শিশিরের আদ্র পর্ব ৬
#Neel
আদ্র শিশিরের কথার পৃষ্ঠে বলার আগেই কেউ একজন দরজার সামনে থেকে বলল- তা আমার ২ নম্বর বউ কখন বাসায় আসলি?
জান্নাত বাবা বলে দরজার দিকে দৌড় দিল। বুঝে গেছি মহিদ ভাইয়া এসেছে। আদ্রকে পাশ কাটিয়ে আমি ও দৌড়ে জান্নাতের মতো মহিদ ভাইয়া কে জড়িয়ে ধরলাম।
মহিদ – আরে বাবা ,ছাড় আমাকে তোরা। আমি বাহিরের থেকে এসেছি, গায়ে জেমস আছে। আচ্ছা আচ্ছা দাঁড়া, আমি চকলেট নিয়ে এসেছি। অশি তুই আসবি আগে থেকেই আমাকে বলবি না? আমি বেশি করে চকলেট নিয়ে আসতাম।
( আমাদের দুজনের হাতে দুটি চকলেট ধরিয়ে দিয়ে চলে গেল)
আদ্র হা করে শিশিরের কার্যকলাপ দেখছে। তবে মনে মনে ফুঁসে উঠছে ও।বির বির করে বলল- এই শিশির কে এর জন্য শাস্তি পেতে ই হবে।সবাই কে জরিয়ে ধরা, একবার তোকে আয়ত্তে আনতে পারলেই হলো, এই অভ্যাস ছাড়িয়ে দিব । আমায় ছাড়া পর পুরুষ কে ছোঁয়া, আমার আয়ত্তে আসতে হবে না, তুই অলরেডি আদ্রের। #শিশিরের_আদ্র
মহিদ ভেতরে ঢুকে দেখল একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। কেমন চেনা চেনা লাগছে। আরে এ তো ডা. আদ্র।
মহিদ – আদ্র, রাইট। হার্ট স্পেশালিস্ট ডা. আদ্র। ওপস, আদ্র চৌধুরী। তুমি। তা ছোট ভাইয়া কেমন আছো? অনেক দিন পর। বসো, আমি ফ্রেস হয়ে এখনি আসছি।
দুপুরে সবাই খাবার খেতে বসেছে। আদ্র এখন শিশিরের এই শশুর বাড়ির সকল যোগসূত্র বুঝে গেছে। আদ্র বুঝতে পেরেছে, এ বাড়ির মানুষ জন অনেক ভালো।না হয় তারা শিশিরের মতো একটা পাগলি মেয়েকে এতো ভালোবাসে।
আমি খাচ্ছি। ওম্ ওম্, মামি আরো দাও, তোমার হাতের খাবার কী মজা।গুনে গুনে ২ দিন ধরে খাইনি।
আদ্র- এরে মাথা মোটা,কম খা। শরীরের ওজন বাড়লে, তোকে কে বিয়ে করবে?
আদ্রের কথায় জান্নাত হেসে উঠল।
জান্নাত- ইয়েএএএ অশি মনিকে কেউ বিয়ে করবে না। অশি মনি তোমাকে পাগলের সাথে বেঁধে রাখবো, যাতে তাড়াতাড়ি বিয়ে হয়ে যায়।
জান্নাতের কথায় সবাই উচ্চ স্বরে হেসে উঠলো।
আমার রাগ উঠে গেল। বললাম – ঐ পাদ্রের বাচ্চা , তুই একটা খাম্বা,তোর জন্য জান্নাত.. আহ্ ( মারি ধরে , কেঁদে দিলাম) মাগো, কি ব্যাথা, আ….
মহিদ – যা তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে আয়। আমি সাথে করে নিয়ে যাচ্ছি।
মহিদ ভাইয়ার কথা শুনে দৌড়ে রুমের ভেতর চলে আসলাম।এখন আমার ডেন্টিস্ট এর কাছে যেতে হবে। ইশ্ কেন যে এতো চকলেট খেতে গেলাম।
আদ্র বুঝতে পারছে না হঠাৎ শিশিরের কি হলো।
আদ্র- ওর কি হয়েছে?
মামা – আর কি হবে। মহিদ কে চকলেট আনতে মানা করি, সবাই ওরে আদরে আদরে বাঁদর বানিয়েছে। চকলেট চকলেট, সারাদিন এটা খায়। খেয়ে খেয়ে দাঁতগুলোর এই অবস্থা করেছে। এখন কিছুদিন পর পর ডেন্টিস্ট এর কাছে যাইতে হয়। এই মাইয়া যে ঘরে যাইবো, জামাইডারে চকলেট এর জন্য পাগল বানাই ফেলবো।
আদ্র হাসলো। এর মধ্যেই শিশির নিচে নেমে এলো। আদ্র অবাক হয়ে শিশিরের দিকে তাকিয়ে আছে। থ্রী পিস টাতে শিশির কে অসম্ভব সুন্দর লাগছে। চুল গুলো ছেড়ে দেওয়াতে এই সৌন্দর্য যেন আরো বেড়ে গেছে।
মারি ধরে দাঁড়িয়ে আছি। ব্যাপারটা খুব খটকা লাগলো, আদ্র ভাইয়া এমনে তাকায় আছে কেন? আমাকে কি বাজে দেখাচ্ছে নাকি? না, আমি অলওয়েজ পারফেক্ট, হু । আমি ও ভুরু কুঁচকে আদ্র ভাইয়ের দিকে তাকালাম।আদ্র ভাইয়া আমাকে একটা চোখ টিপ দিল। আমার মুখ হা হয়ে গেল।আরে, বেটার তো সত্যিই ক্যারেকটার লুস। এমনি তে আমার কিস চুরি করছে, তার উপর যদি, না না, ছিঃ, এই পাদ্রের কাছ থেকে দূরে থাকতে হবে।
আদ্র- আচ্ছা মহিদ ভাইয়া, আপনি তো আবার কাজে চলে যাবেন। আমি তো ফ্রি ই আছি শিশির কে আমি নিয়ে যাচ্ছি।
আদ্র ভাই সবকিছু তে বাড়াবাড়ি করছে, ধেৎ রাগ হচ্ছে, মুখ ফসকে বলে ফেললাম -ঐ , আমি আপনাকে আমাকে শিশির বলে ডাকার অধিকার দিয়েছি? দেই নি,তাই না। তাহলে আমাকে অনামিকা বা অন্যদের মতো অশি বলে ডাকবেন। আর , আমি অনামিকা শিশির চৌধুরী আপনার সাথে যাবো না।কি বারবার আমার সাথে কাল আসার পর থেকেই চিপকে আছেন। আমি…(এর আগেই)
আদ্র বাঁকা হাসলো বলল-লাইক সিরিয়াসলি? ওফ্, তুই নাকি দাদির কাছ থেকে আমার সম্পর্কে সব জানিস?বেশি বলে ফেললি না? আমি আদ্র , আমি কারো অধিকার পর্যন্ত রপ্ত থাকি না, আমি সব কিছু ছিনিয়ে নিতে পছন্দ করি। মনে করতেই পারিস, কাল রাতের কথা, সব টাই আমার কাছে ভিডিও হিসেবে আছে।
ভাগ্যিস মামা মামী নেই এখানে। মহিদ ভাইয়া আছে। মহিদ ভাইয়া আমাদের দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে ওনি উলু বনে গেছে। যাওয়ার ই কথা, কেননা কাল রাতের ঘটনা শুধুমাত্র আমি আর পাদ্র সরি আদ্র ই জানে।
এরেএএ আমি কেন যে, এই পাদ্রের মুখে লাগতে গেছি, কান্না আসছে। মহিদ
ভাইয়ার দিকে একটা মেকি হাসি দিয়ে আর আদ্রের দিকে কাঁদো কাঁদো ফেসে বললাম – চলেন, আমি আপনার সাথে ই যাবো।
মহিদ – আচ্ছা ঠিক আছে, তোরা যা ।(এই বলে রুমে চলে গেল )
আদ্র বিজয়ের হাসি দিয়ে আমার আগেই বাড়ির বাইরে চলে গেল। ইশ্ গা পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে। ভাব দেখলে বাঁচি না, আস্তো শয়তান, মিচকা শয়তান। মনে মনে আদ্রের চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করছি। ইরেএএ, আদ্র ভাইয়ের চৌদ্দ গুষ্টির মধ্যে আমি ও তো একজন। ধেৎ । নিজেকে ই নিজে বকা দিচ্ছি। আদ্র /পাদ্র রেএএএ তোকে আমি ছাড়বো না।
বলতে বলতে গেটের সামনে আদ্র ভাইয়ের সাথে দাঁড়ালাম।
আদ্র – কিরে মাথা মোটা, আবার হেরে গেলি তো? অনামিকা শিশির চৌধুরী নাকি যা বলে তাই করে, কখনো হারে না। এখন আমার কাছে তো ঠিক ই হেরে গেলি। শোন হতবুদ্ধি, তোর লাইফে এখন আদ্রের ছোঁয়া পরে গেছে, জীবনভর তোকে এটা বয়ে নিয়ে চলতে হবে।
আদ্র ভাইয়া কে একটু ও সহ্য হচ্ছে না। তাই মুখ ফুলিয়ে কোন কথা না বলে তাকে রেখেই হাঁটা শুরু করলাম।
অন্যদিকে আদ্র হাসছে। তার প্রিয়তমা অভিমান করেছে। এই তো সবে শুরু। রাগ হবে , অভিমান হবে, ঝগড়া হবে, কথা কাটাকাটি হবে, অভিযোগ হবে, এগুলো পার করতে পারলেই তো পিউর মধুর ভালোবাসা টা হবে। আদ্র দ্রুত হেঁটে শিশিরের কাছে গেল।
আদ্র ভাইয়া আমার পাশে পাশে হাঁটছে। একটা অনুভুতি কাজ করছে। ধেৎ কি ভাবছি। এর কথা বেশি ভাবা যাবে না, তাহলে আমার ক্রাশদের কি হবে?
ডেন্টিস্ট এর দোকানে চলে আসলাম। ইশ্ আমার ডেন্টিস্ট এর ডা টা কি হ্যান্ডসাম।
আদ্র ভাইয়া কে মুখ ফসকে বলে ফেললাম- আচ্ছা আদ্র ভাইয়া, ডেন্টিস্ট ডা. কিন্তু সত্যি সুন্দর। ওফ্, শ্যামসুন্দর । শ্যামসুন্দর পুরুষ সত্যি ই লোভনীয়।
ওমা আদ্র ভাইয়া আমার দিকে রক্তমাখা চোখে তাকিয়ে আছে। কিছু বলার আগেই আমি দৌড়ে ডক্টরের চেম্বার এ চলে গেলাম।
আদ্র পারছে না নিজের মাথায় নিজে হাতুড়ি দিয়ে বারি দিয়ে দু ভাগ করে ফেলতে। তার প্রিয়তমার কি দুনিয়ার সব ছেলেদের সাথে ফ্লার্ট করতে হচ্ছে করে একমাত্র তাকে ছাড়া। দুঃখে কষ্টে আদ্রের বুক ফেটে যাচ্ছে। না পারছে শিশিরকে কিছু বলতে, না পারছে সে সহ্য করতে।সে ও দ্রুত শিশিরের পিছু নিল।
শিশির ডা এর দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে। আদ্র কে দেখে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
নেক্সট আমার পালা আসতেই আমি চেম্বারে ঢুকলাম। পিছু পিছু আদ্র ভাইয়া ও ঢুকলো।
আদ্রকে দেখে ডক্টর বলল – পেসেন্ট ছাড়া অন্য কেউ নট এলাউড। আপনি বেরিয়ে যান।
আমি বললাম – এমা, আপনি কেন ডক্টরের খোয়ারে ঢুকছেন। আমি পারবো একা। ডক্টরের সাথে একটু টাইম স্পেন্ড করে নেই। (চোখ মেরে)
আদ্র – এক চড়ে মাথার নাট বল্টু ঠিক করে দিব।দিন দিন বেয়াদব হয়েছিস। এই আমি তোর কত বছরের বড় জানিস?১০ বছরের।সো একটা ও উল্টো পাল্টা কথা নয়, তোর গার্জিয়ান আমি। এখন আমি যা বলবো তা কর।( চোখ গুলো লাল)
আমি এর আগে আদ্র ভাইয়াকে দেখি নাই, ঠিক। তবে তার এরূপ সম্পর্কে আমার সব জানা আছে। দাদি বলেছে,আদ্র ভাইয়া রেগে গেলে চোখ লাল হয়ে যায়, তখন যদি কেউ ভুলেও তার কথার খেলাপ করে, তাকে মেরে ফেলতে দুইবার ও ভাবে না ।ভয় লাগছে। চুপচাপ কেবিনে বসে পড়লাম। ডা. ও চুপ হয়ে গেল। আদ্র ভাইয়ের সামনে ই আমার দাঁতের চিকিৎসা করলো। আধ ঘন্টা পর আমাকে ছেড়ে দিলো। টাকা দিয়ে বের হয়ে গেলাম।
ডা – এইযে শুনেন, মেয়েটি কি হয় আপনার?
আদ্র – ও ভাই শোন, অন্য কেউকে খুঁজতে থাক। ও আমার বউ।
ডা এর মুখটা মলিন হয়ে গেল। এটা আদ্রের চোখ এড়ায় নি। মুচকি হেসে বেড়িয়ে গেল।
আমি চুপচাপ হাঁটছি। আদ্র ভাইয়া আমাকে আজ বকা দিয়েছে। সেই কথা মনে হতেই কষ্ট লাগছে। আমার সব বিষয়ে তার নাক গলাতে হবে কেন। আদ্র ভাইয়া কে পিছনে ফেলে ই একা একা হাঁটছি। হঠাৎ..
চলবে…