আমার তুমি
সিজন ২ পর্ব ২৬
তানিশা সুলতানা
সায়ানের এই দৃষ্টিতে তুলতুল ভ্রু কুচকে তাকায়। মানুষ ঠিক কি লেভেলের নাক কা*টা হলে এতো বড় একটা শিক্ষা দেওয়ার পরেও এভাবে তাকিয়ে থাকতে পারে? চোখে মারবেল ঢু*কিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে তুলতুলের।
সায়ানের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে ভাবতে থাকে তুলতুল। এদিকে আছিয়া যে কখন থেকে মুখের সামনে ভাত ধরে আছে সেদিকে খেয়ালই নেই। অতঃপর ঠাসস করে বা গালে একটা থা*প্প*ড় পড়ে। তুলতুল কাঁদো কাঁদো ফেস করে মায়ের দিকে তাকায়।
সায়ান দুই ঠোঁট প্রসস্থ করে বাঁকায়। যেনো একটু হাসলো।
হিমু আর তনু মুখ টিপে হাসছে।
“ওদিক ওদিক কি হ্যাঁ? আমার কি কোনো কাজ নাই। খাওয়ার সময় যত বাহানা। বড় বড় করে হা না করলে আরও একটা দেবো।
আছিয়া চোখ রাঙিয়ে বলে। তারপর বড় এক দলা পাকিয়ে ঢুকিয়ে দেয় তুলতুলের মুখে। বেচারা লজ্জায় আর মাথা তুলতে পারে না। সায়ান দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। এই পাগল মানুষ হবে কবে?
এমপি বাড়ির সকল সদস্য চলে যায় রাত আটটার দিকে। সায়ান যাবেই না। তাকে রীতিমতো সবাই রিকোয়েস্ট করেছে যাওয়ার জন্য। কেনো যাবে না কারণটাও বলছে না। ভীষণ বিরক্ত হয় আব্দুল্লাহ। সে নাতির চোখ মুখ দেখে ভালোই বুঝতে পারছে ঘাপলা আছে। নাতি যে এই বাড়ির ছোট মেয়ের দিকে নজর দিয়েছে সেটার তার মস্তিষ্কে ঢুকে গেছে।
এবার তার বুদ্ধি সে সায়ানকে বলে কয়ে বাড়িতে নিয়ে ধরে বেঁধে সোনালীর সাথে বিয়ে দিয়ে দেবে। বিয়ে হয়ে গেলে তো আর কিছু করতে পারবে না। একবার বউয়ের কবলে পড়ে গেলে এমনিতেই বাঁধা পড়ে যাবে।
তার চিন্তায় এক বালতি পানি ঢেলে দিয়ে সায়ান থেকে যায় তুলতুলদের বাড়িতে। পাপন খানিকটা সন্দেহ করে। সায়ানের চোখ দেখেই সে বুঝে গেছে। খানিকটা ভয় পেয়ে যায় সে।
এই ছেলেটাকে পাপন বখাটে ছাড়া আর কোনো পদবি দিতে পারেন না। বখাটেদের মতো চুলের কাটিং, দাঁড়ি, আর সিগারেট টানার স্টাইল।
মারপিটেও যে এই ছেলে উস্তাদ এ খবরও তার জানা। তার মতে মেয়ে যদি সারাজীবন কুমারিও থাকে তবুও এই ছেলের হাতে মেয়ে দেবে না।
হিমু সায়ানের তনুও বিয়েটাতে সে মত দিয়েছে ছেলেকে দেখে। ছেলে ভালো। ভদ্র, কলেজের টিচার। দেখতে শুনতেও ভালো।
ফ্যামেলি যেমনই হোক। সারাজীবন তনুকে সুখে রাখার ক্ষমতা রাখে সে।
কিন্তু সায়ান?
দেখতে মেয়ের থেকে অর্ধেক বেশি লম্বা চওড়ায়ও অনেক। গুন্ডামী করে বেড়ায়। তুলতুলকে সুখে রাখার ক্ষমতা তার নেই।
পাপন তুলতুলকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে গেছিলো। এখন ফিরে আসলো। ব্যাথার কিছু ঔষধ দিয়েছে আর কয়েকদিন হাঁটা চলা করতে বারণ করেছে। তাতেই সুস্থ হয়ে যাবে। তুলতুলের কিছুটা খুশি লাগছে কলেজে যেতে হবে না ভেবে। আবার কষ্ট হচ্ছে তিয়াসের গান শুনতে পাবে না বলে।
সায়ান সুমুকে খাইয়ে দিচ্ছে আর নিজে খাচ্ছে। আর সুমু হাতে নেলপলিশ দিচ্ছে। এই বাড়িতে এসে পর থেকে খায় নি সায়ান। তাকে কেউ খাওয়াতে পারে নি।
“ভাইয়া একটা কথা বলবো?
সুমু নেলপলিশ নেওয়া শেষ করে সায়ানের মুখের দিকে তাকিয়ে বলে।
” হুমম
“তুলতুলের কিন্তু তিয়াস না কি ওই যে তিথির ভাই। তার ওপর ভীষণ সন্তুষ্ট। তার গান শোনার জন্য পাগল। কিছু করো তুমি।
সায়ান খাওয়া থামিয়ে তাকায় সুমুর মুখের দিকে তাকায়। বা হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ফেলে। সুমু ভাইকে দেখে শুকনো ঢোক গিলে।
” ভাইয়া ও ছোট মানুষ। বুঝিয়ে বলতে হবে। জোরাজুরি বা রাগারাগি করলে ও ভয় পাবে।
সায়ান আবার ভাত খেতে শুরু করে। তুলতুল তাকিয়ে থাকে। মতিগতি কিছুই বুঝতে পারছে না।
সায়ান ছাঁদে দাঁড়িয়ে সিগারেট ফুঁকছে৷ দুইটার দিকে রওনা হবে ঢাকার উদ্দেশ্য। কাল ভার্সিটিতে মিনিস্টার আসবে তার পুরো দায়িত্ব ভিপি হিসেবে সায়ানের। যদিও ছেলে পেলে দিয়ে সব এরেন্জমেন্ট করিয়ে নিয়েছে। কিন্তু তার উপস্থিতি থাকতেই হবে।
পুরো এক প্যাকেট সিগারেট ফিনিস করে ফেলে সায়ান। ভীষণ অশান্ত লাগছে। কি করবে? কি হবে? কি করা উচিৎ? কিছুই বুঝতে পারছে না।
এই বাড়ি ছাঁদে ছোট্ট একটা দোলনা পাতা। আর দোলনার পাশে একটা চেয়ার রাখা। সায়ান চেয়ারটাতে বসে আছে।
ছাঁদে আলো নেই। আকাশে থালার মতো চাঁদ উঠেছে। সেই চাঁদের আলোতেই চারপাশ আলোকিত হয়ে গেছে। সায়ান নিজের ছায়ার দিকে তাকিয়ে আছে।
এমন সময় ননস্টপ বকবকানির আওয়াজ পায়।
“ইহহহহহ আমি ছাঁদে আসবো না। মামা বাড়ির আবদার। এই জোছনা মাখা রাতে চাঁদের আলোতে স্নান করবোনা এটা হতেই পারে না। ইসসসসস খুব তাড়াতাড়ি বিয়ে করে নিতে হবে। তারপর বরের কাঁধে মাথা রেখে চাঁদ দেখবো। আর আপিকে বলবো ভিডিও করে দিতে। তারপর সেই ভিডিও দিয়ে টিকটক বানাবো। আহারে কতো প্লানিং আমার। কিন্তু বরটাকেই খুঁজে পাচ্ছি না। কোথায় আমার আদরের সোয়ামি?
খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে দোলনার দিকে আসছে তুলতুল আর বকবক করছে। সায়ান তুলতুলের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনতে থাকে। বেশি কথা বলার জন্য যদি কাউকে পুরুষ্কার দেওয়া হাতো তাহলে এক চান্সে তুলতুল সেই পুরুষ্কার লুফে নিতো।
হঠাৎ করে তুলতুল সায়ানকে খেয়াল করে। স্পষ্ট মুখ বোঝা না গেলেও বুঝে যায় এটাই দা গ্রেড সায়ান মাহমুদ।
” আপনি এখানে কেনো এসেছেন? গায়ে তো গরম কাপড়ও নেই। ঠান্ডা লেগে গেলে? তারপর তো কুটুম বাড়ির দোষ দেবেন। বলবেন বোনের শশুড় বাড়িতে গেছিলাম একটু কেয়ারও করে নাই।
বদনাম হবে আমাদের। যাননন রুমে গিয়ে কম্বল গায়ে দিয়ে ঘুমিয়ে পরুন।
তুলতুল দোলনায় বসতে বসতে বলে। সায়ান এক পলকের জন্যও তুলতুলের দিকে তাকায় না। এক মনে সিগারেট খেয়ে যাচ্ছে।
তুলতুল বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে।
“সিগারেটের প্যাকেটের গায়ে লেখা আছে ‘ধুমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর” তবুও কেনো এগুলো খান। কয়দিন ধরে আমারও শ্বাস কষ্ট হচ্ছে। মনে হচ্ছে ফুসফুসে দাগ ধরেছে।
সায়ান ছোট ছোট চোখ করে তাকায় তুলতুলের দিকে। দুই ঠোঁটের ফাঁকে এখনো সিগারেট রয়েছে। হাত দিয়ে ধরছে না। ওভাবেই টানছে আর নাক দিয়ে ধোঁয়া উড়াচ্ছে।
সায়ান দৃষ্টি দেখে তুলতুল বুঝতে পারে কেনো তাকিয়েছে। সায়ানকে বেশিখন অপেক্ষা না করিয়ে ভেংচি কাটে তুলতুল।
“তুলতুল ফাঁকা কথা বলে না। ওই যে ওই দিন চুমু খেলেন। তখন আপনার ফুসফুস থেকে আমার ফুসফুসের ধোঁয়া ডুকে গেছে। তাই তো শ্বাস কষ্ট হচ্ছে। হাতে নাতে তো খু*ন করতে পারছেন না। তাই এখন চালাকি করে গোপনে মা*র*ছেন। পাক্কা সেয়ানা আপনি। দেখে মনে হয় গুন্ডা আসলে ভেতরে ভেতরে একজন খু*নিও। আমি কিন্তু এমনি এমনি মরবো না। আগে ভাগেই ডাইরি লিখে ফেলেছি। সেখানে গোটা গোটা অক্ষরে লিখেছি সিগারেট খেয়ে চুমু খাওয়ার কথা। আমি এদিক সেদিক হলে না পুলিশ আপনাকেও ধরে নিয়ে যাবে।
সায়ান ফোঁস করে শ্বাস টানে। দুনিয়াতে এর থেকে স্টুপিট আর দুটো নেই অক্ষরে অক্ষরে বুঝতে পারছে। এই মেয়েকে মানুষ করতে যে অনেক কাঠখড় পোহাতে হবে ভালো করেই জানা। পাগল আগে মানুষ করতে হবে। আর তাট জন্য প্রয়োজন থা*প্প*ড়। থা*প্প*ড়ে গাল দুটো লাল করে দিলেই চুপ করে থাকবে। নাহলে একে চুপ করানো যাবে না।
সায়ান সবে থা*প্প*ড় দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
” থা*প্প*ড় দিয়েন না প্লিজ। আমার একটা দাঁত নরছে। যখম তখন পড়ে যাবে। এখন আরেকটা থা*প্প*ড় দিলে অন্য আরেকটা দাঁতও নরে যাবে। এভাবে যদি অল্প বয়সেই আমার দাঁত গুলো শহিদ হয়ে যায় তখন আমি গরুর মাংস খাবো কিভাবে? শশা খাবো কিভাবে?
তুলতুলের ইনোসেন্ট মুখের ইনোসেন্ট কথা শুনে থা*প্প*ড় দেওয়ার ইচ্ছে মরে যায় সায়ানের। ভীষণ হাসি পাচ্ছে। কিন্তু নিয়মের বাইরে গিয়ে হাসতে পারে না। হাসতেও কেমন লজ্জা লাগছে। নিজের ওপর নিজেই চরম বিরক্ত হয় সায়ান।
সায়ান মুখের সিগারেট ফেলে তুলতুলের পাশে গিয়ে বসে পড়ে। চমকে ওঠে তুলতুল। নরে ওঠে দোলনাও। বড়বড় চোখ করে তাকায় সায়ানের দিকে। সায়ান আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।
তুলতুল বুকে হাত দিয়ে শ্বাস টানে। মুখ বাঁকিয়ে সায়ানের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় তুলতুল।
“বললেই হতো এখানে বসতে চাইছেন। আমি কি না করতাম না কি? অতোটাও খারাপ না আমি। কুটুম আপনি। আপনাকে
বাকিটা শেষ করার আগে সায়ান তুলতুলের মাথাটা নিজের বুকে ঠেকায়। তুলতুল ভ্রু কুচকে সায়ানের বুকের ধুপ বুক শব্দ শুনতে থাকে। অবাক হয়েছে খানিকটা। লোকটার কি মাথা খারাপ হয়ে গেলো না কি? না কি মদ খেয়েছে? কিন্তু গন্ধ তো আসছে না। কেমন কেমন লাগছে তুলতুলের। অদ্ভুত রকমের ফিলিংস।
লোকটার থেকে সরে যেতে ইচ্ছে করছে না। শক্ত করে দুই হাতে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু এটা করলে নিশ্চয় থা*প্প*ড়ের হাত থেকে কেউ বাঁ*চাতে পারবে না।
” তুলা
তুলতুল চোখ বন্ধ করে ছিলো। সায়ানের ডাকে চোখ খুলে।
“বলেন।
মাথা তুলতে চায়। সায়ান শক্ত করে চেপে ধরে।
“তিয়াস খুব ভালো গান করে তাই না?
চলবে………..