সম্পূর্ণ সত্য ঘটনা অবলম্বনে পর্ব ৮
গল্পঃ কুল-বড়ই ( পর্ব : ৮ )
ফজরের শেষে লোকমান বাড়ি এসে দেখে তার ছোট ভাই বাড়ির উঠোনে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে! হাত পা ঠান্ডা! তার একপাশে সাইকেলটিও পড়ে আছে! তার চোখে মুখে পানির ছিটা দিতেই জ্ঞান ফিরে আসে। তার শরীরে তখন অনেক জ্বর। তার কি হয়েছে জিজ্ঞেস করতেই সে রাতের পুরো ঘটনা খুলে বলে! লামিয়া আমাকে হাত বাড়িয়ে কোলে তুলে নিতে বলে, তারপর আমার আর কিছু মনে নেই।
লিয়াকতের জ্বর চার পাঁচ দিন ছিল। জ্বর ভালো হলেও রাতে স্বপ্ন দেখতো ঐ ঘটনা আর চিৎকার দিয়ে উঠতো।
এর মধ্যে লোকমান তার স্ত্রী কে হাসপাতাল থেকে বাড়ি নিয়ে আসে। তাদের ছোট্ট মেয়েটিকে ঘিরে তাদের হাসি খুশি আর পরম আনন্দে দিন কাটতে থাকে। এবার তারা খুব যত্ন আর আদর দিয়ে বাচ্চাটিকে বড় করতে থাকে। তার নাম রাখে লাবিবা। সবার পছন্দেই এই নাম রাখা হয় বাড়িতে হুজুর ডেকে এনে। সবাই লামিয়ার বোন লাবিবা নামটি সুন্দর হবে বলে ভোট দেয়। লাবিবা অর্থও ভালো। জ্ঞানী বা বুদ্ধিমতী! তাছাড়া বাচ্চাটি দেখতেও ঠিক লামিয়ার মত হয়েছে। সবাই বলে কি অবাক্ ব্যাপার দেখে মনে হয় লামিয়ার জমজ বোন। আল্লাহ্’র কি মেহেরবান !লোকমান আর তার স্ত্রী বলে আল্লাহ্ আমাদের মেয়ে লামিয়াকে নিয়ে গিয়ে আবার আমাদের মাঝে ফিরিয়ে দিয়েছে লাবিবা রুপে। সে আমাদের লামিয়াই।
লোকমান যে ঘরে থাকতো ঐ ঘরের খাটের কাছেই ছোট্ট একটি জানালা ছিল। জানালা খুললে পুরো বাগান দেখতে পাওয়া যেত। একদিন রাতে লোকমান থুথু-কফ ফেলতে জানালা খুলতেই দেখতে পায় মেয়ের কবরের উপর একটা আলো মিটমিট করে জ্বলছে। পরে জানালা লাগিয়ে দিয়ে একটু ফাঁক রেখে দেখার চেষ্টা করে কিন্তু একটা বাতাস এসে ঐ আলোটা নিভিয়ে দেয়। এরপর প্রায় প্রতি রাতেই সে ঐ আলোটাকে চুপিচুপি দেখে। আলোটা অনবরত জ্বলতে থাকে। বাতাসে দোলে না। লোকমান অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে মেয়ের কবরের দিকে। মাঝে মাঝে দীর্ঘশ্বাস ফেলে আর আল্লাহর কাছে মেয়ের জন্য দোয়া করে। কবরের দিকে তাকালে লোকমানের স্মৃতিতে ভেসে উঠে লামিয়ার হেসে খেলে বেড়ানোর সব দৃশ্য । তাই সে সুযোগ পেলে জানালা খুলে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। এখন আর ভয় লাগেনা! তবে কষ্ট হয়! নিবৃত্তে কাঁদে! বড় আদরের বুকের ধনকে বাগানে মাটির নিচে শুইয়ে রেখেছে ভাবতেই কষ্ট হয়! মাঝে মাঝে ভাবে মাটির নিছে মেয়েটা একা একা কি জানি করে!? কেমন করে দিন কাটায় রাত কাটায়!? তার কি খুব কষ্ট হয়!? মনে হয় খুব কষ্ট হয় তাইতো সেদিন রাতে এসে দরজা ধাক্কিয়ে আমাকে ডেকে বলে যায়, “আব্বু দরজা খোলো, আমি লামিয়া! তোমরা আমাকে বাহিরে রেখেছো কেন!? আমার খুব কষ্ট হয়! আমার দোলনা খুলেছো কেন!? আমি তোমাদের মাঝখানে ঘুমাতে চাই!” এই ভেবেই লোকমান হু হু করে কেঁদে উঠে!
মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে কন্যা সন্তান পিতা মাতার জন্য একটি বিশেষ শ্রেষ্ঠ নিয়ামত! ভাগ্যবানদের আল্লাহ নেয়ামত হিসাবে উপহার দেন কন্যা সন্তান! রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেন, যার গৃহে কন্যা সন্তান জন্মগ্রহন করল, অতঃপর সে তাকে কষ্টও দেয়নি,তার উপর অসন্তুষ্ট ও হয়নি এবং পুত্র সন্তানকে প্রাধান্য দেয়নি, তাহলে ঐ কন্যার কারনে মহান আল্লাহ তায়ালা তাকে বেহেশতে প্রবেশ করাবেন! তিঁনি আরো বলেন, যে ব্যক্তির তিনটি কন্যা সন্তান বা তিনজন বোন আছে অথবা দুজন কন্যা সন্তান বা বোন আছে! সে তাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করেছে এবং তাদের ব্যপারে আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করেছে! তার জন্য রয়েছে জান্নাত! তাইতো আমাদের নবীজির কাছে কন্যা সন্তান সবচেয়ে প্রিয় !
বাবার দুনিয়াটা মনে হয় কন্যা সন্তানই হয়! লোকমান আল্লাহর কাছে পরিয়াদ করে বলে, আল্লাহ তুমি আমার মেয়ের কষ্ট লাগব করে দিও! আমার বুকের ধনকে তোমার কাছে আমানত রাখলাম! তুমি হেফাজত করো!
এরপর প্রায় পাঁচ ছয় মাস কেটে যায়।
তাদের পরের মেয়েটির প্রতিও তাদের আদর মমতা বাড়তে থাকে। মেয়েকে ঘুম পাড়িয়ে যখন তার স্ত্রী এদিক সেদিক যায় তখন ফিরে এসে দেখে মেয়ে শুয়ে শুয়ে একদিকে উপরের দিকে তাকিয়ে খিলখিল করে হাসছে। দেখলে মনে হবে কারো সাথে হাসছে খেলছে। অথচ দুই তিন মিনিট হবে ঘুম পাড়িয়ে গেছে। সামনে আসতেই অনুভব করতে পারে একটা বাতাস শোঁ করে চলে যেতে। লোকমানের স্ত্রী তাতে খুব একটা বিচলিত নয়। ভাবে হয়তো বাচ্চা মানুষ ফেরেশতার সাথে হাসে কথা বলে খেলে। লাবিবাকে বিচানায় শুইয়ে রেখে সে বাড়ির কাজ সামলায়। রান্নাবান্না করে। গোসল করে নামাজ পড়ে। লোকমান সারাদিন অফিস করে দিন শেষে প্রতিনিয়ত বাড়ি ফেরে। ছোট ভাই লিয়াকতও তার কলেজ লেখাপড়া নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটায় রাতদিন। বাড়িতে মা মেয়ে দুজন দুজনার। দিনভর সময় কাটে মাকে নিয়ে মেয়ের, মেয়েকে নিয়ে মায়ের।
একদিন দুপুর বেলা লোকমানের স্ত্রী ঘরের কাজ শেরে লাবিবাকে বিছানাতে শোয়াই রেখে পুকুরে গোসল করতে যায়! গোসল শেষে ঘরে এসে যা দেখে তা রীতিমতো বিস্ময়ের এবং উদ্বিগ্নের! যা সে কখনো আশা করেনি এমন কি ভাবেনি ঠিক তাই ঘটলো! সে ঘরে এসে লাবিবার খেয়াল নিতেই লাবিবার দিকে তাকাতেই দেখে বিছানার উপর লাবিবার পাশে বসে আছে লামিয়া !!
চলবে….
#Imran_Khan_Ratan
#কুল_বড়ই