কিছু জোড়া শালিকের গল্প পর্ব ৬
#তিয়াসা
লেখিকা: #Lucky_Nova
“কী হয়েছে?” উদ্ধিগ্ন হয়ে বলল প্রয়াস।
“স্যার আপায় সেই যে বাথরুমে ঢুকছে এহনো বাইর হয় নাই।” হন্তদন্ত করে বলল রেখা।
প্রয়াস চিন্তায় পড়ে গেলো। মেয়েটার কিছু হলে দোষ তো ওর ঘাড়েই পড়বে!
প্রয়াস দ্রুত সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেলো। পিছু পিছু রেখাও এলো৷ রেখাই এই বাড়ির সব কাজ করে।
প্রয়াস অফিসে চলে যাওয়ার আগে তার দায়িত্বেই মেয়েটাকে রেখে গিয়েছিলো। মেয়েটা কিছুতেই থাকতে চাচ্ছিলো না। প্রয়াসের সাথেই যেতে চাচ্ছিলো। তাও নেয় নি প্রয়াস।
কিন্তু দুপুরের পরে রেখা ফোন করে ঝামেলার কথা জানাতেই চলে এসেছে। মেয়েটা সত্যিই জ্বালিয়ে মারছে।
“আপনে যাওনের পর মেলাক্ষণ মনমরা হয়ে দাঁড়াই ছিলো। পরে আমি অনেক কষ্টে গোসলে পাডাইলাম। তারপর আর বাইরই হয় না।” পিছু পিছু আসতে আসতে বলল রেখা।
“আমার রুমের ওয়াসরুমে?”
“হ।”
প্রয়াস বাথরুমের দরজায় নক করলো।
“হেই! শুনতে পাচ্ছো? এভাবে দরজা আটকে আছো কেনো?” বলতে বলতে দরজার কাছে কান নিলো প্রয়াস। সারা শব্দ তো নেই। এতে আরো বেশিই চিন্তায় পড়ে গেলো প্রয়াস।(লেখিকা লাকি নোভা)
“হেই!”
“হের নাম জানেন না?”
“না। দরজা ভাঙতে হবে হয়তো।” ঠোঁট কামড়ে ধরে চিন্তা করতে লাগলো প্রয়াস।
“ওইত্তো খুলছে।”
রেখার কথায় চট করে ঘুরে তাকালো প্রয়াস। সত্যিই খুলেছে। কিন্তু বের হয় নি। দরজার পিছনে লুকিয়ে শুধু একটু মাথা বের করে উঁকি দিয়েছে।
প্রয়াস চোখ পাকালো।
“তোমার কমন সেন্স নেই? এভাবে দরজা বন্ধ করে বসে আছো!”
মেয়েটা প্রয়াসের ধমকে দোষীভাবে চোখ নামালো।
“বের হও। ভিতরে লুকিয়ে আছো কেনো?”
মেয়েটা দ্বিধান্বিত চোখে আরেকবার তাকালো। কিন্তু বের হলো না।
কিছু একটা আন্দাজ করে প্রয়াস রেখাকে বলল, “কী হয়েছে দেখেন তো।”
প্রয়াস বেরিয়ে গেলো।
খানিক বাদে রেখা বেরিয়ে এলো ঘরটা থেকে।
“স্যার! হে তো জামা কাপড় সব ভিজাই লাইছে। এহন পড়বে কী?”
“মানে?” চোখ মুখ কিঞ্চিৎ কুচকে বলল প্রয়াস।
“মানে গোসল করতে গিয়া জামা কাপড় সব ভিজাই ফালাইছে। এহন কী পরবো?”
“আমি কী জানি!” বিরক্ত হয়ে মুখ লটকিয়ে বলল প্রয়াস।(লেখিকা লাকি নোভা)
রেখা বোকা চাহনিতে চেয়ে রইলো।
প্রয়াস মুখ দিয়ে ‘তিক’ করে বিরক্তসূচক শব্দ বের করলো৷ তারপর কিছু একটা ভেবে বলল, “আপনার শাড়ি আছে না? সেখান থেকে একটা পরান আপাতত।”
রেখে সায় জানালো। সারাদিন এখানে থাকতে হয় বলে সে তার কিছু শাড়ি এখানে রাখে। তাই সেখান থেকে একটা পরিয়ে দিলো মেয়েটাকে।
প্রয়াসের সামনে এনে দাঁড় করিয়ে বলল, “এইযে স্যার।”
প্রয়াস তাকালো চোখ তুলে। কালো রঙের শাড়ি পরিহিতা মেয়েটির পা থেকে মাথা পর্যন্ত চোখ বুলিয়ে নিলো একবার।
রেখা যেভাবে বাঙালি স্টাইলে পরে সেভাবেই পরিয়েছে। খুব মায়াবী লাগছে।
“হের নাম তিয়াসা।”
রেখার দিকে অবাক হয়ে তাকালো প্রয়াস।
“কথা বলেছে?”
রেখা না সূচক মাথা নেড়ে বলল, “হের খাতা আছে না? খাতায় লেকছে।”
“ওহ।” ছোটো করে বলল প্রয়াস।
মেয়েটা তারমানে সত্যিই কথা বলতে পারে না। তাই ওকে সাধারণ হোস্টেলে তো রাখা যাবে বলে মনে হয় না। তাছাড়া বয়স অনুসারে ব্যবহারও কেমন অদ্ভুত। নাকি মানসিক সমস্যাও আছে?
ভাবতে ভাবতে আরেকবার মেয়েটার দিকে তাকালো প্রয়াস।
মেয়েটা আগের মতোই কোমল হাসি দিয়ে তাকিয়ে আছে ওর দিকে।
প্রয়াস চোখ সরালো। সোফা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে রেখাকে বলল, “আমার কাজ আছে৷ বের হবো আমি। ঝামেলা হলে ফোন দিয়েন। আর…দেখে রাখবেন।”
শেষ কথাটা একটু আমতাআমতা করে বলল প্রয়াস। কেনো আমতাআমতা করলো নিজেও বুঝলো না।
প্রয়াস আবার চলে যাবে শুনে মুখটা নিরাশ হয়ে গেলো তিয়াসার।
কোন ইচ্ছে না থাকলেও ত্রয়ীকে শাড়ি পরে প্রস্তুত হতে হলো। ভিতরে ভিতরে তোলপাড় চলছে একপ্রকার। আজই সব ঠিক হয়ে যাবে। তারপর ইচ্ছে না থাকলেও এই লোকটাকে ওর বিয়ে করতে হবে।
এটুকু চিন্তা করেই তো বুকের ভিতরে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। এদিকে নুহাসের খবর নেই। এখনো ফোন বন্ধ। এতো খামখেয়ালী হলো কী করে সে!
খুব কান্না পাচ্ছে ত্রয়ীর। হাতের মুঠোয় ফোনটা চেপে ধরে বিমর্ষচিত্তে তাকিয়ে আছে আয়নার দিকে।
“এখনো বসে আছিস! হায়রে মেয়ে লিপস্টিকও দেয় নি।” আহাজারি করতে করতে ঘরে ঢুকলেন সাবিহা।
মায়ের আওয়াজে ধ্যান ভাঙলো ত্রয়ীর। নড়েচড়ে বসলো।
“জলদি কর।” তাড়া দিয়ে বলতে বলতে কাছে এসে দাঁড়ালেন তিনি।
“সাজতে ভালো লাগছে না।” নির্লিপ্ত কণ্ঠে বলল ত্রয়ী।
সাবিহা মুচকি হাসলেন। জোর করলেন না। কারণ তিনি জানেন যে তার মেয়ে সাজতে পছন্দ করে না।
“আচ্ছা চল। নিচে অপেক্ষা করছে সবাই।”
সাবিহা নিচে নিয়ে এলেন ত্রয়ীকে। বসার ঘরে ঢুকতে ঢুকতেই ত্রয়ীর বাবা, ফারুক আহমেদ হাসিমুখে বলে উঠলেন, “এইতো এসে গেছে।”
নীল তাকালো ত্রয়ীর দিকে। অবশেষে অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে এসেছে সে।
ত্রয়ী ম্লান হেসে সালাম দিলো সামনে বসা ভদ্রলোক আর তার স্ত্রীকে। তারা প্রসন্ন হেসে জবাব দিয়ে বসতে বললেন ত্রয়ীকে।
নীল ততক্ষণে পূর্ণদৃষ্টিতে দেখে নিলো ত্রয়ীকে। লাল পাড়ের সাদা শাড়িতে তার প্রেয়সীকে দেখতে একদম অন্যরকম সুন্দর লাগছে।
নীলের মুখোমুখি সামনের একটা সোফাতে ত্রয়ীকে বসিয়ে দিলেন সাবিহা। ত্রয়ী বসতে বসতেই আনমনে একবার তাকালো নীলের দিকে।
আর সেই মূহুর্তেই হাসিসমেত চোখ মারলো নীল।
অনেক বেশিই অপ্রস্তুত হয়ে গেলো ত্রয়ী। চোখ নামিয়ে মাথা নিচু করে ফেললো। ধুকধুক করে উঠলো বুক।
মনে মনে বিড়বিড়ালো,’বেয়াদব লোক।’
ত্রয়ী আর একবারো মুখ তুলে তাকালো না। দৃষ্টি নামিয়ে মুখটা বিমর্ষ, মলিন, ফ্যাকাসে করে এক ধ্যানে বসে রইলো। ঘুম ভাঙার পর সারারাত আর ঘুম হয় নি চিন্তায়। নুহাস ফোন ধরে নি। ফোন করেও নি।
তবে চোখ নামিয়ে রাখলেও ত্রয়ী ঠিক বুঝতে পারছে যে লোকটা ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। একদম সরাসরি তাকিয়ে আছে। নির্লজ্জের মতো।
“আমি ত্রয়ীর সাথে আলাদা কথা বলতে চাই।”
আচমকা এমন কথায় চমকে তাকালো ত্রয়ী। সবাই কথাবার্তা থামিয়ে চুপ হয়ে গেলো কয়েক মুহূর্তের জন্য।
নীলের চোখে চোখ পরতেই চোখ নামালো ত্রয়ী। লোকটা একদম সরাসরি চোখের দিকে তাকিয়ে আছে।
“হ্যাঁ, হ্যাঁ, অবশ্যই। তোমাদেরই তো কথা বলতে দেওয়া উচিত।” বললেন ত্রয়ীর বাবা।
মহা ঝামেলায় পড়ে গেলো ত্রয়ী। এই লোকের সাথে আলাদা কথা বলার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে ওর নেই।
কিন্তু ইচ্ছে না থাকলেও বা কী করার?
পাশের একটা রুমে একসাথে কথা বলতে দেওয়া হলো ওদের দু’জনকে।
ত্রয়ীকে সেই ঘরে দিয়ে ওর মা চলে যেতে চাইতেই ত্রয়ী শক্ত করে চেপে ধরলো তার হাত।
সাবিহা তাকালেন সন্দিহান চোখে। চোখের ইশারায় বললেন ‘কী?’
ত্রয়ী বলতে চাইলো ‘তুমিও থাকো’। কিন্তু বলতে পারলো না।(লেখিকা লাকি নোভা)
সাবিহা মুচকি হেসে বললেন, “বাহিরে আছি।”
হাত ছাড়িয়ে বেরিয়ে চলে গেলেন তিনি।
হাঁসফাঁস লাগাটা শুরু হয়ে গেলো তখনি। এতসময় রাগ লাগলেও এখন লাগছে ভয়।
নীল ঘরে ঢুকেই দরজাটা একদম ভিড়িয়ে দিলো। ত্রয়ীর ভয়টা বাড়লো আরেকটু। ফাঁকা ঢোক গিলে আড়চোখে তাকালো ও।
নীল ওর আগাগোড়া দেখে নিয়ে মুচকি হেসে প্রশ্ন করলো, “ভয় পাও আমাকে?”
ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো ত্রয়ী। তাও নিজেকে সামলে ঝট করে উত্তর দিলো, “ভয় কেনো পাব?”
“তাহলে আমার দিকে তাকাচ্ছো না কেনো?” পকেটে হাত গুজে কটাক্ষ করে বলল নীল।
ত্রয়ী উত্তর দিলো না। আর না তাকালো। তবে বুঝতে পারলো ওর হাত কাঁপছে। নিঃশ্বাস আটকে আসছে। অদ্ভুত তো!
নীল কিছু একটা চিন্তা করে মৃদু হাসলো। তারপর দ্রুতপদে এগিয়ে গেলো ত্রয়ীর কাছে। ঝড়ের বেগে পিছিয়ে গেলো ত্রয়ী। আতঙ্কিত চোখ করে তাকালো নীলের দিকে।
“বলেছি না ভয় পাও!” হাসিটা আরেকটু বাড়লো নীলের।
চোখ সরিয়ে ঢোক গিললো ত্রয়ী। মনটা ছটফট করতে লাগলো পালানোর জন্য।
“নুহাস ভালো ছেলে না।”
আচমকা এমন কথায় সংকুচিত চোখে তাকালো ত্রয়ী।
“কী বলতে চান আপনি?”
নীল বুকের কাছে হাত গুজে স্বাভাবিক মুখে বলল, “সোজা বাংলায় বললে মেয়েবাজ।”
ত্রয়ীর রাগ হলো খুব।
“আপনি না জেনে শুনে…।”
“না জেনে শুনে আমি কিছু বলি না।” ত্রয়ীর কথার মধ্যেই বলে উঠলো নীল।
“আমি বিশ্বাস করি না। আমাকে বিয়ে করতে চান বলে ওর নামে এভাবে মিথ্যা বলছেন আপনি।”
“মিথ্যা বলে আমার কী লাভ?”
“যাতে আমাকে বিয়েতে রাজি করাতে পারেন।” কটা কটা কণ্ঠে উত্তর দিলো ত্রয়ী।
“বিয়ে তো ঠিক হয়েই গেছে। নতুন করে রাজি করানোর কী আছে?”(লেখিকা লাকি নোভা)
ত্রয়ী কিছু বলতে চেয়েও বলল না। কারণ তর্ক করে লাভ নেই। লোকটা বিয়ে করার জন্যই এসব উলটোপালটা কথা বলছে।
ত্রয়ীকে নিশ্চুপ দেখে নীল গম্ভীর কণ্ঠে বলল, “প্রমাণ দিতে চাই। সহ্য করতে পারবা?”
ত্রয়ী কপাল কুচকে প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকালো।
“কীসের প্রমাণ?”
“যা বলেছি তার প্রমাণ।”
“আমার এসবের কোনো দরকার নেই।”
“কেনো?” ভ্রু উঁচিয়ে বলল নীল।
“সেটা আপনার না জানলেও চলবে।” কথাটা বলেই পাশ কাটিয়ে যেতে চাইলো ত্রয়ী। কিন্তু সেদিনের মতো আবার পথ আটকে সামনে দাঁড়িয়ে গেলো নীল।
হুট করে সামনে দাঁড়িয়ে যাওয়ায় একটু চমকে গেলো ত্রয়ী। ঢোক গিলে আবার পাশ কাটাতে চাইতেই একই কাজ করলো সে।
না চাইতেও অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো ত্রয়ী।
“আমার কথা শেষ হয় নি।” ভরাট গলায় বলল নীল।
“আমি বিশ্বাস করি না। আর না আমি সন্দেহ করি।” দরাজ কণ্ঠে বলল ত্রয়ী।
নীল সূচালো দৃষ্টিতে তাকিয়ে ত্রয়ীর দিকে এগুতেই ভ্যাবাচেকা খেয়ে পিছিয়ে যেতে লাগলো ত্রয়ী।
ভ্রু কুচকে বলল, “আপনি কিন্তু…।”
“আমি কিন্তু?”
“আগাচ্ছেন কেনো আপনি?” ভয় ভয় ভাবটা লুকানোর চেষ্টা করেও পারলো না ত্রয়ী।
পিছনের আলমারিতে পিঠ ঠেকে যেতেই দাঁড়িয়ে পড়তে হলো ওকে।
নীল আলমারির একপাশে হাত রাখতেই গুটিশুটি মেরে গেলো ত্রয়ী।
“বেশি বিশ্বাস করা ভালো না।” নির্লিপ্ত চাহনিতে চেয়ে বলতে অপর পাশেও হাত রাখলো নীল।
তটস্থ হয়ে পড়লো ত্রয়ী। না জানে আজ কী করে বসে।
নীল চুপচাপ কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো ত্রয়ীর দিকে। পিটপিট করা চোখ, ঘেমে যাওয়া নাক, কম্পিত ঠোঁট। সব দেখতে লাগলো খুটিনাটি।
দেখতে দেখতে হুট করে ত্রয়ীর দিকে ঝুঁকতেই চমকে তাকালো ত্রয়ী। বুক ধুকপুক করে উঠলো ভয়ে।
“ভীতুর ডিম।” মুচকি হেসে বলল নীল।
কপাল কুচকে চোখ নামালো ত্রয়ী।
নীল পাশে সরে দাঁড়িয়ে দরজার দিকে ইশারা করে বলল, “চলো।”
ছাড়া পেয়ে একরকম পালিয়ে বাঁচার মতো করেই অতিদ্রুত ছুটে বেরিয়ে গেলো ত্রয়ী। ওর শ্বাস আটকে ছিলো এত সময়।(লেখিকা লাকি নোভা)
পুনরায় এসে বসলো ওরা৷ আর বসেই নীল আগেভাগে বলল,”আমাদের কোনো আপত্তি নেই। আমরা দু’জনেই রাজি।”
কথাটা বলেই ত্রয়ীর দিকে তাকালো ও।
ত্রয়ী বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে আছে। আপনাআপনি মুখটাও হা হয়ে গেছে ওর।
সবাই শুনে খুশি হলো বেশ।
ত্রয়ীর দিকেই তাকিয়ে থেকেই পুনরায় নীল বলল, “আমি চাচ্ছি বিয়েটা দুইদিনের মধ্যেই পড়ানো হয়ে যাক। পরে সুবিধা অনুযায়ী অনুষ্ঠান করা যাবে।”
একথায় পীলে চমকে উঠলো ত্রয়ীর। বিবর্ণ রূপ ধারণ করলো ওর মুখটা।
বাসন্তী আর রুদ্রদীপ চৌধুরী হেসে ফেললেন ছেলের কথায়।
তবে ফারুক আহমেদ আর সাবিহা বেশ ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলেন। কারণ এত শীঘ্রই বিয়ে পড়ানোর কথা ভাবেনই নি তারা।
তবে আপত্তি করলেন না। চেনাজানা ভালো পরিবার। ছেলেও ভালো। তাহলে আর সমস্যা কোথায়? তাছাড়া ঘরোয়া ভাবে বিয়ে হয়ে থাকুক। পরে নাহয় ঘটা করে আবার করা যাবে।
রাজি হয়ে গেলেন তারা।
মূহুর্তেই পায়ের নিচের মাটি সরে গেলো ত্রয়ীর। হৃদস্পন্দন থেমে গেলো যেন।
নীল গম্ভীর চোখে তাকিয়ে দেখেলো ত্রয়ীকে। বুঝতেও পারলো সবটা। দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে ভাবতে লাগলো নুহাসের সত্যিটা জানলে ত্রয়ী এর চেয়েও বহুগুণ বেশি কষ্ট পাবে।
ক্যান্ডেল খুব পস্তাচ্ছে এই প্রজেক্টে অংশগ্রহণ করতে গিয়ে। এই লোকটার সাথে সত্যিই কাজ করাটা সত্যিই অসম্ভব। একে তো চরিত্রহীন তার উপর নজরটা কী জঘন্য। ছি!
ভাবতেও কেমন লাগে যে এই লোকটা ওইদিন রাতে…। চিন্তা করতেই রাগে ঘৃণায় নাক মুখ কুচকে এলো ক্যান্ডেলের। ফোঁস করে নিঃশ্বাস ত্যাগ করলো কয়েকটা। ঠান্ডা করলো মাথা।
টপসের উপরের স্কার্ফটা ঠিকঠাক করে নিলো। ভালো মতো চেক করে নিলো ড্রেস আপ ঠিক আছে কিনা। লুচ্চা লোকটাকে বিন্দুমাত্র বিশ্বাস নেই ওর।
ক্যান্ডেল সবগুলো ফাইল রেডি করে ইভানের কেবিনের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে বেশ কিছুক্ষণ হচ্ছে। কিন্তু ঢুকতে ইচ্ছে করছে না। ইচ্ছে করছে চলে যেতে। কাপুরুষটার সামনেও না যেতে। কিন্তু চাইলেই সব পারা যায় না।
অবশেষে মুখ দিয়ে একটা বিরক্তিকর নিঃশ্বাস ফেলে ক্যান্ডেল নক করলো দরজাতে।
ভিতর থেকেই আওয়াজ এলো, “Come in.”
স্বর শুনেই যেন গা রি রি করে।
ক্যান্ডেল লম্বা শ্বাস টেনে নিয়ে ঢুকে পড়লো ভিতরে। আর ঢুকেই ইভানের সাথে সরাসরি চোখাচোখি হতেই বিরাট অস্বস্তিতে শরীর ঝিমঝিম করে উঠলো। তাড়াতাড়ি দৃষ্টি সরিয়ে অন্যদিকে চোখ ঘুরাতে লাগলো ক্যান্ডেল।
ইভান চেয়ারে হালকাভাবে গা এলিয়ে দু’হাত একত্রে ধরে নির্বিকার চিত্তে তাকিয়ে রইলো ক্যান্ডেলের দিকে।
ক্যান্ডেল শত করে চাচ্ছে এখনই ও অদৃশ্য হয়ে যাক। এই অসভ্য লোকের চোখের সামনে থেকে আড়াল হয়ে যাক৷ কিন্তু তা হলো না।
কয়েক সেকেন্ড দাঁড়িয়ে থেকে ক্যান্ডেলের মনে হলো ওরই কিছু বলা উচিত। সামনে এগিয়ে যাওয়া উচিত। কিন্তু আড়ষ্টতায় না স্বর বের হতে চাইছে আর না পা নড়তে চাইছে।
ইভান চুপচাপ ক্যান্ডেলের পা থেকে মাথা অব্দি চোখ বুলাতে লাগলো।
ধূসর রঙের লং টপস। কালো স্কার্ফ। আকাশী রঙের জিন্স। গতকালের পোশাকের চেয়ে আজকের পোশকের ধরণ আলাদা। বেশ মার্জিত। এর কারণ বুঝতে অবশ্য ইভানের বেশি সময়ও লাগলো না। আর বুঝতেই অতি সুক্ষ্মভাবে হাসলো সে।
ক্যান্ডেল সরাসরি না তাকালেও খুব ভালো করেই বুঝলো যে ইভান ওকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে।
রাগে চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো ক্যান্ডেলের। এগিয়ে এসে টেবিলে ফাইলগুলো রেখে থমথমে গলায় বলল, “সব কমপ্লিট।”
চোখের দিকে তাকালো না ক্যান্ডেল। সেটাও খেয়াল করলো ইভান।
“প্লিজ!” ফাইলগুলো একহাত দিয়ে টেনে নিতে নিতে অন্যহাত উলটে বসার জন্য ইশারা করে বলল ইভান।
ইচ্ছা না থাকলেও বসতে হলো ক্যান্ডেলকে। কারণ ইভান ফাইলগুলো চেক করে দেখা অব্দি ওর বসে থাকতে হবে।(লেখিকা লাকি নোভা)
ক্যান্ডেল দৃষ্টি টেবিলের উপর নিবদ্ধ করে চুপচাপ বসে রইলো নিজের মতো। চেষ্টা করলো যথাসম্ভব অস্বস্তি ভাবটা লুকিয়ে স্বাভাবিক থাকার।
বেশ সময় নিয়ে সব চেক করে দেখলো ইভান। তারপর ফাইলগুলো ঠেলে ক্যান্ডেলের দিকে এগিয়ে দিতে দিতে নির্লিপ্ত কণ্ঠে বলল,”কিছুই হয়নি। আবার করতে হবে।”
কপাল কুচকে এলো ক্যান্ডেলের। কিছুই হয়নি মানে কী? আর এত কষ্ট করে করা কাজ আবার কেনো করতে হবে?
“সব তো ঠিকই আছে। আবার কেনো করতে হবে?”
“সমস্যা আছে তাই।”
মেজাজ খিঁচড়ে গেলো ক্যান্ডেলের। কটাকটা গলায় প্রশ্ন করলো, “কী সমস্যা আছে?”
“সেটাও আমি বলে দেবো?” তাচ্ছিল্যের সাথে বলে চেয়ারে হেলান দিলো ইভান।
পুরো শরীর দাউদাউ করে জ্বলে যেতে লাগলো ক্যান্ডেলের। লোকটা যে ফালতু সেটা ভুলেই গিয়েছিলো ও।
“যাও আর ঠিক করে নিয়ে আসো।”
ক্যান্ডেল দাঁতেদাঁত চিপলো। কর্মক্ষেত্রের বাহিরে হলে আলাদা কথা ছিলো। কিন্তু তা নয়। তাই সে যা বলবে সেটাই করতে হবে। ক্যান্ডেল আর তর্কে না গিয়ে ফাইলগুলো গুছিয়ে নিতে লাগলো। মনে মনে কতক গালিও দিয়ে ফেললো ইভানকে। সাথে খুনও করলো কয়েকবার মনে মনে।
ফাইলগুলো গুছিয়ে নিয়ে চলে যাওয়ার জন্য ঘুরে দাঁড়াতেই ইভান ডাকলো, “মিস ক্যান্ডেল।”
বিরক্তিতে চোখ বন্ধ করে আবার খুললো ক্যান্ডেল। তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে ঘুরে তাকালো তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে।
ইভান ওর চেয়ারের পাশ থেকে একটা শপিং ব্যাগ তুলে টেবিলে রাখলো। একটু সামনের দিকে ঠেলে দিয়ে চোখের ইশারায় সেটা নিতে বলল ক্যান্ডেলকে।
ভ্রুদ্বয় কুচকে এলো ক্যান্ডেলের।
ফাইলগুলো একহাতে ধরে এগিয়ে গিয়ে হাতে নিলো শপিং ব্যাগটা।
কপাল কুচকে ব্যাগের ভিতরে লক্ষ্য করতেই লজ্জা, রাগ আর অপমানে ঝনঝন করে উঠলো সারা শরীর।
“এটা দিয়ে আমার কোনো কাজ নেই।” সুক্ষ্ম হাসি দিয়ে বলল ইভান।
লাল হয়ে গেলো ক্যান্ডেলের মুখশ্রী। আর একমুহূর্তের জন্য দেরি না করে বেরিয়ে গেলো কেবিন থেকে।
(চলবে…)
লেখিকা – লাকি নোভা
(গল্প কপি সম্পূর্ণ নিষেধ।)
(ভুল ধরিয়ে দিয়েন)