প্রিয় কলেজ নিয়ে কবিতা
কলেজ করিডোর
—————————
মেডিকেল কলেজ করিডোরে দুজনে মুখোমুখি।।
– নাম কি?
– তামান্না। ফার্স্ট ইয়ার।
– আমাকে চেনো?
– না ভাইয়া।
– আমি আতিক। ফিফথ ইয়ার। কেমন আছো?
– জ্বি ভাইয়া। ভালো।
– হ্যাঁ! সবসময় ভালো থাকবা। মন খারাপ করবা না।
– জ্বি ভাইয়া।
– তোমার ক্লাসমেটরা কিন্তু বেশিরভাগ দুষ্টু! ইঁচড়েপাকা! এদের মধ্যে এখনও তেমন একটা ম্যাচুরিটি আসে নাই। ওদের থেকে একশো হাত দুরে থাকবা। একটা জিনিস সবসময় মাথায় রাখবা।
– কি জিনিস?
– ইয়ারমেটদের মধ্যে সম্পর্ক হলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সম্পর্কগুলো হারিকেনের কাঁচের মতো ঠাস করে ভেঙে যায়। আর যদি বাই চান্স ইয়ারমেটদের মধ্যে বিয়ে হয় তাহলে ভয়াবহ বিপদ! কিছুদিন পর পর ক্যাচাল বাঁধে। যাকে বলে দাম্পত্যকলহ!
– ভাইয়া, এইসব আমাকে কেন বলছেন?
– দায়িত্ববোধ থেকে বলছি। বড়ভাই হিসেবে এসব বলতেই পারি। আর শোনো! ইয়ারমেটরা বেশি ঝামেলা করলে আমারে জানাইবা।
– জ্বি ভাইয়া।
– কোন হেজিটেশন করবা না। মনে করবা আমি তোমার বড় ভাই।
– জ্বি ভাইয়া।
– তোমাদের নতুন ব্যাচের ক্লাস কি শুরু হয়েছে?
– জ্বি ভাইয়া।
– এনাটমিতে কি হার্ট পড়ানো শুরু করেছে?
– না ভাইয়া।
– তাহলে তো সমস্যা। আমাদের সময় হার্ট দিয়ে শুরু করেছিল। হার্ট সবসময় আগে পড়ানো উচিত। এতে অনেক উপকার। তোমাদের মত যারা নবীন তাদের ভুল পথে পা দেবার কোন সম্ভাবনা থাকে না।
– জ্বি ভাইয়া।
– ফুসফুসও (Lungs) আগেভাগে পড়ানো উচিত। অজানা অচেনা পরিবেশে শ্বাস প্রশ্বাস কেমন করে নিতে হবে.. এসব জানার দরকার আছে।
– জ্বি ভাইয়া।
– অনেক ছেলেমেয়ে ফার্স্ট ইয়ারে থাকা অবস্থায় না জেনেশুনে প্রথমেই ভুল শ্বাস প্রশ্বাস নেয়া শুরু করে। এতে দূষিত বাতাস শরীরে ঢুকে। আর একবার খারাপ বাতাস শরীরের ভেতরে ঢুকলে সারাটা জীবন কিন্তু পস্তাতে হবে! তুমি এই ব্যাপারটার দিকে খেয়াল রাখবা।
– জ্বি ভাইয়া।
– এই আমারে দ্যাখো। এখানে প্রায় পাঁচ বছর হতে চললো.. এখনো শ্বাস প্রশ্বাস ফ্রেশ রাখছি। বিশুদ্ধ বাতাস নিই। অনেকেই চেষ্টা করছিল কিন্তু আমি দূষিত হতে দিইনি।
– জ্বি ভাইয়া।
– আচ্ছা ঠিকাছে.. এখন তোমাদের এনাটমি কি পড়াচ্ছে?
– ভাইয়া… লিভার।
– কেন যে হার্ট আর লাংসের মত সেনসিটিভ অরগ্যান বাদ দিয়ে লিভার শুরু করছে আমার মাথায় আসে না! এটা ঠিক না। লিভার হলো ময়লা পচা আবর্জনা দিয়ে ভর্তি। এটা তেমন গুরুত্বপূর্ণ কিছু না। তুমি সবসময় তোমার হার্টকে বেশি গুরুত্ব দিবা। হার্ট নিয়ে গবেষণা করবা। তাছাড়া হার্ট হলো আবেগী অর্গান। ঠিকমত বুঝতে পারলে ভুলভাল ইমোশনকে কন্ট্রোলে রাখা যায়।
– জ্বি ভাইয়া।
– হার্ট নিয়ে বেশি পড়াশুনা করলে এনাটমির পাশাপাশি আরও অনেক কিছু বুঝতে পারবা। তোমার পিতামাতার পর কে বেশি কেয়ারিং?? পিতামাতার পর তোমাকে নিয়ে কে বেশি চিন্তাভাবনা করে?? এসব বিষয়াদি জানতে পারবা।
– জ্বি ভাইয়া।
– শোনো… তোমাদের এনাটমিতে ফর্সা করে এক লেকচারার স্যার আছেন। নাম ডাক্তার আব্দুর রহমান। আমরা অবশ্য রহমাইন্ন্যা স্যার বলে ডাকতাম। স্যার দেখতে যদিও সুন্দর, স্মার্ট কিন্তু বহুত সমস্যা আছে। জানো তো সুন্দরের মধ্যে কিছু না কিছু অসুন্দর লুকিয়ে থাকে। একটু সাবধানে থাকবা। আলু চেনো.. আলু?? আলুতে মাঝেমাঝে দোষ থাকে। যাহোক তুমি তো ছোট এসব না বুঝলেও চলবে!!
– জ্বি ভাইয়া।
– আর একটা কথা। এখানে একটা পার্ক আছে। নাম প্রেমকানন। অনেক ছেলে মেয়ে ওখানে শ্বাস প্রশ্বাস নিতে যায়। তুমি যাইবা না। বখাটেদের আড্ডাখানা। পুরো পার্ক দূষিত বাতাসে ভর্তি। যেতে হলে রেসপন্সেবল কাউকে সাথে নিয়ে যাইবা।
– জ্বি ভাইয়া.. ভাইয়া, আমার ক্লাস শুরু হবে। আমি যাই —
– ঠিক আছে যাও। আর শোনো.. লিভারের মধ্যে কোন প্যাঁচ লাগলে আমারে জানাইবা। বিশেষ করে হেপাটিক লোবিউল আর পোর্টাল লোবিউল। লাইব্রেরিতে আসলে আমি তোমাকে সব ক্লিয়ার করে দিবো। যদিও অনেক আগে পড়েছি.. প্রয়োজনে তোমার জন্য না হয় আর একবার রিভিউ দিবো।
– জ্বি ভাইয়া।
– লিভারে আরও দুইটা বদখদ জিনিস আছে। স্পেস অফ ডিসি আর স্পেস অফ মল। এই মল কিন্তু আবার খারাপ কিছু না। তুমি আসলে ওই দুটাকেও খোলসা করে দিবো।
– জ্বি ভাইয়া।
– আর শোনো! যাই বলি তাতেই জ্বি ভাইয়া বলছো কেন?? একটু ইন্টারেক্টিভ হবার চেষ্টা করবা… ইন্টারেক্টিভ মানে কেউ কোন কথা বললে তার মূল বিষয়টা রিয়েলাইজ করে নিজ থেকে কিছু একটা বলা।
– জ্বি ভাইয়া
– ঠিক আছে এবার তাহলে যাও। আমার মোবাইল নম্বর টা রাখো।
– ভাইয়া কিছু মনে করবেন না। আর একদিন নিবো.. আমার ক্লাস এখুনি শুরু হবে..
– আচ্ছা ঠিকাছে যাও।
## জহির সাদিক