- গরম নিয়ে মজার জোকস
- কারেন্ট নিয়ে ফানি পোস্ট
- লোডশেডিং নিয়ে স্ট্যাটাস
- বিদ্যুৎ নিয়ে ফানি স্টাটাস
- কারেন্ট নিয়ে পোস্ট
১.গরম নিয়ে মজার জোকস
আমাদের চেয়ে অনেক কষ্টে আছে ছাত্রলীগের ভাইয়েরা! সারাদিন কারেন্ট না থাকলেও, সারারাত লোডশেডিংয়ের জন্য ঘুমাতে না পারলেও, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস অতিরিক্ত দামের জন্য কিনতে না পারলেও, ৩ বেলা ভালভাবে না খেতে পারলে ও তাদের অভিযোগ নেই,,,তাদেরকে শুধু বলতে হয় উন্নয়ন হচ্ছে উন্নয়ন। আমরা ত হতাশা নিয়ে পোস্ট করতে পারি। তারা তো সেটাও পারছে না। তাদের জন্য খুব মায়া হয় আমার। আমাদের বুঝতে হবে তারাও তো মানুষ। কতটা কষ্ট সহ্য করার পরেও তারা বলছে উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে দেশ।
একমাত্র নিখাদ প্রেমিক তারা! শত কষ্ট পেয়েও তাদের কোনো অভিযোগ নেই। ইশ.!!!!!.©
বিদ্র: আমি কোনো দল সার্পোট করিনা,এটা। বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।
………………….
……………………………….
গরমে মাথা গরম।ডাব খাইতে গেলাম। বলে এক ডাবের পানি ১৫০ টাকা। মাথা আরও গরম হয়ে গেল। দেখলাম
অনেকে ডাবের দাম শুনেই চলে যাচ্ছে। খারাপ লাগলো।
বাসায় এসে দেখি বিদ্যুৎ নেই। জেনারেটরও চলছে না। দারোয়ানরে ফোন দিলাম। বলে তেল নেই। মনে মনে বললাম সরকারের পর্যন্ত কয়লা কেনার টাকা নেই৷ সেখানে
আমার বিল্ডিং এ তেল না থাকাই স্বাভাবিক।
…………………….
………………………………….
পাশের বাড়ির ভাবীর জামাই দুবাই গেছেন কিছুদিন হলো। তো সহজে কথাবার্তা বলার মাধ্যম হিসেবে ইমো ইনস্টল দিয়ে দিলাম। প্রায়ই দেখি জানালা খুলে কানে হেডফোন লাগিয়ে হেসে হেসে কথা বলেন। ডিজিটাল বাংলাদেশের কল্যাণে বেশ ভালোই চলছে যোগাযোগ।
উঠোনে বসে বাড়িসুদ্ধ লোক ভাইয়ের সাথে কথা বলে। ভাবী গোয়াল ঘরে গিয়ে গরুটাকে দেখায়। গাছে আম আসছে সেগুলো দেখায়। উঠোনের পাশের মিষ্টি কুমড়ার গাছটা দেখায়। আরও হাবিজাবি। এসব দেখে অন্য মহিলারা আবার অনেক সময় এটাসেটা বলে। হিংসা হয় তাদের।
সমস্যার সৃষ্টি হলো ইমোর বিজ্ঞাপন নিয়ে। ভাবী বলে এসব কি আজেবাজে মেয়েছেলের ছবি আসে সামনে। এগুলো কি? তোমার ভাইয়ের মোবাইলেও আসে নাকি এগুলো! আমি অনেক কষ্টে বুঝাইলাম ব্যাপারটা।
সবকিছু ঠিকঠাক চলতেছিল। সেদিন দুপুরে প্রচন্ড গরম। বাড়ির সামনে গাছতলায় বসে ছিলাম। এক পিচ্চিকে দিয়ে ভাবী যাওয়ার জন্য খবর পাঠালো। তো গিয়ে দেখি ভাবী উঠোনে রোদের মধ্যে ধান নাড়তেছেন। ঘেমেঘুমে একাকার।
আমাকে দেখে মোবাইলটা হাতে ধরিয়ে বললো সাগর আমার একটা হ/ ট ছবি তুলে দাও। আমিতো টা/ স্কি খেয়ে অ/জ্ঞা/ন হবার পালা। তোমার ভাই দুইদিন ধরে হ/ ট ছবির জন্য মাথা খাচ্ছে।
কি করব বলো দুইদিন তো রোদই ছিল না। বৃষ্টিতে কি আর গরমের ছবি দেওয়া যায়। আমি আর কিছু বলি নাই, ভাবী ধানের মধ্যে ঘেমেঘুমে দাঁড়িয়ে আছেন আমি ছবি তুলে দিয়েছি। পরে কি হয়েছে আর জানিনা। উনি আর আমার সামনে আসেন না 🙂
২. কারেন্ট নিয়ে ফানি পোস্ট
**** ঠিকমতো গরমটাকে উপভোগ করতে পারছি না,
মাঝে মাঝে কারেন্ট এসে বিরক্ত করছে!
……………
…………………….
***কারেন্ট একদম যায়ই না, মাঝে মাঝে আসে।
………….
……………………….
গায়ের রঙ কালো হওয়াতে গরমও বেশি লাগতেছে।
কারণ, কালো রংয়ের বস্তুর তাপ শোষণ ক্ষমতা বেশি।
…………………………..
………………………………
রাতে খাওয়ার পর আম্মার সাথে গল্প করতেছিলাম আম্মাদের রুমে!! কারেন্ট নাই আম্মা পাখা নিয়া বসে বলতেছে
-দেখছোস কি গরম পরছে??
-গরম দেখা যায় না, অনুভব করা যায়, তাই দেখতেছি না, অনুভব করতেছি!!…
-মশকরা করস?? লাথি দিয়া খাট থেকে ফালায়া দিবো!!
-আমারে লাত্থি দিয়া ফালায়া দেয়ার মত জোর আপনার পায়ে নাই!! তার উপর ডায়াবেটিকসের রুগীদের পায়ের যত্ন নিতে হয় বেশি বেশি!! তবে পা মজবুত হওয়ার জন্যে ঘুম থেকে উঠে আর শোয়ার আগে পেপসুডেন্ট মাখতে পারেন পায়ে!!
-আর ভাল লাগে নারে গরমে!! এক সাথে ভূমিকম্প আইসা সব ভাইঙ্গা নিয়া গেলেই ভালো হইত!!
চিন্তা নিয়েন না, কিছুদিন পর এসি লাগায়া দিবোনে ঘরে!!
-হ!!!! আর লাগাবি এসি এই জন্যেইতো নাক বোচা এক ছেড়ির জন্য লন্ডন তনে আইসা পরছোস!! তো দোয়া করি একদিন ঠিক এসি লাগাবি বাসায়!! বউয়ের ঘরে, নাতির ঘর, নাতনির ঘরে সবার ঘরে এসি থাকবে!! কিন্তু সেদিন আমি, তোর বাপ কেউ থাকবো না!! (বলেই মায়ের মুখ বাংলা ছবির আনোয়ারার মত করুন হয়ে গেলো!!)
যাই হোক, আম্মা যেকোন কথার মধ্যে ঘুরেফিরে আমার লন্ডন ত্যাগ আর প্রাক্তনের কথা উঠাবে আর আফসোস করবে!! আহ উহহ কেন আসলি!!! না আসলে স্বর্ণের ডিম পারতি!! আহ!!
আম্মাকে বললাম, দেইখেন আমি যেদিন বিখ্যাত হব সেদিন সবাই আমার লন্ডন ত্যাগকে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস হিসেবে পালন করবে!! বলবে আজকের দিনে আমাদের প্রান প্রিয় নীল মানুষ স্বদেশ এসেছিলেন রানী এলিজাবেতকে ছেকা দিয়ে!! সবাই স্লোগান দিবে, নীল মানুষ আসলো দেশে, উন্নয়ন হলো ঘরে ঘরে!!
-নীল মানুষটা আবার কে?? আর তুই হবি বিখ্যাত?? এইজন্যেইতো লন্ডন থেকে আইসা পরছোস!! আহ!!
আম্মার আহ উহের অবসান ঘটিয়ে এসি লাগালাম বাসায়!! শুধু আম্মা আব্বার রুমেই লাগালাম!! দুই তিন রুমে এসি লাগানোর মত ধনী আমি এখনো হই নাই!! তবে বিশ্বাস করেন আব্বা আম্মার রুমে এসি লাগানোর পর থেকে আমার গরম কমে গেছে!! আমার কাছে একটুও গরম লাগে না!! আমি রাস্তায় সূর্যের দিকে তাকিয়ে রোদে দাড়িয়ে আছি তবুও আমার গরম লাগছে না!! ঘাম বের হচ্ছে না!! কি শীতল একটা হাওয়া লাগছে শরীরে, আহ কি অদ্ভুত ব্যাপার!! এই অদ্ভুত ব্যাপারের ব্যাখ্যা কি চিন্তা করতে করতে ঠাস করে পিঠে একটা বারি খেলাম!! আম্মার হাতের তালপাখার বারি!! এই গরমে ঘুমাস কেমনে!! যা কারেন্ট আসছে তোর রুমে যা!!
-কি সুন্দর একটা স্বপ্ন দেখতাছিলাম আর দিলেন ঘুমটা ভাঙ্গায়া!!
-কি স্বপ্ন দেখতেছিলি??
-এসি নিয়া!!
-হ!!!! আর লাগাবি এসি!! এই জন্যেইতো লন্ডন তনে আইসা পরছোস!! আহ উহহহ!!
৩.লোডশেডিং নিয়ে স্ট্যাটাস
অনেকক্ষন ধরে লোডশেডিং হচ্ছে না….
যে লোকটা সুইচ অফ করে, সে ঠিক আছে তো? কেউ একটু খোঁজ নাও তো
তাড়াহুড়ায় কারেন্ট শক মক খেলো না তো?
এই গ্রমে এতো এক্সট্রা টেনশন আর ভালো লাগে না
…………………………….
……………………………….
অতি মাত্রায় গরমে বাসায় ছিড়া সুতি জামা আর চুল তাল গাছের মতো খোপা করে ফ্লোরে শুয়ে থাকা আমি,এদিকে আমাকে দেখতে এসে কাজের বুয়া ভেবে সেখান থেকে তাড়িয়ে দিয়ে অন্য কোথাও গিয়ে শুইতে বলা পাত্রের ফুফু
………………
………………………….
লোডশেডিং হলে দুই কামরার বাসাটা অন্ধকারে পুরোপুরি তলিয়ে যায়। শুরুর সাতদিন কেমন ভয় লেগে উঠতো তখন নিশার। ওর বাবার বাসায় লোডশেডিং কখনো টের পায়নি,কারেন্ট যেতো, জেনারেটর চলতে শুরু করতো। তারও আগে,যখন জেনারেটর ছিলোনা,ছোটবেলায়, তখন কারেন্ট গেলেও বারান্দা দিয়ে আলো বাতাস দুটোই আসতো। এই বাসাটা একদম নিচতলায়, দুটো ঘর আছে ঠিকই,কিন্তু বারান্দা নেই কোনো। জানালা খোলা নিষেধ, নিচতলায় চোরের উৎপাত প্রচন্ড,তাই।
ভুতূড়ে অন্ধকারে বসে থাকা অবস্থায় হঠাৎ ফোনের ভাইব্রেশনে চমকে ওঠে নিশা। এখানে আসার পর থেকে এই এক বদভ্যেস,হুটহাট চমকে ওঠার। রায়হান কল দিচ্ছে। রিসিভ না করে কেটে দিলো কল টা। ফোনের টর্চ জ্বেলে দরজার সামনে গিয়ে গলা তুললো ও,
-এসেছো?
দরজার ওপাশ থেকে রায়হানের গলা শোনা গেলো,
-হ্যা,খোলো দরজা।
রায়হান ঘরে ঢুকতেই ফোনের টর্চের আলো সোজা ওর চোখে ফেললো নিশা। বিরক্ত হতে চেয়েও পারলোনা রায়হান,হেসে ফেললো।
-চোখে আলো ফেলে কেউ? তাকাতে পারছিনা তো!
-মুখ দেখে শিওর হচ্ছি তুমিই এসেছো কিনা! যদি অন্য কেউ হয়!
-হলে আর কি…..
কথা শেষ না করেই রায়হান প্রসঙ্গ বদলালো।
-বালতিতে পানি ধরে রেখেছিলে নিশা? গোসল না করলেই না। যা গরম বাইরে….
-হ্যা ধরা আছে। গোসল করে আসো ভাত বাড়ছি আমি।
পানি চব্বিশ ঘন্টা থাকেনা। সকাল আর বিকেলে পাম্প ছাড়া হয়,তখন ই পানি তুলে রাখতে হয়। নিশা এই ক’দিনে এতে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে।
রায়হান আর নিশা বিয়ে করেছে আজ ২৩ দিন। নিশা ২৩ দিন কতো ঘন্টা কতো মিনিট সেটাও জিজ্ঞেস করার সাথে সাথে বলে দিতে পারবে। রায়হান পারবেনা। এতোকিছু মনে থাকেনা ওর। এভাবে নিশার পরিবারের অমতে বিয়ে করার কোনো ইচ্ছেই রায়হানের ছিলোনা। তাও হয়ে গেলো সবটা কিভাবে যেন,খুব দ্রুত। এই চাকরীর বেতনে সংসার চালানো কঠিন। তার ওপর গ্রামে বাবা-মাকে কিছু টাকা পাঠানো লাগে। আজ মাসের ঊনত্রিশ তারিখ। টানাটানি যাচ্ছে খুব,বাজার তো করাই হয়নি গত দুদিন। ভাত বাড়ার কথা তো নিশা বললো,রান্না করলো টা কি!
নিশার চিৎকারে ভাবা শেষ করতে পারলোনা রায়হান।
-তাড়াতাড়ি বের হও ভাত কিন্তু ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে!
নিশার কথার উত্তর না দিয়ে ধীরে-সুস্থে গোসল শেষ করে বের হলো রায়হান। ঘরের এমাথা থেকে ওমাথা কোণাকুনি দড়ি টানানো,তাতেই ভেজা কাপড় নাড়া হয়। বারান্দা নেই,নাড়ার জায়গাই বা কোথায়! গামছাটা টানটান করে নেড়ে দিতে দিতে বললো,
-গরম ভাত বলে বলে যে আমার কানের পোকা বের করে দিচ্ছো,রান্না করলে টা কি! বাজার তো করিনি আমি। আলুও গতকাল বললে শেষ। আসার পথে পেলাম না কিছু,রাত হয়ে গিয়েছে তো…
-অল্প একটু ডাল ছিলো বুঝলে। চালডাল মিশিয়ে খিচুড়ি রেঁধে ফেললাম। রান্না শেষে দেখি খিচুড়ি কেমন সাদা সাদা রয়ে গিয়েছে। সাদা খিচুড়ি খেয়েছো কখনো?
নিজের কথায় নিজেই হেসে ফেললো নিশা। রায়হানও হেসে প্লেটে সাদা খিচুড়ি তুলে নিলো।
মোমবাতির আলোও হিসেব করে খরচ করতে হয়। খাওয়া শেষ করেই তাড়াতাড়ি আলোটা নিবিয়ে দিলো নিশা। মোমবাতিরও দাম যেভাবে বাড়ছে! আর একবার কারেন্ট চলে গেলে দু’ঘন্টার আগে তো ফেরে না।
কখনো হুটহাট কয়েক মিনিটের জন্য জানালা খুলে দাঁড়ালে মাধবীলতার ঘ্রাণ পাওয়া যায়। জানালার কাছ ঘেঁষে মাধবীলতার ঝাড় আছে একটা। এই ঘ্রাণটুকুর জন্যই হয়তো দম বন্ধ হয়ে যায়না নিশার,এমনটাই লাগে তার! এই একমাসে চোখের নিচে কালি গাঢ় হয়েছে। মায়ের নাম্বারে কল দিতে গিয়েও থেমে গিয়েছে বারবার! কি হবে কল দিয়ে? রায়হান একটা ছোটখাটো চাকরী করছে,সাথে চাকরীর পরীক্ষা দিয়ে চলেছে। কবে যে সে ঠিকঠাক প্রতিষ্ঠিত হবে…. নিশা নিজেও এ্যাপ্লাই করছে আর পরীক্ষা দিয়ে যাচ্ছে। মাস্টার্স শেষ করে বসে থাকার মতো ক্লান্তি আর কিছুতে কি আছে? বহুকষ্টে দুটো টিউশনি জোগাড় করেছে সে। তাহলে রায়হানের ওপর থেকে চাপ খানিকটা কমবে। সারাদিন অফিস করে, ভীড় ঠেলে বাড়ি ফিরে,মাঝরাতে পড়তে বসে মানুষটা। মাঝেমাঝে নিশার মনেহয়,হয়তো হুট করে বিয়ের সিদ্ধান্তটা সে ভুল নিয়েছিলো। নিজের জন্য আফসোস না,রায়হানের জন্যই এমনটা মনে হয় তার। সংসারে টানাটানি,সে মেনে নেওয়া যায়,কিন্তু মানুষটার এতো দুশ্চিন্তা আর পরিশ্রম দেখতে ভীষণ কষ্ট হয় যে!
ছুটিরদিনের সকালটা বরাবরই দেরিতে শুরু হয়। আজকে তেমন একটা দিন।
শেষরাত থেকেই ঝুমবৃষ্টি। এজন্যই ভোরের দিকে ঘুমটা গাঢ় হয়েছে আরো। দুপুরে খাবারের পর সবে বিছানায় গা এলিয়েছে নিশা। ঘুমঘুম ভাব এসেই গিয়েছিলো। হঠাৎ লাফিয়ে উঠলো। উঠে বসে দেখে,রায়হান পায়ের কাছে বসে ওর পায়ে সুড়সুড়ি দিচ্ছে আর মিটিমিটি হাসছে। লাফিয়ে সরে গিয়ে বালিশ ছুঁড়ে মারলো রায়হানের দিকে।
– খুব বাঁদরামো শেখা হয়েছে,না?
বালিশটা একহাতে সরিয়ে আরেকহাতে নিশাকে নিজের কাছে টেনে নিলো রায়হান।
-বাঁদরামো ঘরে না করলে কোথায় করবো বলো!
-বাহ্! কথাও শিখেছো!
-নিশা। ওঠো। চটপট রেডি হওতো! পনেরো মিনিট সময় দিলাম।
-মানে কি! রেডি হয়ে কোথায় যাবো!
-জানিনা রেডি হও তুমি। কতোদিন সাজগোজ করোনা! আয়নায় দেখেছো নিজের মুখটা?
হেসে ফেললো নিশা। বললো,
-কিভাবে দেখবো বলো? আমাদের ঘরে আয়না নেইযে! তোমার চশমাটা খুলে দাও নিজেকে দেখি!
আয়না কেনা হয়নি বলে মন খারাপ করতে গিয়েও নিশার বলার ভঙ্গিতে না হেসে পারলো না রায়হান।
-চশমা চোখেই থাক,তুমি মুখ সামনে এনে আমার চশমাতে নিজেকে দেখো,আর আমি তোমাকে দেখি!
-উফফ…. এই,শুনো।
নিশার গলার কাছের কয়েকটা চুল হালকা করে সরালো রায়হান।
-হু। বলো।
-তুমি যখন ভালো একটা জব পাবে,আমিও পাবো, তখন যখন আমরা নতুন একটা বাসায় উঠবো,ওটায় বড় একটা বারান্দা থাকবে,হু?
-হু। থাকবে। আর?
-আর…. বড় আয়না থাকবে। মাথা থেকে পা পর্যন্ত দেখা যাবে এরকম।
-দেখা গেলে কি হবে?
-তেমন কিছুনা। তুমি আর আমি পাশাপাশি দাঁড়ালে কেমন লাগবে সেটা দেখবো।
-হাহাহা! আচ্ছা। হবে আয়না। আর কিছু?
-আকাশী পর্দা,আর সাদা পর্দা লাগাবো। জানালায়। এরকম বাসা হতে হবে যাতে অনেক আলোবাতাস। আর বড় একটা কিচেন।
-নিশা?
-হু?
-তোমাকে খুব কষ্টে ফেলে দিয়েছি বিয়ে করে,তাইনা? এরকম ছোট্ট একটা বাসা,আলোবাতাস নেই…..
রায়হানকে থামিয়ে দিলো নিশা।
-আমি ভীষণ ভালো আছি রায়হান!
-আচ্ছা। শাড়ি পরো। চোখে কাজল দিও। বের হবো।
-ঠিকআছে।
দেখতে দেখতে আরো একটা মাস কিভাবে যেন পার হয়ে গেলো চোখের পলকেই! দুটো টিউশনির বেতন একসাথে হাতে পেয়ে নিশার অদ্ভুত লাগছে খুব! বাসার জন্য বেশ অনেক কিছু কেনা দরকার। আচ্ছা থাক। ওসব রায়হানের সাথে বের হয়ে কিনলেই হবে।
বাসায় ঢুকতে গিয়ে একটু অবাক হলো নিশা। তালাটা খোলা। রায়হান তো এতো আগে ফেরেনা! দরজা নক করতেই একমুখ হাসি নিয়ে দরজা খুললো রায়হান।
-আমিতো ভাবলাম আমার বউটা আজকে বাসায় আদৌ ফেরে কিনা!
দরজা লাগাতে লাগাতে নিশা বললো,
-কেন বলোতো?
-দাঁড়াও বলছি। ঘরে চলো আগে।
ওদের শোবার ঘরটা ছোটই। মেঝেতে জাজিম পেতে বিছানা করা। বিছানা করে খুব বেশি জায়গা আর ফাঁকা থাকেনা। তারপরও সবকিছু কেমন ছিমছাম,নিশার গোছানোর তারিফ না করে পারেনা রায়হান। শোবার ঘরের দরজায় গিয়ে যেন পা আর এগোতে চাইলোনা নিশার। জানালাগুলো বন্ধ। জানালার ঠিক পাশে দেয়ালে হেলান দিয়ে ছয় ফিট বাই তিন ফিটের একটা আয়না দাঁড় করানো। আয়নার চারপাশের কাঠে ছোট ছোট নকশা করা। পা দুটো যেন আচমকাই ভীষণ ভারী হয়ে গিয়েছে।
খুব ধীরপায়ে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো নিশা। হাত ধরে পাশেই রায়হান দাঁড়ানো । আস্তে করে রায়হান বললো,
-কি? মানিয়েছে দুজনকে পাশাপাশি?
কোনো উত্তর দিতে পারলোনা নিশা। ভীষণ কান্না পাচ্ছে অথচ চোখে পানি আসছেনা তার। গলায় কথাও আসছেনা। কিছুক্ষণ পর গলা খাঁকারি দিয়ে বুঝলো এবার কথা বলা যাবে।
রায়হানকে বললো,
-হুট করে আয়না কেনার কি দরকার ছিলো বলোতো?এমনিতেই সময়টা খারাপ যাচ্ছে,তার মধ্যে শুধু শুধু….
-শোনো বউ। বিয়ের পর তো তোমার জন্য কিছুই কেনা হয়নি! আজকে বেতন পেয়ে বাড়িতে টাকা পাঠালাম, হুট করে মনে হলো তোমার জন্য কিছু কিনি। মাসটা তো দেখতে দেখতে কোনোভাবে চলেই যাবে,বলো? রাগ করোনা প্লিজ?
-আচ্ছা, করলাম না। তুমি কি খুব ক্লান্ত? একটু বের হওয়া দরকার। বাজার করতে হবে। টিউশনের বেতন তো পেয়েছি, এমনিতেও সামলে নেয়া যাবে সব।
-দাঁড়াও ঝটপট তৈরী হয়ে নিই আগে।
একটু থেমে রায়হান আবার বলে উঠলো,
-শোনো?
-হু?
-ব্যাংকের চাকরীটা কনফার্ম হয়েছে বউ। আজকে এ্যাপয়েনমেন্ট লেটার হাতে পেলাম। এবার আমাদের বারান্দাওয়ালা বাসা,নীল-সাদা পর্দা,এবার সব হবে,দেখো তুমি! মামার দোকানের মালাই চা খাবো আজকে,ভার্সিটির সময়ের মতো। তারপর বাজার করবো। হ্যা?
নিশা কোনো কথা না বলে রায়হানের বুকে মুখ গুঁজলো। চাকরীর খবরটা শুনে হাত-পা ভীষণভাবে কাঁপছে ওর,কাজী অফিসে কাবিননামায় সই করার সময় এরকমই অদ্ভুত লাগছিলো সবকিছু।
বিয়ের পর এই প্রথম ওর চোখ থেকে কয়েকফোঁটা পানি পড়ে রায়হানের শার্টের খানিকটা ভিজিয়ে দিলো।
বাইরে মেঘ ডাকছে,বৃষ্টি নেমে গিয়েছে। কে জানে,আজ হয়তো ওদের বের হওয়া হবে। অথবা, হবেনা। না হলেই বা কি,মামার দোকানের মালাই চা, অথবা রান্নাঘরের কড়া লিকারের চা,যেটাই হোক,মানুষ তো এই দুজনই!
চা তে কী ই বা আসে যায়!
_কুঁড়েঘরে
_শুচিতা মৌমি।
……………………..
……………………..
এই গরমে দরজায় টোকা না দিয়ে হুটহাট মানুষের কক্ষে প্রবেশ করবেন না।
বলা তো আর যায় না!
…………………………
………………………………..
অতিরিক্ত গরম পড়ায় গরমের সাথে রাগ করে কম্বল গায়ে দিয়ে ফ্যান বন্ধ করে শুয়ে থাকা আমি.!
………….
৪.বিদ্যুৎ নিয়ে ফানি স্টাটাস
#japanKahini জাপানের লোডশেডিং
জাপানে কি লোড শেডিং হয়?
হয়না মানে। প্রতি মিনিটে মিনিটে হয়- আমার সবজান্তা বন্ধুর ঝটপট উত্তর। আমি ভাবলাম, ৩৩ বছর জাপানে আছি, মাত্র ৩ বার কারেন্ট যাবার কাহিনি দেখেছি। এসব সে কি বলে?
আমি নিশ্চিত সে অন্য কিছু বোঝাতে চায়। সে বললো- আগে দেখ লোড শেডিং এর মানে বুঝস কিনা।
আমি ফেসবুকে সমস্ত বন্ধুদের জিজ্ঞাস করলাম। লোডশেডিং এর মানে কি, এটার বাংলা কি। কত সুন্দর সুন্দর উত্তর। বুয়েটের ছোট ভাই পরিভাষায় দক্ষ শাহেদ বললো- “Load(ভার) Shedding( কমানো)”। বিদ্যুতের ওপর ভার কমানো কে লোড শেডিং বলা হয়।
২০ বছর আগের কথা। আমার এক জাপানি বন্ধু কে নিয়ে বাংলাদেশে গেছি। বাসায় হঠাৎ কারেন্ট চলে গেল। সে আকাশ থেকে পড়লো। একি? কারেন্ট আবার যায় নাকি?
আকাশ থেকে পড়া জাপানি কে আমি আকাশ ওঠানোর জন্য ছাদে নিয়ে গেলাম। সারা ঢাকা শহর অন্ধকার। আকাশে কি সুন্দর তারা। আমরা তাকে লোড শেডিং এর কাহিনি বোঝালাম। সে বলে উঠলো – এটা তো Power Outage।
আমাদের ইঞ্জিনিয়ার বাপজান এসে যোগ দিলেন। লোড শেডিং টা ব্রিটিশ ইংরেজি। আমেরিকা তে বলে পাওয়ার আউটেজ- যার মানে হল কারেন্ট চলে যাওয়া। বিদ্যুৎ কেটে দেয়া।
তারপর সূত্রতে ঢুকলেন।
ওহমের সূত্র মনে আছে? বৈজ্ঞানিক ও-ম সাহেব (ছিলেন একজন স্কুল টিচার) বলেছেন – কারেন্ট কে লোড দিয়ে পুরন দিলে যা হয় তা হল ভোল্ট। যেটা বিদ্যুতের পাওয়ার এর সাথে সম্পর্ক আছে। সুতরাং লোড যত কম হবে পাওয়ার তত কম খরচ হবে। লোড মানে হল বিদ্যুৎ বাতি, ফ্যান, এসি যা বিদ্যুৎ তারে ঝুলিয়ে দিলে কারেন্ট খাবে – সেইসব। বিদ্যুৎ দিয়ে যা চালাবেন সবই লোড। কয়েকদিন পর যে মেট্রোরেল চলবে সেটা ও লোড।
এখন কথা হলো লোড কমাবেন কি করে?
দুইটা উপায় আছে। লোড গুলোকে সব কাট করে দেয়া । অথবা লোড গুলো যেন কম বিদ্যুৎ খায় তার ব্যবস্থা করা।
জাপানে লোড শেডিং কিভাবে প্রতি মিনিটে মিনিটে হচ্ছে তাঁর উদাহরণ দিচ্ছি। এখানে শেডিং হয় আউটেজ হয় না। কারেন্ট চলে যায় না। বিদ্যুৎ কাটে না।
(১) এসির তাপমাত্রা – জাপানে সেই ১০ বছর আগে থেকেই গ্রীষ্মকালে এসির তাপমাত্রা ২৬ ডিগ্রি করে রাখার জন্য অনুরোধ করে এসেছেন। এবং মোটামুটি সবাই অক্ষরে অক্ষরে পালন করছেন। ২৬ ডিগ্রি তাপমাত্রায় অত অস্বস্তি হয় না। সীমিত বিদ্যুতের ওপর লোড কমে। লোড শেডিং।
(২) লিফট – জাপানে মোটামুটি প্রত্যেক লিফটের গায়ে লেখা থাকে, যদি উপরে ২ তলা পরিমাণ উঠতে হয় অথবা ৩ তলা পরিমাণ নামতে হয় তাহলে উচ্চ নম্বরের সিঁড়ি ব্যবহার করুন। বিদ্যুতের ওপর লোড কমান। লোড শেডিং।
(৩) টোকিও আর্বান ডিজাইন – টোকিও আর্বান ডিজাইনের দায়িত্ব দিয়েছেন জনপ্রিয় আর্কিটেক্ট তাদাও আনদো কে। প্রাকৃতিক আলো বাতাস ব্যবহার করে কিভাবে বিল্ডিং ডিজাইন করা যায় তা বহু বছর আগে থেকেই আর্কিট্যাকচার ছাত্রদের পড়ানো হয়। ওনার একটা ইন্টার্ভিউ শুনেছি। সেখানে আরো কিছু সংযোজন করেছেন। দুটো বিল্ডিং এর মাঝখানে যখন বাতাস প্রবাহিত হয় সেই বাতাস কে বলে “বিরু কাযে” মানে হল আন্ত-বিল্ডিং হাওয়া। এই হাওয়া কে কন্ট্রোল করা যায়। আন্ত-বিল্ডিং এর দূরত্ব আর শেপ দিয়ে। একই বাতাস কিন্তু বিল্ডিং এর শেপ আর স্পেস এর কারণে প্রাকৃতিক বাতাসের বেগ কম বেশি করানো যায়। এয়ার সার্কুলেশন বা বাতাস আন্দোলন।
বাংলাদেশে ও গ্রামীণ-ইন্টেল একটা কম খরচের এয়ার কন্ডিশন বানিয়েছিলেন। বিদ্যুৎহীন। ৫ ডিগ্রি তাপমাত্রা কমিয়ে দেয়া যায় এই টেকনোলোজিতে। কতগুলো প্লাস্টিকের কোকের বোতল ফানেল এর মত করে কেটে নিয়ে সাজিয়ে দিলে মোটা অংশ দিয়ে বাতাস ঢুকে সরু অংশ দিয়ে বের হয়। এতে বাতাসে গতি বাড়ে। চাপ কমে। চাপ কমলে তাপমাত্রা কমে। এটা যেন কার সূত্র ? পাস্ক্যাল? ঐ যে চাপ তাপমাত্রার সমানুপাতিক।
(৪) পোশাক – জাপানিরা সাধারণত অফিসে স্যুট-টাই পরে আসতেন। এসির তাপমাত্রা ২৬ ডিগ্রি রেখে আরো আরামপ্রদ করার জন্য পোশাকের ডিজাইন এবং উপাদানের ওপর নজর দিলেন। নাম দিলেন কুল-বিজ। শার্ট, গেঞ্জি, আন্ডার-গারমেন্ট সব কুল-বিজ ডিজাইন বের হল। যেদিন গ্রামীণ-ইউনিক্লো সাইন করলেন, সেদিন ইউনিক্লোর প্রেসিডেন্ট য়ানাই সান প্রফেসর ইউনুসকে তাঁর স্বপ্নের কথা বললেন। পোশাক মানুষের জন্য সভ্যতার প্রতীক। যখন ফ্যাশন নামক আভিজাত্য পোশাক শিল্পতে ঢুকল তখন পোশাকের অপচয় বাড়ল। সাথে সাথে ঐকিক নিয়মে দাম ও বাড়ল। আমরা চাই কম খরচে আরাম দায়ক পোশাক। একই আদলে জাপানে তৈরি হয় মুজি (Muji) নামক এক কোম্পানি। মু মানে “নো” জি মানে “প্রতীক বা ব্র্যান্ড”। কোন ব্র্যান্ড নেই এটাই ব্র্যান্ড। সস্তা কিন্তু আরামদায়ক পোশাকের জন্য এরা সারা পৃথিবীতে বিখ্যাত হয়ে গেল। গরম কালে এসব পোশাক পরলে ২৬ ডিগ্রি এসি হোক অথবা বাইরে হাঁটেন, শরীরে কুল ভাবটা থাকবে। বিদ্যুতের ওপর লোড কমবে। লোড শেডিং।
(৫) সৌর বিদ্যুৎ – জাপানে ২০১১ সালে পারমানবিক চুল্লীতে দুর্ঘটনার পর সৌর বিদ্যুতে মনোযোগ বাড়ালেন। নতুন যত বাড়ি বানানো হচ্ছে তাঁর মোটামুটি সব গুলোতে সৌর বিদ্যুতের অপশন থাকে। বিদ্যুতের উপর যেন লোড কমে। লোড শেডিং।
একসময় আমাদের বাংলাদেশের গ্রামীণ শক্তি ছিল পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় হোম সোলার সিস্টেম প্রোভাইডার। ২০১২ সালে তাদের সাবস্ক্রাইবার ছিল ১ মিলিয়ন। ২০১৪ সালে ওনারা নিজেদের রেকর্ড নিজেরা ভঙ্গ করেন। সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা দাঁড়ালো ২ মিলিয়ন। তারপর আর বাড়ল না। যেই গতিতে সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা বেড়েছিল তাঁর ২০ গুণ গতিতে কমতে কমতে শূন্যের কোঠায় চলে এলো। ২ মিলিয়ন পুরন ২০০ ওয়াট হলে আজ ৪ বিলিয়ন ওয়াট তৈরি হতো শুধু গ্রামীণ শক্তি থেকেই। বেঁচে যেত বিদ্যুতের ওপর লোড। লোড শেডিং।
লোড শেডিং মানে বিদ্যুৎ কেটে দেয়া না। ভার কমিয়ে দেওয়া যাতে বিদ্যুতের কারণে গুরুত্বপুর্ন কাজ গুলো বাধা প্রাপ্ত না হয়।
বিদ্যুৎ না কাটা মানে একজন ডাক্তারের হাতে একটা মুমুর্ষু রোগীর অপারেশন বন্ধ না হওয়া। একজন সন্তান সম্ভবা মায়ের কষ্ট না বেড়ে যাওয়া।
বিদ্যুৎ না কাটা মানে ফ্রিজে থাকা ঔষধ নষ্ট না হয়ে যাওয়া।
সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। সংসদে বসে ঘণ্টায় ৭০ হাজার টাকার বিদ্যুৎ নষ্ট করে বন্দনা সঙ্গীত না গেয়ে পলিসির কথা বলুন।
সরকারের দিকে শুধু তাকিয়ে থাকলে হবে না। সবার সহযোগিতা দরকার।
৫.কারেন্ট নিয়ে পোস্ট
কারেন্ট নাই জেনেও ফোন চার্জে দেওয়াকে বলে “সরলতা”
কারেন্ট আসার পর ফোনে চার্জ হচ্ছে মনে করা হলো “বিশ্বাস”
তিন ঘণ্টা পর এসে দেখলাম ভুলে সুইচ দেই নি এইটা হলো “বোকামি”
যা হয়েছে বাদ দিয়ে আবার সুইচ দেওয়াকে বলে “ক্ষমা”
সুইচ দেওয়ার সাথে আবার কারেন্ট যাওয়া কে বলে “মন ভাঙ্গা”
কারেন্ট আবার আসতে দেরি হবে ভেবে ফোন সাথে নিয়ে বাহিরে যাওয়া হলো “কনফিডেন্ট”
তিন ঘণ্টা পর বাসায় এসে শুনলেন বেরিয়ে যাওয়ার পরপরই কারেন্ট আসছে, এইটা হলো “কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা”
আবার তড়িঘড়ি করে চার্জে লাগানোর সাথে কারেন্ট যাওয়াকে বলে “ছ্যাকা”
কারেন্ট আসতে পারে ভেবে তিনঘন্টা বাসায় বসে থাকা হলো “অপেক্ষা”
তিনঘন্টা অপেক্ষা করে নিজের উপর বিরক্ত হয়ে মন খারাপ করাকে বলে “ডিপ্রেশন”
মোড়ে কারেন্ট আছে, ওখানে চার্জ দেওয়া যাবে ভেবে বাসা থেকে বেরিয়ে যাওয়া হলো “বিকল্প ব্যবস্থা”
মোড়ে যাওয়ার অর্ধেক রাস্তায় গিয়ে বুঝলেন কারেন্ট আসছে, একে বলে “প্রাক্তন ফিরে আসা”
বাসায় যাবেন কিনা মোড়ে যাবেন এইটা চিন্তা করা হলো “কনফিউশন”
বাসার কাছাকাছি আসতেই আবার কারেন্ট যাওয়াকে বলে “প্রাক্তনকে বিশ্বাস করে বাঁশ খাওয়া”
রাত বারোটা পর্যন্ত মোড়ে বসে থেকে বাসায় এসে যখন শুনলেন আর কারেন্ট যায় নি, এটাই “এক্সকে বিশ্বাস না করে ভুল করা”
এত কিছুর পর করেন্টকে মনে মনে গালি দেওয়া হলো “এক্সের পরিণতি”
……………………
………………………….
বাবা রাতে খেতে বসেছিলেন। খাবার শেষ না হতেই হটাৎ বিদ্যুৎ চলে গেল।
আমি ড্রইং রুমে টিভি দেখছিলাম।
বললাম, ‘বাবা একটু বসেন আমি চার্জ লাইট নিয়ে আসি।’
চার্জ লাইট নিয়ে দু’ মিনিট বাদে ফিরে এসে দেখি বাবার খাওয়া শেষ।
অবাক হয়ে বললাম, ‘অন্ধকারেই দেখি খাওয়া শেষ করে ফেলেছেন!’
বাবা বললেন, ‘কারেন্ট চলে গেছিল নাকি?
‘জ্বি’
‘কী যেন বাবা চোখে দেখি না। আজকাল আলো ও অন্ধকারের মধ্যে পার্থক্য করতে পারিনা।’
আমার একটা দীর্ঘশ্বাস পড়ল। বাবা যে সত্যি সত্যি চোখে দেখেন না বুঝতে বাকী রইল না।
..
বাবা আর মা দু’জনেই অসুস্থ। মা কানে কম শুনেন। বাবা নাকি চোখে দেখতে পান না। এর আগেও তাদের দু’বার ডাক্তার দেখানো হয়েছে। আজ তৃতীয় বারের মতো এলেন। ঢাকায় আমার বাসায় উঠেছেন।
পর দিন অফিস ছুটি নিয়ে দু’জনকে স্পেশালিষ্ট ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলাম। বাবার চোখের অবস্থা খুবই খারাপ। নার্ভ শুকিয়ে গেছে নাকি। দুজনকেই কয়েক দিন পরীক্ষা- নিরীক্ষার পর ঔষধ দেয়া হয়েছে।
..
গ্রাম থেকে আমার বাবা-মা আসলে আমার ন’বছরের একমাত্র মেয়ে তিতলি বাধ ভাঙা আনন্দে আত্মহারা হয়ে যায়। কিন্ত আমার স্ত্রী সোমা খানিক বিরক্ত । উনারা আসার কারনেই যে বিরক্ত তা কিন্তু না। দাদা-দাদি আসলে মেয়েটার লেখাপড়া চাঙ্গে উঠে। যতদিন তারা থাকেন ততদিন কোন রকম লেখাপড়ার ধার দিয়ে যায় না।
লেখাপড়ার কথা বললে বলে, ‘দাদা-দাদু কত কষ্ট করে গ্রাম থেকে এসেছে, কী হয় কয়দিন লেখাপড়া না করলে?’
..
তিতলি ওর দাদু ভাইয়ের ন্যাওটা। সারাক্ষন দাদুর সাথে আঠার মত লেগে থাকে। দাদুর গল্প শুনে। কখনো ভুত-প্রেতের গল্প, কখনো দৈত্য দানবের গল্প,কখনো দাদু ভাইয়ের ছোট বেলাকার গল্প ।
ও যাতে মনোযোগ দিয়ে লেখাপড়া করে এজন্য বাবা দেখি মাঝেমাঝে বানিয়েও গল্প বলেন। সেদিন শুনলাম বাবা বলছেন, শুনো দাদু ভাই তোমার বাবা কিন্তু ছোটকালে খুব ভাল ছিল। একদম দুষ্টামি করতো না। সারাক্ষণ লেখাপড়া করতো। মাঝেমাঝে আমি রেগে বলতাম, আর পড়ালেখা লাগবে না, এবার খেলগে যা । কিন্তু তোমার বাবা যেত না। পড়তেই থাকত। দাদু ভাই তোমারে কিন্তু বাবার মত হতে হবে।
শুনে আমি থ। ছোটকালে আমি ছিলাম খুব বাউণ্ডুলে টাইপের। পড়ালেখায় একদম মনোযোগ ছিল না। এমন কোন দিন ছিল না বাবার চড়,থাপ্পড় খাইনি । অথচ বাবা অবলীলায় কী সব বলে যাচ্ছেন!
..
আমার মা একটু চুপচাপ স্বভাবের। ঢাকায় আসলে সোমাকে এটা ওটা কাজে সাহায্য করেন। সোমা উচ্চশিক্ষিত মেয়ে বলেই কীনা মা তাকে সমীহ করে নাকি ভয় পায় ঠিক বুঝা যায় না।
এক বিকেলে অফিস থেকে ফিরে দেখি মা মনমরা হয়ে বসে আছেন।
বললাম, ‘কী হয়েছে মা?’
মা ভয়ার্ত গলায় বলল, ‘বাবারে একটা ভুল করে ফেলছি।’
‘কী ভুল ?’
‘গোসল করার সময় তোমার বউ নতুন একটা লাক্স সাবান দিল, হটাৎ সাবানটা হাত ফসকে ইয়েতে পড়ে গেছে ‘
আমি হেসে উঠলাম, ‘কমোডে পড়ে গেছে?’
মা মাথা নাড়ে।
‘এটা কোন ব্যাপার না মা।’
‘তোর বউ কী ভাববে?’
‘কিছুই ভাববে না। তুমিত আর ইচ্ছে করে ফেলনি। তা ছাড়া এটা তোমার ছেলের সংসার । বুক ফুলিয়ে চলতে শিখ।’
কিন্তু মা কেন জানি পারেনা।
ঘুরেফিরে প্রায় আমার মনে এই প্রশ্নটা ঘুরপাক খায়– আমি যখন ছোট ছিলাম যতোটা সহজ, স্বাভাবিক ভাবে তাদের কাছে বড় হয়েছি, অথচ এখন কেন তারা আমার কাছে ততটা সহজ, স্বাভাবিক হতে পারেনা?
মাকে একদিন জিজ্ঞেস ও করলাম। মা মৃদু হেসে এড়িয়ে গেলেন।
আরেক দিন মা’কে শুধালাম, ‘আচ্ছা মা কীসের আশায় মানুষ এত কষ্ট করে ছেলেমেয়ে বড় করে?’
‘এই যে তুই আমাকে মা বলে ডাকলি।’
আমার কন্ঠ রুদ্ধ হয়ে গেল। পরম মমতায় মাকে জড়িয়ে ধরলাম।
..
সন্ধ্যায় অফিস থেকে যখন বাসায় ফিরলাম আমার মেয়ে তিতলি ফিসফিস গলায় বলল, ‘বাবা আম্মু প্রচন্ড রেগে আছে।’
‘কেন?’
‘দাদু ভাই আমাদের নতুন ফ্লাটে পানের পিক ফেলেছে।’
আমি নীরবে অফিসের জামাকাপড় ছাড়লাম।
সোমা থমথমে চেহারায় গ্লাসে খাবার পানি দিয়ে গেল।
..
সে রাত্রে আমি একবার বাবার ঘরে ঢুকলাম। দেখলাম বাবা অন্যদিনের চেয়ে আগে ঘুমিয়ে পড়েছেন। বাবার চেহারা দেখে কেন যেন মনে হল বাবা একটা গিল্টি ফিলিংস নিয়ে ঘুমিয়েছেন। আমি একবার আলতোভাবে বাবার কপালে চুমু খেলাম।
..
রাতে ঘুমাতে গিয়ে সোমা বলল, ‘কেমন হল কাজটা?’
‘কোন কাজ?’
‘নতুন ফ্লাটে বাবা পানের পিক ফেললেন।’
‘বাবা চোখে দেখেন না । বোধ হয় খেয়াল করতে পারেনি। বুয়াকে দিয়ে যতটুকু পারো পরিষ্কার করে নিয়ো। পরে দেখা যাবে।’
সোমা কিছু একটা বলতে গিয়েও থেমে যায়।
..
এমনিতেই তিতলির টনসিলের সমস্যা। তার উপর কয়েকদিন ঘনঘন আইসক্রিম খাওয়ায় হটাৎ টনসিল আর জ্বরে ওর একাকার অবস্থা।
এদিকে বাবাও বাড়ি যাবার জন্য দিন গুনছিল।
হটাৎ সেদিন বললাম, ‘বাবা অফিসের গাড়ি কাল ফ্রি আছে। আপনারা যদি বাড়ি যেতে চান যেতে পারেন।’
বাবা ভীষণ ক্ষেপে গেলেন। ‘তোমার কি মাথা ঠিক আছে? দাদু ভাইটা জ্বরে পড়ে আছে। এই অবস্থায় ওকে ফেলে বাড়ি যাব?’
বুঝলাম নাতনীর প্রতি বাবার মায়া পড়ে গেছে। আর কথা বাড়ালাম না।
..
দু’দিন পরের এক রাত্রি । আমি আর সোমা রাতে খেতে বসেছিলাম।
খাওয়ার মাঝে সোমা একবার বলল, ‘একটা কথা বলবো?’
‘কী কথা?’
‘বাবা বোধহয় এখনি যেতে চাচ্ছে না। আরো কিছুদিন থাকতে চাচ্ছে।’
‘চাইতেই পারে, এতদিন পরে এসেছে। আপনজনদের সাথে থাকতে কার না ভাল লাগে?’
‘ কিন্তু একবার তিতলির কথা ভাববে না? গত এক সপ্তাহে একদিনও ওকে পড়াতে বসানো যায়নি।’
‘ যে কয়’টা দিন বাবা-মা আছে সে কয়েকটা দিনই তো। তারপর দেখবে ঠিক হয়ে যাবে।’
‘আর হয়েছে।’ সোমা খাওয়ার মাঝে উষ্মা চেঁপে বলল।
..
পরদিন ঘুম থেকে উঠে দেখি মা আর বাবা গ্রামের বাড়ি যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে বসে আছেন।
অবাক হয়ে বললাম, ‘কি ব্যাপার, এত সকালে?’
মা বললেন, ‘বাবারে অনেকদিন তো হল। এবার বাড়ি না গেলেই নয়।’
‘আশ্চর্য! বলা নাই কওয়া নাই হুট করে বললে কি আর যাওয়া যায়?’
বাবা বললেন, ‘তোমার অফিসের গাড়ি যদি দিয়ে আসতে পারে পারল আর না পারলে আমরা বাসেই চলে যাব।’
বাবাকে খুব জেদি মনে হল। অবশ্য ছোটকাল থেকেই দেখেছি বাবা খুব জেদি। একবার মুখে যা বলেন তাই করেন।
আমি একটু শঙ্কিত হলাম। বাবা কি আমাদের কোন কথায় কষ্ট পেয়েছেন নাকি কে জানে! শুনেছি বৃদ্ধ বয়সে বাবা-মায়েরা খুব অভিমানী হয়।
বললাম, ‘অন্তত আর দু’একটা দিন থেকে যান বাবা।’
বাবা কী যেন বলতে যাচ্ছিলেন।
মা তাকে থামিয়ে বললেন, ‘বাবারে আরো আগেই চলে যেতাম। কিন্তু তোমার বাবার এক কথা তোমার মেয়ে পুরোপুরি সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত যাবে না। প্রতিবারই তোমার বাবা এখান থেকে বাড়ি গিয়ে কয়েক দিন মন খারাপ করে বসে থাকে। ঠিকমত খাওয়া দাওয়া করে না। ঘুমের মধ্যেও তিতলি তিতলি করে।’
মুহুর্তে ঘরের পরিবেশ ভারি হয়ে গেল। এতক্ষনে সোমাও এসে আমার পাশে দাঁড়িয়েছে।
সোমা বলল, ‘কী হয় মা আরো দু’একটা দিন থাকলে?’
মা বলল, ‘বাড়িতে অনেক কাজ পড়ে আছে মা।’
সোমা একটু চুপ থেকে বাবাকে বলল, ‘ কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে ক্ষমা করে দিয়েন বাবা।’
বাবা পাল্টা গলায় বললেন, ‘আমাদের সবারই উচিত একজন আরেকজনের ভুল ত্রুটি ক্ষমা করে দেয়া।’
‘অবশ্যই বাবা ।’
..
বিল্লালকে ফোন দিয়েছিলাম গাড়ির জন্য। কিন্তু ও যে এত তাড়াতাড়ি গাড়ি নিয়ে চলে আসবে ভাবতে পারিনি।
এসেই হাকডাক। ‘স্যার চইল্লা আইছি, খালাম্মা খালুরে রেডি হইতে কন ‘
‘আচ্ছা বসো। ‘
..
ঘুম ভাঙতেই তিতলি দৌড়ে আসে।
‘তোমরা কি চলে যাচ্ছ দাদুভাই?’
‘হ্যা দাদু ভাই ‘
‘কিন্তু কেন?’
‘তুমিত এখন সুস্থ হয়ে গেছ দাদু ভাই।’
‘কে বলেছে সুস্থ হয়েছি ?
দাদুর হাতটা টেনে নিয়ে বলে ‘এই দেখ দেখ এখনো একটু জ্বর আছে..দেখ ‘
তিতলিকে জড়িয়ে বাবা আমাকে বললেন,
‘বাবারে তোমারে এখন আর এত টান লাগেনা, তোমার মেয়েটারে যত লাগে। দাদু ভাইটারে কেন এত মায়া লাগে বুঝিনা?’ বলতে বলতে বাবার গলা ধরে আসে।
মা’কেও দেখলাম শাড়ির আঁচলে চোখ মুছতে।
জানলা দিয়ে আমি দূরের আকাশে তাকিয়ে থাকি। কী অদ্ভুত এক মায়ার বন্ধন এই পৃথিবী ! কে এই বন্ধন তৈরি করে? কেনই বা করে? আদর,স্নেহ,ভালবাসা,মায়ার এই বাঁধন আছে বলেই কী পৃথিবীটা এত সুন্দর!
# সাঁজের মায়া
মেহেরাব মাশুক