ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে কচুক্ষেত মোড়ের সিগনালে বেবীট্যাক্সিতে বসে আছি। যাবো শহীদ মইনুল রোডে, বড়চাচার বাসায়।
তখন ১৯৯৯ সাল হবে। পাশে একটা প্রাইভেট কার এসে দাঁড়ালো।
দেখলাম গাড়ির স্টিয়ারিং হাতে ধরে বসে আছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ব্যাটসম্যান আমিনুল ইসলাম বুলবুল। পাশে উনার স্ত্রী বসা।
গাড়ির গ্লাস নামানো ছিল। এখনকার মত এত গরম ছিল না তখন। সবসময় এসি চালানো লাগতো না।
আমি একটু দেখেই উনাকে চিনতে পেরেছি।
আমার পাশে আব্বা বসে ছিলেন। আব্বাকে বললাম, আব্বা দেখো বুলবুল।
তারপর দুইজনে তাকিয়ে থাকলাম গাড়ির ভেতরে।
এর কিছুদিন আগেই বাংলাদেশ ইংল্যান্ড থেকে প্রথমবারের মতন ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলে আসছে। পাকিস্তানকে হারিয়ে চমকেও দিয়েছে সবাইকে।
বুলবুল ভাই ছিলেন বাংলাদেশের অধিনায়ক, ১৯৯৯ সালের সেই বিশ্বকাপে।
আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে, বেবীট্যাক্সিগুলো এখনকার সিএনজির চেয়ে বেশ উঁচু ছিল। বসতেও আরাম ছিল না।
কারের সিটে বসলে উপরে তাকিয়ে দেখতে হত ট্যাক্সির ভেতরে দেখার জন্য।
বুলবুল ভাইয়ের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য আমি জোরে ‘স্লামালেকুম’ বলে উঠলাম।
উনি তাকালেন। মৃদু হেসে হাত নেড়ে সালামের প্রত্যুত্তর দিলেন।
আমার দেখাদেখি আমার আব্বাও তাকে সালাম দিলেন। বুলবুল ভাই সেটারও জবাব দিলেন।
কোনও তারকাসুলভ এটিটিউড নাই, অহেতুক অহংবোধ নাই। আমাদের মনটা ভালো হয়ে গেল।
২০০০ সালে বাংলাদেশ প্রথম টেস্ট খেলে। আমি সেই ম্যাচ মাঠে বসে দেখেছিলাম বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে।
আমিনুল ইসলাম বুলবুল প্রথম ইনিংসে ১৪৫ রান করে ইতিহাসের অংশ হয়ে যান।
বুলবুল ভাই এখন আইসিসির ডেভেলপমেন্ট অফিসার হিসেবে কাজ করছেন চায়না, হংকং, আরব আমিরাত, সিংগাপুর, থাইল্যান্ড ও মায়ানমারে।
ক্রিকেট ভিক্টোরিয়া থেকে তার লেভেল-১, লেভেল-২, লেভেল-৩ কোচিং করা আছে। মেলবোর্ন ও সিডনির বেশ কিছু ক্লাবে কোচিংও করিয়েছেন।
এই মুহুর্তে বাংলাদেশিদের মধ্যে তিনিই সবচেয়ে কোয়ালিফাইড কোচ।
এখনো কোথাও যখন আমিনুল ইসলাম বুলবুলকে নিয়ে আলোচনা দেখি, আমার মানসপটে উনার সেই ছবিটা চলে আসে। সাদা শার্ট পড়া ছোটখাটো গড়নের শান্তশিষ্ট একটা লোক গাড়ি চালাচ্ছেন। মুখে স্মিত হাসি।
উনাদের মত মানুষের খুব প্রয়োজন বাংলাদেশের।