যেদিন তুমি এসেছিলে
সিজন ২ পর্ব ২৫
মুন্নি আক্তার প্রিয়া
__________________
ভালোবাসা হলো গোলাপের মতো। আর কাঁটা হচ্ছে দুঃখ-কষ্ট। ভালোবাসা পেতে হলে কষ্টকেও বরণ করার ধৈর্য রাখতে হবে। অর্ষাও সেই ধৈর্য ধরার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছিল। প্যাটিস বসে আছে তার কাছে। আজকাল সকালের থেকে প্যাটিস তার আশেপাশেই বেশি থাকে। আগে দূর দূর করলেও এখন অর্ষা কিছুই বলে না। সে যেন হয়ে গেছে এখন নির্জীবতার উপমা।
দরজার কাছ থেকে তখন হুংকারের স্বরে ভেসে এলো,
“অর্ষা!”
অর্ষা চকিতে তাকিয়ে দেখল গ্যাঞ্জাম পার্টির সবাই এসেছে। সাথে মুনও আছে। কিন্তু প্রত্যেককেই দেখে মনে হলো তারা ভীষণ রেগে আছে। সে বসা থেকে উঠে এগিয়ে গেল। হেসে জিজ্ঞেস করল,
“কেমন আছিস তোরা?”
মুন রাগীস্বরে বলল,
“আমরা কেমন আছি তা তোর জানতে হবে না। তোর খবরখানা আগে বল আমায়!”
“আমার আর কোন খবর?”
লামিয়া বলল,
“তোর নাকি বিয়ে ঠিক হয়েছে?”
অর্ষা ভারী দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলল,
“হুম!”
“আশ্চর্য! তোর বিয়ে ঠিক হয়েছে অথচ এই খবরটা তুই আমাদের কাউকে জানালি না? কেন?”
“আহা! দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই কথা বলবি? ভেতরে এসে আগে বোস।”
ওরা সবাই ভেতরে গিয়ে বসল। অর্ষা বলল,
“আমি চা নিয়ে আসি।”
রেশমি হাত টেনে ধরল,
“চা পরে খাওয়া যাবে। আগে আমাদের সাথে কথা বল। বোস এখানে।”
অর্ষা মিথ্যে হাসি দিয়ে বলল,
“তোরা এত সিরিয়াস হয়ে আছিস কেন? বিয়েটা তো এখনও হয়নি। পরে তোদের অবশ্যই জানাতাম।”
“হয়েছে। জানিয়ে একদম উদ্ধার করতি আমাদের। তোকে কিছু প্রশ্ন করব। সত্যি সত্যি উত্তর দিবি।”
“তোদের আবার মিথ্যা বললাম কবে?”
“বলিসনি। তাই আশা করব, আজও বলবি না। তুই এই বিয়েতে মন থেকেই রাজি?” জানতে চাইল জুঁই।
“এই প্রশ্ন করার মানে কী?”
আহিল বলল,
“মানে আছে অর্ষা। বিয়ে তো প্রতিটা মেয়ের জীবনেই আলাদা একটা স্বপ্ন। অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ হোক, অথবা লাভ ম্যারেজ হোক; প্রতিটা মেয়েই তার পছন্দমতো বিয়ে করে। খুশির খবরটা বন্ধুদের দেয়। তুই তো তোর জব হওয়ার কথাটাও আমাদের সেদিনই জানিয়ে দিয়েছিলি। আর সেখানে বিয়ের মতো এত বড়ো একটা ব্যাপার ঘটে গেল, অথচ তুই একদম নিরব, নিশ্চুপ। কেন? তোর মাঝে তো আমরা কোনো আনন্দ দেখতে পাচ্ছি না।”
“ধুর! বাদ দে তো।”
মুন বলল,
“বাদ দিতে আসিনি। আমরা জানতে এসেছি। তুই এই বিয়েতে মন থেকে রাজি কিনা বল।”
“মন থেকে রাজি কি রাজি না তাতে কী আসে যায়? এই বিয়েটা আমায় করতেই হবে।”
“কেন? মন থেকে না চাইলে তুই কেন করবি এই বিয়ে?”
“তোরা বুঝবি না।”
দিদার বলল,
“আমরা বাচ্চা নই অর্ষা। বুঝিয়ে বল আমাদের। শেয়ার কর সব।”
“শেয়ার করার মতো কিছু নেই।”
“তুই আমাদের থেকে কিছু লুকাচ্ছিস।”
“কী লুকাব?”
লামিয়া অর্ষার কাঁধ ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলল,
“তুই আহনাফ ভাইয়াকে ভালোবাসিস?”
দৃষ্টি নামিয়ে নিয়েছে অর্ষা। ওর নিরবতাই ওর উত্তর। আশিক বলল,
“আহনাফ ভাইয়াকে ভালোবাসলে কেন অন্য কাউকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে গেলি দোস্ত? মানুষটা তোকে পাগলের মতো ভালোবাসে।”
“আমার কিছু করার নেই।”
“কিন্তু আমার আছে!”
কথাটা ভেসে এলো দরজার বাইরে থেকে। সবাই সেদিকেই তাকাল। ওমর রহমান আর সেলিনা বেগম বাহির থেকে ভেতরে এলো। গ্যাঞ্জাম পার্টি অর্ষার রুমে আসার আগেই মুনকে নিয়ে তাদের রুমে গিয়েছিল। সবটা বলেনি। শুধু বলেছিল, অর্ষা বিয়েতে মন থেকে রাজি নয়। সত্য মিথ্যা যাচাই করার জন্য এবং নিজ কানে তাদের শোনানোর জন্য ওরাই তাদেরকে ঘরের বাইরে দাঁড় করিয়ে রেখেছিল।
অর্ষা চমকে উঠে দাঁড়ায়। ওমর রহমান বললেন,
“রুহুল যখন বলল, তোফায়েল তোকে পছন্দ করে। বিয়ে করতে চায়। তুইও রাজি। তখন আমি ভেবেছিলাম, তুইও হয়তো তোফায়েলকে পছন্দ করিস। কিন্তু তোর মনের কথাটা বুঝতে পারিনি। আজ যদি ওরা না আসতো, তাহলে তো অনেক বড়ো ভুল হয়ে যেত মা। আমাদের জন্য আর কত ত্যাগ করবি তুই?”
অর্ষা মাথা নিচু করে রেখেছে। তার কাছে জবাব নেই। ওমর রহমান রুহুলকে ফোন করে তৎক্ষণাৎ বাড়িতে আসতে বললেন। সেলিনা বেগমকে বললেন ওদের জন্য নাস্তা-পানির ব্যবস্থা করতে। তারপর তিনি গিয়ে বারান্দায় চেয়ার নিয়ে বসলেন। রুহুলের বাড়ি আসতে আসতে প্রায় দশ মিনিট লেগে গেছে। সে আরেকটা চেয়ারে বসে বলল,
“এত জরুরী তলব কেন আব্বা?”
ওমর রহমান নির্লিপ্তস্বরে বললেন,
“বাড়ি ছেড়ে চলে যা।”
রুহুল বিস্ময় নিয়ে বলে,
“এসব কী বলো আব্বা? তোমার শরীর ঠিক আছে।”
“শরীর, মাথা সবই ঠিক আছে।”
রুহুল জোরে ডাকল,
“মা! অর্ষা?”
সেলিনা বেগম, অর্ষা, গ্যাঞ্জাম পার্টি সবাই রুহুলের ডাক শুনে বেরিয়ে এলো। রুহুল বলল,
“আব্বা এসব কী বলতাছে? তার কি মাথায় সমস্যা হইছে?”
সেলিনা বেগম জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালেন। ওমর রহমান বললেন,
“তোকে বাড়ি থেকে চলে যেতে বলেছি।”
“বাড়িতে আনার জন্য কান্নাকাটি করো। এখন আবার বলো বাড়ি থেকে চলে যেতে। পাগল-টাগল হয়ে গেছ নাকি? আর হইছেটা কি সেটা তো বলবা কেউ?”
“তখন তো বুঝিনি তুই কতটা স্বার্থপর। তুই চলে যা বাড়ি থেকে। আমার মেয়েকে তোফায়েলের সঙ্গে বিয়ে দেবো না।”
“মানে? কেন আব্বা? হঠাৎ কী হলো?”
“অর্ষা যাকে চাইবে তার সাথেই ওর বিয়ে হবে।”
“ও এই বিয়েতে রাজি।”
“তুই বাধ্য করেছিস ওকে। তোকে থাকতে হবে না আমাদের সঙ্গে। চলে যা।”
“যাব। কিন্তু অর্ষার বিয়ে তোফায়েলের সঙ্গেই হবে। ও আমার বোন। আমার কথাই শুনবে।”
“ও আমাদের মেয়ে। তোর বোন হয় এই কথা আর বড়ো মুখে বলিস না। বোন কী চায় সেটা বুঝিস না?”
রুহুল নিশ্চুপ। বাবা বললেন,
“সাফ সাফ যা বলার বলে দিয়েছি। তোফায়েলের সঙ্গে অর্ষার বিয়ে কিছুতেই হবে না।”
“কার সাথে ওর বিয়ে হবে, না হবে আমি বুঝব। ও আমার বোন। চলে গেলে ওকে নিয়েই যাব।”
অর্ষা বলল,
“আমি তো তোমার সাথে যাব না ভাইয়া।”
“তুইও পল্টি নিলি?”
“একদম না। বিয়ের সাবজেক্ট তো পরের ব্যাপার। বাবা-মাকে রেখে আমি কখনও-ই তোমার সাথে যেতাম না।”
“আচ্ছা বেশ! কিন্তু তোফায়েলকে বিয়ে করতে তো কোনো আপত্তি নাই তোর?”
ওমর রহমান অর্ষার হাত ধরে বললেন,
“আমার মেয়ে আমার সাথে থাকবে। তোফায়েলের সঙ্গে ওর বিয়ে দেবো না আমি।”
মৌনতা সম্মতির লক্ষণ। রুহুল বুঝে যায়, অর্ষা বাবার কথার বিরুদ্ধে যাবে না। তোফায়েলকেও বিয়ে করবে না। রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে তার। প্রচণ্ড জিদ্দে চেয়ারে লা’ত্থি মেরে সে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়।
চলবে…
[কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ।]