আমার তুমি সিজন ২ পর্ব ৪৬
তানিশা সুলতানা
সকাল বেলা তন্ময় আর পাপন বসে চা খাচ্ছে। শুক্রবার আজ। দুজনেরই ছুটি। সুমু চা বানিয়ে দিয়ে গেছে ওদের।
দুই বাপ বেটা জমিয়ে গল্প করছে। নাজমা আর সুমু মিলে রান্না করছে। আছিয়া গেছে তার বোনের বাড়িতে। বিকেলে আসবে সে।
তনু প্রাইভেটে বেরিয়ে গেছে।
এমন সময়,কলিং বেজে ওঠে। খানিকটা অবাক হয় পাপন আর তন্ময়।
“এই সময় আবার কে এলো? বাবা তুমি বসো। আমি দেখছি।
তন্ময় গিয়ে দরজা খুলে। দরজার সামনে বিধস্ত তুলতুলকে দেখে চোখ দুটো বড়বড় হয়ে যায় তন্ময়ের।
” বোনু কি হয়েছে তোর?
তুলতুলের কাঁধে হাত দিয়ে বলে তন্ময়। তুলতুল উওর দেয় না। ঠোঁট উল্টে কেঁদে ফেলে। এতোখন জমিয়ে রাখা কান্না গুলো উপচে পড়েছে যেনো।
কাঁদতে কাঁদতে তন্ময়কে জড়িয়ে ধরে।
পাপন এগিয়ে আসে। মেয়েকে কাঁদতে দেখে ভরকে যায় উনি।
“মামনি কি হয়েছে তোমার? এভাবে কাঁদছো কেনো?
তন্ময় চোখের ইশারায় বাবাকে থামতে বলে। তারপর বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।
“কাঁদে না বোনু৷ শান্ত হ।
তুলতুল নাক টেনে কান্না আটকানোর চেষ্টা করে। তন্ময় তুলতুলকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে ভেতরে ঢুকে সোফায় বসায়। নিজেও পাশে বসে।
তুলতুলের আওয়াজ শুনে সুমু আর নাজমাও রান্না ঘরে থেকে বেরিয়ে আসে।
” তুলতুল কি হয়েছে তোমার? এভাবে কাঁদছো কেনো?
সুমু জিজ্ঞেস করে
“নিশ্চয় তোমার ভাইয়ের জন্য। এবার তো একটু ফিল করো। কি ভূলটা করেছিলে তুমি। যার জন্য আমার বোনটাকে এভাবে কাঁদতে কাঁদতে ফিরে আসতে হলো। এর দায় কি তোমার নয়?
তন্ময় শক্ত গলায় বলে। সুমু চুপসে যায়। মাথা নিচু করে খানিকটা পিছিয়ে দাঁড়ায়। দুই চোখে পানি টলমল করছে। নিজের কাজের জন্য অনুসূচনা হচ্ছে। ভূলটা হারে হারে বুঝতে পারছে।
” আহহহ তন্ময় থামো তো। ভাবি এক গ্লাস পানি এনে দিন তুলতুলকে।
নাজমা পানি আনতে চলে যায়।
পাপন তুলতুলের আরেক পাশে বসে। মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় তুলতুলের।
“কি হয়েছে সোনা? না বললে বুঝবো কিভাবে?
” বাবা এই সম্পর্কটা আমি আর এগোতে চাই না। আৃি ডিভোর্স চাই। এভাবে বাঁচা যায় না। সুমুর ভাই একটা সাইকো। তার কাছে তার ইচ্ছের মূল্যটাই অনেক। সে নিজের স্বার্থ ছাড়া আর কিছু বোঝে না। আমি একটা স্বার্থপর মানুষের সাথে থাকতে পারবো না।
শক্ত গলায় বলে দেয় তুলতুল। সুমু বেশ অবাক হয়। সায়ান রাগী বদমেজাজি এসব জানে। কিন্তু স্বার্থপর এটা মানতে পারছে না।
“মা চাইলেই তো আর সম্পর্ক ভাঙা যায় না।
” কেনো যাবে না? চাইলেই জোর করে বিয়ে করা গেলে সম্পর্কও ভাঙা যাবে।
বলেই তুলতুল হনহনিয়ে নিজের রুমে চলে যায়। নাজমা পানি এনে আর তুলতুলকে পায় না। সুমুও কাঁদতে কাঁদতে রুমে চলে যায়। তুলতুলের কষ্ট ওরও সয্য হচ্ছে না।
সায়ান পুরো রুমে তান্ডব চালিয়েছে। সব কিছু ভাংচুর করে তবেই সে শান্ত হয়ে বসে। রাগটা কার ওপর হচ্ছে ঠিক বুঝতে পারছে না। তুলতুলের ওপর না নিজের ওপর?
কেনো রাগ কন্ট্রোল করতে পারে না। কেনো একটা কথা ভালো করে বলতে পারে না?
আব্দুল্লাহ সায়ানের রুমে ঢোকে। সায়ান আপাতত দুই হাত মাথায় ঠেকিয়ে বসে আছে। আব্দুল্লাহ সাবধানে পা ফেলে সায়ানের পাশে এসে বসে।
“দাদু ভাই এভাবে ভেঙে পড়ছো কেনো? ওই মেয়েকে আমার এমনিতেই পছন্দ না। তুমি বিয়ে করেছো বলে মেনে নিয়েছিলাম। এখন যখন চলে গেছে ভালোই হয়েছে। তোমাকে আবার বিয়ে করাবো আমরা। অনেক বড় ঘরে থেকে মেয়ে আনবো।
শান্ত হও তুমি।
সায়ানের কাঁধে হাত রেখে বলে আব্দুল্লাহ। আব্দুল্লাহর কথাগুলো আগুনে ঘি ঢালার মতো হয়ে যায়। একটুখানি শান্ত হওয়া সায়ান আবার ফুঁসে।
অবশিষ্ট ছিলো বালিশ গুলো। সেগুলো ফেলে দেয় সায়ান।
” তোমরা কেনে আমার পিছু নিয়েছো? কেনে জ্বালিয়ে যাচ্ছো? আমাকে থাকতে দিতে চাইছো না বাড়িতে? ওকে ফাইন চলে যাচ্ছি আমি। ভালো থাকো তোমরা। আর ফারদার আমার আর তুলার মাঝখানে আসলে কে*টে ফেলে দিবো সব কয়টাকে। ইটস মাই লাস্ট ওয়ার্নিং।
খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে নিজের রুম থেকে বেরিয়ে যায় সায়ান। পেছন পেছন ছুটে আব্দুল্লাহ আর ডাকে সালমাকে। সে রান্না ঘরে ছিলো। দৌড়ে আসে।
সায়ান ততক্ষণে মেইন দরজা পেরিয়ে গেছে।
“আব্বা যাস না। আব্বা কোথায় যাচ্ছিস? আব্বা দাঁড়া।
সায়ান দাঁড়ায় না। সোনা আজকে এই বাড়িতে বেড়াতে আসছিলো। সায়ানের সাথে ধাক্কা লেগে যায় সোনার। সোনা সায়ানকে ধরে।
” সায়ান হাঁটতে পারছো? আলহামদুলিল্লাহ
তো কোথায় যাচ্ছো?
সায়ান উওর দেয় না। হাত মুষ্টিবদ্ধ করে দাঁড়িয়ে থাকে। ততক্ষণে সালমা সালমান সুলাইমান মনি চলে এসেছে।
“আব্বা কোথাও যাস না তুই। সবে একটু সুস্থ হয়েছিস।
সায়ানকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে বলে সালমা।
” পাগলামির একটা সীমা থাকে সায়ান। তুমি তা পেরিয়ে যাচ্ছো।
সালমান চোখ পাকিয়ে বলে।
তখন হাসিব আসে।
“হাসিব আমাকে নিয়ে চল।
সায়ান শক্ত গলায় বলে। হাসিব সায়ানের হাত ধরে। বাড়ির সবাইকে চোখের ইশারায় শান্ত হতে বলে।
মুহুর্তেই গাড়ি করে চলে যায়।
রাত বারোটা বাজে। তুলতুল পড়ার টেবিলে মাথা ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে। তনু তুলতুলের পাশে আরেকটা চেয়ার টেনে বসে আছে।
” দোষ কারো থেকে কারো কম না। তোর বোঝা উচিৎ ছিলো ভাইয়া তোর হাতের রক্ত দেখে রেগে গেছিলো। তুই সেভলোন নিয়ে তার কাছে যেতিস। সামনে বসে একটু বকে দিতিস। ঝামেলা মিটে যেতো।
একটা সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে একটু তো ধৈর্যশীল হাতে হবে। তোদের একজনের মধ্যেও ধৈর্য নেই।
তুলতুল চুপচাপ তনুর কথা গুলো শুনে।
তনু তুলতুলের কাঁধে হাত রাখে।
“বিনা দোষে ভাইয়া তোর গায়ে হাত তুলে না তুলতুল।
” হ্যাঁ সব দোষ আমার। তাই তো চলে এসেছি। এবার থাকুক নিজের মতো। দোষী মানুষের সাথে থাকতে হবে না।
তুলতুল ফুঁসে ওঠে বলে।
“রেগে যাচ্ছিস কেনো? আমার কথা বোঝার চেষ্টা কর।
” তুই তো খুব ধৈর্যশীল। তাহলে তোর আর ভাইয়ার এতো ঝগড়া কেনো হয়?
তনু চুপসে যায়। সত্যিই তো।
“উনি তো চরম লেভেলের খারাপ।
” আমার উনি দুধে ধোঁয়া তুলসী পাতা? যে যার সাথে থাকে সে তার সম্পর্কে জানতে পারে। তোর কাছে সায়ান ভালো আমার কাছে হিমু ভাইয়ার মতো ভালো কোনো মানুষই হয় না।
“কথাটা মন্দ বলিস নি। আচ্ছা বাদ দে। দুই জনই খারাপের গোডাউন। এদের সাথে আমরা নেই। থাকুক ওরা ওদের মতো। আমরাও আমাদের মতো থাকবো।
তুলতুল আহ্লাদী হয়ে জড়িয়ে ধরে তনুকে।
এমন সময়,তুলতুলের ফোন বেজে ওঠে। স্কিনে হাসিব নামটা দেখে তুলতুল ভয় পেয়ে যায়। মানুষটার কিছু হলো না তো? ঠিক আছে তো?
চট করে তনুর গলা ছেড়ে ফোন রিসিভ করে।
” হ্যালো ভাইয়া। এতো রাতে কল করলেন? সব ঠিকঠাক আছে তো?
ওপাশ থেকে কোনো আওয়াজ আসে না। শুধু নিঃশ্বাসের শব্দ শোনা যাচ্ছে। তনু বুঝে যায় সায়ান কল করেছে। তাই নিঃশব্দে চলে যায়।
“কথা কেনো বলছেন না ভাইয়া? উনি ঠিক আছে তো?
” নাহহহ তোর উনি ঠিক নেই।
গম্ভীর গলায় বলে সায়ান। তুলতুল চোখ মুখ শক্ত করে ফেলে।
“কল কাটবি না একদম। কল কাটলে এখুনি তোদের বাড়িতে চলে আসবো। বলে দিলাম
তুলতুল কল কাটতে যাচ্ছিলো তখনই বলে সায়ান।
” তাহলে কি করবো? আপনার কথা শুনবো? এতটুকুও ইন্টারেস্টি নাই আমার। আপনি একটা খারাপ মানুষ। ভীষণ বাজে একটা মানুষ আপনি। আপনার সাথে কথা বলার এতটুকুও ইচ্ছে নেই।
তুলতুল ঝাঁঝালো গলায় বলে।
“কতোদিন হয়ে গেলো তোকে চুমু খায় না। আমাকে ছুঁতে দিস না কেনো? কবে ছুঁবো তোকে?
নেশালো গলায় বলে সায়ান। থেমে যায় তুলতুল।
” আই নিড ইউ তুলতুল। ভীষণ ভাবে প্রয়োজন তোকে। জানিস ইদানীং আমার মাথা ঠিক থাকে না তোকে দেখলে। মন চায়
তুলতুল কল কেটে দেয়। চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে শ্বাস নিতে থাকে। লোকটার মাথা ঠিক নেই।
আবার কল করে সায়ান।
চলবে……….