনগুলো সময় মতো নিতে হবে।
মেঘলাঃ(একটা পেসক্রিপশন আকাশের দিকে এগিয়ে দিয়ে আমার পায়ের গোড়ালিতে মেডিসিন লাগিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিলো। হাতেও মেডিসিন লাগিয়ে হাতেও ব্যান্ডেজ করে দিলো।)
ডাক্তারঃ এখন তাহলে আমি আসি। আর মামনী একটু সাবধানে থাকবে কেমন? এতবড় মেয়ে এমন খামখেয়ালী হলে চলে?? এখন আবার এই বাড়ির বউমা হয়ে গেছো।(মিষ্টি হেসে)
মেঘলাঃ জী আঙ্কেল সাবধানে থাকবো(লজ্জা পেয়ে)
আকাশঃ চলুন আঙ্কেল আপনাকে এগিয়ে দিয়ে আসি।
ডাক্তারঃ হুম চলো (রুম থেকে বেড়িয়ে) আকাশ তোমার পছন্দ আছে বলতে হবে। মেয়েটা কালো হলেও ভিষণ মিষ্টি দেখতে।
আকাশঃ একটা মুচকি হাসি দিলাম শুধু।
মেঘলাঃ( ডাক্তার আঙ্কেলের সাথে সবাই বেড়িয়ে গেলো। আমি নিজের দিকে তাকিয়ে আছি। দুই হাত আর পায়ে ব্যান্ডজ করা। নিজেকে প্রতিবন্ধী মনে হচ্ছে, এ্যা,,,,,,,। বলে গেলো পায়ে চাপ না দিতে তাহলে হাঁটবো কিভাবে??)
চাঁদঃ ভাবি আসবো???
মেঘলাঃ হুম এসো।(চাঁদের হাতে ফুলগুলো দেখে খুশী হয়ে গেলাম)
চাঁদঃ এগুলোর জন্য এত কিছু। এগুলো কোথায় রাখবো??
মেঘলাঃ টেবিলের এই ফুলদানিতে রেখে দাও।
চাঁদঃ ওকে।(ফুল রেখে) তুমি রেস্ট নাও আমি আসছি।
মেঘলাঃ আচ্ছা( চাঁদ ফুল রেখে চলে গেলো। আমি ফুলের দিকে তাকিয়ে আছি। ব্যাথা পেলেও এই ফুলের জন্য উনার কোলেতো ওঠতে পারছি। স্বামীর কোলে ওঠার স্বপ্ন অন্তত পূরণ হয়েছে।)
আকাশঃ (রুমে এসে দেখি মেয়েটা বিছানায় বসে টেবিলের দিকে তাকিয়ে আছে। টেবিলে দেখি সেই ফুলগুলো।) এই ফুলের জন্য এত কিছু হয়েছে। এখনি ফেলে দেবো এই ফুল।
মেঘলাঃ এই কী করছেন?? প্লিজ ফেলবেন না।(আকাশ তাও ফুল ফেলতে গেলে আমি বিছানা থেকে নামার জন্য নিচে পা রাখতেই ব্যাথায় চেঁচিয়ে ওঠলাম) আহ্,,,,,,
চলবে,,,,,,,,,,