অনির কলমে আদ্রিয়ান পর্ব ১৩
লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
.
দিনটা সেপ্টেম্বর মাসের বিশ তারিখ। সময়টা ঠিক দিন না ভোররাত। বিছানায় শুয়ে শুয়ে অযথাই ফোন স্ক্রোল করে যাচ্ছি আমি। ঘুম আর আসছেনা। আসলে এই দিনগুলোতে সারারাত জেগে ফোন-ল্যাপটপে মুভি ওয়েব সিরিজ দেখে আর মাঝেমাঝে উপন্যাস পড়ে ভোরবেলা ঘুমানোটা অভ্যেসে পরিণত হচ্ছে। তবে আজ আর কিছুতেই মন বসছেনা। সবকিছুই প্রচন্ড বিরক্ত লাগছে। এই লক ডাউনের ব্যাপারটার পর এই একটা অবস্থা হয়েছে। কখন মুডের কী অবস্থা হয় নিজেই বুঝে উঠতে পারিনা। ঘুম আসলে ঘুমিয়ে পড়তাম। কিন্তু এখন সেটাও আসছেনা। মন মেজাজ বেশ খারাপ হয়ে আছে। আর মেজাজ খারাপ থাকার কারণটাই বুঝতে পারছিনা মেজাজ এতো বিগড়ে কেন আছে? তারওপর রাতে আপি কল করেছিল। সময়টা সম্ভবত এগারোটা বারোটা ছিল। কল করেই আপির প্রথম কথা ছিল,
‘ অনি, তুই প্রেম-টেম করছিস নাতো?’
আমি বোকার মতো কয়েক সেকেন্ড বসে ছিলাম। তারপর হেসে দিয়ে বললাম,
‘ বিয়ের আনন্দে মাথাটা গেছে না? রায়হান ভাইয়াকে বলব বিয়ের আগে বউকে নিয়ে পাগলের ডাক্তার দেখিয়ে আনো। না হলে বিয়ের পর বসে বসে কপাল চাপড়াবে।’
ফোনের ওপাশ থেকে আপি বলে উঠল,
‘ দেখ অনি, আমি একদমই মজা করছিনা। এটাই তো প্রেম করার উপযুক্ত বয়স বল? এ বয়সে প্রেম না করলে কী বুড়ো হয়ে করবি নাকি? করলে সেটা মোটেও দোষের না। ইউ ক্যান শেয়ার উইথ মি।’
আমি এবার হতাশ নিঃশ্বাস ফেলে আপিকে বললাম,
‘ আপি, এতো রাতে কী শুরু করলে? হঠাৎ এই ভুত চাপল কেনো মাথায়?’
আপি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
‘ না কিছুই না।’
কী অদ্ভুত! মাঝরাতে হুটহাট এমন প্রশ্ন করলে কেমন লাগে? মাঝে মাঝে আপির ঠিক কী হয় কে জানে? আর এদিকে আদ্রিয়ান ভাই নাকি এখন আবার ইউকে যাচ্ছেন। কেমব্রিজে কী একটা কাজ বাকি রয়ে গেছে। কবে আসবে সেটা সঠিকভাবে বলতে পারছেনা। তবে বাইশ তারিখে ফ্লাইট। এসব কিছুই সে নিজে আমাকে বলেনি। বাড়িতে যেটুকু আলোচনা হয় তা থেকেই শোনা। অথচ নিজে থেকে একটাবার জানায়ও নি আমাকে। শুনেছি আজই ঢাকা চলে যাচ্ছে। ওখান থেকেই পরশু ফ্লাইট ধরবেন। সে যেখানে ইচ্ছে হয় যাক আমার আর কী? এসব উদ্ভট কথা ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ ফোন বেজে উঠল আমার। অন্যমনস্ক থাকায় হঠাৎ ফোন বেজে ওঠাতে মৃদু কেঁপে উঠলাম আমি। স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখি আদ্রিয়ান ভাই। সময় তখন সাড়ে চারটা। এইসময় উনি কেন ফোন করলেন? যদি বুঝতে পারে আমি রাতে ঘুমাই নি তাহলে বিশাল একটা লেকচার শুনিয়ে দেবে সেটা নিশ্চিত। কী করব ভাবতে ভাবতেই কল কেটে গেল। ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরতেই আবার ফোন বেজে উঠল। এবার আর অপেক্ষা না করে ফোন রিসিভ করে বললাম,
‘ হ্যালো?’
ওপাশ থেকে উনি ধমকের সূরে বলে উঠলেন,
‘ এতক্ষণ লাগে ফোন ধরতে? এমনিতে তো সারাদিন ফোন হাতেই থাকে অথচ কল দিলে পাওয়া যায় না।’
আমি উঠে বসে একটু অবাক কন্ঠে বললাম,
‘ এতো রাতে ফোন করলেন? কিছু হয়েছে?’
উনি এবারও শক্ত কন্ঠে বললেন,
‘ রাত না ভোর হয়ে যাচ্ছে এখন। প্যাঁচাল না পেড়ে তাড়াতাড়ি বাইরে আয়।’
আমি অবাক হয়ে বললাম,
‘ মানে? এই, কোথায় আছেন আপনি?’
‘ তোর বাড়ির সামনে ডাফার। মশায় জ্বালিয়ে মারছে। এতো মশা কেন তোদের বাড়ির সামনে? উফ! আমার ম্যারিড লাইফে শ্বশুর-শ্বাশুড়ির জামাই আদরের সাথে সাথে এই মশার আদরও খেতে হবে দেখছি। ভয়ানক সমস্যা!’
আমি ভ্রু কুঁচকে বললাম,
‘ আমার বাড়িতে মশা থাকলে আপনার ম্যারিড লাইফের কী? মশা ছাড়া কোন বাড়ির মেয়েকে বিয়ে করে নেবেন। প্রবলেম সল্ভড।’
উনি আবার ধমকে বলে উঠলেন,
‘ ঐ তোর জ্ঞান চেয়েছি আমি? কাম ফাস্ট।’
আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম। এই সময় বাইরে ডাকছে আমায়? সবসময় তারছেড়া টাইপ আবদার না করলেই নয়? আমি বিরক্তি নিয়ে বললাম,
‘ আপনি এই ভোরবেলা আমায় বাইরে ডাকছেন আদ্রিয়ান ভাই? আমার পক্ষে সম্ভব না। আমি এখন ভোরবেলা জগিং করতে বের হতে পারবোনা। ন আকার না। আমার এখন ঘুম পাচ্ছে, বাই।’
কথাটা বলতেই ওপাশ থেকে উনি বেশ রাগী কন্ঠে বললেন,
‘ সাত সকালে আমার হাতে কড়া লেভেলের মাইর খেতে না চাইলে চুপচাপ বাইরে আয়। পাঁচ মিনিটের মধ্যে।’
‘ আমি পারবোনা।’
উনি ধমকের সুরে বললেন,
‘ অনি!’
আমি এবার অসহায় গলায় বললাম,
‘ আমি পারবনা এখন আসতে। আমার ঘুম পাচ্ছে। বের হতে গেলে আম্মু দেখে ফেলতে পারে। বাইরের কেউ দেখলেও বিপদ হয়ে যাবে। বুঝুন প্লিজ।’
‘ ওসব বোঝাবুঝির কাহিনীতে আমি নেই। তাড়াতাড়ি আয়। একমিনিট শেষ অলরেডি।’
বলে নিষ্ঠুর ঐ মানব ফোন কেটে দিল। বুঝলোই না আমার কষ্টটা। আমি কাঁদোকাঁদো মুখ করে বসে রইলাম কিছুক্ষণ। লুকিয়ে বের হতে হবে। এটা কোন কথা হল? মুখ ফুলিয়ে উঠে একটা চাদর জড়িয়ে নিলাম গায়ে। হাতে ফোনটাও নিয়ে নিলাম। আমার রুমের দুটো দরজা। একটা দিয়ে সরাসরি বাইরে যাওয়া যায়। আমি রুমে ঢোকার দরজাটা ভেতর থেকে লক করে দিয়ে সেই দরজাটা দিয়ে আস্তে করে বেরিয়ে বাইরে দিয়ে লাগিয়ে দিলাম। মনে মনে দোয়া করলাম আব্বু আম্মু উঠলেও যেন আমার রুমের দরজায় নক না করে। যদিও করার কথাও না, আটটার আগে। এখন উল্টাপাল্টা কিছু না হলেই হল। এই লোকটা একদিন আমাকে ফাঁসিয়েই ছাড়বে।
বাইরে তখনও আবছা অন্ধকার। বাড়ির সামনের রাস্তায় গিয়ে দেখি আদ্রিয়ান ভাই সেই চারফুট দেয়ালের ওপর পা ঝুলিয়ে বসে আছে। আমি বেশ আস্তে আস্তে গেলেও নার্ভাসনেসে হাঁফিয়ে গেছি। ওনার সামনে গিয়ে কোমরে হাত দিয়ে হাঁফাতে লাগলাম আমি। উনি আমাকে দেখে দেয়াল থেকে নামলেন। একবার আমাকে আগাগোড়া স্ক্যান করে নিয়ে বললেন,
‘ রাতে ঘুমাস নি?’
আমি কোমর থেকে হাত নামিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালাম। একটা লম্বা হাই তুলে চোখে ঘুম ঘুম ভাব এনে বললাম,
‘ ঘুমিয়েছিতো। গভীর ঘুমে ছিলাম। আপনার ফোনেই ভেঙ্গে গেল।’
উনি আমার দিকে তাকিয়ে থেকে চোখ সরিয়ে বিড়বিড়িয়ে বললেন
‘ ড্রামাবাজ একটা।’
এরপর আবার আগের মতো দেয়ালে উঠে বসলেন। আমিও আর দাঁড়িয়ে না থেকে ওনার পাশের দেয়ালে উঠে বসলাম। দেয়ালের ওপর আমার যে হাত ছিল উনি সেই হাতের ওপর হাত রাখলেন। আমার কলিজা তখন একপ্রকার হাতের মধ্যে। বারবার চারপাশে তাকাচ্ছি। কিছুক্ষণের মধ্যেই এখান দিয়ে সবাই নামাজ পড়তে মসজিদে যাবে। কেউ দেখে ফেললে? প্রায় পাঁচ মিনিট কেটে গেল কিন্তু উনি কিছু বলছেন না। চুপচাপ চারপাশে তাকিয়ে তাকিয়ে এই আবছা অন্ধকার উপভোগ করছেন। ওনার হাত তখনও আমার হাতের ওপর। আমি এবার একটু বিরক্ত হয়ে বললাম,
‘ কী বলবেন বলুন না? ডাকলেন কেন? একটু পর সবাই নামাজ পড়তে বের হবে। কেউ দেখলে সর্বনাশ। তাড়াতাড়ি ছাড়েন আমায়।”
কথাটা শুনে উনি ঠোঁট কামড়ে ধরে একবার চারপাশে তাকালেন। এরপর দেয়াল থেকে নেমে গিয়ে আমাকেও টেনে নামিয়ে হাত শক্ত করে ধরে বললেন,
‘ চল।’
আমি বোকা চোখে ওনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
‘ কোথায় যাব?’
উনি বিরক্তিমাখা দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
‘ একটা বাড়তি কথা বললে ধরে নিয়ে সোজা বিক্রি করে দেব। এখন আশেপাশে কেউ নেই। সো কেউ জানতেও পারবেনা। মুখ বন্ধ রাখ।’
বলে আমার হাত ধরে হাঁটা দিলেন উনি। আমি শুধু মুখ ফুলিয়ে তাকিয়ে রইলাম তার দিকে। আমাদের বাড়ির ডান সাইডে এক বাড়ি রেখে একটা বালুর মাঠ। ওটা আমাদের এলাকার এমপির কেনা মাঠ। তাই আমরা বলি এমপির মাঠ। ঐ মাঠ পার করে দুই পাশে সারি ধরে বাড়ি আর মাঝে সরু রাস্তা। সেই রাস্তাটুকু শেষ হলে হচ্ছে কবরস্থান। আমাদের এলাকার সবচেয়ে বড় কবরস্থান ওটা। কবরস্থানের পিছনে একটা ছোট মাঠ আর পাশে ছোট্ট একটা বাগান। আমার হাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে ঐ বাগানেই এনে থামালেন উনি। এখানে এমনিতেই তেমন কেউ আসেনা। আর ভোরবেলাতো মোটেও না। অন্ধকারটা আগের চেয়ে কমেছে আমি চারপাশে একবার তাকিয়ে বললাম,
‘ এখানে আনার মানে কী আদ্রিয়ান ভাই? আপনি আবার আমাকে খুন করে এখানে গুম করে দিয়ে যাবেন না তো? ‘
উনি ওনার সেই বিখ্যাত ভঙ্গিতে ভ্রু বাঁকিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
‘ তোর তাই মনে হচ্ছে?’
আমি পাশের গাছ থেকে পাতা ছিঁড়ে সেটা নাড়তে নাড়তে বললাম,
‘ আপনাকে ভরসা করা যায়না। যা ইচ্ছে করতে পারেন। ভয়ংকর লোক আপনি।’
উনি হাসলেন। এতক্ষণে ভালোভাবে তাকালাম ওনার দিকে। একটা ছাইরঙের ফুল হাতা টিশার্ট আর কালো ট্রাউজার পড়েছেন। চুলগুলোও এলোমেলো হয়ে আছে, তার কিছু অংশ কপাল নিজের দিকে টেনে নিয়েছে। মানুষটা কী প্রয়োজনের চেয়ে বেশি সুন্দর? নাকি আমার চোখেই সে এমন? হঠাৎ বাড়ির কথা মাথায় আসতেই আমি বললাম,
‘ কেন ডেকেছেন তাড়াতাড়ি বলুন না? কেউ জেনে গেলে প্রচুর সমস্যা হবে। আম্মু বোধ হয় উঠেও গেছে। যেতে দিন প্লিজ।’
হঠাৎ উনি বিশাল এক ধমক দিয়ে বসলেন। যাতে করে স্বাভাবিকভাবেই আমি কেঁপে উঠলাম। রাগে গাছের একটা ডাল বিকট শব্দে ভেঙ্গে মাটিতে ফেলে বললেন,
‘ যা বিদায় হ। এক মিনিটের মধ্যে চোখের সামনে থেকে সরবি। তার বেশি এক সেকেন্ডও যাতে চোখে না দেখি। দেখলেই থাপ্পড়।’
আমি ঠোঁট ভেঙ্গে অসহায় মুখ করে তাকিয়ে রইলাম ওনার দিকে। কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থেকে হনহনে পায়ে গিয়ে বড় একটা গাছের শেকড়ের ওপর বসে মুখ ফুলিয়ে ওনার দিকে তাকালাম। উনি রাগে গজগজ করে এগিয়ে এসে বললেন,
‘ কী হল বসলি কেন? যা তাড়াতাড়ি যা। না হলে তোর চৌদ্দ গোষ্ঠীর সবাই জেনে যাবে। এরপর সবগুলো মিলে আমার বিরুদ্ধে হরতাল শুরু করবে। ভোরবেলা তাদের বংশের আদরের দুলালীকে কিডন্যাপ করেছি বলে আমার নামে কেস-টেসও করতে পারে। রিস্ক নেওয়ার দরকার নেই। ভাগ!’
আমি কিছু না বলে এখনো ওভাবেই ওনার দিকে তাকিয়ে রইলাম। ঠোঁট আগের চেয়ে খানিকটা ভেঙ্গে এসেছে। উনি আড়চোখে একবার আমার মুখের দিকে তাকালেন। কয়েকসেকেন্ড দাঁড়িয়ে থেকে উনিও হনহনে পায়ে এসে আমার পাশ ঘেঁষে শেকড়ের ওপর বসলেন। আমি অন্যদিকে তাকিয়ে রইলাম। চারপাশ ফর্সা হতে শুরু করেছে ইতিমধ্যে। উনি বললেন,
‘ আমি আজ ঢাকা যাচ্ছি। পরশু ফ্লাইট। শুনিস নি?’
আমি ওনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
‘ আমি কীকরে জানবো? যাবেন ভালো কথা।’
উনি কিছু বললেন না। আবার কিছুক্ষণের নিরবতা। আমার কেমন একটা লাগল হঠাৎ। তাই নিরবতা ভেঙ্গে এবার আমি বললাম,
‘ কবে ফিরছেন?’
উনি আমার দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে নির্লিপ্ত কন্ঠে বললেন,
‘ তোকে কেন বলব?’
আমার এবার নিজের মাথা নিজেরই ফাঁটাতে ইচ্ছে করছে। কেন জিজ্ঞেস করতে গেলাম ওনাকে? এরকম ত্যাড়া উত্তর আসাটাই তো স্বাভাবিক, বরং না আসাটাই অস্বাভাবিক। তৃতীয়বারের নিরবতার পর উনি বললেন,
‘ আমি তোকে মারাত্মক জ্বালাই। তাই না?’
আমি ওনার দিকে তাকালাম। কিছুক্ষণ ওনার দিকে তাকিয়ে থেকে ওনার বা হাত নিজের দুহাতে আগলে ধরে ওনার কাঁধে মাথা রাখলাম। কিন্তু কিছু বললাম না। আবার কিছুক্ষণ চুপ থাকলাম দুজন। ওনার কাঁধে মাথা রেখেই আমি বললাম,
‘ আপির বিয়েতে থাকবেন না আপনি?’
‘ জানিনা। যদি কাজ তাড়াতাড়ি হয়ে যায় তাহলে বিয়ের আগেই চলে আসব। কিন্তু যদি তারমধ্যে না হয় তাহলে আর ডিসেম্বরের আগে আসতে পারব না।’
আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। এরপর আরও কিছুক্ষণ দু-জন মিলে এই নির্জন বাগানে আশ্বিনের মিষ্টি সকাল হওয়া দেখলাম। অনেক্ষণ পর উনি আমার চুলগুলো হাত দিয়ে গুছিয়ে দিতে দিতে বললেন,
‘ বাড়ি যাবেনা? লোকজনের আসা যাওয়া শুরু হয়ে যাচ্ছে। চলো।’
আমার মুখটা মলিন হয়ে গেল। আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম ওনার হাত। একদমই যেতে ইচ্ছে করছে না এখন আর। সুখের সময়গুলো এতো তাড়াতাড়ি পেরিয়ে যায় কেন? ইচ্ছে করছে এই সময়টুকু ধরে বেঁধে রেখে দেই। একদম নিজের করে। আদ্রিয়ান ভাই অনেকটা জোর করেই আমায় ছাড়িয়ে নিলেন। এরপর হাত ধরে টেনে দাঁড় করালেন। এরপর আমার হাত ধরে এগোতে লাগলেন বাড়ির উদ্দেশ্যে। আসার সময় এক কান্ড হল। সরু রাস্তা দিয়ে আসার সময় দেখলাম আমার প্রতিবেশি দেলোয়ার মামা আসছেন। উনি দেখে ফেললেই সর্বনাশ! ভাগ্যিস তখন তপু মামার বাড়ি পাশেই ছিল। উনি আমার হাত ছেড়ে দিতেই আমি ঐ বাড়িতে ঢুকে পড়েছি। দেলোয়ার মামা আর দেখতে পায়নি আমায়। তবে আদ্রিয়ান ভাইকে দেখলেও একা দেখে কিছু বলেনি। দেলোয়ার মামা চলে যেতেই আমি বেরিয়ে এলাম। আদ্রিয়ান ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেললাম আমি। উনিও হাসলেন। তবে মুচকি হাসি। বাড়ির সামনে আসতেই এবার ওনার হাত ছাড়ার পালা। আমি ওনার দিকে তাকাতেই উনি দু-হাজার টাকা আমার হাতে দিয়ে বললেন,
‘ যদি হিয়ার বিয়েতে না আসতে পারি। শপিংটা এটা দিয়ে করিস।’
আমি শুধু তাকিয়ে রইলাম ওনার দিকে। উনি হালকা হেসে বললেন,
‘ যান ম্যাডাম। আর হ্যাঁ ছোটাছুটি আর বাঁদরামি টা একটু কম করবেন। ঠিকাছে?’
আমিও হালকা করে হাসলাম। উনি আমার হাত ছাড়লেন। এরপর চোখের ইশারায় বললেন ভেতরে যাওয়ার জন্যে। আমি মাথা নিচু করে আস্তে আস্তে ভেতরে চলে গেলাম। দরজার কাছে গিয়ে ফিরে তাকিয়ে দেখি সে এখনো তাকিয়ে আছে আমার দিকে। বুঝলাম ভেতরে ঢোকার আগে সে যাবেনা। আমি দরজা খুলে নিজের রুমে এসে দরজা লাগিয়ে দিলাম। আশেপাশে তাকিয়ে বুঝলাম আব্বু আম্মু কিছু টের পায়নি। একটার স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে খাটে বসতেই। ফোনে একটা মেসেজের টোন এলো। আমি মেসেজটা অপেন করতেই চোখে পড়ল,
‘ আশ্বিনের মিষ্টি প্রভাতে এলোমেলো খোলা চুলে, লাল চাদর গায়ে জড়ানো এক মায়াবিনীর মায়া এতো ভয়ংকর হয়? জানতাম না তো? এই মায়াটুকু যে প্রবাসের প্রতিটা নির্ঘুম রাতের কারণ হতে চলেছে। সেটা কী মায়াবিনী জানে?’
ফোনটা পাশে রেখে মুচকি হাসলাম। আমার কান লাল হয়ে উঠল হয়তো। লেখাগুলো আরেকবার ভেবে গায়ে জড়ানো লাল চাদরটা দিয়ে মুখটা ঢেকে ফেললাম আমি। এভাবে বলে কেউ? কী লজ্জা!
.
.
[ রি-চেইক করিনি। পাঠকরা সবাই রেসপন্স করবেন। আর গঠনমূলক মন্তব্য চাই বেশি বেশি। ]