এক প্রহর ভালোবাসার পর্ব ২
#নুসাইবা_রেহমান_আদর
বিছানার চাঁদর পেচিয়ে বসে আছে সানা। সারা শরীরে তার আচরের কা*ম*রে*র দাগ স্পষ্ট। ব্যাথার কারনে সে সামান্য নড়তেও পারছেনা। সানার কাছে সাফোয়ান কে দুনিয়ার জঘন্য ব্যাক্তি বলে মনে হচ্ছে। আশেপাশে সে তার জামাকাপড় খুজছে।
সাফোয়ান শাওয়ার শেষ করে রুমে এসে সানার দিকে এক পলক তাকায় । আবার রুমে চারোদিকে চোখ বুলিয়ে সানার লাগেজ খোঁজার চেষ্টা করে। রুমের মধ্যে আশপাশে কোনো লাগেজ দেখতে পায় না। মেয়েটার জামাকাপড় খুজে না পেলে বাড়ির সবার সামনে তাকে লজ্জায় পড়তে হবে।
– এই মেয়ে তোমার লাগেজ কই? জামাকাপড় নিয়া আসো নাই।
– আমি জানিনা এখানে আমাকে নিয়ে আসা হয়েছে তখন লাগেজ কে নিয়েছে আমি দেখি নাই।
– আপদ একটা। যাও গোসল করে নেও আমি তোমার লাগেজ খুঁজে আনছি।
সাফোয়ান কে দেখে বুঝা যাচ্ছেনা তার মধ্যে কি চলছে। কি মানুষ কাল রাতের সব কিছু সে ভুলে গেছে। লোকটা এতো স্বাভাবিক কিভাবে আছে? সানাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে সাফোয়ানের একটু আনইজি ফিল হচ্ছে।
– এই মেয়ে আমার দিকে এভাবে না তাকিয়ে গোসলে যাও। আর শুনো যেহতু তুমি আমার স্ত্রী এসব স্বাভাবিক ভাবে নিতে শিখো। আর আমার দিকে এভাবে হা করে তাকিয়ে থাকবেনা।
সাফোয়ানের কাছে ধমক খেয়ে চাঁদর পেচিয়ে সোজা ওয়াসরুমে চলে গেলো সানা। গ্রামে বড় হওয়া সানা এসব কিছু স্বাভাবিক কিভাবে নিবে।সাফোয়ান মিজের রুম থেকে বেরিয়ে বাহির থেকে লক করে দেয়, সোজা মায়ের রুমের সামনে গিয়ে দরজায় টোকা দেয়। মিসেস লিমা সকাল সকাল ডাকায় বিরক্ত হয়ে যায়। বিরক্তিসহকারে উত্তর দেয়।
– এতো সকাল সকাল দরজাতে নক কে করছে ইডিয়ট।
– মম আমি সাফোয়ান।
– কি হয়েছে এতো সকালে তুমি আমাকে ডাকছো?
– মম এখন সকাল নয় দুপুর।আর অই মেয়েটার লাগেজ কই?
– হোয়াটেভার, কোন মেয়ের লাগেজ?
– আরে আমার রুমে যেই মেয়ে আছে।
– ওর একটা নাম আছে সাফোয়ান। ওর নাম সানা। আর সানার লাগেজ তো মিরার রুমে আছে।
– ধন্যবাদ মম আমি গেলাম।
বাহির থেকেই সব কথা বলে আবার চলে গেলো সাফোয়ান। লিমা বেগম আশ্চর্যজনক ভাবে তাকিয়ে আছে। অই বিষয়ে মাথা না ঘামিয়ে। বোনের রুমের দরজা খোলা কারন সে ঢাকা হোস্টেলে দেখে পড়াশুনা করে। রুম থেকে লাগেজ নিয়ে আবার রুমে ফিরে আসে। ওয়াসরুমের দরজা এখোনো ভিতর থেকে বন্ধ।
– এই মেয়ে তোমার হয়েছে?
– হ্যাঁ তবে জামাকাপড় ছাড়া আমি কিভাবে বের হবো?
– দাঁড়িয়ে থাকো দিচ্ছি আমি।
লাগেজ খুলে বসে ভাবে দিবে কি পরতে। লাগেজ ভর্তি ফ্রক আর প্যান্ট। সিকদার বাড়ির বড় পুত্র বধু কি এখন এসব পরে ঘুরবে? অনেক খোঁজার পর একটা থ্রিপিস পায় জাম কালারের।
– দিচ্ছেন না কেন আমার প্রচুর শীত লাগছে।
– দরজা খুলো নাহলে কিভাবে দিবো?
সানা দরজা হাল্কা ফাঁকা করে হাত পাতে সাফোয়ানের দিকে। সাফোয়ান তারাতাড়ি ড্রেস সানার হাতে দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে চলে যায়। জামাকাপড় বালতিতে রেখে সে রুমে চলে আসে৷ বিছানার দিকে নজর যেতেই তার চোখে পরে। বিছানার চাঁদর তারাতাড়ি তুলে নেয় সে। বাথরুমে নিয়ে ভিজিয়ে রাখে,নাহলে অন্যকারো চোখে পড়লে কি হবে। এইবার সে এসব কিভাবে ধুবে, বাসায় তার সব কাজ তার মা করে দিতো। সানা পড়া ব্যাতিত আর কোনো কাজ করতো না। সানার জামাকাপড় ও তার মা ই ধুয়ে পরিষ্কার করতো। তখন সাফোয়ান রুমে আসে।
– বিছানার চাঁদর কই?
সাফোয়ানের প্রশ্নে হা করে তাকিয়ে থাকে সানা। লোক্টা কি জানেনা চাঁদর কই থাকতে পারে?
– ওয়াসরুমে।
সানার উত্তরে সানার দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে সে নিজের আলমারি খুলে সেখান থেকে আরেকটা চাদর নামিয়ে বিছানায় বিছিয়ে নেয়।
– চাদর উঠানোর পর আরেকটা বিছনো লাগে জানো না?
– আমি কিভাবে জানবো আপনার চাদর কই থাকে?
সাফোয়ান সানাকে কোনো উত্তর না দিয়ে সোজা ওয়াসরুমে গিয়ে বিছানার চাঁদর ধুতে লাগলো। সানা অইদিকে আর গেলোনা।গিয়ে লাভ নাই সানা এসব কাজ করতে পারেনা। আর অই লোক তে যতোটা দূরে থাকা যায় ততোটাই থাকতে হবে। বিছানায় উঠে সে আবার সুয়ে পরে। প্রচন্ড শীত লাগছে সানার, এই বাসায় আসার সমাই তার সোয়েটার আনা হয় নাই৷ আজকে একটু বেশি খারাপ লাগছে তাই চুলে ভিজা টাওয়াল রেখেই ঘুমিয়ে গেলো। সাফোয়ান সানার শাড়ি ও ধুয়ে দিলো সব এনে নিজের রুমের বেলকনিতে মেলে দিয়ে দাড়ালো।
এই প্রথম সাফোয়ান নিজের কোনো কাজ করলো। কি আর করবে এইরকম পিচ্চিরে বিয়্ব করছে না জানি ভবিষ্যতে আর কত কাজ করা লাগে তার। রুমে গিয়ে দেখে সানা ঘুমিয়ে আছে। সাফোয়ান উপর উপর যতোই রাগ দেখাক না কেন। সাফোয়ানের মধ্যে অপরাধবোধ কাজ করছে অনেক। এইরকম ছোট মেয়ের সাথে সে একদম ঠিক কাজ করে নাই। কি নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে সানা।
– এই মেয়ে ভিজা টাওয়াল মাথায় রেখে ঘুমিয়ে গেলো? বালিশ তো পুরাই ভিজিয়ে দিবে।
সাফোয়ান গিয়ে সানার চুল থেকে টাওয়াল খুলে নিলো। সানার চুল গুলো এক সাইড ব্রাউন আর লম্বা সাইড ব্লু কালার। মেয়েটা কি চুল কালার করেছে। এখনকার মেয়েরা আর কত যে স্টাইল বের করবে। চুলের সৌন্দর্য রঙে, ঘনকালো চুলে মেয়েদের সুন্দর লাগবে। সানাকে কাপতে দেখে সানার গায়ে হাত দিয়ে দেখে সানার শরীর অনেক গরম। সাফোয়ান আরেকটা কম্বল নামিয়ে সানার উপর দিয়ে দেয়। সাফোয়ানের অনেক ক্ষুদা লেগেছে। নিচে গিয়ে কাজের মেয়ে সাহানাজ কে খাবার দিতে বললো।
– সাহানাজ আমাকে নাস্তা দিয়ে যা।
– জি আজ্ঞে ভাইজনা দিতাছি। আচ্ছা ভাইজান ভাবিজান কি খাইবো না?
– আগে আমাকে তুই খাবার দে পরে ভাবির চিন্তা করিস। মম আর আংকেল কি খেয়ছে?
– না ভাইজান, বড় ম্যাডাম আর স্যার তো এহোনো উঠেনাই।
– অহ আচ্ছা।
সাহানাজ সাফোয়ান কে খেতে দিলো। সাহানাজ দাঁড়িয়ে ভাবছে যে বড় ম্যাডাম রে মম ডাকে আর স্যার কে আংকে। হ্যাঁ যদিও ওটা তার আসোল বাবা না তবুও। আর ম্যাডাম এর তেমন লজ্জা শরম নাই ছেলে সহকারে পুরান প্রেমিক কে বিয়ে করেছে সে। বড় স্যার নিখোঁজ হওয়ার পর তে এই মহিলার মধ্যে কোনো ভাবাবেগ সে দেখে নাই।
– সাহানাজ খাবার বেরে দেও আমি রুমে নিয়ে যাই।
– আইচ্ছা ভাইজান।
ঘুমের মাঝে সানাকে খাইয়ে দিচ্ছে সাফোয়ান। মেয়েটার প্রতি তার ভালোলাগা কাজ করছে বা মায়া এমন না। কাল রাতের ঘটনা তাকে অপরাধী করে তোলে। সানার এই অবস্থার জন্য তো সে দায়ী এটা কিভাবে অস্বীকার করবে। তাই তো সে মেয়েটার সেবা করছে। কাল থেকে সাফোয়ান সানাকে নিয়ে এতোটাই ব্যাস্ত ভাবনায় যে মিথীলার কথা তার মাথায় আসছে না।
সানাকে খাইতে জ্বরের মেডিছিন খাইয়ে দিলো। সানা সাফোয়ানের এক হাত জরিয়ে ধরে শুয়ে পরলো। সাফোয়াবের শরীরের উষ্ণতা পেয়ে সানা সাফোয়ান কে জরিয়ে ধরলো। সাফোয়ান হা করে তাকিয়ে আছে সানার কাজে। নড়লে সানার ঘুম ভেঙ্গে যাবে। সাফোয়ানের বাহিরে যাওয়া জরুরি। সাফোয়ান ফোন বের করে কাউকে রাতে আসতে বললো সাথে একটা মেডিছিন আনতে বলে দিলো। সাফোয়ান ও সুয়ে পড়লো সানার পাশে। সানার গরম নিশ্বাস সাফোয়ানের মুখের উপর পড়ছে।সানার শরীরের তাপে সাফোয়ানের গরম লাগছে। সানার জ্বর ধীরে ধীরে বাড়ছে। সানা হাল্কা কুকিয়ে উঠছে ব্যাথায়৷ সানার এই করুন আওয়াজে সাফোয়ানের অনেক খারাপ লাগছে।
– সানা এই সানা অনেক খারাপ লাগছে?
– এই পচা লোলোক আয়ামার অনেক ব্যাথা করছে হাত, পা।।
সাফোয়ান উঠে সানার হাত-পা টিপে দিতে শুরু করলো।
..চলবে..?
( আসসালামু আলাইকুম, অধিকাংশ গ্রাম অঞ্চলের দিকে ১৪*১৫ বছরের মেয়দের বিয়ে দেওয়া হয়। এইরকম আমি প্রচুর দেখছি। আবার ৭ম শ্রেনির মেয়েরাও প্রেম করে পালিয়ে বিয়ে করছে তাই এটা অস্বাভাবিক কিছু না।)