অনেকদিন আগে টেলিভিশনে একটা বিজ্ঞাপন দেখতাম এমন,
একটা ছেলে শরীরে বডি স্প্রে মাখে আর অনেকগুলো মেয়ে বডি স্প্রের সুগন্ধে ছেলেটার দিকে দৌড়ে আসে।
আমার স্বামী সেই বডি স্প্রে কিনে আনছে।
প্রথমদিন সে মনের মধ্যে খুব ফুর্তি নিয়ে বডি স্প্রে শরীরে মেখে অফিসে গেলো।
দ্বিতীয় দিন সে অফিস যাবার জন্য রেডী হচ্ছে, আর আমি আমার স্ট্যান্ডার্ড ওয়ানে পড়ুয়া ছেলেকে নিয়ে স্কুলে যাবার জন্য রেডী হচ্ছি। এমন সময় আমি ছেলেকে জিজ্ঞেস করলাম,
আব্বু তোমার মেয়ে বান্ধবী কয়টা?
ছেলের উত্তর, ইছছছ…..মেয়েদের সাথে কে মিশে….!!
ছেলের বাবা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ভাব নিয়ে আঙুল দিয়ে নিজের মাথার চুল ঠিক করছে আর ছেলেকে বলছে,
কেনো বাবা মেয়ে বান্ধবী নাই কেনো?
বাবার মতো হলে চলবে……!! (সাধু সাজলো)
এই কথা বলে সে বডি স্প্রে শরীরে মাখে আর কপাল কুঁচকে আমাকে জিজ্ঞেস করে,
এইটা নকল নাকি?
আমি বললাম কেনো?
সে বললো, এইযে গতকাল শরীরে মাইখা বাইরে গেলাম কেউতো দৌড়াইয়া আসলোনা….!!
(আমি স্তব্ধ….)
ছেলেকে স্কুলে দিয়ে বাসায় ফেরার সময় বাসার পাশের দোকানে ঢুকেছি কিছু জিনিস কেনার জন্য। দোকানের ছেলেটা বলছে, ম্যাডাম.. গতকাল বস ২ টা বড় লাক্স সাবান আর ১ কেজি সার্ফ এক্সেল নিছে। আমি অবাক হয়ে বললাম,
না তো আমার বাসায় কোন সাবান যায়নি..!!
এই দেখেন ম্যাডাম, জিনিসের পাশে বসের নাম লেখা। আমি দেখলাম হ্যা ঠিকই মিজানুর রহমান লেখা।
আমার মনের মধ্যে সন্দেহ ঢুকলো, আর সন্দেহ এমন একটা রোগ যা মরিচার মতো বাড়তে থাকে। এমনিতেই সে ভাব নিয়া বডি স্প্রে মেখে অফিসে গেছে। মুহুর্তের মধ্যেই আমার চোখের সামনে তখন বড় বড় দুইটা লাক্স সাবান আর এক কেজি সার্ফ এক্সেলের সাথে স্নো, পাউডার, আলতা, চুড়ি সব ভাসতে লাগলো।
অফিস থেকে ফেরার পর জিজ্ঞেস করলাম আলতা, চুড়ি, স্নো, পাউডার, বড় বড় লাক্স সাবান আর সার্ফ এক্সেল কিনে কাকে দিয়ে আসছো?
সে আকাশ থেকে পড়লো, মানে?
আমি আর কথা বাড়ালাম না….
অপ ফুলে রইলাম।
পরেরদিন আমাকে দেখে দোকানের ছেলেটা হেসে বলছে,
ম্যাডাম নামের ছোট্ট একটা ভুল হইছে।
গতকাল আমি দোকানে ছিলাম না, আমার ভাগ্নে ভুল করে আমাকে মজিবুর রহমানের জায়গায় মিজানুর রহমান বলছে। তাই আমি ভাবছিলাম এই জিনিসগুলা মনে হয় বস নিয়ে গেছে।
এইবার আমি হাফ ছেড়ে দোকানের ছেলেটাকে বললাম,
তাইতো বলি আমার বাসায়তো কোনো সাবান যায়নি।
(মনে মনে বললাম, গ্যাদার বাপরে খামাখা হুদাই সন্দেহ করলাম)
দোকান থেকে চলে আসার সময় দোকানদার আমাকে আবার ডাকলো ম্যাডাম….
আমি পেছন ফিরে তাকাতেই সে হেসে বললো “এতোটাও বিশ্বাস করা ঠিক নয়….”
উফ! এমনিতেই বডি স্প্রের জ্বালা…
এই ছেলেটা আমার মনে আবার সন্দেহ ঢুকিয়ে দিলো…!!
এর দুইদিন পর ছুটিতে আমরা সবাই আমার বাপের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছি।
আমার স্বামী আয়েশ করে বিছানায় শুয়ে আছে আর আমি তার মুখোমুখি বসে মোবাইলে কথা বলছি।
আব্বা হয়তো আমাকে কিছু বলার জন্য আমাদের রুমে এসেছে। আমাকে মোবাইলে কথা বলতে দেখে আব্বা একটু অপেক্ষা করছিলো এবং মিজানের ঠিক মাথার পেছনে থাকা ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়াচ্ছিলো। আব্বার এই রুমে ঢুকার বিষয়টা মিজান মোটেও টের পায়নি।
দুই হাত বালিশের উপর মাথার নিচে দিয়ে আর এক পায়ের উপর আরেক পা তুলে নাচাতে নাচাতে মিজান বলছে,
নাহ….শ্যালিকা ছাড়া শ্বশুরবাড়িতে আইসা কোনো মজা নাই। শ্যালিকা ছাড়া শ্বশুরবাড়ি আর নুন ছাড়া তরকারি একই কথা।
আমি চোখ ইশারা দিয়ে বুঝাতে চাইলাম তার পেছনে আব্বা।
আমার চোখ ইশারার তোয়াক্কা না করে দীর্ঘনিঃশ্বাস ছেড়ে সে আবার বলা শুরু করলো,
শ্বশুরবাড়ি আসমু, ৩/৪ টা শ্যালিকা থাকবো। শ্যালিকারা দৌড়াইয়া আইসা দুলাভাইয়ের খোঁজখবর নিবো, মাঝে মাঝে পেছন থিক্যা জড়াইয়া ধরবো….
আহহা….!!
শালার… আমার কপালডাই খারাপ। আমার শ্বশুর চালাকি কইরা তার ছোট দুই মেয়েরে বিদেশের বাড়ি বিয়া দিছে।
এই কথা শুনে আব্বা আয়নার দিকে তাকিয়ে এমনভাবে চুলে চিরুনি চালাচ্ছে, মনে হইতেছে যেনো আব্বার মাথায় উকুন হইছে। আমি নিশ্চিত এতক্ষণে আব্বার মাথার উকুন অজ্ঞান হয়ে গেছে।
মিজান যেনো আর কোনো কথা না বাড়ায় সেজন্য আমি চোখ গরম করে ইশারা দিয়ে বুঝালাম তার পেছনে আব্বা।
এইবার সে আব্বার উপস্থিতি টের পেয়ে বিছানায় শোয়া থেকে উঠে বসে সাথে সাথে পল্টি মেরে আমাকে বললো,
আরে ধুর….শ্যালিকা হইলো গিয়া বইনের মতো।
তার সাথে আবার কিসের জড়াজড়ি…..?
আব্বা মনে হয় তার এমন ঈমানদারী কথা শুনে আশ্বস্ত হইছে। আব্বা চুলে চিরুনি চালানো বন্ধ করে রুম থেকে চলে গেলো। একটু পরেই আব্বা আমার খালাতো বোনকে দিয়ে তার বড় জামাইয়ের জন্য নাস্তা পাঠিয়ে দিলো।
আমার খালাতো বোনকে দেখে এইবার আমার মাথার উকুনগুলায় দৌড়াদৌড়ি শুরু করে দিয়েছে। বলাতো যায়না শ্যালিকারে দেখে আবার যদি সে পল্টি মারে…!!
আমিও কম না, তার শ্যালিকা এই রুম থেকে না যাওয়া পর্যন্ত এক পা কোথাও নড়বো না।
তার শ্যালিকা চলে যাওয়ার পর আমি পেছন থেকে তাকে জড়িয়ে ধরলাম.
সে ইতস্তত করে বলছে, আরে করো কি…?
আমি বললাম,
ক্যান দুলাভাই জড়াজড়ি করি…!!
সে বলছে,
আরে ধুর…ছাড়ো,
শ্বশুরবাড়িতে আমার একটা ইজ্জত আছেনা….!!
#গল্প_নয়_সত্যি
Jakia Rehman