আমার তুমি সিজন ২ পর্ব ৪২
তানিশা সুলতানা
“আমার মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দাও।
সায়ান চোখ বন্ধ করে বলে। তুলতুল ঠাসস করে বই বন্ধ করে। সায়ান শুকনো ঢোক গিলে।
” রেগে আছো জানি। সেই রাগ আবার আমার চুলের ওপর ভো*ঙো না।
রিনরিনিয়ে বলে সায়ান।
“বদের হাড্ডি।
মনে মনে বলে তুলতুল সায়ানের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে। সায়ান ঠাস করে তুলতুলের কোলে মাথা রাখে। তুলতুল চমকে ওঠে। পরে চোখ বন্ধ করে চুল টানতে থাকে।
আজকের দিনটা সুমুর জন্য এতোটা ভালো হবে কখনোই জানা ছিলো না সুমুর। এভাবে কেউ কাউকে সারপ্রাইজ দিতে পারে এটাও জানা ছিলো। এভাবে কি ভীতুটা প্রপোজ করে? না কি লাজুকরা? জানা নেই সুমুর।
তবে ভীষণ হাসি পাচ্ছে। হাতে থাকা লাভ লেটার খাটের ওপর রেখে হেসে ফেলে সুমু।
সকাল সকাল শাশুড়ীর সাথে রান্না শেষ করে রুমে এসেছিলো তন্ময়কে ডাকতে। তখনই দেখে খাটের ওপর একটা পৃষ্ঠা রাখা। আর তাতে বড়বড় করে লেখা “তোমাকে কিছু বলতে চাই”
সুমু অধীক আগ্রহে পৃষ্ঠাটা হাতে নেয়। তারপর উল্টে দেখে পেছনেও লেখা আছে “তোষক উঁচু করো” হেসে ফেলে সুমু। তোষক উঁচু করে। তাতে আরেকটা কাগজে বড়বড় করে লদভ ইউ লেখা। এক গা হেসে পৃষ্ঠাটা হাতে নেয়। এই পৃষ্ঠার উল্টো পিঠে লেখা ছিলো “Do you love me?”
মানে এরকম প্রশ্ন কেউ করতে পারে? যেখানে হাতে ছু*ড়ি ঠেকিয়ে বিয়ে করেছে। ভালোবাসে বলেই তো বিয়ে করলো। এটা আবার বলতে হবে?
তন্ময় রুমে নেই। বেচারা প্রপোজ করার জন্যই বোধহয় রুম থেকে গায়েব হয়েছে। এই লোকটা কি ভীতু? সামনা সামনি বললে তো সুমু খুশি হতো। ভালো লাগতো। তা না লুকিয়ে চুকিয়ে বলতে হলো?
আজব লোক একটা।
ভাবতে ভাবতেই নজর পড়ে বালিশের দিকে। বালিশের নিচে সাদা কিছু উঁচুলাফ দিচ্ছে। ভ্রু কুচকে হাতের পেপার নামিয়ে বালিশ উঁচু করে।
বালিশের নিচেও একটা কাগজ রয়েছে। তবে এই কাগজটা ভাজ করা। সুমু কাগজটা হাতে নিয়ে ভাজ খুলে। তাতে লেখা ছিলো “আজকে রাতটাকে তুমি কি আমাকে দিয়ে দেবো”
সুমু এবার শব্দ করে হেসে ফেলে। বিছানায় লাভ লেটার নামিয়ে পেটে হাত দিয়ে হাসতে থাকে।
এই কথাটা শোনার জন্য কতোদিন ধরে অপেক্ষা করছে। আর আজকে সে পারমিশন চাইছে।
সুমু মনে মনে বুদ্ধি এঁটে ফেলে। এতোদিন অনেক জ্বালিয়েছে এবার সুমুর পালা। এমন জ্বালানো জ্বালাবে যে পালিয়েও কুল পাবে না।
হিমু আর তনুর সম্পর্কটা এগোচ্ছে না। বিয়ে ঠিক হলো সবার আগে ওদের। আর বিয়ে করে নিলো ছোট ভাইবোনেরা। এটা কি মানা যায়? এই তো কেউ আর ওদের বিয়ের ব্যাপারটা তুলেও না। মনে হচ্ছে ওদেরও পালিয়েই করতে হবে।
রোজ রোজ তনু প্যারা দিয়ে যায় কবে বিয়ে করবে? কিন্তু হিমু কিছুই বলতে পারে না। আজকে অবশ্য হামিদা বেগমের কানে একটুখানি তুলেছে বিয়ের কথা। উনি ভালো মন্দ কিছু বলে নি। বলেনি মানেই লক্ষ্মণ ভালো। কিন্তু হিমুর ভয় হচ্ছে অন্য জায়গায়। যখনই হিমুর বিয়ের প্রসঙ্গ ওঠে তখনই ছোট ভাইবোনেরা বিয়ে করে নেয়। এবার বাকি আছে হাসিব।
“বিয়ে করবো না আমরা?
তনুর কথায় ভাবনার জগৎ থেকে বের হয় হিমু। ফোনটা শক্ত করে ধরে আড়মোড়া ভাঙে।
” চাইছিলাম তো করতে।
“চাইছিলাম? মানে এখন চান না? তাই তো বলি বিয়ের কথা বলেন না কেনো। এটাই তাহলে কারণ? নতুন কাউকে মনে ধরেছে বোধহয়? আপনার মনে আমি আগুন জ্বা*লিয়ে দেবো আমি। চেনেন না তো আমায়।
তনু রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলে।
” আরে রিলাক্স রিলাক্স। এরকম কিছু না
“এরকম কিছুই
আমাকে শেখাতে আসবেন না একদম। ছোট কালে খাইছি আমি সুজি তার জন্য সব কিছুই এখন বুঝি।
রাখ তুই তোর নতুন নিয়ে। আমি গেলাম।
বলেই ফোন কেটে দেয় তনু। হিমু নিজের কপাল চাপকে উঠে বসে।
” এই ছিলো আমার কপালে।
তুলতুল রেডি হচ্ছে কলেজে যাওয়ার জন্য। আর সায়ান বিছানায় আধশোয়া হয়ে তুলতুলের দিকে তাকিয়ে আছে। পরিস্থিতি মেয়েটা বড় করে দিয়েছে। এখন বেশি বকবক করে না। কিন্তু হঠাৎ করে সায়ান তুলতুলের বকবকানি খুব মিস করছে। ইচ্ছে করছে তোতা পাখির কথা শুনতে। কিন্তু পাখি তো মুখে কুলুপ এঁটেছে। কথা কি আর বলবে?
“তুলা তুমি তো দেখি মোটা হয়ে গেছো। কম কম খাবা।
সায়ান তুলতুলকে খেপানোর জন্য বলে৷
তুলতুল হিজাবের পিন আঁটকে ভ্রু কুচকে সায়ানের দিকে তাকায়।
” বাহহহ এক ধমকেই তুই থেকে তুমি? নট ব্যাট
তুলতুল বাঁকা হেসে বলে। সায়ান ভরকে যায়। সত্যিই তো তাই। রাতেই সেই ধমকেই মুখ থেকে আপনাআপনি তুমি বের হয়ে আসছে। এমনটা কেনো? সায়ান কি চার আঙুলের তুলাকে ভয় পাচ্ছে? অবশ্য পাওয়ারও কথা। চোখ মুখ কেমন কঠিন হয়ে গেছে।
“ককিসের ধমক? তোকে একটা মা*ইর দিবো আমি। বড় হয়ে গেছিস তাই না? মুখে মুখে তর্ক করিস?
সায়ান ধমক দিয়ে বলে।
” বড় তো হয়েছিই। নাহলে কি বিয়ে হতো? বাচ্চাদের তো আর বিয়ে হয় না।
নিজের কাজে মন দিয়ে বলে তুলতুল৷ সায়ান দাঁত কটমট করে।
“একবার পা টা ভালো হোক। তারপর তোকে দেখবো আমি।
” ও মা দেখার জন্য আবার পা ভালো হতে হবে কেনো? চোখ তো কানা হয় নাই।
সায়ানের দিকে ঘুরে বলে তুলতুল।
“তুই যাবি আমার সামনে থেকে?
সায়ান রেগো বলে।
” ও মা যাবো কেনো? বউ না হই আপনার? আহহা হাসপাতালে দেখতে যায় নি বলে কতো অভিযোগ। এখন দেখতে এসেছি তাও তাড়িয়ে দিচ্ছেন? আমি বরং বাড়ির সবাইকে ডেকে আনি। তাদের সামনে বলুন যা বলার আছে। আমি বললে আবার বিশ্বাস করবে না।
তুলতুল মুচকি হেসে বলে। সায়ান চোখ বন্ধ করে ফোঁস করে শ্বাস টানে।
“ইডিয়েট
” আই নো জামাই
ভেংচি কেটে চলে যায় তুলতুল। সায়ান যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।
সুমু আজকে শাড়ি পড়েছে। তনুকে দিয়ে কিছু ফুলও এনেছে। সকাল সকাল রান্না বান্না শেষ করে সাজতে বসেছে।
পাতলা সিল্কের লাল শাড়ি, হাতা কাটা ব্লাউজ। চুল গুলো খোপা করে তাতে বেলি ফুলের মালা দিয়েছে। টকটকে লাল লিপস্টিক। চোখে মোটা করে কাজল। ভারি মেকাপ। সব মিলিয়ে গর্জিয়াস লাগছে সুমুকে। এভাবে কতো দিন পরে সাজো জানা নেই সুমুর।
সাজুগুজু শেষ করে ফুল দিয়ে বিছানা সাজাতে লেগে গেছে। প্রথম বাসরে খাট ভেঙে ছিলো অথচ কিছুই হয় নি।
খাট সাজানো শেষে রুমে রুমে বেলি ফুল ছড়িয়ে দেয়। লাইট অফ করে মোমবাতি জ্বালিয়ে দেয়।
আহহা কি দারুণ রোমান্টিক একটা রুম হয়ে গেছে। এবার অপেক্ষা তন্ময়ের।
এরই মধ্যে তন্ময় চলে আসে। দরজা খুলে একদম হা হয়ে যায়। চোখ মুখ থেকে ক্লান্ত ভাবটা চলে যায়। চোখ দুটো বড়বড় হয়ে যায়। লাল পড়ি হাত উঁচু করে ফ্যানের সাথে ফুল লাগাচ্ছে। কি দারুণ দৃশ্য।
“আজকে তন্ময় তুই শেষ।
চলবে………