এক প্রহর ভালোবাসার পর্ব ৪
#নুসাইবা_রেহমান_আদর
#চতুর্থ_পর্ব
সানার কথায় সাফোয়ানের মা বিরক্ত হচ্ছেন। উনি কোনোরকম নিজেকে শান্ত রেখে বলেন।
-শুনো মেয়ে বেশি কথা আমি একদম পছন্দ করি না। কাল সকালে সাফোয়ানের সাথে যাবা তুমি। সাফোয়ান ঠিক টাইমে খাবার খায় কি না আর যা যা দরকার সব তুমি নিজের হাতে করবা।
– মম আমাদের অই বাসায় মেইড রাখা আছে আমার কোনো দরকার নাই ওকে নিয়ে যাওয়ার।
– সাট আপ সাফোয়ান। এই মেয়ের সাথে তোমার বিয়ে দিয়েছি তোমার খেয়াল রাখার জন্য।
– হ্যাঁ মামি আপনি চিনতা করিয়েন না আমি উনার খেয়াল রাখবো।
সানা পড়ার ভয়ে সাফোয়ানের মা কে কথাটি বললো। এই পড়াশুনা আর করবেনা। বিয়ে হয়েছে তো হয়েছেই।তখন ফোড়ন কাটলো সানার মামা।
– লিমা তুমি ও কে কিভাবে এতো কাজের কথা বলো? ও ছোট ওর নিজের খেয়াল রাখতে পারেনা সে কিভাবে সাফোয়ানের খেয়াল রাখবে। সানা আমাদের সাথে এই বাসায় থাকুক।
– আমার সিদ্ধান্ত শেষ আর কোনো তর্ক নয়। আর সানা ওতোটাও ছোট না, ভুলে যেওনা ওর বয়সে আমার কোলে সাফিয়ানা ছিলো।
সাফিয়ানার কথা মনে পরতেই লিমা খানের অনেক খারাপ লাগতে শুরু করলো। চোখের কোনে অশ্রুকণা জমা হলো। লিমা খান খাবার রেখে উঠে চলে যায়। সানার মামাও খাবারের প্লেট হাতে নিয়ে তার পিছু পিছু চলে যায়।
সানার ঠিক পিছে সাহানাজ দাঁড়িয়ে আছে। এই কাহিনী দেখে বিরবির করে বলে।
– বুইরা বয়সে ভিমরতিতে ধরছে, রাগ করবো আর ভাংগাই খাওয়াইতে হইবো। ঢং যত্তসব ।
সাহানাজের কথা শুনে সানা হেসে ফেলে৷ সানাকে হাসতে দেখে সাফোয়ান তার ভ্রু কুচকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
– আব কিছু না আমার খাওয়া শেষ আমি রুমে গেলাম।
সানা কিছু বললো না কারন সে চায়না সাফোয়ানের কাছে সাহানাজ বকা খাক।
সানার জ্বর এখন নেই বললেই চলে,কম্বল পেচিয়ে খাটের ডান সাইডে শুয়ে আছে। মনে মনে সে তার মিনা কে মিস করছে। মিনা হলো সানার বড় সাইজের একটা টেডিবিয়ার। সানা কোলবালিশ ছাড়া ঘুমাতে পারেনা। একদিন সানা কোলবালিশ ছাড়া ওর আপুর সাথে ঘুমিয়ে ছিলো। সেদিন সে ওর বড় বোনের পেটের উপর পা দিয়ে আর পায়ের যায়গায় মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে ছিলো। সানার ঘুমের স্টাইল প্রচন্ড জঘন্য৷ ঘুমিয়ে গেলে তার হুশ থাকেনা। এইজন্য সানার বোন সিমা তাকে জন্মদিনে একটা বড় টেডিবিয়ার গিফট করে যার উপর আরামে হাত-পা তুলে সে ঘুমায়।
-শুনছেন আপনার খাটে কোলবালিশ নাই কেনো?
– তুমি কোলবালিশ দিয়ে কি করবে,কথা না বলে চুপচাপ ঘুমাও নাহলে ঠান্ডার মধ্যে বেলকনিতে ফেলে রাখবো।
– ভালো কথা শুনলেন না তো এরপর আমাকে দোষ দিবেন না।
সানার কথা গ্রাহ্য করলো না সাফোয়ান। সানা সবসময় এতো বেশি বকবক করে যে তার কান ঝালাপালা হয়ে যাচ্ছে। লাইট অফ করে সাফোয়ান ঘুমিয়ে পড়লো। সাফোয়ান আর সানার মাঝে একটু ফাকা যায়গা ছিলো। অর্ধেক রাতে সাফোয়ান অনুভব করলো কেউ তার মুখের উপর ঠাস করে পা ফালাইছে। ব্যাথায় নাক মুখ কুচকে যায় সাফোয়ানের। বালিশের পাশে হাত দিয়ে ফোন নিয়ে ফ্ল্যাশ অন করে দেখে সানা তার বুকের উপর পা দিয়ে ঘুমিয়ে আছে। সানার পা সাফোয়ানের উপর আর সাফোনের পায়ের সাইডে বালিশ বিহীন ঘুমিয়ে আছে। এক হাত খাটের নিচে পড়ে আছে। আরেকটু সাইডে চাপলে সে নিশ্চিত নিচে পরে যাবে। এতোকিছু হয়ে হয়েছে তবুও সানার ঘুম ভাঙ্গছে না। এই শীতের রাতে একবার কম্বলের নিচে ঢুকলে কার উঠতে ভালো লাগবে। সানাকে ঠিক করে না দিলে হয়তো আবারো লাথি খাবে সে। সানাকে টেনে বালিশে সুইয়ে দিলো। আলমারি থেকে এক্সট্রা দুটো বালিশ বের করে মাঝখানে দিলো আর রিক্স নেওয়া যাবে না। এখোনো তার মুখে ব্যাথা করতেছে। সানার গায়ে কম্বল টেনে দিয়ে সেও ঘুমিয়ে পড়লো।
সকাল হতেই তোরজোর শুরু হয়ে গেলো সানার। লাগেজ সে সাফোয়ানের আগেই বের করে ফেলছে। সাফোয়ান রুমে আসতেই জিজ্ঞেস করে।
– আপনার ব্যাগ গুছাবেন না?
– আমি এখানে থাকিনা ইডিয়েট আমি ঢাকাতে থাকি। আমার সব জামাকাপড় আমাদের বাড়িতেই রাখা আছে নিবো কেন।
– আপনাদের কয়টা বাড়ি লম্বু জামাই?
– ওয়েট হোয়্যাট? লম্বু জামাই মানে কি?
– ওহ সরি ভুল বলছি লম্বু না লিচু জামাই।
সানা ইচ্ছাকৃতভাবে সাফোয়ানকে রাগাতে চাচ্ছে। সানাও সুযোগে ভালোই অপমান করতে পারে। সাফোয়ানের দিকে তাকিয়ে দেখে সানা ওর অবস্থা। চোখ বন্ধ করে সাফোয়ান নিজের রাগ কমানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। এখন আর যাইহোক এরে কিছু বলা যাবেনা। এখন কিছু বললে কান্নাকাটি শুরু করবে আর আংকেল মম উলটা ভাববে।
-কি এক মুসিবতে আমাকে ফালাইলা আল্লাহ তুমি।
– এই কি বললেন আমি মুসিবত?
– এই মেয়ে কানে কি বেশি শুনো? এইটুকু এক মাইয়া ঝগরা করতে ওস্তাদ।
– আবার আমাকে ঝগরুটে বললেন এতো বড় সাহস?
– আমার কত সাহস ভবিষ্যতে টের পাবা যদি আমার সাথে তুমি থাকো তাহলে। এখন চুপ করে বের হও।
সানা সাফোয়ানের সাথে ড্রয়িংরুমে গিয়ে মামা মামি, সাহানাজ থেকে বিদায় নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে বের হলো। ড্রাইভার নিজের মতো গাড়ি চালাচ্ছে। সানা আর সাফোয়ান পিছনে বসছে। সাফোয়ান তো ফোন চাপায় ব্যাস্ত সানা বসে বোর হচ্ছে।
– এইযে শুনছেন আমার না খুদা লেগেছে।
– তোমার এত খুদা কিভাবে লাগে, আশেপাশে কোনো দোকান দেখতে পাচ্ছো কিভাবে খাবার কিনবো আমি?
সাফোয়ানের বিরক্তিমাখা কন্ঠে সানার অপমানিত ফিল হলো। অভিমানে সে ঘুরে বসলো।জানালার বাহিরে তাকিয়ে রাস্তার সাইডের গাছ দেখে যাচ্ছে তা দেখতে লাগলো। অনেক গাড়ি রাস্তায় চলাচল করছে মানুষ হেটে যাচ্ছে নিজ নিজ গন্তব্যে । সানার বাবা-মায়ের কথা খুব মনে পরছে। বাসায় থাকলে বাবা আর মা সানার পিছে ঘুরে ঘুরে তাকে খাবার খাইয়ে দিতো। সানার এখন ইচ্ছে করছে তার বাবা মায়ের কাছে ফিরে যেতে। সে ঠিক করছে বদ লোকের সাথে আর কথা বলবে না। কথায় কথায় সানাকে সে কথা শুনায়। সানাকে এর আগে এতো কথা কেউই শুনায় নাই। মিশুক প্রকৃতি আর তার চাঞ্চল্যতার জন্য সবাই তাকে খুব ভালোবাসে। বাসার সবার কথা মনে করতে করতে সানা ঘুমিয়ে পরলো৷ সানার ঘুমানোর পর সাফোয়ানের খেয়াল হলো সে আবারো বাজে বিহেব করে ফেলছে মেয়েটার সাথে৷ কিছু করার নাই আশেপাশে খাবার কিনা যাবেনা৷
সকালে রওনা দিয়েছিলো সানারা আর এখন সকাল পেরিয়ে বিকেল হয়েছে৷ সানা এখোনো ঘুমিয়ে আছে। সাফোয়ানের বুকের সাথে লেপ্টে নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে সানা। সাফোয়ান কয়েকবার সানাকে গাড়ির সিটের সাথে হেলান দিয়ে শোয়ালেও ঘুরে ফিরে তার উপরেক আসছে। ফোনের গ্যালারিতে সাফোয়ান মিথিলার হাসি মুখের ছবি দেখে যাচ্ছে। মিথিলার কথা মনে পরতেই তার বুকে চিনচিন ব্যাথা অনুভব হতে লাগলো। সাফোয়ান তো মিথিলাকে কথা দিয়েছিলো মিথিলা বাদে আর কাউকে সে নিজের মনে যায়গা দিবেনা। সেই মিথিলা কিভাবে সাফোয়ান কে ভুলে অন্যকাউকে হাসি মুখে বিয়ে করে নিলো। মিথিলা কিভাবে তাদের এতোদিনের ভালোবাসা ভুলে গেলো।
সাফোয়ানের চোখ বেয়ে পানি গরিয়ে সানার কপালে পরছে৷ ঠান্ডা পানির ফোটা সানার কপালে পরতেই সানার ঘুম ভেঙ্গে গেলো। চোখ মেলে নিজেকে সাফোয়ানের বুকে দেখে অবাক হয়ে গেলো। চোখ তুলে সাফোয়ানের দিকে তাকাতেই দেখতে পেলো সাফোয়ান কাদছে। সানার বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে এই লোকটা কাদতে জানে?
– আপনি কোনো কারনে আপসেট, আমি কি আপনাকে কষ্ট দিয়েছি৷ আপনি কাদছেন কেনো?
সানার আওয়াজে দ্রুত ফোন লক করে নিজের চোখের পানি মুছে ফেললো।
– তুমি চোখে একটু বেশি দেখো, আমার চোখে ময়লা পরছে তাই হয়তো।
– কই দেখিতো কোথায় ময়লা।
সানা সাফোয়ানের দিকে এগিয়ে দুহাত দিয়ে সাফোয়ানের চোয়াল আগলে ধরলো। গভির মমনোযোগ দিয়ে সাফোয়ানের চোখে ময়লা খুজতে লাগলো সানা।
..চলবে..?