পায়ের মোজার মধ্যে এক হাজার টাকার তিনটা নোট লুকিয়ে রাখলাম। ছাত্রের মা একটু আগেই এই মাসের টিউশনির টাকা দিয়ে গেলো। ছাত্রের সামনে এমন ভাব করলাম যে যেন মনে করে পা চুলকাচ্ছি।
টিউশনি থেকে বের হয়েই দেখি রিমু রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে। রিমু হচ্ছে আমার প্রেমিকা। আট বছর ধরে প্রেম করি। আমার থেকে দুই ক্লাস উপরে পড়ে। আগে একসাথেই পড়তাম। কিন্তু দুইবার ফেল করার কারণে এখন ও আমার সিনিয়র। এইজন্য ওর কথায় ওঠবস করতে হয়।
আমাকে দেখেই ও বললো ” টিউশনির টাকা দিছে?”
আমি আমতাআমতা করে বললাম, না দেয়নাই তো। কেন কি হইছে? তুই না বললি আজ টিউশনির টাকা দিবে? রেগে গেলে প্রেমিকা আমাকে তুই করে বলে। সিনিয়র তো তাই কিছু বলতে পারি না। চুপচাপ থাকলাম কোনো উত্তর দিলাম না।
কিরে উত্তর দেস না কেন? আবার আমতা আমতা করে বললাম ” আজকে দেওয়ার কথা ছিল কিন্তু দেয় নাই।”
প্রেমিকা কাছে এগিয়ে এসে বললো ” প্যান্টের পকেট থেকে হাত বের কর। আমি চেক করে দেখবো “। আমি বাধ্য ছেলের মতো পকেট থেকে হাত বের করে থাকলাম। প্রেমিকা আমার পকেট আর মানিব্যাগ সব একটা একটা করে চেক করলো। শেষমেশ হাল ছেড়ে দিয়ে বললো ” ঠিক আছে আর চেক করবো না। মনে মনে ভাবলাম যাক বাবা বাঁচলাম। ধরা খেলে আজ নির্ঘাত ১২ টা বাজিয়ে ছাড়তো।
প্রেমিকা হঠাৎ বলে উঠলো, আজ আমি টিউশনির টাকা পেয়েছি চলো আজ আমি তোমাকে খাওয়াবো। দুনিয়াতে প্রেমিকার টাকায় খাওয়া খাদ্যের স্বাদ বেশি হয়। এটা প্রত্যেকটা পুরুষ মাত্রই জানে।
রেস্টুরেন্ট বসে আছি প্রেমিকা একটার পর একটা অর্ডার দিয়েই যাচ্ছে। খাবারের তালিকা দেখে প্যান্টের বেল্ট একটু ইজি করে দিলাম ( বেশি খাওয়ার জন্য)। ওয়েটার একটার পর একটা খাবার দিচ্ছে আর আমি সাবাড় করে দিচ্ছি।
খাওয়াদাওয়া শেষ করে চুপচাপ বসে আছি ভদ্র ছেলের মতো। এমন সময় প্রেমিকা বলে উঠলো ” আজ সকাল ৯ টা ২৩ এ তুমি ঘুম থেকে উঠছ। তারপর বাথরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়েছ ১৮ মিনিটে। তারপর আমাকে বলছ কাপড় ধুয়ে দিবা কিন্তু ঐ সময় তুমি পাশের রুমের ছেলেদের সাথে বসে তাস খেলছ। সেখান থেকে উঠে গোসল করছ ২৫ মিনিট ধরে। তারপর আমাকে বলছ নামাজ পড়তে যাবা কিন্তু নামাজ পড়তে না গিয়ে ফেইক আইডি দিয়ে অন্য মেয়ের সাথে চ্যাটিং করেছ। তারপর আমাকে বলেছ ঘুম আসবে কিন্তু ঘুম না এসে তুমি তোমার মোবাইলে এন্ডগেম মুভি দেখেছ। তারপর মুভি দেখা শেষ করে আমাকে বলেছ পড়তে বসবে কিন্তু পড়তে না বসে ছাদে গিয়ে পাশের বিল্ডিংয়ে আসা নতুন ভাড়াটিয়ার মেয়ের সাথে উঁকিঝুঁকি দিয়েছ। তারপর সেখান থেকে সোজা এই টিউশনিতে এসেছ। আমি কি কিছু ভুল বলেছি?”
প্রেমিকার মুখের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে আছি। একটা কথাও ও মিথ্যে বলেনি। কিন্তু কিভাবে সম্ভব? মাথার মধ্যে সব তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছিল। ঘোর ভাঙ্গলো ওয়েটারের কথা শুনে।
এক্সকিউজ মি ম্যাম আপনার বিলটা। আড়চোখে তাকিয়ে দেখি ৩ হাজার ১৫ টাকা বিল এসেছে।
ওয়েটার চলে গেলে রিমু বলে উঠলো ” আমাকে মিথ্যে বলে কি হয় তোমার?”
ধরা পড়া চোরের মতো চুপচাপ বসে আছি। কোনো কথা বলছি না মুখ দিয়ে। কথা বললেই বিপদের আশংকা।
হঠাৎ রিমুর ফোনে একটা মেসেজ এলো। রিমু মেসেজ টা বের করে আমার দিকে ফোন ধরে বললো ” মেসেজ টা জোরে পড়ে শুনাও তো”। ফোনের ডিসপ্লের দিকে তাকিয়ে দেখি লিখা আছে ” ম্যাম স্যারের মোজার মধ্যে টাকা রাখা আছে”। মেসেজের উপরে তাকিয়ে দেখি “রুদ্র” লিখা। আর রুদ্র আমার সেই স্টুডেন্টের নাম।
প্রেমিকা উঠে হনহন করে চলে গেলো। মোজার মধ্যে থেকে একহাজার টাকার তিনটা কনকনে নোট বের করে টেবিলে রেখে দিলাম।
বেড়িয়ে আসবো এমন সময় পিছন থেকে ওয়েটার ডেকে বললো ” স্যার আরো পনেরো টাকা দিতে হবে”। পকেট মানিব্যাগ চেক করে ১০ টাকা বের করে দিয়ে বললাম ” ভাই বিশ্বাস করেন আমার পকেটে আর কোনো টাকা নাই”।
ওয়েটার আমার কথা শুনে বললো ” স্যার আপনি তো পকেটে টাকা রাখেন না। টাকা রাখেন মোজায়। একটু চেক করে দেখবেন প্লিজ। রাগে দুই পায়ের দুইটা মোজা খুলে ওয়েটার কে চেক করে দেখিয়ে বের হয়ে এলাম”।
স্পাই গার্লফ্রেন্ড
রিফাত আহমেদ