সত্য ঘটনা অবলম্বনে। ছোট গল্প
#লোভ
১০.৫ বছরের সংসার জীবন মামলা মোকাদ্দমার মধ্য দিয়ে শেষ হলো নিতু ও শামস এর।
নিতু ও শামস এর প্রেমের বিয়ে। সাড়ে ৯ বছরের একটা কন্যা সন্তান আছে এই দম্পতির। মোবাইলে সম্পর্কের জের ধরে মাত্র ৩ মাসের মধ্যে গোপনে বিয়ে সেরে ফেলে উভয়ই। তারপর বাসা ভাড়া করে সংসার শুরু করে নিতু ও শামস।
কিছুদিন পর উভয়ের পরিবার বাধ্য হয়ে এই সম্পর্ক মেনে নেয়। নিতুর আবদার তার বাবার বাড়ির পাশেই তাকে ভাড়া বাসায় রাখতে হবে। শামস আপত্তি করলোনা এই ভেবে যে, সেতো বাইরেই চাকরি করে। সপ্তাহে বন্ধের দিনে আসতে পারে, নিতুও নিরাপদ থাকবে বাবার বাড়ির কাছাকাছি থাকাতে।
নিতুর বাবা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত। ৫ ছেলে, ২ মেয়ে। নিতু ছোট মেয়ে। বড় ছেলেটাই একমাত্র কলেজের বারান্দায় পা রাখলেও বাকি ৬ সন্তানের কেউ স্কুল থেকে কলেজে উঠতে পারেনি। যাকে বলে প্রদীপের নীচে অন্ধকার!
নিতুর বখে যাওয়া ভাইগুলো যে যা পারে এবং পেনশনের টাকায় বাবার চিকিৎসা হয়। শামস কয়েকবার নিতুকে বলেছে প্রতি মাসে তার বাবার চিকিৎসা বাবদ একটা অর্থ নিতে। কিন্তু নিতু রাজি হয়না।
– আমরা কি ফকির নাকি যে তোমার কাছ থেকে টাকা নেবো?
মুখে নিতুর ফুটানি চললেও বাস্তবে নিতুর বাবার সংসারে সহযোগিতা নিতুই করে আসছে। নিতু নিজ সংসার থেকে এটা ওটা প্রতিনিয়ত তার বাবার বাড়ি পাঠায়। শামস বুঝতে পেরে মুচকি হাসে কিন্তু কিছুই বলেনা।
নিতুর মা ১২ বছর বয়সে গ্রাম থেকে শহরে নিতুর বাবার সংসারে এসেছে। বাইরের জগৎ সম্পর্কে তার কোন ধারণা নেই। ২/৪ জন প্রতিবেশী মহিলা আসে পান খাওয়ার লোভে। সেই সুযোগে নিতুর মা পড়শীদের খোঁজ নিতে পারে।
নিতু শামসকে বিয়ের আগে আরেকটা বিয়ে করেছিল। সেই সংসার টিকেছিল ৩ বছর। ৩ বাচ্চার এক লোকের সাথে প্রেম করে নিতু। সে ছিল পুলিশের কনস্টেবল। মাত্র ৭ দিনের প্রেমে উভয়ে পালিয়ে বিয়ে করে।
শামস এই বিয়ে সম্পর্কে জানতো না। যখন জানলো ততক্ষণে সে নিতুকে অনেক ভালোবেসে ফেলেছে। নিতু ভুল করেছিল, এটাই ধরে নিলো শামস।
শামস ২ দিনের ছুটিতে নিতুর কাছে। সারাক্ষণ নিতুকে বুকের ভিতর রেখে দিতে চায়। ছুটি শেষ হলে যাবার সময় পাশের ঘরের ভাবি শামসকে বলল, ভাই ভাবি মনে হয় অন্য কারো সাথে মোবাইলে অনেক বেশি কথা বলে। একটু খেয়াল রাখবেন।
শামস পরের সপ্তাহে নিতুর মোবাইলে গোপনে কল রেকর্ড চালু করে দিয়ে চলে যায়। পরের সপ্তাহে এসে শামস সেইসব রেকর্ড ব্লুটুথ এর মাধ্যমে নিজের মোবাইলে ট্রান্সফার করে।
অফিসের পাশে শামস একটা মেসে থাকে। রাতে শুয়ে শুয়ে নিতুর কল রেকর্ডগুলো শুনতে গিয়ে শামস পুরো থ মেরে গেলো।
কে এই নিতুর প্রেমিক? যার বয়স নিতুর ২ গুণ, যার ২ টা মেয়ে, যাকে নিতু ও নিতুর মা তার আরেকটা ভাই পরিচয় করিয়ে দিয়েছে, এতো সেই লোক। লোকটা আবার আলহাজ্ব!
শামস কিছুই মেলাতে পারছেনা। সেই রাতেই নিতুকে ফোন দেয়। নিতু অস্বীকার করে।
খুব ভোরে শামস সরাসরি নিতুর বাবার বাড়ি গিয়ে পৌছায়। ঘরের বাইরের রান্নাঘরে নিতু রান্না করছে এবং রাতে শামস এর সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা প্রেমিককে শেয়ার করছে কানে রাখা মোবাইলে।
আগামী পর্বে সমাপ্ত
সত্য ঘটনা অবলম্বনে জীবনের গল্প
#লোভ (২য় ও শেষ অংশ)
নিতু ও শামস
হাতেনাতে পরকীয়া ধরা পড়ার পরেও নিতু নিজেকে সামলে নিয়ে শামসকে বলল, তুমি আমার নামে কেন মিথ্যা দোষারোপ করছ? এসব তোমার সাজানো নাটক।
– মা, এদিকে আসো। দ্যাখো তোমার জামাই কিসব বলছে?
শামস সংক্ষেপে শাশুড়িকে সব বলল।
– তুমি কার নামে বলছো? হাজী আমার পেটের সন্তান না হলেও আমার সন্তান। নিতুদের আরেকটা ভাই।
নিতু হাজীর কথোপকথনের সুত্র ধরে নিতুকে বলল, আচ্ছা সব যদি আমার সাজানো নাটক হয় তাহলে তোমার লোহার ট্র্যাঙ্ক খোল।
শামস নিতুর অপেক্ষা না করে লোহার ট্র্যাঙ্কটি সানশেডের উপর থেকে নিয়ে এসে খুলে ফেলল। সেখানে প্রেমিক হাজীর ২টা লেমিনেটিং করা ছবি শাশুড়ি মায়ের হাতে দিয়ে বলল, আপনার মেয়ে ফোনে হাজীকে বলেছে, “জানো তোমার ছবি প্রায়ই আমি আমার লোহার ট্র্যাঙ্ক থেকে বের করে দেখি এবং কাঁদি।
– তুমি আমার মেয়ের নামে মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছ শামস।
– তাহলে মা আপনি শোনেন এইসব কল রেকর্ডিং।
শামস মোবাইলে কল রেকর্ড চালু করে শোনাতে থাকলো তার শাশুড়ী ও নিতুকে।
নিতু ধরা পড়ে চুপ হয়ে গেলেও শাশুড়ি শামসকে বাসা থেকে বের করে দিল।
শ্বশুর বাড়ির একটু পাশেই নিতু শামসদের বাসা। শামস বাসায় চলে আসার পর নিতুও পিছন পিছন বাসায় চলে আসলো। শামস পরপর দুইটি চড় মারলো নিতুকে। নিতু চড় খেয়ে শামস এর পায়ে পড়লো। ভুল করেছে, জীবনে আর করবেনা।
শামস নিতুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগল। ক্ষমা করে দিল নিতুকে। সেই হাজীর নম্বর নিয়ে নিতুর সাথে আর কথা না বলতে কড়াভাবে শাসিয়ে দিল হাজীকে। হাজী সেনাবাহিনীতে কর্মরত, সে ভয় না পেয়ে শামসকে দেখে নেবার হুমকি দিল এবং শামসকে জানালো তোর বউ, তোর শাশুড়ি, তোর শালা শ্যালিকা সবাই আমার কাছ থেকে অনেক অনেক টাকা বিভিন্ন সময়ে ধার নিয়েছে, সেগুলি ফেরত দিলেই আর তোর বউয়ের সাথে যোগাযোগ করবোনা। শামস নিতুর মোবাইলের সিম পাল্টে দিয়ে নিতুকে এই নম্বর কাউকে না দেবার কথা বলে দিল।
এই ঘটনার এক মাস আগে নিতুর বাবা মারা গিয়েছিল তা আপনাদেরকে বলা হয়নি। এই ঘটনা যখন চলছে তখন নিতুর পেটে ২ মাসের বাচ্চা।
নিতু সব স্বীকার করলো পরে একদিন। নিতুর মা প্রায়ই নিতুকে খুলনা থেকে যশোর ক্যান্টনমেন্টে হাজীর কাছে পাঠাতো ধারের জন্য টাকা আনতে। এই সুযোগে নিতু ও হাজী উভয়েই কাছাকাছি চলে আসে।
নিতু ও হাজীর এই প্রেমের শুরু নিতুর প্রথম বিয়ের আগে। ভোটার তালিকার ছবি তোলার এক কেন্দ্রে উভয়ের মাঝে পরিচয়। তারপর নিতু তাদের বাসায় এনে হাজীকে পরিচয় করিয়ে দেয়। এভাবেই হাজীর নিতুদের পরিবারে প্রবেশ। নিতুর পরিবার হাজীর স্ত্রী সন্তানদের কথা জানতো।
নিতু ও হাজীর প্রেমের মাঝেই নিতুর পরিচয় আজাহারের সাথে। ৭ দিনের পরিচয়ে নিতু ও আজাহার বিয়ে করে। আজাহারের সাথে ৩ বছর সংসার করার পর রাগারাগি করে নিতু বাবার সংসারে চিরতরে চলে আসে। তারপরই শামস এর সাথে নিতুর পরিচয়।
নিতুর পেটে সন্তান বড় হতে থাকলে নিতুর অনেক পরিবর্তন আসে। আজাহারের সংসারে একটা ৫ মাসের বাচ্চা নষ্ট হয়ে যাবার পরে নিতু এই সন্তানকে দুনিয়ায় আনতে শামস এর তাগিদে নিয়মিত নামাজ পড়া শুরু করে। ভালো হয়ে যায় নিতু। শামসকে বেশ আদর যত্ন এবং ভক্তিও করে।
২ বছর পর।
নিতুর স্বামী পরিত্যাক্তা বড় বোন এক প্রেমিককে নিতুর বাসায় আসতো। নিতু এদের বাসায় রেখে বাইরে চলে যেতো। একপর্যায়ে বড় বোনের এই প্রেমিকের সাথে নিতুর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। শামস জানতে পেরে নিতুর বড় বোনকে তাদের বাসায় আসতে বারন করে দিল।
সন্তানকে পেয়ে শামস নিতুর অতীত ভুলে গেলো। নিজেদেরকে ভালো দম্পত্তি মনে করে শামস। নিতুর মায়ের চিকিৎসা কয়েকবার করালো শামস। নিতুর ছোট ভাইয়ের লেখাপরার দায়িত্ব নিল শামস।
কিন্তু এখানেই নটে গাছটা মুড়ালো না। শুরু হলো নতুন অধ্যায়।
শামস চাকরির কারনে ঢাকায় চলে যাবার পর প্রতিমাসে একবার বাসায় আসতে পারে। সন্তানকে দেখতে পাবার আশায় নিতুকে এন্ড্রয়েড ফোন কিনে দিলো। শামস সারাদিন শেষে বা দিনে সময় পেলে নিতু ও সন্তানের সাথে ভিডিও কলে কথা বলে। শামস খেয়াল করলো নিতু ইদানিং ম্যাসেজ লেখার ক্ষেত্রে খুব কম সময় নিচ্ছে। অথচ নিতু মোবাইলে টাইপ করাতে খুবই কাঁচা।
শামস যেদিন ঢাকা থেকে বাসায় আসে, সেদিন নিতুর সেই আগের আগ্রহ নেই। নিতু বিছানাতেও শামসকে সেই ২ দিন বিভিন্ন অজুহাতে এড়িয়ে চলতে শুরু করলো। এবার শামস আবারো নিতুকে সন্দেহ করা শুরু করা করলো। নিতুর মোবাইলের সব নম্বর নিজের মোবাইলে নিয়ে আসলো। নিতুর মোবাইলে অসংখ্য অপরিচিতদের নম্বর। খুলনা কুয়াকাটার দুইটি বাসের সুপারভাইজারের নম্বর, কুয়াকাটার কয়েকজনের নম্বর। দুইটি নম্বর সেভ করা আছে “মেয়ের ময়না পাখি” ও “মেয়ের সোনা পাখি” নামে। শামস এগুলো কার নম্বর জিজ্ঞাসা করাতে বললো, এটা তার খালাতো ভাইয়ের নম্বর। সে তার ছোট ভাইয়ের বয়সী। বড় আপু বলে ডাকে এবং মেয়েকে খুব ভালবাসে। বোকা শামস এবারো নিতুর কথা বিশ্বাস করলো।
একদিন শামস মেয়েকে কক্সবাজারের কিছু ভিডিও দেখাচ্ছে। মেয়ে বললো, বাবা কুয়াকাটার চেয়ে কক্সবাজারের ঢেউ বড়। শামস মেয়েকে জিজ্ঞাসা করলো, তুমি কিভাবে জানো মা?
– মা, কুয়াকাটায় গিয়েছিল ইমরান আংকেলের কাছে। সেই ভিডিও ও ছবি মা আমাকে দেখিয়েছে। মা আমার জন্য ঝিনুকের মালা, ব্রেসলেট, আচার ইত্যাদি এনেছিল। ছোট মামার জন্য শার্ট ও ঘড়ি এনেছিল।
– তুমি কি আম্মুর সাথে কুয়াকাটা গিয়েছিলে?
– না। আম্মু আমাকে নেয়নি। আম্মু একা গিয়েছিল।
– আম্মু কয়দিন ছিল কুয়াকাটায়?
– ৩ দিন।
শামস মেয়ের এসব কথা ভিডিও করে রাখলো। নিতুকে জিজ্ঞাসা করলো কবে গিয়েছিলে কুয়াকাটায়? নিতু অস্বীকার করলো। শামস ভিডিও’র কথা প্রকাশ করলো না।
শামস ইমরানের সাথে মোবাইলে কথা বললো। ইমরান শামসকে সন্দেহবাতিক রোগী বলে আখ্যা দিল। নিতু তার বড় বোন জানালো।
নিতুর ইমরান নামে কোন খালাতো ভাই নেই। আপন তো দূরের কথা, দূরের কেউই নেই। শামস তার শাশুড়িকে বলল, আপনি এবং আপনার ছোট ছেলে বাসায় থাকতে নিতু কিভাবে একটা ছেলের সাথে ৩ দিন কুয়াকাটায় গিয়ে বেড়িয়ে আসে? শাশুড়ি উত্তর দেয়না।
এই ঘটনা নিয়ে নিতু শামস এর মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। নিতু বাবার বাসায় চলে যায় মেয়েকে নিয়ে। তার এক সপ্তাহ পর শামস ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার থেকে নোটিশ পায় নিতুর অভিযোগের শুনানির জন্য। শুনানির দিন শামস গিয়ে জানতে পারে তার বিরুদ্ধে নির্যাতন এবং ভরণপোষণ না দেবার অভিযোগ। সেখানে সিদ্ধান্ত হয় আপনারা উভয়েই বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে মিউচুয়াল ডিভোর্স করে নিবেন। সেদিনের শালিস বৈঠকের পর ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের কর্মকর্তারা শামসকে বললেন, আমরা যা বোঝার বুঝেছি, আপনি অনতিবিলম্বে থানায় জিডি করে রাখুন, আপনার স্ত্রী আপনার নামে মামলা দিবে ধরে রাখুন।
শামস নিজের স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা করতে চায়নি। তার বিশ্বাস হয়নি নিতু তার বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে। ১৫/২০ দিন পর নিতু দেনমোহর ও ভরণপোষণ দাবী করে মামলা দায়ের করলো। শামস নিতুর ভাই বোনদের কাছে সমাধান চাইলো। তাদের কথা, তোমরা নিজেরা বিয়ে করেছো আমরা এসবের মধ্যে নেই। নিতু মামলাতে উল্লেখ করেছে গত ৪ বছর তার স্বামী তাকে ভরণপোষণ দেয়না, যৌতুকের দাবীতে মেরে সংসার থেকে বের করে দিয়েছে।
৭ বছর আগের ঘটনা।
নিতু গর্ভবতী থাকা অবস্থায় নিতু শামস এর কাছে দাবী করে নিজেদের একটা জমির জন্য। নিতুর নানাবাড়ির এলাকায় এক আত্নীয়ের একটা জমি আছে বলে জানায় নিতু। শামস নিতুকে নিয়ে জমি দেখতে যায়। তুলনামূলক কম দাম হওয়াতে শামস রাজি হয়ে যায়। শামস তখন ১/২ সপ্তাহ পরপর বাসায় আসে, এজন্য জমির বায়না বাবদ একটা চেক তারিখের ঘর ফাঁকা রেখে আর সবকিছু নিজ হাতে উল্লেখ করে নিতুকে দিয়ে যায়, সে যেনো জমির টাকা বায়না করে। শামস পরে চিন্তা করে আসলেই কি নিতুর নানাবাড়ির এলাকায় জমি কেনা ঠিক হচ্ছে? শামস জমি কেনা থেকে সরে আসে। নিতু রাগারাগি করলেও শামস টাকা ম্যানেজ করতে পারছেনা অজুহাত দেখিয়ে নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকে। শামস কিছুদিন পর যখন বাসায় আসতো তখন নিতুকে চেকের কথা জিজ্ঞাসা করলে নিতু বলতো চেক খুঁজে পাচ্ছিনা, পরেরবার আসো খুঁজে রাখবো ইত্যাদি বলতে থাকে। একপর্যায়ে শামস চেকের কথা ভুলে যায়।
দেনমোহর ও ভরণপোষণ মামলা দায়েরের ৫ মাস পর হঠাত একদিন শামস একটা উকিল নোটিশ পায়। সেখানে উল্লেখ, শামস কয়েকমাস আগে নিতুর কাছ থেকে ২ লক্ষ টাকা ধার নিয়েছে এবং ধারের বিপরীতে নিতুকে চেক দিয়েছে। এই টাকা আগামী ১ মাসের ভিতর ফেরত না দিলে মামলা দায়ের হবে।
নির্ধারিত সময়ে নিতু শামস এর বিরুদ্ধে চেক জালিয়াতির মামলা দায়ের করলো। শামস মামলার কাগজপত্র উঠিয়ে দেখলো এটা সেই চেক যা নিতুকে ৭ বছর আগে জমি কেনার জন্য তারিখের ঘর ফাঁকা রেখে দিয়েছিল। মজার ব্যাপার হলো, এই মামলায় নিতু লিখেছে আমার স্বামীর সাথে আমার সুসম্পর্ক। সুসম্পর্কের খাতিরে আমার স্বামীর টাকার দরকার হওয়াতে আমার স্বামী আমার কাছ থেকে ২ লক্ষ টাকা নিয়েছে এবং চেক দিয়েছে। শামস খেয়াল করে দেখলো চেক লেনদেন ও টাকা ধারের মিথ্যা ঘটনার তারিখের ২ মাস আগেই তো ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে তাদের ভিতর মিউচুয়াল ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত হয়।
এদিকে দীর্ঘ শুনানীর পর দেনমোহর ভরণপোষণ মামলায় শামস প্রমাণ করলো যে নিতু তার সংসারে ৪ বছর আগে থেকে নয়, মামলা দায়েরের কিছুদিন আগে চলে যায়। আদালত দেনমোহরের অর্থ এবং সন্তানের ভরণপোষণ ৪ বছর আগে থেকে দেবার রায় দেয়। কিন্তু নিতুকে ভরণপোষণ দেয়না।
মামলা চলাকালীন সময়ে শামস নিতু, নিতুর পরিবারের কাছে ধর্ণা দিতে থাকে সংসারে ফেরার। কিন্তু কাজ হয়না। নিতুর অভিভাবকেরা শামসকে এড়িয়ে চলতে থাকে। এর মধ্যে শামস নিতুর আরেকটা প্রেম আবিষ্কার করে। নিতু ইমো’র মাধ্যমে এক প্রবাসী মাঝবয়সী বিবাহিত লোকের সাথে প্রেমে মশগুল। এই লোকের সাথে সারারাত ভিডিওতে কথা হয় নিতুর মা ও ছোট ভাইয়ের সামনে। গহনা, শাড়ি, মোবাইল, নিতুর বাবার বাড়ির কাজের জন্য টাকা, নিতুকে মাসিক অর্থ, নিতুর মায়ের ওষুধ কেনা ইত্যাদি বাবদ অর্থ হাতাতে থাকে নিতু ও নিতুর পরিবার। এই লোকটা নিতুর বড় বোনের আরেক সাবেক প্রেমিক!
হঠাত একদিন শামস জানতে পারে নিতু তাকে ডিভোর্স দিয়েছে। একই সময়ে কোভিডের আক্রমণে সারা পৃথিবী লন্ডভন্ড। শামস ডিভোর্স নোটিশ গ্রহণ করেনা। শামস নিতুর ভাইদের কাছে গিয়ে পা জড়িয়ে ধরে তাদের মেয়ের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করার জন্য। নিতুর ভাইদের কথা, আমাদের বোন আমাদের কথা শোনেনা। আমাদের কিছুই করার নেই।
শামস বিভিন্ন মাধ্যমে চেষ্টা করে নিতুকে সংসারে ফেরাতে। অতঃপর নিতু ডিভোর্স নোটিশ পাঠানোর ৭৪ দিনের মাথায় সংসারে ফেরত আসে। তারপর শামস নিতুর ভাইদের সাথে একত্রে গরু কুরবানি দেয়। বেশ ভালোই আবার চলতে থাকলো নিতু শামসদের সংসার। এভাবে প্রায় ৩ মাস সংসার করার পর হঠাত নিতুর দাবী আমাকে নগদ ১০ লক্ষ টাকা ও তোমার সহায় সম্পত্তি আমার নামে লিখে না দিলে সংসার ত্যাগ করবো।
নিতু সংসার ত্যাগ করলো। নিতুর দাবী পূরণ না করা পর্যন্ত সন্তানকে দেখা করতে দিবেনা।
চেক জালিয়াতির মামলা বর্তমানে আদালতে চলমান। চেকটিতে শুধু তারিখের ঘরটি ছাড়া সব লেখা শামস এর, সেকারণে এই মিথ্যা মামলাতেও হেরে যাবার পথে শামস। নিজ সন্তানকে প্রায় ২ বছর কথাও বলতে দেয়না নিতু।
শামস সন্তানকে পেতে আদালতে মামলা করে। সেই মামলাতেও শামস মেয়েকে পায়না। দেশের আইনের প্রতি অবাক হয়ে শামস মাঝেমধ্যে আদালতে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। যে মেয়ে বাবার কলিজার টুকরো, যে মেয়ে বাবার পিঠের উপর বসে ছবি আঁকতো, যে মেয়েকে শামস নিজে গোসল করিয়ে দিতো সেই মেয়েকে আজ শামস ঈদের দিনেও কাছে পায়না, ঈদের শুভেচ্ছাও জানাতে পারেনা।
একটা ঘটনায় শামস কিছুসময়ের জন্য মেয়েকে পায়। মেয়ে তখন শামসকে জানায়, মা তোমার কাছে আসতে দিতে চায়না। এজন্য আমাকে মা মারে, খুব মারে। শামস মেয়ের এই কথাবার্তা ভিডিও করে। আদালতে দেখাতে চায়, আদালত ভিডিও দ্যাখেনা!
নিতুর মা মারা গিয়েছে ১ বছর। নিতু একা বাসায় থাকে মেয়েকে নিয়ে। নিতু ৮ম শ্রেণী পাশ। কিছুই করেনা নিতু। নিতুর কোন ভাই বোন নিতুকে খরচ দেয়না। তারপরেও নিতু বহাল তবিয়তে দিন চালাচ্ছে, মামলা চালাচ্ছে। শামস পুনরায় আবিষ্কার করেছে, নিতুর সাথে মোহরার প্রেম চলছে। নিতুর মোবাইলে এই মোহরার নম্বর সেভ করা আছে “গুরুজি” নামে।
ঈদ আসছে। শামস মেয়ের সাথে যোগাযোগ করতে পারেনা। মাঝেমধ্যে শামস আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে এবং সৃষ্টিকর্তার কাছে জিজ্ঞাসা করে, তুমি যা করছো তার সবই যদি ভালোর জন্য হয় তাহলে আমার মেয়ের জীবনের জন্য যা ঘটলো তা কি আসলেই ভালো হলো?
শামস নিজেও জানতো নিতুর এসব বেহাল্লাপনা, কিন্তু শামস কখনো চায়নি তার কন্যা নিতু হোক। একজন মা সন্তানের জন্য সবকিছু ত্যাগ করে, কথাটা যেমন সত্য, তেমনি একজন পিতাও তার সন্তানের মংগলের জন্য সবকিছু সহ্য করতে পারে।
[আমি আদতে কোন লেখক নই। পেশা ইট, বালু, সিমেন্ট নিয়ে। বাংলা সাহিত্য সম্পর্কেও তেমন ধারণা নেই। । গল্প পড়তে ভালবাসি। অন্যদের গল্প থেকে লেখার অনুপ্রেরণা পেয়ে লিখে ফেলেছি। শব্দ গঠন, শব্দের ব্যবহার, বাক্য বিন্যাস ইত্যাদিতে অনেক অনেক ভুল ও ঘাটতি আছে। তবুও একটা কিছু দাঁড় করিয়েছি। ভুলকে ক্ষমার চোখে দেখবেন। লেখাটি সম্পূর্ণ সত্য ঘটনা। আরো অনেক কিছুই এই ঘটনাতে উঠে আসতে পারতো, কিন্তু এর চেয়ে বড় করতে চাইনি। একটা প্রশ্ন অনেকের মনে উঠে আসতে পারে, কোন পরিবার বা কোন মেয়ে কি এমন হতে পারে? প্রশ্নটা আমারো, সেজন্য উত্তরটা আমার জানা নেই। আমাদের আশেপাশে এর চেয়েও হয়তো অনেক খারাপ ঘটনা আছে, যা আমাদের অজানা।
.