“তোর কি আর কোনো ড্রেস নাই? এই রকম রংচটা পুরোনো ড্রেস পড়ে কেনো এসেছিস? বিয়ে বাড়িতে কতো মানুষ এসেছে। সবাই কতো দামি দামি ড্রেস পড়ে এসেছে। আর তুই? সবাই তো তোকে ভিখারি মনে করবে।
বান্ধবীর বোনের বিয়েতে এসেছে তন্নি। বাড়ির গেইটের কাছেই তন্নির আরও কিছু বান্ধবী দাঁড়িয়ে ছিলো। তন্নি হাসি মুখে ওদের কাছে এগিয়ে যায়। তন্নিকে দেখেই বলে ওঠে মিলা।
তন্নির হাসি মুখটা চুপসে যায়। মাথা নিচু করে ফেলে।
” তুই প্লিজ আমাদের সাথে থাকিস না। সরে দাঁড়া তুই। আমাদের রেপুটেশন নষ্ট হবে। সবাই ভাববে বাড়ির কাজের লোককে সাথে নিয়ে এসেছি।
বিথি বলে ওঠে। লজ্জায় চোখে পানি চলে আসে তন্নির।
আস্তে আস্তে ওদের থেকে দূরে চলে যেতে নেয়।
“দেখি দেখি কি গিফট এনেছিস তুই?
সুইটি তন্নির হাতের প্যাকেটটা কেড়ে দিয়ে বলে। তন্নি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে পড়ে। সুইটি প্যাকেট ছিঁড়তে থাকে।
কালো রংয়ের সুতি একটা শাড়ি এনেছে। শাড়িটা হাতে নিয়ে হেসে ফেলে ওরা।
” সিরিয়াসলি তন্নি?
এটা গিফট দিবি তুই আর্থি আপুকে? ও এটা পড়বে? ওদের বাড়ির কাজের লোকও এর থেকে দামি শাড়ি পড়ে। ফুটপাত থেকে কিনেছিস। তাই না?
সুইটি শাড়িটা তন্নির দিকে ছুঁড়ে দিয়ে বলে। মাটিতে পড়ার আগেই তন্নি সেটা ধরে ফেলে।
“তোমরা এখানে দাঁড়িয়ে কেনো?
পেছন থেকে সুদর্শন একটা ছেলে গম্ভীর গলায় বলে ওঠে।
ওরা ছেলেটাকে দেখে নিজেদের চুল ঠিক করায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
ছেলেটা তন্নির দিকে তাকায়। মাথা নিচু করে কাঁদতে দেখে ভ্রু কুচকে তাকায়।
” হু ইজ সী?
বাকিদের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে।
“চিনি না তো। মেবি বিয়ে দেখে ভালো মন্দ খাওয়ার লোভে ঢুকে পড়েছে।
সুইটি ছেলেটার দিকে দু পা এগিয়ে গিয়ে হাসি মুখে বলে।
” এসেছো যখন খেয়ে যেয়ো। ওই দিকে খাওয়ানো হচ্ছে। তুমি এসো আমার সাথে। আমি বসিয়ে দিয়ে আসছি তোমায়।
ছেলেটা তন্নিকে বলে। মুখ টিপে বাকিরা হেসে ফেলে। লজ্জায় অপমানে তন্নির ম*রে যেতে ইচ্ছে করছে। কমদামি পুরোনো জামা পড়ে আসলে এইভাবেই অপমানিত হয়?
“কি হলো? এসো? দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মুখ দেখবে না কি? ডিজগাস্টিং
ছেলেটা বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে এগিয়ে যেতে যেতে বলে।
” তন্নি তুই এসে গেছিস?
অথৈই দৌড়ে এসে তন্নিকে জড়িয়ে ধরে বলে। ছেলেটা থেমে যায়। ভ্রু কুচকে তাকায় অথৈয়ের দিকে।
বাকিটা মুখ বাঁকায়।
তন্নি শব্দ করে কেঁদে ফেলে এবার।
“এই জান কাঁদছিস কেনো? কি হয়েছে তোর?
অথৈই তন্নির চোখের পানি মুছে দিতে দিতে বলে।
” তুই চিনিস একে?
ছেলেটা জিজ্ঞেস করে অথৈকে।
“ভাইয়া তোকে বলেছিলাম না আমার বেষ্টফ্রেন্ডের কথা? আমার বন্ধু তন্নি। আর তন্নি ও আমার ভাইয়া অর্ণব তোকে পিক দেখিয়েছিলাম তো।
তন্নি মুখ তুলে তাকায় না। মাথা নিচু করে থাকে। অর্ণব ফোঁস করে শ্বাস টানে।
” আগে বলবি না? আমি তো ভেবেছিলাম..
যাইহোক মিসআন্ডারস্ট্যান্ডিং হয়ে গেছে।
বুঝতে পারি নি আমি। তোমারও ভূল আছে। বললেই হতো তুমি অথৈয়ের ফ্রেন্ড। টাইম ওয়েস্ট করলে আমার।
বলেই অর্ণব অন্য দিকে চলে যায়। তন্নি দাঁতে দাঁত চেপে এক পলক তাকায় অর্ণবের দিকে। মানুষ এতোটাও ম্যানারলেস হতে পারে? একটা সরি পর্যন্ত বললো না।
“ভাইয়া কিছু বলেছে তোকে?
অথৈই জিজ্ঞেস করে।
তন্নি মাথা নারিয়ে না বুঝায়।
” আমি চলে যাই অথৈ। আমার ভালো লাগছে না।
তন্নি অথৈকে একটু দূরে নিয়ে বলে।
“এটা কেমন কথা? তুই চলে যাবি মানে কি? বাবা মা আপু সবাই তোর জন্য অপেক্ষা করছে আর তুই চলে যেতে চাইছিস? ইটস নট ফেয়ার তন্নি।
” প্লিজ অথৈ চলে যাই না।
“মা বাবা আর আপুর কথা ভাববি না তুই? তুমি এসে চলে গেছিস জানলে কতো কষ্ট পাবে জানিস তুই? আমার মা যে কান্না করতে পারে। সে কেঁদে ফেলবে।
তন্নি কি বলবে বুঝতে পারছে না।
” চল তুই আমার সাথে। আপুকে কিভাবে সাজিয়েছি আমি দেখবি চল।
অথৈ তন্নির হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে যায় ওকে।
সুন্দর করে বউ সেজে বসে আছে আর্থি। তাকে খাইয়ে দিচ্ছে আশা বেগম।
“মা দেখো কে এসেছে?
তন্নিকে ওদের সামনে দাঁড় করিয়ে বলে অথৈ।
আশা আর আর্থি খুশি হয়ে যায় তন্নিকে দেখে।
” হাত জোড়া আমার। নাহলে কান মলে দিতাম তোর। এতখনে আসার সময় হলো?
চোখ পাকিয়ে বলে আশা বেগম।
আর্থির নজর পড়ে তন্নির হাতের দিকে।
“ওয়াও তন্নি। কিন্তু সুন্দর শাড়িটা। আমার জন্য এনেছো? মা দেখো। কাল রিসেপশনে আমি এটাই পড়বো।
শাড়িটা তন্নির থেকে নিয়ে গায়ে জড়াতে জড়াতে বলে আর্থি।
তন্নি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে। এই সামান্য শাড়িতেও কেউ এতো খুশি হতে পারে?
” আচ্ছা পড়িস। অথৈ যা তন্নিকে সাথে করে খাবার খেয়ে নে। সকাল থেকে কিচ্ছু মুখে তুলিস নি। তন্নি আসবে তারপর খাবো এটা বলেই বসে আছিস।
“হ্যাঁ হ্যাঁ যাচ্ছি। খাওয়া শেষে আমি তন্নিকে সাজিয়ে দিবো। তারপর গেইট আটকাবো দুজন মিলে। তার আগে যেনো তোর বর না আসে। আসলে কিন্তু আমি কান্না করবো।
অথৈই গাল ফুলিয়ে আর্থিকে বলে।
“আসবে না। সে সবে সেরোয়ানি পড়ছে।
আর্থি হেসে বলে।
অথৈ তন্নিকে নিয়ে খেতে যায়।
তন্নি এতো মানুষের মধ্যে অস্বস্তি ফিল করবে তাই নিজের রুমে খাবার আনতে বলে অর্ণবকে।
অর্ণব বিরক্তি নিয়ে দুই হাত বোঝায় করে খাবার এনে রুমে ঢুকতে যায় আর তখনই তন্নি রুম থেকে বের হতে যায়।
দুজন দুজনের সাথে ধাক্কা খায়। পুরো তরকারিটা পড়ে যায় অর্ণবের সাদা পানজাবিতে। তন্নি ফ্লোরে বসে পড়ে। কোমরে বেশ ব্যাথা পায়। অর্ণব নিজের পানজাবির দিকে এক পলক তাকাচ্ছে তো আরেক পলক তন্নির দিকে তাকাচ্ছে।
রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে।
” স্টুপিট দেখে চলতে পারো না? আমার পানজাবির কি হাল করলে এটা তুমি?
অর্ণব রেগে ধমক দিয়ে বলে ওঠে। তন্নি কেঁপে ওঠে। ভয়ে কাচুমাচু হয়ে যায়। শুকনো ঢোক গিলে আস্তে আস্তে দাঁড়িয়ে যায়।
“এসেছো থেকেই ঝামেলা পাকিয়ে যাচ্ছো। পবলেম কি তোমার?
অর্ণব চোখ পাকিয়ে বলে। তন্নি কেঁদে ফেলে।
এতে অর্ণবের বিরক্তি আরও বেরে যায়।
” আজাইরা না কি তুমি? কথায় কথায় ইডিয়েটের মতো কান্না করো কেনো? কি একটদ অবস্থা। বোবা তুমি? কথা বলতে পারো না? সারাক্ষণ চোখ দিয়ে পানি পড়তেই থাকে।
তখন অথৈ ওয়াশরুম থেকে বের হয়।
“ভাইয়া তোর কি অবস্থা হয়েছে এটা?
মুখ টিপে হেসে বলে অথৈ।
” একে সামলাতে পারিস না তুই? সারাক্ষণ আমার সামনেই কেনো পড়ে? পবলেম কি এর? নেক্সট টাইম কিন্তু আমি একে সয্য করবো না। জাস্ট বিরক্তিকর।
পানজাবি ঝাড়তে ঝাড়তে চলে যায় অর্ণন।
তন্নি হাতের উল্টো পিঠে চোখের পানি মুছে ফেলে।
“আমি ইচ্ছে করে করি নি রে। দেখতে পায় নি আমি।
তন্নি অপরাধীর মতো মুখ করে বলে।
“আপসেট কেনো হচ্ছিস? আমি জানি তুই ইচ্ছে করে করিস নি এটা। আমার ভাই একটা রগচটা মানুষ। আমাদেরই সাথেই সারাক্ষণ বকে যায় ভূল না করলেও। এর মুখে মধু দিতে ভূলে গেছিলো মা। তাই কথার মধ্যে কোনো রসকস নেই। তুই প্লিজ জান কিছু মনে করিস না।
ধরে নে একটা পাগল বকবক করে চলে গেছে।
অথৈয়ের কথায় হেসে ফেলে তন্নি। অথৈও হাসে।
মায়াবতী পর্ব ১
তানিশা সুলতানা
সকল পর্বের লিংক একসাথে