- প্রাক্তন গল্পের লিংক
- এক্স গার্লফ্রেন্ড নিয়ে স্ট্যাটাস
- এক্স কে নিয়ে ফানি পোস্ট
- প্রেম নিয়ে ফানি পোস্ট
- প্রাক্তন প্রেমিকার গল্প
1.প্রাক্তন গল্পের লিংক
দীর্ঘ চার বছর পর আমার প্রাক্তনকে পাশের সিটে দেখে ভূত দেখার মত চমকে উঠলাম। হাতে থাকা ক্যাপ খোলা পানির বোতলটি ছিটকে পড়লো পায়ের নিচে। বোতলের প্রায় অর্ধেক পানি ছিটে ভিজে গেলো প্রাক্তনের পায়ের নিচের অংশ। সেই চির পরিচিত রক্তলাল চাহনি নিক্ষেপ করলো সে আমার দিকে। গম্ভীর স্বরে বললো
কি আশ্চর্য! নিজের বোতল সামলাতে পারেন না? চলতি বাসে বোতলের ক্যাপ খুলে রেখেছিলেন কেনো?
বোতলের ক্যাপ মানুষ কেনো খোলে নিশ্চই পানি খাওয়ার জন্য তাইনা। আমিও সেটাই করেছি।
সে যেন আমার কথা শুনে আমার থেকে বেশিই অবাক হলো। গোল গোল চোখে তাকালো আমার দিকে। আমি যথেষ্ট স্বাভাবিক ভাবে নিচ থেকে বোতল তুলে মুখের নেকাব সরিয়ে বাকি পানি টুকু খেতে লাগলাম।
নেহা তুমি!!
আমি মৃদু হেসে বললাম। হ্যা আমি,চিনতে পেরেছো তাহলে?
না চেনার তো কিছু নেই চার বছরে খুব বেশি পরিবর্তন হওনি।
তাচ্ছিল্য হেসে বললাম,বছরের হিসাব রেখেছো তবে। তো তোমার বিবাহিত জীবন কেমন কাটছে নিশ্চই অনেক ভালো? তোমার স্ত্রী আমার মত গরিব পরিবারের মেয়ে নয় নিশ্চই বলো?
রোহান অন্যদিকে ফিরে ছোট শ্বাস ফেলে বললো,আমি সেদিন বিয়ে করি নি নেহা। যার সাথে বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো সে বিয়ের আসর থেকে পালিয়েছিলো।
কেনো জানি না বুকে শীতল হাওয়া বয়ে গেলো। এমনটা কেনো হলো?পুরোনো অনুভূতি জেগে উঠতে চাইছে নাকি! নাহ এটা কখনোই সম্ভব নয়। নিজের মনকে দমিয়ে রাখতেই হবে। তাকে বোঝাতে হবে কারো জন্য জীবন থেমে থাকে না।
তোমার পড়াশুনা তো শেষ হয়েছে এতদিনে। বিয়ে শাদী করেছো?
সেসব জেনে কি করবে তুমি। আমি নিজের বর্তমান জীবনে খুব ভালো আছি।
বাস গন্তব্যে পৌছোতের রোহানকে রেখে আমি নেমে পড়লাম। চোখ জ্বালা করছে ভীষণ। ধেত কেনো পারছি না নিজেকে সামলাতে।
★
তীব্র গরমে জনজীবন অতিষ্ট প্রায়। এই গরমে মন চায় সারাটিক্ষণ শাওয়ার ছেড়ে বসে থাকি। কিন্তু বসে থাকার উপায় যে নেই। ৬ মাস হলো একটা কোচিং এ পড়াচ্ছি। শুক্রবার বাদে রোজই যেতে হয়। এ কাজটা না করলে যে টাকা আসবে না। আর টাকা না এলে সংসার চালানো মায়ের ঔষধ এসবও চলবে না। বাবা মারা গিয়েছে দু বছর হলো। বড় ভাইটা থাকতেও নেই সে বউকে নিয়ে শশুরবাড়ীতে থাকে। মা বোন বাচল কি মরলো সেটা দেখার সময় তার নেই।
বিকেলে কোচিং থেকে বের হতে রোহানকে দেখে থমকে গেলাম। সে এখানে কেনো কে জানে। আমি রিকসা ডাকতে নিলে রোহান পাশে এসে বললো
তোমার সাথে কিছু কথা আছে। চলো কোথাও বসি।
তোমার মত গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরেফিরে বেড়ানোর সময় আমার নেই। বিশেষ কিছু বলার থাকলে এখানেই বলো। সময় ৫ মিনিট।
রোহান মৃদু হেসে বললো
তুমি সেই আগের মতই জেদি আছো। যা বলতে এসেছি সরাসরি বলি, নেহা আমি তোমাকে আবারো আমার লাইফে আনতে চাই। বিয়ে করতে চাই তোমাকে।
বিষ্ময়ে চোখ দুটো বড় হয়ে গেলো আমার। যে ছেলে চার বছর আগে বিয়ে না করার জন্য বাহানা খুজতো সে আজ বলছে বিয়ে করতে চায়! যে তিন বছর প্রেম করে বলেছিলো তার ফ্যামিলির সাথে আমার ফ্যামিলি যায় না। বাবা মায়ের পছন্দ করা মেয়েকে বিয়ে করবে, সে আজ এই কথা বলছে! হাহ। কি ভেবেছে সে বিয়ের প্রপোজাল দেবে আর আমি হেসে খেলে রাজি হয়ে যাব। উহু কখনোই না। একটা সময় ছিলো যখন রোহান বলতে পাগল ছিলাম। তার সামান্য অবহেলা সমানে অশ্রু ঝড়াতো চোখ থেকে। কিন্তু সে ফিরে আসেনি। শান্তনা দিয়ে বুকে টেনে নেয় নি। আজ যখন আবেগ কাটিয়ে নিজেকে গুছিয়ে নিয়েছি তখন এসেছে বিয়ে করতে।
কি হলো নেহা চুপ করে আছো কেনো কিছু বলো?
শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম
কি কারনে বিয়ে করতে চাইছো আমায়?
ভালোবাসি তাই।
চার বছর আগে এই ভালোবাসা কোথায় ছিলো?
আমি ভুল করেছিলাম নেহা। প্লিজ পেছনের কথা আর না তুলি।
হাসি পেলো আমার। সে নাকি ভুল করেছে। প্রেম ভালোবাসা ছেলেখেলা নাকি। মন চাইলে ভালোবাসবে আবার মন চাইলে ছুড়ে ফেলে দেবে। আমার মনে যে তার জন্য ভালোবাসা নেই তা নয়। তবে সে ভালোবাসা অভিমানে চাপা পড়েছে বহু আগে। অনেক কথাই বলতে মন চাইছে। তবে বললো না। থাকুন না কিছু কথা গোপনে।রোহানের প্রতি আমার কোনো রাগ নেই আছে শুধু পাহাড় সমান অভিমান। যে অভিমানে কখনো ভাঙন ধরবে না। কখনোই না।
নিজেকে স্বাভাবিক করে নরম স্বরে বললাম
দুঃখীত। তোমার প্রপোজাল এক্সেপ্ট করতে পারছি না। তুমি বরং তোমার এবং তোমার ফ্যামিলি স্ট্যাটাসের সাথে মানাবে এমন কাউকে খুজে নাও। ভালো থেকো।
রোহানকে আর কিছু বলতে না দিয়ে দ্রুত রিকসা ডেকে উঠে পড়লাম। আর একটি বারও পিছু ফিরে তাকালাম না। ভালোবাসলে যে তাকে পেতে হবে এমন তো কথা নেই। আমার ভালোবাসা নাহয় অসমাপ্তই থাক।
………..সমাপ্ত………….
#অনুগল্প
#অভিমান
#আদ্রিজা_তিথি
২. এক্স গার্লফ্রেন্ড নিয়ে স্ট্যাটাস
ধার
প্রায় বিশ বছর পর এক্স গার্লফ্রেন্ডের পাঠানো ম্যাসেজটায় রীতিমতো আঁতকে উঠলাম।
“আমার কাছ থেকে নেওয়া চারশ টাকা ধারের কথা কি মনে আছে রাশেদ? ওটা এখন সুদে আসলে ফেরত চাই?”
লিজাকে খুব ভালো করে চিনি। মেয়েটা যে হেয়ালি করে ম্যাসেজটা পাঠায়নি, এটা বেশ জানা। তাইতো “ডাল মে কুচ কালা হ্যায়!” ভাবনায় ম্যাসেজটার আর রিপ্লাই দেই নি। তবে সারাদিনই কথাগুলো মাথায় ঘুরতে থাকলো। আর সেই সাথে দু দশক আগের লিজাকে নিয়ে শত স্মৃতি, অনেকদিন পর চোখের সামনে ভেসে আসতে লাগলো, নিজের অজান্তেই। সবমিলিয়ে মিশ্র একটা অনুভূতি নিয়ে দিন কাটলো।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি বছর গ্রাম থেকে আসা একদল “ক্ষ্যাত” ভর্তি হয়ে থাকে। প্রায় সিকি শতক আগে আমিও ঐ দলের একজন হিসেবে পাবলিক এডমিনিস্ট্রেশন ডিপার্টমেন্টে ভর্তি হলাম। আত্রাই থেকে আসা হাতে গোনা দু একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের মধ্যে এই আমি, ঢাকাকে মনে হল ভীষণ ব্যস্ততার এক শহর। আমার বাবা নিতান্তই সাধারণ একজন কৃষক। কিছু ধানি জমি আছে, ও দিয়েই আমাদের চার ভাইবোনের পড়াশোনার খরচ কষ্টে সৃষ্টে চালিয়ে যাচ্ছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষে এস এম হলের গন রুমের অস্বস্তিকর অভিজ্ঞতার মধ্যেও সিলেটের বালাগঞ্জ থেকে আসা লিজা আমার জীবনে এক পশলা সুখ হয়ে এলো। মেয়েটা প্রথম থেকেই আমার সাথে যেচে মিশতে শুরু করে, ওর উদ্যোগেই বন্ধুত্বপূর্ণ একটা সম্পর্ক তৈরীর চেষ্টা। কিন্তু ঐ যে আমার মধ্যে একটা গ্রাম্যতা আছে! ঐ টার জন্যই প্রথম দিকে একটা জড়তা কাজ করতো। তাছাড়া লিজার বলা সিলেটি কথাও আমার বুঝতে সমস্যা হয়। আর অবশ্যই নওগাঁর ভাষাও লিজার কাছে সহজ বোধ্য নয়। কিন্তু তারপরও ভালোবাসার ভাষা মনে হয় একটাই! তাইতো সব বাধা উপড়ে একটা সময় পর আস্তে আস্তে দুজনেই দুজনের কাছাকাছি চলে এলাম।
ফার্স্ট ইয়ারের শেষের দিকেই লিজার সাথে আমার প্রেম হয়ে গেল। আমার জীবন তখন থেকে যেন শুধুই লিজাময়। রোকেয়া হল, কলা ভবন আর বিসিএসের প্রস্তুতির জন্য পাবলিক লাইব্রেরী। আর হলের এক বড় ভাইয়ের বদান্যতায় পাওয়া আজিমপুরের টিউশনি। অনার্স পরীক্ষা দেওয়ার পর পযর্ন্ত সব কিছু মিলে এভাবে বেশ ভালোই চললো।
মাস্টার্সে ভর্তি হওয়ার পরপরই কোন এক দিন লিজা এসে জানালো, এক “লন্ডনি” পাত্রের সাথে তার বিয়ের কথা চলছে। ছেলে বার এট ল করা! লন্ডনী এ পাত্রের অনেক ভালো অবস্হা ইত্যাদি ইত্যাদি। আত্রাইয়ের এক গরীব কৃষকের ছেলে এই আমি তখনো ধার দেনায় কষ্টে সৃষ্টের জীবনে আছি। তাইতো লন্ডন বা ব্যারিস্টারদের গল্পে খুব একটা মনোযোগ দিতে পারি নি। লিজার সব কথা মনোযোগ দিয়ে শুনে, আমার দেওয়া ফিরতি রেসপন্সটায় লিজা যার পর নাই অবাকই হলো।
“চারশ টাকা ধার দিবে লিজা। হাতে একটা টাকাও নেই। বিসিএস এপ্লিকেশনের লাস্ট ডেট আগামীকাল। আর তুমিতো জানো কেউই এখন আর আমাকে টাকা ধার দিতে চায় না!”
প্রায় চার বছরের সম্পর্কে লিজা আমাকে খুব ভালো করে জানে, যেমনটি আমিও ওকে বুঝি। তাইতো আমার সাথে আর কথা না বাড়িয়ে চারশ টাকা হাতে ধরিয়ে মেয়েটা হন হন করে চলে গেল। হ্যাঁ, আমার জীবন থেকে ওর একেবারে ফাইনালিই ঐ চলে যাওয়া।
এরপর সময় দ্রুত চলে যায়। লিজা ওর ব্যারিস্টার জামাইয়ের সাথে লন্ডনের সংসারে থিতু হওয়ার চেষ্টায়। আর ছ্যাকা খাওয়া এই আমি দিন রাত বিসিএসের পড়াশোনায় ব্যস্ত হয়ে গেলাম। ফলশ্রুতিতে আত্রাইয়ের এক গরীব কৃষকের ছেলে সরকারের প্রশাসনে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ পেলো। রাশেদ এখন ম্যাজিস্ট্রেট, এই খবরটা মনে হয় বন্ধুদের মাধ্যমে লিজাও জেনে যায়। তবে আমি নিজে থেকে আর কখনোই লিজার সাথে যোগাযোগ করিনি। শেষ হয়ে যাওয়া সম্পর্ক নিয়ে ঘাটাঘাটি করে কি ই বা লাভ বলুন! তার উপর স্বামী বাচ্চা নিয়ে লিজার ভর সংসার!
এডমিনে জয়েন করার দু বছরের মাথায় এক কলিগের ঘটকালিতে নিপার সাথে আমার বিয়ে। ঢাকার একটা বেসরকারি কলেজে সদ্য শিক্ষকতায় যোগ দেওয়া নিপা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়েরই ইংরেজি বিভাগের ছাত্রী ছিল। তারপর আর আট দশটা সেটেলড ম্যারেজের মতোই আমাদের দুজনের মানিয়ে নেওয়ার জীবন, রোমান্স ভালোবাসাটাও যতোটুকু সম্ভব করে যাওয়া। তবে চাকুরী জীবনের প্রথম এক যুগ আমার মাঠ পর্যায়ে পোস্টিং থাকাতে, নিপার সাথে ঠিক সেভাবে সংসার করা হয়ে উঠেনি। ব্যস্ততার জন্য ঢাকার বাসায় প্রতি সপ্তাহে আসাটাই দুরূহের ছিল।
আমাদের সংসারে এখন দুটো মেয়ে, সত্যই ব্লেসিংস। বড় মেয়েটা ক্লাস টেনে আর ছোটটা ক্লাস সিক্সে। এদের দুজনের দেখভাল আর সেই সঙ্গে সংসারটাকেও কিন্তু নিপা এক হাতেই টেনে নিয়ে যাচ্ছে। আর এ জন্যই তার প্রতি ভয়ানক রকম কৃতজ্ঞতা। যদিও অজানা এক কারণে তা প্রকাশ করি না। আর নিপারও সম্ভবত আমার প্রতি বড় ধরনের কোন কমপ্লেইন নেই।
আমাদের মধ্যে গদগদ প্রেম ভালোবাসা না থাকলেও, সুযোগ পেলে বাচ্চাদের নিয়ে বেরিয়ে আসা, স্বাভাবিক রতিক্রিয়া কিংবা সংসার চালানোয় অবাধ স্বাধীনতাটা নিয়েই নিপা অনেক খুশি। আমি অবশ্য সংসারে কখনোই তেমনভাবে নাক গলাই না। ধরেই নিয়েছি ওটা নিপার ডিপার্টমেন্ট।
তবে মধ্য চল্লিশে এসেই আমার হাই ব্লাড প্রেসার কিংবা ডায়বেটিকসের সমস্যা ধরা পড়ায়, শারীরিক ভাবে একটু বেকায়দায় আছি। তাছাড়া চাকুরীতেও নানান প্রবলেম। এই যেমন পাবনায় পোস্টেড থাকা অবস্থায় স্হানীয় এক প্রভাবশালী রাজনীতিবিদের রোষানলে পড়ে আমার চাকুরী যায় যায় অবস্হা হয়েছিলো। ওদের উষ্কানীতে পত্রিকায় বা মিডিয়াতেও নেগেটিভ রিপোর্টিং হয়। এরপর থেকেই মন্ত্রণালয়ের অপেক্ষাকৃত অগুরত্বপূর্ণ একটা পদে আছি। কিন্তু তারপরও সব মিলিয়ে আমি কিন্তু একেবারে খারাপ নেই।
সংসার জীবনের এই মধ্য গগনে এসে এক্স গার্লফ্রেন্ডের হঠাৎ পাওয়া এই মেসেজটা কিন্তু আমাকে মোটেও আলোড়িত করলো না। বিশ বছর আগে এক পক্ষের সিদ্ধান্তে চুকে যাওয়া সম্পর্কে, চারশ টাকা নেওয়া ধার শোধের দাবিটা আমার কাছে একটা বাহানা বলেই মনে হল। একবার ভাবলাম, স্ত্রী নিপার সাথে বিষয়টি নিয়ে কথা বলবো। তবে পরক্ষণেই চিন্তাটা বাদ দিলাম, অহেতুক স্ত্রীর হাতে একটা অস্ত্র তুলে দেওয়ার মানে খুঁজে পেলাম না। তাইতো সারা দিন ম্যাসেজটার উত্তর না দিলেও, সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরার পথে এক্সকে কাঁপা কাঁপা হাতে রিপ্লাই দিলাম “চারশ টাকা সুদে আসলে এখন কত চাও?”
“চার লক্ষ টাকা!” সাথে সাথেই দেওয়া লিজার এই উত্তরটায় মনে হলো, ফোন হাতে সারাদিন যেন আমার মেসেজটার উত্তরের অপেক্ষায় ছিল।
“হেয়ালি ছাড়ো! বলো কেমন আছো?” আমি টাকার প্রসঙ্গটা এড়িয়ে যেতে চাইলাম।
মুহূর্তেই লিজার উত্তর “আমার চারশ টাকা না পেলে কখনোই তোমার বিসিএস পরীক্ষা দেওয়া হতো না আর নাহলে তুমি আজকের এই অবস্হানেও আসতে পারতে না। তাইতো সেদিনের চারশ আজ চার লক্ষ কেনো চল্লিশ লক্ষ টাকা হওয়া উচিৎ। আর তোমার প্রশ্নের উত্তরে বলছি আমি মোটেও ভালো নেই। এখন ঢাকায় আছি, টাকাটা আমার খুব সত্বর প্রয়োজন। পাঠানোর ব্যবস্হা করো।”
ম্যাসেজ চালাচালির এই পর্যায়ে এসে বুঝলাম, লিজা সত্যই ভালো নেই। এরপর ফিরতি ফোন দিতেই অনেক দিন পর ভালোবাসার প্রিয় মানুষটির সেই কন্ঠ শুনে আমি আপ্লুত। খানিকটা নস্টালজিক হয়ে উঠলেও নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারলাম না। কথা বলার ইচ্ছাটা জাগলো। আমার জীবনের প্রথম প্রেম, প্রথম চুমু আর প্রথম পাওয়া উঞ্চতাকে তো আর এড়ানো যায় না। তবে লিজা আমাকে এক সময় চরম অপমান করেছিল, বিনা কারণে ছ্যাকা দিয়েছে এ কথাটা কিন্তু এক মুহূর্তের জন্যও ভুলি নি।
প্রায় আধ ঘন্টার আলাপচারিতা শেষে মনটা ভীষন খারাপ হলো। লিজার স্বামী মারা গেছে, বছর দুয়েক আগে। ওর আঠারো বছরের ছেলেটা লন্ডনে পুলিশী মামলায় এখন জেলে, মাদক সংক্রান্ত ঝামেলায়। ষোল বছর বয়সী মেয়েটারও না কি এক ক্যারেবিয়ান বয়ফ্রেন্ড। মেয়েটাও উচ্ছন্নে।
লিজা নিজে ভালো কিছু করে না বলেই বাধ্য হয়ে তাদের বড় বাড়িটা বিক্রি করে ইস্ট লন্ডনে একটা ছোট ফ্ল্যাট কিনেছে। ওর ব্যারিস্টার স্বামী অনেকদিন আগে ঢাকার উত্তরায় একটি জমি কিনেছিল, সেই জমিটাও এখন অবৈধ দখলদারদের হাতে। লন্ডনে ভালো ভাবে বেঁচে থাকতে হলে, উত্তরার জমিটা ওর বিক্রি করা দরকার। কিন্তু কিছুতেই দখলদারদের সাথে ও পেরে উঠছে না। উল্টো এবার নাকি জীবন নাশের হুমকিও পেয়েছে। কথাগুলো বলেই লিজার এক টানা কান্না, আমি কিছু না বলেই ভীষণ মন খারাপ করা অনুভূতি নিয়ে ফোনটা রেখে দিলাম।
আজ বাসায় ফিরতেই আমার স্ত্রী নিপাকে নতুনভাবে আবিস্কার করলাম। আমার মেয়ে দুটোও কি লক্ষ্মী! এখনো বাবা মায়ের ন্যাওটা। আমার সারাদিনের ক্লান্তি এক মুহূর্তে শেষ হয়ে যায়, মেয়েদের কাছ থেকে পাওয়া ভালোবাসায়। আর নিপা সংসার চাকুরী ঠেলেও, বাসায় ফিরে আমি যাতে সবকিছু হাতের নাগালে পাই। সবসময়ই সেই ব্যবস্হা করে রাখে। এ নিয়ম চলছে বছরের পর বছর।
অথচ আমি শেষ কবে নিপার খোঁজ নিয়েছি মনে করতে পারি না। ওর মন ভালো না খারাপ সেটা বোঝারও তোয়াক্কা করি না। তাইতো আজ সন্ধ্যায় হঠাৎ করেই আমার বলা “নিপা তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে।” উত্তরে নিপার শুধুই অবাক দৃষ্টি।
পরদিন সকালে লিজাকে ফোন করলাম। ওর কাছ থেকে নেওয়া চারশ টাকা ধার শোধ দেওয়ার অভিপ্রায়ে। লিজা আমার সাথে একবার দেখা করতে চায়, কিন্তু আমার মন এতে সায় দেয় না। এর মূল কারণ লিজাকে একসময় আমি ভীষণ ভালোবাসতাম। তাইতো দেখা করার সাহসটা পাই না! আমার মেয়ে দুটো আর বউয়ের নিষ্পাপ মুখ বারবার ভেসে উঠে। অযথাই জীবনটাকে জটিল করার কোন মানে খুঁজে পাই না।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিসি ডিবি আমার হল জীবনের রুমমেট সালাম। সালামকে ফোন করে লিজার সমস্যার কথা বললাম। উত্তরার স্হানীয় কমিশনারও আমার পূর্ব পরিচিত, তাকেও বিষয়টি জানালাম। কমিশনারের মাধ্যমে স্হানীয় এমপি সাহেবও বিষয়টি অবগত হলেন। অনেক ঝামেলা ঝক্কি পেরিয়ে মাত্র দু সপ্তাহের মধ্যেই সালাম লিজাকে জমিটা বুঝিয়ে দিল।
জমি ফিরে পাওয়া ভীষণ কৃতজ্ঞ লিজা আবারো আমার সাথে দেখা করতে চায়। জমিটার দখল বুঝে পেয়েছে, এতেই আমি অনেক খুশি। ভালোবাসা প্রত্যাখান করা প্রাক্তনের সাথে দেখা করার আগ্রহ কিছুতেই আর পেলাম না। তাইতো হেয়ালি করে এক সময়ের ভীষণ ভালো লাগার ঐ মানুষটিকে প্রশ্ন করলাম “চারশ টাকা ধার কি এখন শোধ হয়েছে?” প্রত্যুত্তরে লিজার রিনিঝিনি সেই হাসিটাও আমাকে আজ প্রলুব্ধ করতে পারে নি। থাক না অতীত অতীতেই!
অফিস থেকে ফেরার পথে অনেকদিন পর আজ শপিং মলে ঢুকলাম। নিপার প্রিয় জামদানি শাড়ি নিলাম, নীল রঙয়ের। মেয়ে দুটোর জন্যও ম্যাচ করা দুটো জামা কিনলাম। শপিং মল থেকে বের হবার মুখেই দেখলাম এক মহিলা কাঁচের চুড়ি বিক্রি করছে। নিপার পছন্দের চুড়িগুলো নিয়ে বাসায় ফিরতেই আজ সবাই অবাক। নিপা মুখে কিছু না বললেও ওর চোখে মুখে খুশির আনন্দ। পুরো বাসাটাতেই আজ ভালোবাসার আমেজ।
অনেক দিন পর আমার নিজের মধ্যেও অনেক ভালো লাগার অনুভূতি। প্রায় দু দশক আগের মিথ্যে ভালোবাসা আমাকে আজ সত্যিকারের ভালোবাসাটাকে মনে করিয়ে দেওয়াতেই। বাচ্চা দুটো আর বিশেষ করে বউকে উপেক্ষা করার দায় অনুভব করলাম। আমার ভালোবাসার মানুষগুলো নিঃস্বার্থভাবে আমাকে প্রতিনিয়ত ভালোবেসে যাচ্ছে, এই উপলব্ধিটায় নিজেকে ভীষণ ভাগ্যবান বলে মনে হলো। সত্যই সবার কপালে সুখ লেখা থাকে না।
শেষ
৩. এক্স কে নিয়ে ফানি পোস্ট
প্রাক্তনের পাশে বরকে দেখে বললাম, তোমার নাগরাজ?
প্রাক্তন চোখ মুখ লাল কইরা- মানে কী?
-না মানে তুমি কালনাগিনী হইলে হেয়তো নাগরাজই হইবো!
বিয়ার ডেট জানতাম না। জানলে উপহারে খাঁচায় ভইরা বেজি দিতাম! আফসোস ডেট জানতাম না! এই জন্যেই জ্ঞানীরা বলে, বাঁচতে হলে জানতে হবে। প্রচুর জানতে হবে!
যাক দোয়া করি, তোমাদের ঘর এনাকোন্ডায় ভইরা যাক!
অনেকদিন পর হঠাৎ প্রাক্তন ফোন দিয়া বলল, আমাদের এখন সম্পর্ক নাইতো কি হইছে? আমরা কি জাস্ট ফ্রেন্ড হয়ে থাকতে পারি না? আমার একটা উপকার করবা জাস্ট ফ্রেন্ড?
-জাস্ট ফ্রেন্ড এগুলা করা পাপ, কী উপকার লাগবে কও?
-আমার বাবুটা না দুইদিন ধরে কিছু খাইতে চাচ্ছে না, কী করি বলতো?
-নাক চিপ দিয়া মুখে খাবার ভইরা দাও! আম্মা এমনেই আমারে ছোডকালে খাওয়াইতো! আর তাতেও না হইলে শেষ চিকিৎসা, কষায়া দুইট্টা চর দাও! টুকটুক কইরা খাবে। বাই দ্যা ওয়ে বাচ্চা হইলো কবে?
-আরে কি বল? এখনই বাচ্চা নিবো নাকি! আমার বেবির কথা বললাম!
-ওইতো বেবি হইছে কবে?
-আরে বেবি হবে কেন? আমার বরের কথা বললাম! বেচারার দুইদিন ধরে অফিসের ঝামেলা তাই মন খারাপ! কিছুই মুখে দিতে চাচ্ছে না!
ফোন রাইখা কিছুক্ষন ঝিম মাইরা বইসা ছিলাম! আর ভাবতেছি, কী কলিকাল আইলো? একসময় সিএনজিরে বেবি ডাকা আমরা এখন জামাই বউরে, বউ জামাইরে বেবি ডাকি, হের মুখে খাওয়নের বদলে সিএনজি ষ্টেশনে নিয়া গিয়া গ্যাস ভরা না দরকার! কী কলিকাল আইলো!
৪.প্রেম নিয়ে ফানি পোস্ট
সেইরকম সুন্দরী এক মেয়েরে টিউশন পড়াতাম। বিশাল বড়লোকের মেয়ে। বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। তো মেয়েটা একদিন হুট করে আমাকে প্রপোজ করে বসলো। আমি শুরুতে খুশি হলেও একটু পর অন্যরকম এক ভাবনা আসলো মাথায়।
.
‘আমি টিচার মানুষ, আমার একটা এথিকস আছে। মেয়ে যতই সুন্দর হোক, মেয়ের বাবার যতই টাকা থাকুক। আমি টিচার হয়ে স্টুডেন্টের সাথে প্রেম করব না৷ টিচার সমাজের নাম খারাপ আমি করতে পারবো না। কোনোভাবেই না। ফাইনাল ডিসিশন নিয়ে নিলাম৷ মেয়ের আম্মুকে কল করে বললাম, ‘কাল থেকে আমি আর আসব না। আমি চাকরি পেয়েছি একটা। টিউশনির আর দরকার হবে না।’
আন্টি আমাকে নানাভাবে বুঝানোর চেষ্টা করলেন। কিন্তু আমি কিছুতেই রাজি হলাম না। শিক্ষক বাবার সমান। আমি শিক্ষকের সম্মান টা রাখবোই।
.
টিউশনি বাদ দিয়ে দিলাম। এখন অনেক ভাল্লাগতেছে। শিক্ষক হয়ে সুন্দরী ছাত্রীকে পাওয়ার লোভ আমি সংবরন করতে পেরেছি। আমি শিক্ষক পেশার অসম্মান করিনাই। নিজের কাছেই নিজে প্রাউড ফিল করলাম। রাতে খুব শান্তির ঘুম হলো৷ নিজেকে পবিত্র মনে হতে থাকলো। ছোটবেলায় পড়া কবিতাটা মনে পড়লো।
“আজ থেকে চির উন্নত হলো শিক্ষাগুরুর শীর
‘শিক্ষক আমি শ্রেষ্ঠ সবার, বাদশা আলমগীর।”
.
.
পরদিন সকালে আমি মেয়েটাকে নিয়ে পালায়ে বান্দরবন চলে গেলাম। এখন আমি ওর টিচার নাই। এখন আর প্রেম করতে কোনো সমস্যাও নাই!
©️সোহাইল রহমান
৫.প্রাক্তন প্রেমিকার গল্প
প্রাক্তন
……..
কাল আমাদের পঞ্চম বিবাহবার্ষিকী। বউকে নিয়ে ইনফিনিটি তে এলাম। বউ ঘুরে ঘুরে আমাদের জন্য ম্যাচিং শাড়ি পাঞ্জাবি দেখছে। বউয়ের এই ব্যাপারটা আমার ভালই লাগে। কোন অকেশন হলেই সে ম্যাচিং ড্রেস কিনবে। বেশ রোমান্টিক লাগে। সে মিলিয়ে দেখছে পোষাক আর আমি চারপাশের মানুষ দেখছিলাম। হটাৎ একটা মুখে চোখ আটকে গেল৷। এক সময়ের সবেচেয়ে প্রিয় মুখ এভাবে সামনে আসবে ভাবিনি।
কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম ” তুমি এখানে? ”
সে হঠাৎ চমকে গেল কিন্তু সাথে সাথে নিজেকে সামিলে নিয়ে উত্তর দিল ” দেখতেই তো পাচ্ছ। “
” সেলসগার্লের কাজ করছো। তোমার তো খুব ধনী ব্যবসায়ীর সাথে বিয়ে হয়েছিল৷ জামাই কোথায়? “
” ডিভোর্স হয়ে গেছে।”
” মানে! কেন? কি হয়েছিল? ”
” সে আগে বিয়ে করেছিল। আগের বউ জানার পর মামলা করে। ”
” আমি বেকার ছিলাম সেজন্য তোমার বাবা আমার সাথে তোমার বিয়ে দিলেন না। আর কিনা বিবাহিত ছেলের সাথে বিয়ে দিয়ে বসলেন। ”
বুকের চাপা কষ্ট টা মনে হলো হালকা হচ্ছে। হাসি ও পাচ্ছে। হায়রে ভাগ্য!
বললাম ” অন্য কোন জব পেলে না, এখানে? ”
অন্য দিকে তাকিয়ে সে উত্তর দিলো ” স্কুলে তো তোমার সাথে প্রেম করে লেখাপড়াটা ঠিক মত হয়নি। ভাল জব পাবো কিভাবে! “
তখনই মাহি মানে আমার স্ত্রী ডাক দিলো। তার ম্যাচিং শাড়ি পাঞ্জাবি পাওয়া হয়ে গেছে। ক্যাশ কাউন্টারে গিয়ে বিল দিতে হবে।
জুথির মুখের দিকে তাকিয়ে বললাম ” চলি, ভাল থেকো। ”
তখনই লক্ষ্য করলাম জুথির চোখের নিচটা খুব কালো হয়ে আছে৷ মনটা ভিষন খারাপ হয়ে গেল।
রিক্সায় বউয়ের সাথে তেমন কথা হলো না। বউ বুঝতে পারলো আমার কিছু একটা হয়েছে কিন্তু কি সেটা ধরতে পারলো না।
জুথির কথা বউকে কখনো বলিনি। কী দরকার। জুথি আমার জীবনে একটা ব্যার্থতার গল্প। প্রচন্ড ভালবাসতাম মেয়েটাকে। ক্লাস এইটে থাকতে আমাদের সম্পর্ক হয়। লুকিয়ে চিঠি দেয়া হতো। সারা রাত বসে সেই চিঠি লিখতাম। একদিন স্কুল থেকে বাড়ি ফিরছিলাম। ঝুম বৃষ্টি। আমি আর জুথি ভিজে চুপচুপে হয়ে একটা পরিত্যক্ত ঘরে আশ্রয় নিয়েছিলাম। এখনো জীবনের সবচেয়ে ভাল লাগা স্মৃতি সেই বৃষ্টিভেজা দিনটাই জুথির সাথে আমার।
বউকে ভালবাসি। মাহি অনেক ম্যাচিউর আমাকে খুব বুঝে। সে তার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে আমাকে সুখে রাখার আর আমি ও। আমাদের একজনের সুখের মধ্যেই তো আরেকজনের সুখ। সব কিছুই ঠিকঠাক ছিল কিন্তু আজ জুথিকে দেখার পর থেকে মনে হচ্ছে,আমি কী আসলেই সুখী নাকি সুখের একটা মেকি মুখোস পড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি। আমার সুখ কী মাহির কাছে নাকি জুথির কাছে ছিল বুঝতে পারছি না।
বাসায় কখন পৌছে গেলাম বলতে পারবো না। মাহি এটা সেটা কি যেন বলে চলেছে কিছু মাথায় ঢুকছে না। কিসের একটা ঘোরের মধ্যে আছি। কেমন যেন একটা কষ্ট। টুকরা টুকরো অতীত গুলো চোখের সামনে ভেসে উঠছে।
গোসলে গেলাম৷ গেলাম বললে ভুল হবে। মাহি একপ্রকার ঠেলে পাঠালো। শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে মনে পরে গেল জুথির কাঁন্না। তার বিয়ের আগের দিন আমাদের বাড়ির পেছন দিকটায় একটা ঝার আছে সেখানে এসেছিল। তাও আবার রাতে। অন্য সময় হলে ভুতের ভয়ে এখানে আমরা দাঁড়াতেই পারতাম না কিন্তু সেদিন সেখান থেকে ফিরতেই চাইছলাম না। জুথিকে শেষবারের মত বুকে জড়িয়ে রেখেছিলাম। মেয়েটার নাকের পানি আর চোখের পানিতে শার্ট ভিজে গেল। গলা বসে গেল। ও যখন চলে যাচ্ছিল বুকের ভিতরটা একদম শুন্য হয়ে গেল। আর কাউকে এই বুকে জায়গা দেয়া সম্ভব হয়নি। আজ ও না। মাহি আছে আমার দায়িত্ববোধে, আমার অধিকারে। বুকের বা পাশটা তাকে দিতে পারিনি। চোখের পানিতে জুথি আগেই সেটা ভিজিয়ে রেখেছে৷
জুথি বিয়ের পর প্রচন্ড ক্ষোভ ছিল ওর বাবার প্রতি। আমার মা বাবাকে বুঝিয়ে ওদের বাড়ি পাঠিয়ে ছিলাম কিন্তু জুথির বাবা অপমান করেছিল আমার বাবামাকে। দোষ আমার। আমি অযোগ্য, আমি বেকার। কয়টা মাস যে কিভাবে কেটেছে। খাওয়া আর ঘুম তো ছেড়েই দিয়েছিলাম। মা দিন রাত সেজদায় বসে কাঁদতো। একদিন দেখি জুথি তাদের বাড়ি এসেছে। বাহ, কী সুন্দর বউ হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তার চোখে আমার মত কান্না নেই।
আমাকে দেখে জিজ্ঞেস করে ” কেমন আছো? এতো শুকিয়ে গেছ কেন? নিজের খেয়াল রেখো। ”
সেদিন থেকেই ঘুড়ে দাঁড়ালাম। পড়ালেখায় মন দিলাম তারপর তো আজ এখানে। একজন প্রতিষ্টিত সরকারি কর্মকর্তা।
গোসল থেকে বের হলে মাহি বললো, ”তোমার চোখ লাল কেন? ”
আমি বললাম, “বেশি সময় শাওয়ারের নিচে ছিলাম তাই হয়তো৷ “
মাহি ভাত বেড়ে দিল। খেয়ে শুয়ে পরলাম। ঘুমাতে দেরি হলো না। সকালে উঠে দেখি প্রচন্ড মাথা ব্যাথা। মাহি নাস্তা দিল। খেতে ইচ্ছে হলো না। মাহি এক কাপ চা দিল। আমার পাশে এসে বলো চায়ের চুমুক দিয়ে মাহির দিকে তাকালাম। দেখি ওর চোখ ফোলা।
আমি জিজ্ঞেস করলাম ‘তোমার কি হয়েছে? ‘
মাহি বলো, ” কাল থেকে তুমি খুব আপসেট হয়ে আছো। কেন, আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। তুমি ঘুমের মধ্যে ও গোংরানি করছিলে। তাই আমার আর ঘুম হয়নি। তোমাকে জেগে দেখছিলাম।”
আমার নিঃশ্বাস ভাবী হয়ে এলো। চায়ের কাপ টা রেখে মাহিকে বুকের কাছে টেনে নিলাম। মাহি শুনতে পাচ্ছে আমার হার্টবিট। নাহ, সেখানে ওর নাম ছাড়া আর কারো নাম থাকতে পারে না।