যেদিন তুমি এসেছিলে
সিজন ২ পর্ব ৩৩
মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া
___________________
জহির চৌধুরীর শরীরটা তেমন ভালো নয়। গতকাল রাত থেকে জ্বর জ্বর ভাব। মুখ তেতো হয়ে আছে। একটা প্যারাসিটামল খাবে কিনা ভাবছে। খাবার টেবিলে বসে খাবার দেখেই তার শরীর গুলিয়ে আসে। চোখ-মুখ বিকৃত করে ফেলে সে।
রেণু জিজ্ঞেস করে,
“কী হইছে খালু? শরীর খারাপ?”
“একটু! আহনাফ কোথায়?”
“ভাইজান অফিসে গেছে।”
“আহিল কোথায়?”
রেণু একটু অপ্রস্তুত হয়ে বলল,
“হেয় মনে হয় ভাইজানের ঘরে। খালু, কিছু জানেন হের ব্যাপারে?”
“জানি রেণু। ও তো আমার ভার্সিটিতেই পড়ে। তাছাড়া গতকাল আহনাফ আমাকে সব বলেছে।”
রেণু হৃষ্টচিত্তে বলল,
“আল্লাহ্ কিছু কিছু মানুষরে অনেক বড়ো মন দিয়া দুনিয়াতে পাঠাইছে খালু। আপনে আর ভাইজান হইল তার বড়ো প্রমাণ।”
“তুই সবসময় বাড়িয়ে বাড়িয়ে বলিস। যা গিয়ে আহিলকে ডেকে নিয়ে আয়। আচ্ছা থাক, আমিই যাচ্ছি।”
“আপনে নাস্তা করবেন না?”
“আহিল কি খেয়েছে?”
“না।”
“তাহলে ওর সাথেই খাব। তুই খাবারগুলো ঢেকে রাখ।”
আহনাফ সকালে অফিসে যাওয়ার আগে রেণুকে বলে গেছে আহিলের জন্য বরাদ্দকৃত রুমটা সুন্দর করে সাজিয়ে-গুছিয়ে দিতে। তবে আপাতত আহিলকে সে কিছুদিন নিজের কাছেই রাখবে। এই সময়ে ওকে একা রাখতে ভাতৃ-মন সায় দেয় না। জহির চৌধুরী আহনাফের রুমে গিয়ে দেখল হাসিব বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। তার পাশেই চুপ করে বসে আছে আহিল। জহির চৌধুরীকে দেখে বসা থেকে উঠে দাঁড়াল। ওর মলিন মুখটা দেখে মনটা বিষণ্ণতায় ছেঁয়ে যায় জহির চৌধুরীর। তিনি আহিলের কাঁধে হাত রেখে বললেন,
“দাঁড়াতে হবে না। বসো।”
আহিল ভাঙা গলায় বলল,
“না, ঠিক আছে স্যার।”
জহির চৌধুরী মৃদু হেসে বললেন,
“আমার ছেলে তোমাকে নিজের ভাই বানিয়ে এই বাড়িতে এনেছে। তাহলে আমি তোমার স্যার হই কীভাবে?”
আহিল অপ্রস্তুত হয়ে তাকিয়ে থাকে। তিনি বললেন,
“হাসিব ঘুমুচ্ছে। চলো ছাদে যাই।”
আহিল রাজি হলো। দুজনে মিলে ছাদে হাঁটছে। জহির চৌধুরী হাঁটতে হাঁটতে বলেন,
“আহনাফ যখন খুব ছোটো তখন একদিন বায়না করে বলল, প্রায় সবারই ছোটো ভাই-বোন আছে। কিন্তু ওর নেই কেন? ওর-ও একটা ভাই নয়তো একটা বোন চাই। ও চাইলেও আল্লাহ্ হয়তো চাননি। আমরা অবশ্য আহনাফকে নিয়েও খুশি ছিলাম। এরপর তো ওর মা মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে গেল এ’ক্সি’ডে’ন্টের পর। কিন্তু এখন বুঝতে পারছি, আল্লাহ্ চেয়েছিল ঠিকই; তবে সেটা অন্যভাবে। আল্লাহ্ এখন আহনাফকে একটা ভাই দিয়েছে আর আমাদের দিয়েছে ছোটো ছেলে।”
আহিল অবাক হয়ে তার দিকে তাকায়। তিনি আহিলের কাঁধ জড়িয়ে ধরে বললেন,
“আমরা কি বাবা-মা হিসেবে তোমার মনের মতো নই?”
আহিলের কথা বলার ভাষা নেই। সে জহির চৌধুরীকে জড়িয়ে ধরে নিঃশব্দে কাঁদছে। তিনি পিঠে হাত বুলিয়ে বললেন,
“এই দেখো! বাবার সামনে কাঁদলে বাবার কষ্ট হয় না? খুব পাজি ছেলে তুমি। বাবাকে কষ্ট দিয়ে সুখ পাও।”
আহিল কান্না থামাল না তবুও। সে একই সাথে সুখ ও দুঃখের কান্না কাঁদছে। মানুষ ভালো হয়, তাই বলে এতটা? নাকি তার ভাগ্যটাই এত ভালো? ছোটোবেলায় মাকে হারিয়েই তো অর্ধেক এতিম হয়ে গেছিল। এরপর বাবাকে হারিয়ে যখন সম্পূর্ণ নিঃস্ব হয়ে গেল তখনই আল্লাহ্ তাকে গোটা একটা পরিবার উপহার দিয়ে দিলেন। এখন আর আহিল একা নয়। এতিম নয়। সেও সবার মতো গর্ব করে মাথা উচুঁ করে সবাইকে এবং সমস্ত পৃথিবীকে বলতে পারবে,”আমি আর একা নই। এই দেখো, আমারও সুন্দর একটা পরিবার রয়েছে। হাসি-খুশি পরিবার।”
__________
রুহুল দোকান আজ তাড়াতাড়ি বন্ধ করেছে বিধায় রাতে সকলে একত্রে খেতে বসেছে।
“তোর ঐ বন্ধুর খবর কী রে অর্ষা? কথা হয়েছিল আর?” হাত ধুতে ধুতে জিজ্ঞেস করল রুহুল।
অর্ষা উত্তরে বলল,
“হ্যাঁ। রোজ-ই হয়।”
খেতে বসে সেলিনা বেগম খুশির কথাও তুললেন। সঙ্গে সঙ্গে রুহুল এই প্রস্তাব নাকচ করে বলল,
“না, বিয়ে করব না।”
সেলিনা বেগম মুখটা মলিন করে বললেন,
“কেন? সমস্যা কী? খুশি তো খুব ভালো মেয়ে।”
“আমি তো খারাপ বলিনি।”
“তাহলে? তুই অন্য কাউকে পছন্দ করিস?”
“ধুর মা! কী বলো এসব?”
“তাহলে তোর সমস্যা কী বাবা? মেয়ে তো আমাদের সবার খুব পছন্দ হয়েছে।” বললেন ওমর রহমান।
“অর্ষাকে বিয়ে না দিয়ে আমি আগে বিয়ে করব না।”
অর্ষা বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে তাকাতেই রুহুল বলল,
“আব্বা বলছিল তোর নাকি সম্পর্ক আছে অন্য কোথাও। ছেলেকে বল পরিবার নিয়ে আসতে।”
অর্ষা অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। নিজের বিয়ের ব্যাপারে নিজে কী করে কথা বলবে। তাও আবার বাবা আর ভাইয়ের সামনে!
সেলিনা বেগম বললেন,
“আগে তুই বিয়েটা করলে হতো না?”
“না, মা। তোমাদের যদি মেয়ে খুব বেশি পছন্দ হয় তাহলে বিয়ে ঠিক করে রাখো। কিন্তু বিয়ে আমি অর্ষাকেই আগে দেবো।”
.
.
প্রভাতের রাঙা আলোর উদয়ের সঙ্গে শরীর হিম করা শীতল হাওয়া বইছে। মিষ্টি মুগ্ধ করা এই সমীরণে প্রেয়সীর স্নিগ্ধ মুখ এবং একইসাথে প্রকৃতির সৌন্দর্য দুটোই মুগ্ধ করছে আহনাফকে। তার দু’চোখ থেকে মুগ্ধতা যেন ঠিকরে ঠিকরে পড়ছে।
আহনাফের এহেন মুগ্ধতা ও চাহনী অর্ষাকে বিব্রত করে তুলছিল। সে আড়চোখে তাকিয়েও বারবার দৃষ্টি সরিয়ে নিচ্ছে। ছাদের রেলিঙের সঙ্গে আড়ষ্ট হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এখন। গতকাল রুহুল কড়াভাবে বলে দিয়েছে, আগে সে অর্ষাকেই বিয়ে দেবে। আড়ালে সেলিনা বেগম ডেকে বলে দিয়েছেন, আহনাফ যেন ওর পরিবারকে বিয়ের প্রস্তাব দিতে আসছে। সারা রাত ধরে ভেবেছে আহনাফকে কী করে সে কথাগুলো বলবে। একবার ভেবেছিল ফোনেই বলবে। পরক্ষণে মনে হয়েছে সামনা-সামনি বলাটাই বেটার হবে।
এই মুহূর্তে দুজনেই দাঁড়িয়ে আছে বাগান-বিলাস রেস্টুরেন্টে। রেস্টুরেন্টের ডেকোরেশন ছাদে করা হয়েছে। একপাশে বসার জন্য জায়গা এবং অপরপাশে অসংখ্য ফুলের গাছ। মাঝখানে দুটো দোলনাও আছে। এছাড়াও রেস্টুরেন্টের চারপাশে ও মাঝে রয়েছে ঝাড়বাতি। বাতিগুলো এখনও জ্বলছে। দিনে কি এগুলো জ্বালানোর কোনো প্রয়োজন আছে? তবে সত্যি বলতে, দেখতে মন্দও লাগছে না। নয়ন জুড়ানো সুন্দর দৃশ্য দেখে মন হালকা হলেও নিজে স্বাভাবিক হতে পারছিল না অর্ষা।
মাথার ওপর কয়েকটা পাখিকে উড়ে যেতে দেখে অর্ষা আকাশপানে তাকাল। নিরবতাকে বিচ্ছিন্ন করে বলল,
“এত সকালেও রেস্টুরেন্ট খোলা থাকে আমি জানতাম না।”
“আমার জন্যই খুলেছে।”
আহনাফের দিকে দৃষ্টি ফেরাল অর্ষা। জিজ্ঞেস করল,
“মানে?”
“আমার পরিচিত।”
“ওহ।”
একটা ছেলে এসে দু’মগ কফি দিয়ে গেল। আহনাফ মগ দু’টি রেলিঙের ওপর রাখল। গরম কফি থেকে একেঁবেঁকে ধোঁয়া উড়ছে। নির্দিষ্ট দূরত্ব অব্দি গিয়ে আবার ধোঁয়াগুলো মিলিয়ে যাচ্ছে।
“কিছু বলবে বলেছিলে।” বলল আহনাফ।
“হ্যাঁ।”
“বলো।”
“ভাইয়া বলছিল…”
“কী বলছিল? আবারও তার বন্ধুর সাথে বিয়ে দিতে চাচ্ছে নাকি? তাহলে কিন্তু আমি সত্যিই তোমাকে তুলে নিয়ে যাব।”
অর্ষা শব্দ করে হেসে ফেলে। হাসির শব্দটা তার নিজের কানেই কেমন যেন বেজে উঠল। হয়তো চারদিকের নিরবতার জন্যই। সে হাসি থামিয়ে ফেলল। মুগ্ধ কণ্ঠেই আহনাফ বলে উঠল,
“কী সুন্দর!”
অর্ষা বিব্রত হয়ে একটা কফির মগ তুলে নিয়ে মৃদু ফুঁ দিয়ে চুমুক দিল। পূণরায় মগটি রেলিঙের ওপর রেখে বলল,
“ভাইয়া চায় আমায় আগে বিয়ে দিতে।”
আহনাফ বলল,
“ওহ আচ্ছা!”
আহনাফের এমন ভাবলেশহীন ভাবে ‘ও আচ্ছা’ বলাতে কিছুটা মনঃক্ষুণ্ণ হয় অর্ষা। মানুষটা কি তার কথা সিরিয়াসভাবে নিচ্ছে না? নাকি সে নিজেই এখন বিয়ে করতে চায় না? সে বিষাদিত কণ্ঠে বলে উঠল,
“বিশ্বাস হয়নি?”
“হবে না কেন?”
“তাহলে সিরিয়াস হচ্ছেন না কেন?”
আহনাফ পরপর দু’বার কফিতে চুমুক দিয়ে বলল,
“যে কথা আমি আগে থেকেই জানি। সে কথা যদি পূণরায় আবারও শুনি তাহলে অবাক হই কী করে বলো তো? তবে হ্যাঁ, তুমি চাইলে শুধুমাত্র তোমাকে খুশি করার জন্য আমি অবাক হওয়ার ভান ধরতে পারি। ধরব?”
অর্ষা ভ্রুকুটি করে বলল,
“আপনি জানলেন কী করে?”
“আহিল বলেছে।”
“কিন্তু আমি তো আহিলকে এই ব্যাপারে কিছু বলিনি।”
“তুমি না বললে কি আর কেউ বলতে পারে না?”
“আর কে বলবে?”
আহনাফ মুচকি হেসে বলল,
“ভেবে দেখো।”
অর্ষা কয়েক সেকেণ্ড নিশ্চুপ ভেবে পরক্ষণেই ক্ষীণস্বরে বলল,
“সকাল!”
আহনাফ হেসে মাথা দোলাল।
“বাসায় যাই আজকে! ওর খবর আছে।”
“খবরদার! সকালকে কিছু বলবে না।”
“একশোবার বলব।”
“কেন বলবে?”
“কথা বলবেন না। চুপ করে থাকেন।”
আহনাফ পেছন থেকে অর্ষাকে আলতোভাবে জড়িয়ে ধরে বলল,
“বেশি রাগ কিন্তু স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর বাটারফ্লাই। বিপি হাই হয়ে যাবে।”
“হোক। তাতে আপনার কী?”
“আমার কী মানে? আমারই তো অনেক কিছু।”
অর্ষা চুপ করে রইল। আহনাফ বলল,
“আব্বু আজকে তোমাদের বাসায় বিয়ের কথা পাকা করতে যাবে।”
অর্ষা অবাক হয়ে বলল,
“কখন?”
“সম্ভবত বিকেলে।”
“কিন্তু আমি তো তখন অফিসে থাকব।”
“তোমাকে দরকার নেই ওখানে। তুমি শুধু মনে মনে তৈরি হও বিয়ের জন্য।”
“বিয়ের জন্য মনে মনে তৈরি হওয়া লাগে?”
আহনাফ অর্ষাকে ছেড়ে দিয়ে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলল,
“অবশ্যই লাগে। মানসিক একটা প্রস্তুতি আছে না?”
“আচ্ছা বুঝলাম। আপনি তো তাহলে সবই জানতেন। শুধু শুধু এত সকালে তাহলে দেখা করতে আসলেন কেন?”
“তোমার জন্য। এক্সট্রা টাইম কাটানোর জন্য। অফিসে তো আর প্রেম করতে পারি না। ওখানে তো আবার প্রতিদ্বন্দ্বীরও অভাব নেই। বিয়েটা শুধু হোক আগে। সব ক’টাকে জ্বা’লি’য়ে-পু’ড়ি’য়ে মা’র’ব হুহ!”
অর্ষা হাসে। রেস্টুরেন্টের ছেলেটি এসে বলল,
“ভাইয়া খাবার রেডি। এখনই দেবো? নাকি পরে?”
“টেবিলে সার্ভ করো।”
“আচ্ছা।” বলে ছেলেটি চলে গেল।
আহনাফ অর্ষাকে বলল,
“তুমি গিয়ে বসো। আমি একটু ফ্রেশ হয়ে আসি।”
অর্ষা মাথা নাড়িয়ে চলে গেল। সে বসার পর দু’জন ছেলে এসে খাবার দিয়ে যায়। সকালেই এত ভারী নাস্তা! একটা ফুলের তোড়া এগিয়ে দিয়ে সেই ছেলেটি বলল,
“ম্যাম, আপনার জন্য।”
অর্ষা চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে বলে,
“আপনি দিলেন?”
ছেলেটিও হেসে ফেলে।
“না, ম্যাম। স্যার পাঠিয়েছে।”
“ওহ।”
ফুলের তোড়াটি হাতে নিল অর্ষা। আহনাফ তো নিজেই ফুলগুলো দিতে পারত। তাছাড়া আসার সময় বাড়ির সামনে থেকে আহনাফই তাকে পিক করেছে। তখন সে ফুল কেনেনি। তাহলে এগুলো কোত্থেকে এলো? অর্ষা ফুলগুলো গুনল। পাঁচটা গোলাপ এখানে। নিচে একটা কাগজ দিয়ে প্যাঁচানো। নিশ্চয়ই ফুলগুলো ছাদবাগান থেকে ছেঁড়া হয়েছে। কিন্তু কাগজটা কীসের? অর্ষা কাগজটি নিয়ে খুলে দেখল সেখানে কিছু লেখা রয়েছে। এই হাতের লেখা অর্ষা চেনে। কাজের সূত্রে সে অনেকবারই আহনাফের হাতের লেখা দেখেছে।
অর্ষা কাগজটি নিয়ে পড়তে শুরু করে,
“মন মাতানো প্রজাপতি,
তোমার ডানায় কি সুখের ছায়া? নাকি শোকের মায়া? কাছে থাকলে মনে হয়ে সুখে বুঝি পাগল হয়ে যাব। দূরে গেলে মন বলে, এই শোকে শুধু কাতরই নয়, পাথরও হয়ে যাব। তোমার উপস্থিতিতে বুকের ভেতর যেই কাঁপন শুরু হয় তুমি কি সেই কাঁপন শুনতে পাও? অনুভব করতে পারো? হৃদস্পন্দন কী বলে জানো? ফিসফিস করে বলে, ‘ভালোবাসি প্রজাপতি, ভালোবাসি, প্রজাপতি।’ তুমি স্নিগ্ধ সকালের মতোই স্নিগ্ধ। আমি তোমাকে আর এই সুন্দর প্রভাতকে আলাদা করতে পারি না। তোমার স্নিগ্ধতায় আমি বিমোহিত।
শুভ সকাল আমার প্রজাপতি।”
লেখাগুলো পড়ে কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে অর্ষা। আহনাফ এখনও আসেনি। কাগজটি নিয়ে আবারও সে বাগানে চলে যায়। আহনাফ এসে যখন দেখল অর্ষা নেই, তখন সেও চলে আসে। পেছন থেকে বলে,
“খাবার তো ঠাণ্ডা হয়ে যাবে। খাবে না?”
অর্ষা পিছু ফিরে একবার তাকিয়ে আবারও সোজা হয়ে দাঁড়াল। আহনাফ কাছে এগিয়ে গিয়ে বলল,
“কী হলো?”
অর্ষা কয়েক সেকেণ্ড নিশ্চুপ আহনাফের মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে আচমকা জড়িয়ে ধরল। বুকে মাথা রেখে বলল,
“আপনার হৃদস্পন্দন এখন কী বলছে? ভালোবাসি প্রজাপতি?”
আহনাফ বিস্ময় নিয়ে তাকায়। সে রেস্টুরেন্টে এসে ছেলেটিকে বলেছিল বাগান থেকে কয়েকটা ফুল ছিঁড়ে, এই চিঠিটা সাথে পেঁচিয়ে দিতে। যখন ওরা চলে যাবে তখন যেন অর্ষাকে দেয়। আহনাফ সামনে থেকে চিঠিটি এটলিস্ট পড়তে দিত না। কিন্তু গা’ধা-টা আগেই দিয়ে দিয়েছে।
অর্ষা মুখ তুলে আহনাফের অপ্রস্তুত মুখখানা দেখে হেসে ফেলে। জিজ্ঞেস করে,
“কী হলো? এখন চুপ করে আছেন কেন?”
“না মানে…”
“থাক! কিছু বলতে হবে না।”
আহনাফ সত্যিই নির্বাক রইল। অর্ষা আহনাফের দু’গালে নিজের পেলব দু’খানা হাত রাখল। পা দু’টি সামান্য উঁচু করে শীতল ওষ্ঠ ছুঁইয়ে দিল আহনাফের কপালে। আহনাফ একই সাথে বিস্মিত এবং আনন্দিত। মনের অন্তঃকোণে প্রস্ফুটিত হয় ভালোবাসার নতুন পুষ্প। অর্ষা ফিসফিসিয়ে বলে,
“আপনার প্রজাপতিও আপনাকে ভীষণ ভালোবাসে।”
চলবে…
[কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ।]