More than love .
মেঘলা_আহমেদ
পর্বসংখ্যা- [০৩]
-” পিপিন পিপিন! উই আর সো সারপ্রাইজড। ওহ নো। রুহির বাচ্চা যা গিয়ে পিপিন কে বসা। তারপর সরবত নিয়ে আয়।
রুহি চোখ কটমট করে রোজার দিকে তাকায়। রোজার এক হাতে রুহির চুল আর এক হাত দিয়ে রুহির হাত ধরে রেখেছে। রুহি দাঁত কিড়মিড় করে বলে-
-” ঐ হা/রামি তুই আমারে ধইরা রাখছোস। আমি ধরিনাই। ছাড় বা/ন্দরনী।
রোজা চুলে হালকা টা/ন দিয়ে ছেড়ে দেয়। রুহি ব্যাথায় চেঁচিয়ে ওঠে –
-” আহ্। ঐ তুই চুলে টা/ন দিলি ক্যান। তোর কপালে কাইল্লা জামাই জুটবো দেখিস। পেটমোটা কাইল্লা জামাই। তরে উঠতে বসতে কে/নু (মা ইর) দিবো। দেহিস!
রোজা চেঁচিয়ে ওঠে ওর কথায়-
-” কি বললি টুহির বাচ্চা টুহি। তর জামাই হইবো টাকলা মুরাদ। হ্যাংলা পাতলা গাঞ্জাখোর। উগান্ডার কালা বাছুর। মনে রাহিস। আমার কথা মিলাইয়া নিস! উঠতে বসতে শ্বাশুড়ি ঝাঁটা পে/টা করবো।
রুহি রোজার সাথে না পেরে চিৎকার করে বলে-
-” পিপিনননন! তুমি কিছু বলবা। এখন আমি একটা দিলেই দোষ হবে কিন্তু।
রোজাও সমস্বরে বলে-
-” হ পিপিনন! ওরে থামতে বলো। বেয়াদব একটা বড় বোন কে একটু সম্মান ও দেয়না।
-” চুপ বেডি চুপ, তুই বেয়াদব। আসছে বড় বড় করতে।
সামনের ভদ্রমহিলা টি সবই পর্যবেক্ষন করছে তীক্ষ্ণ চোখে। তার দুই হাত বুকের উপর ভাঁজ করা। তার এসব দেখতে মজাই লাগছে। গত কয়েক বছর ধরে এই সবের সাথে সে অভ্যস্ত।রোজা রুহির কথায় পাত্তা না দিয়ে এসে তার ফুপিকে জড়িয়ে ধরে। মেরুন স্নেহের হাত রাখে রোজার মাথায়। রুহি অভিমান করে। ঠোঁট ফুলিয়ে চলে যেতে চাইলে, মেরুন হাত বাড়িয়ে ডাকে –
-” আরে রুহি তুই আয় এদিকে। কই যাচ্ছিস। সব আদর তো রোজা নিয়ে যাবে।
ফুপির ডাক কে অগ্রাহ্য করতে পারলো না রুহি। ছুটে এসে ফুপিকে জড়িয়ে ধরে। মেরুন দুই হাতে দুই ভাইজি কে জড়িয়ে ধরে। রুহি খুশিতে কেঁদে দিয়ে বলে-
-” আমাদের কথা মনে পড়ে না বুঝি তোমার? তুমি এত পাষান কি করে হলে?
মেরুনের মুচকি হেসে বলে-
-” পাগলী মেয়ে। ভুলে যাবো কি করে আমার প্রিন্সেস দের? তোদের ছাড়া আমি একটুও ভালো নেই। আই মিস মাই প্রিন্সেসেস্।
রোজা আর রুহি দুজনেই বলে ওঠে-
-” রোজা আর রুহিও পিপিন কে অনেক মিস করেছে। এবার অনেকদিন থাকবে।
রোজা রুহির দিকে তাকিয়ে বলে-
-” যা পিপিনের জন্য সরবত বানিয়ে নিয়ে আয়।
রুহি মুখ বাঁকিয়ে বলে-
-” আমি যাবো না তুই যা।
রোজা রেগে আবারো রুহির চুল টেনে ধরে বলে-
-” ঐ আমি তোর আটান্ন সেকেন্ডের বড়! তুই আমার সাথে এমন ব্যবহার করিস! এক না দুই না আটান্ন সেকেন্ড। আমি যা বলব তাই শুনবি।
রুহি মুখ বাঁকিয়ে বলে-
-” ওরে মোর খোদা। আইছে আটান্ন সেকেন্ডের বড়। মুই তো ডরাইছি (ভয় পাইছি) আফু। তোর মত চুনোপুঁটি আমার আটন্ন বছরের বড় হলেও আমি এমন ব্যবহারই করবো। সয়তানের নানী। আগে নিজে ভালো হ।
মেরুন বিরক্ত হয় এদের কান্ডে। ছোটবেলা থেকেই সাপে নেউলে সম্পর্ক। কিন্তু একজনের কিছু হলে অন্যজনের জান হাজির। একজন কে কেউ বকলে অন্যজন গিয়ে তার সাথে ঝগড়া বাজিয়ে কেলেংকারি করে আসবে। একবার রুহিকে একটা ছেলে ঝুঁটি ধরে টান দিয়েছিলো। এরপর রোজা গিয়ে ছেলেটার ধো লাই করতে করতে প্যান্ট খুলে ফেলেছিল। তখন মনে হয় ১০ বছর হবে ওদের। অতীতের কথা ভাবতে ভাবতে মেরুন উচ্চস্বরে হেসে ওঠে। রোজা আর রুহি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে ফুপির দিকে তাকায়। এভাবে হাসতে দেখে দুজনে একে অপরের দিকে তাকায়। রোজা ভ্রু নাচিয়ে ফিসফিস করে রুহি কে বলে-
-” কি ব্যাপার পিপিনের কি হলো?
রুহি ঠোঁট উল্টে না বুঝায়। তার মানে সে কিছুই জানেনা। রুহি গলা খাঁকারি দিয়ে জিজ্ঞেস করে-
-” এই পিপিন! এভাবে পাগলের মতো হাসছো কেন?
রোজা ভুতে বিশ্বাসী। সে ভয় পেয়ে বলে-
-” ইয়া আল্লাহ! পিপিন কে ভুতে ধরেছে নাকি। আস্তাগফিরুল্লাহ। লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি ইন্নি ইন্নি…
রোজার দোয়া পড়া দেখে মেরুনের হাসা বন্ধ হয়ে যায়। রুহিও অবাক হয় খানিকটা। মেরুন আর রুহি দুজনেই ভ্রু কুঁচকে রোজার দিকে তাকায়। রোজা থতমত খেয়ে যায় এদের এভাবে তাকানো দেখে। আমতা আমতা করে জিজ্ঞেস করে-
-” ইয়ে মানে। ভুত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য দোয়া পরছিলাম হেহে!
বলেই বদলের মত হেসে দেয় রোজা। রুহি আর মেরুন ও রোগ দেয় তাতে। মেরুন হেসে দুজন কে জড়িয়ে ধরে বলে-
-” পাগলী মেয়ে দুইটা। এত বড় হয়েছিস এখনো বাচ্চামো যায়নি।
রুহি আল্হাদী কন্ঠে বলে-
-” আমি তোমার আদরের বাচ্চা টা। সারাজীবন এমনই থাকবো। চলো সোফায় বসো আগে।
রোজা গিয়ে একগ্লাস শরবত নিয়ে আসে। তারপর তিনজন গল্প করতে থাকে। কথায় কথায় মেরুন জিজ্ঞেস করে-
-” আচ্ছা তোরা মাম্মাম কে মিস করিস না?
রোজা আর রুহি একে অপরের দিকে তাকায়। রোজা স্বাভাবিক ভাবেই বলে-
-” মিস করবো কেন? আকাশের তাঁরা কে কেউ মিস করে?
রুহি আর মেরুন অবাক চোখে তাকায় রোজার দিকে। রুহি অল্পতেই কষ্ট পায়। এটা তার স্বভাব। ছোটবেলা থেকেই ছিঁচকাদুনে মেয়েটা। প্রিয় মায়ের সম্পর্কে এ কথা তার হজম হলো না। তার কান্না পেয়ে গেলো। সে কাঁদো কাঁদো কন্ঠে রোজা কে বলল-
-” রোজা! তুই এভাবে কেন বলছিস? মাম্মামের সম্পর্কে এমন বলতে কষ্ট হয়না? তুই কালকে পাপাকেও হার্ট করেছিস। দিন দিন এমন হয়ে যাচ্ছিস কেন?
রোজা রুহির কথার উত্তর দিলো না। মেরুন দীর্ঘশ্বাস গোপন করে বলে-
-“রোজা মা শোন! এভাবে বলতে নেই। যতই হোক তোদের জন্মদাত্রী সে। মাম্মাম জানলে কষ্ট পাবে।
রোজা ফুপির দিকে তাকায়। তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলে-
-” পিপিন শোন। যার কাছে নিজের ইমপর্টেন্স সবচেয়ে বেশি তার এসব কথায় কিছুই আসবে যাবে না। এসব সে গায়েই মাখেনা। জন্ম দিলেই মা হওয়া যায় না। তার কষ্ট দিয়ে আমি কি করবো? উনি আমাদের ভালোবাসে না। আমরা তার দেয়া কষ্টই অনুভব করতে পারি, যাকে আমরা অত্যাধিক ভালোবাসি। এক অপরিচিত মানুষ এসে এমন কথা বললে আমরা কষ্ট পাবো না। তেমনি মিসেস ইয়াসমিন এর কাছেও আমরা অপরিচিত। সে আমাদের এসব কথায় কষ্ট পাবেন না।
মেরুন দমে যায় রোজার কথায়। কত বড় হয়ে গেছে মেয়েটা। যুক্তি সাজাতে শিখে গিয়েছে। এদের মায়ের কি মায়া লাগে না? সে জানে না। মানুষ আসলেই স্বার্থপর। মেরুন রোজার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে-
-” তোর পাপা কোথায়? হসপিটালে গিয়েছে?
রুহি আগে আগে বলে –
-” হ্যা পিপিন। তুমি আসবে জানলে আজকে হাসবি কে আসতে নিষেধ করতাম না। আজকে চেয়েছিলাম ভার্সিটি যাব ঘোরাঘুরি করে ডিনার করে বাড়িতে আসবো। এখন তো বাজার করা লাগবে। তুমি এসেছো এখন তোমার হাতের রান্না খাবো।
রোজা মেরুনের দিকে তাকিয়ে বলে-
-” পিপিন যাষ্ট দশ মিনিট ওয়েট করো। আমি আর রুহি রেডি হয়ে আসছি। এরপর বাজারে যাব। মেরুন হেসে বলে-
-” আচ্ছা যা। তবে দুষ্টুমি করিস না।
দুই জনে দৌড়ে সিঁড়ি দিয়ে উপরে ওঠে। প্রতিযোগীতা লেগেছে যেনো। কে আগে উঠবে। মেরুন হালকা গলা উঁচিয়ে বলে-
-” আরে পড়ে যাবি তো। সাবধান এ উঠ।
বেহায়া কলিংবেল টা আবারো বেজে ওঠে। মেরুন বেশ অবাক হয়। এখন কে এলো? সে উঠে গিয়ে দরজা খুলে দেয়। দরজা খুলে দাড়িয়ে থাকা ব্যক্তিকে দেখেই মেরুন দুই হাতে জড়িয়ে ধরে।
#চলবে
.
.