অন্তর্হিত কালকূট
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
১৬.
ধীরে ধীরে চোখ মেলে চাইল রুদ্র। তীব্র আলোর ছটা অনুভব হওয়াতে সাথেসাথেই চোখ বন্ধ করে ফেলল। মাথাটা ঝিঝি করে উঠল হঠাৎ। কয়েক সেকেন্ড চোখ বুজে থেকে আবার পিটপিট করে চোখ খুলে তাকাল। প্রথমে তাকাতে কষ্ট হলেও আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হল দৃষ্টি। না, আলো তীব্র নয়, স্বাভাবিকই আছে। দীর্ঘ সময় পর চোখ খোলার কারণেই হয়তো এমনটা হয়েছে। রুদ্র আস্তে করে উঠে বসল। চারপাশে তাকিয়ে দেখল ঘরটা অপরিচিত। অফ-হোয়াইট পেন্ট করা রুমের ধসা দেয়াল। সারাঘরে তেমন কোন আসবাবপত্র নেই। একটা বিছানা যেটাতে ও শুয়ে ছিল, তার পাশে একটা টি-টেবিল আর পশ্চিম পাশে একটা আলমারি। এটাচড বাথরুমও আছে। কয়েক সেকেন্ডেই ব্যপারটা বুঝে ফেলল রুদ্র। আনমনেই হাসল খানিকটা। লম্বা একটা হাই তুলে চলে গেল ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে। ভালোভাবে চোখে-মুখে পানির ঝাপটা দিয়ে ঘুম ভাবটা কাটিয়ে ফেলল। আয়নায় নিজের মুখের আদলের দিকে গভীরভাবে দেখল কিছুক্ষণ। ওর গায়ে পাতলা কালো একটা টিশার্ট আছে। টিশার্টটা ওরই। রাতেতো খালি গায়ে শুয়েছিল। ভদ্র কিডন্যাপার! ওয়াশরুমে টাওয়েল রাখাই ছিল। ওটা দিয়ে মুখটা ভালোভাবে মুছে বেরিয়ে এলো ওয়াশরুম থেকে। ঘরের দরজাটার দিকে একবার তাকিয়ে বিছানায় বসল। চারপাশটা ভালোভাবে তাকিয়ে দেখল। বের হওয়ার দরজা একটাই যেটা বাইরে দিয়ে আটকানো, এমনকি জানালাটা পর্যন্ত লোহার গ্রিলের, ও সম্পূর্ণ নিরস্ত্র। বেরোনোর কোন উপায় নেই। বেরোতে চায়ও না ও। বিছানার পাশে ওর জুতো জোড়া দেখে আবার হাসল রুদ্র। জুতো পরতে পরতে একই ভাবনা মাথায় এলো ওর ‘ভদ্র কিডন্যাপার’। কিছুক্ষণ বসে রইল চুপচাপ। বেশি অপেক্ষা করতে পছন্দ করেনা রুদ্র। তাই আর ধৈর্য্য ধরতে পারল না। উঠে গেল দরজার কাছে। হালকা করে টোকা দিয়ে বলল, ‘পাহারায় থাকা বৎসগণ? জেগে আছো?’
ওপাশ থেকে কোন আওয়াজ এলোনা। রুদ্র আবার ধাক্কা দেওয়ার আগেই ওপাশ থেকে একজন দরজা খুলে দিল। দুজন লোক বন্দুক তাক করে দাঁড়াল। রুদ্র হতাশ দৃষ্টিতে তাকাল দুজনের দিকে। দুই হাত তুলে নিল অলস ভঙ্গিতে। বলল, ‘ ক’টা বাজে?’
‘ দুপুর দুটো। বাঁ দিকে চলো।’
গম্ভীর কন্ঠে বলল প্রহরী। রুদ্র একটাও কথা না বলে চুপচাপ বাঁ দিকে হাঁটা দিল। ওর দিকে বন্দুক তাক করে পেছন পেছন এলো দুজনেই। দুজনেই চমকেছে। ওরা ভেবেছিল রুদ্র ঝামেলা করবে কিন্তু এতো সহজে ওদের কথা শুনবে সেটা ভাবেনি। তবে যে শুনেছিল এই ছেলে ভয়ানক। সব বাড়িয়ে বলা হয়েছিল তাহলে? ওরা দুজন সিঁড়ি দিয়ে নামিয়ে রুদ্রকে একটা ঘরে নিয়ে গেল। রুদ্র একবার ভালোভাবে চোখ বুলালো রুমটায়। মোট ন-জন বন্দুক হাতে দাঁড়িয়ে আছে ঘরটাতে। মাঝের একটা টেবিলে বেশ আয়েশ করে বসে বসে খাবার খাচ্ছে ‘ব্লাক হোল’ গ্রুপের লিডার করিম তাজওয়ার। গায়ে একটা কালো পাঞ্জাবী। লম্বায় পাঁচ ফুট আট ইঞ্চির মতো হবে, পেছন দিকে আঁচড়ানো চুলগুলোতে বেশ খানিকটা পাক ধরেছে, মুখে বার্ধক্যের ছাপও পড়েছে খানিকটা। তার দু পাশে দু’জন বসে আছে। দুজনেরই কালো শার্ট গায়ে। পার্থক্য হচ্ছে একজন ফর্সা, একজন কালো। কালো লোকটার মাথায় আবার টাক। রুদ্রর ডান দিকে থাকা লোকটা বলল, ‘বস, নিয়ে এসছি।’
সবে আপেলে কামড় বসাতে নিচ্ছিল করিম। আপেলটা মুখের কাছ থেকে নামিয়ে তাকাল দরজার দিকে। রুদ্রকে দেখে কৌতুক হাসল। রুদ্রর দিকে তাকিয়ে আপেলে কামড় বসিয়ে চিবুতে চিবুতে অস্ফুট স্বরে বলল, ‘রুদ্র আমের? এসো বসো।’
রুদ্র খুব স্বাভাবিকভাবে এগিয়ে গেল টেবিলের দিকে। রুমের ন-জন মানুষের হাতের ন’টা একনলা বন্দুক এখন রুদ্রর দিকে তাক করা। কবিরের মুখোমুখি একটা চেয়ার টেনে বসে পড়লো। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে একবার তাকাল করিমের ধুসর রঙের চোখদুটোর দিকে। মুচকি হেসে বলল, ‘আমাকে ডাকলেই পারতেন। অযথা কষ্ট করে আমার জ্ঞানহীন দেহটাকে এই জঙ্গলের মধ্যে টেনে নিয়ে আসতে আপনার খোকাদের ভীষণ কষ্ট হয়েছে নিশ্চয়ই?’
এরপর চারপাশে একবার চোখ বুলিয়ে বলল, ‘কী খোকারা? কষ্ট হয়েছে খুব?’
হাসল করিম। মাথাটা সামান্য দুলিয়ে বলল, ‘তোমাকে যখন অজ্ঞান অবস্থায় প্রথম দেখলাম। অবাক হয়েছিলাম। মনে হয়েছিল ভুল লোক তুলে নিয়ে এসছে। তুমি আর যাই হও ক্রিমিনাল হতে পারোনা। রাশেদ আমের এক উজ্জ্বল রত্নকে জন্ম দিয়েছে। মানতেই হচ্ছে। এদিক দিয়ে তার কাছে আমি পরাজিত।’
‘ আপনি সবদিক দিয়েই তার কাছে পরাজিত।’ স্হির কন্ঠে বলল রুদ্র। করিম তাজওয়ারের সামনে রাখা প্লেটভর্তি স্যান্ডউইচ ছিল। রুদ্র অনুমতির কোন তোয়াক্কা না করে এক স্যান্ডউইচ হাতে নিয়ে তাতে কামড় বসাল।
করিম আবার হাসল। রুদ্রর কথায় কর্ণপাত না করে বলল, ‘তবে আমি ভাবতাম যে তোমাকে নিয়ে বাড়িয়ে-চাড়িয়ে বলা হয় সবসময়। কিন্তু ঘুম থেকে উঠে নিজেকে সম্পূর্ণ নিরস্ত্র অবস্থায় শত্রু গুহে বন্দি দেখলে। তোমার দিকে এখন মোট এগারোজন বন্দুক তাক করে আছে। কিন্তু তোমার চোখে-মুখে বিচলিত হওয়ার কোন লক্ষণই নেই। বরং নিশ্চিন্তে খাবার খাচ্ছো। তোমার সাহস নিয়ে কোন সন্দেহ নেই আমার আর। তবে তোমার বুদ্ধি নিয়ে আমার যথেষ্ট সংশয় রয়েছে।’
কিছুক্ষণ পরে আর থাকবেনা। কথাটা আপন মনেই ভাবল রুদ্র। কিন্তু মুখে কিছু বলল না। স্যান্ডউইচ চিবুতে চিবুতে শুধু একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল করিম তাজওয়ারের ধুসর চোখদুটোর দিকে। করিম খানিকটা ঝুঁকে বলল, ‘টুম্পার কথা জিজ্ঞেস করলে না?’
রুদ্র নির্বিকার দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল করিমের দিকে। বলল, ‘রাত কাটানোর পরে আমি কখনই কোন মেয়েকে মনে রাখিনা।’
‘ বুঝলাম। কিন্তু জানতে ইচ্ছে করছেনা তোমাকে এখানে কীকরে নিয়ে এলাম?’
রুদ্র সময় নিয়ে স্যান্ডউইচ খাওয়া শেষ করে টেবিল থেকে একটা টিস্যু নিয়ে মুখ মুছলো। এরপর পাশ থেকে ফ্লাক্সটা নিয়ে টেবিল থেকে খালি একটা মগ তুলে সেটাতে কফি ঢালল। করিম তার ধুসর চোখে গম্ভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে ওকে। রুদ্রকে দেখে মনে হচ্ছে বাড়িটা ওরই। নিজের বাড়িতে স্বাভাবিকভাবে মানুষ যেভাবে খাবার খায় সেভাবেই নিজে নিজে নিয়ে নিয়ে খাচ্ছে। রুদ্র কফির মগে চুমুক দিয়ে বলল, ‘যেটা আমি খুব ভালো করেই জানি সেটা জানতে চাওয়ার কোন প্রশ্নই ওঠেনা তাজওয়ার। আপনার মনে হচ্ছে আপনি আমাকে এখানে তুলে নিয়ে এসছেন। কিন্তু আমি যদি বলি আমি সেচ্ছায় আপনার এখানে এসেছি। বিশ্বাস করবেন?’
করিম তাজওয়ারের ভ্রু জোড়া এবার খানিকটা কুঁচকে গেল। চোখে-মুখে সেই হাসিটা আর নেই। রুদ্র মগে দ্বিতীয় চুমুক দিয়ে বলল, ‘আপনারা খুবই ভালোভাবে জানতেন রাশেদ আমেরের একমাত্র ছেলে রুদ্র আমের চট্টগ্রাম আসছে। কেনো? সেটাও অনুমান করে ফেলেছেন নিশ্চয়ই? কিন্তু যেহুতু সে একাই আসছে সেহেতু আপনাদের জন্যে এটা ছিল বিশাল বড় সুযোগ। এতোগুলো দিন যাকে হাতের মুঠোয় পাওয়ার জন্যে ছটফট করছেন তাকে এভাবে পাওয়াটা ঠিক মেঘ না চাইতেই জলের মতো, তাইনা?’
করিমের চোখদুটো এবার কৌতুক হারিয়েছে। এখন সেখানে আছে কেবল নিষ্ঠুরতা। সে যান্ত্রিক কন্ঠে বলল, ‘বুঝেছিলে তাহলে?’
রুদ্র করিমের কথার জবাব না দিয়ে নিজের কথা চালিয়ে গেল। ‘আপনার ধারণা ছিল নারীর নেশা প্রবল নেশা। সে নেশা ভালো ভালো বুদ্ধিমান লোককেও বোকা বানিয়ে দেয়। আপনার ধারণা যে একেবারেই মিথ্যে ছিল তা কিন্তু না। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে এ নিয়মটা খাটেনা তাজওয়ার। সোলার সিস্টেমে কী বলা হয় জানেন? রুদ্র চোখ দেখে শত্রু চিনতে পারে। আর এইজন্যই আপনার পাঠানো চারজনের তিনজনই নির্মমভাবে আমার হাতে প্রাণ দিয়েছে। আরেকজনকে মেরেছেন স্বয়ং রাশেদ আমের।’
হিংস্র চোখে তাকিয়ে রইল করিম রুদ্রর দিকে। পারলে এই দৃষ্টি দিয়ে এক্ষুনি ভস্ম করে দেবে ওকে। দাঁতে দাঁত চেপে বলল, ‘শুধু কী তাই? গত দুইমাসে আমাকে বরবাদ করে দিয়েছো তুমি। আমার তিন তিনটে প্রজেক্ট শুরু হওয়ার আগেই শেষ করে দিয়েছো।’
‘ আপনার প্রজেক্টগুলো আমাদের জন্যে ভীষণ ক্ষতিকর ছিল তাজওয়ার।’
এইটুকু বলে ‘আহ’ শব্দ করে নিচে ঝুকে গেল রুদ্র। বন্দুক ধরা হাতগুলো নড়েচড়ে উঠল। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই মাথা তুলল রুদ্র। বিরক্তি নিয়ে বলল, ‘ ঘর পরিষ্কার করেন না নাকি? এতো পোকামাকড় কেন? যাই হোক, আমার লাগেজটাও নিশ্চয়ই আপনাদের কাছে। একটা জ্যাকেট দিনতো। শীত করছে।’
করিমের ইশারায় রুদ্রর লাগেজ থেকে কালো একটা জ্যাকেট বের করে সেটা ভালোভাবে চেক করে রুদ্রকে দেওয়া হল। রুদ্র জ্যাকেটটা পরতে পরতে বলল, ‘যেটা বলছিলাম। আপনি ভেবেছিলেন সুন্দরী একটা মেয়েকে আমার বিছানায় পাঠাতে পারলেই আমাকে কাবু করে ফেলা সম্ভব হবে। কারণ আপনি জানতেন আমার বেডে প্রায়ই সুন্দরী মেয়েদের আনাগোনা চলে। কিন্তু আপনি এটা জানেন না যে আজ পর্যন্ত কোন নারী রুদ্র আমেরকে কাবু করতে পারেনি। তার শরীরের স্পর্শ অনেকে পেয়েছে কিন্তু হৃদয়ের স্পর্শ কেউ পায়নি। আর না ভবিষ্যতে পাবে। যেখানে মুগ্ধতা বলে শব্দ আমার জীবনে নেই সেখানে বোকা বনার প্রশ্নই উঠছে না। কেউ কোনদিন রুদ্রর প্রিয় হয়ে উঠতে পারবেনা।আমি শুরুতেই জানতাম টুম্পার উদ্দেশ্য কী। এটাও জানতাম ও আপনার পাঠানো। সত্যি বলতে আমি ওর জন্যেই বারে গিয়েছিলাম। এবং ঐ ড্রিংকের মধ্যে যে আমাকে কয়েকঘন্টার জন্যে গভীর নিদ্রায় পাঠানোর ব্যবস্থা করা ছিল সেটাও জানতাম। জেনেশুনেই সানন্দে সেটা গ্রহন করেছি আমি।’
করিম স্তব্ধ হয়ে গেল রুদ্রর কথা শুনে। পাশের দুজনও অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। বিষ্মিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, ‘তুমি জানতে?’
রুদ্রর ঠোঁটে ধূর্ত হাসি। কফির মগে শেষ চুমুক দিয়ে মগটা রেখে বলল আলসেমি ঝেড়ে বলল, ‘সবটাই জানতাম।’
করিম তাজওয়ারে ডানপাশের টাকমাথার লোকটা বলল, ‘জেনেশুনেও মৃত্যুফাঁদে পা দিলে?’
‘ দিলাম।’
‘ যদি হোটেল রুমেই অজ্ঞান অবস্থায় গুলি করে মেরে ফেলতাম তোমাকে?’ বলল করিম তাজওয়ার।
‘ মারতেন না। আমায় এতো সহজ মৃত্যু দেওয়ার ইচ্ছে আপনার ঠিক নেই।’
‘ তোমার বুদ্ধি নিয়েও আমার সন্দেহটা দূর হয়ে গেছে রুদ্র। সত্যিই রাশেদের জন্ম দেওয়া অমূল্য রত্ন তুমি। কিন্তু অতিরিক্ত কোনকিছুই ভালো না।’
করিম চোখের ইশারা করতেই দুজন লোক এসে রুদ্রর দু-হাত ধরে পেছন মোড়া করে বেঁধে ফেলল। করিম ঠোঁটে বিজয়ের বাঁকা হাসি ফুটিয়ে বলল, ‘তোমার অতিরিক্ত সাহসের কারণেই এবার মরতে হচ্ছে তোমাকে। আর ঠিক ধরেছো তুমি। তোমাকে সহজ মৃত্যু দেবোনা আমি। ঠিক যেভাবে আমার গুপ্তচরগুলোকে মেরেছিলে তুমি সেরকমই নির্মম মৃত্যু হবে তোমার। প্রথমে তোমার হাত-পায়ের রগগুলো কাটা হবে। এরপর তোমার মুখ আর নাক বন্ধ করে তোমার শ্বাস আটকে দেওয়া হবে। এরপর?’ হিংস্র পশুর মতো হয়ে উঠলো করিমের মুখ। ‘এরপর জ্যান্ত পোড়ানো হবে তোমাকে। রাত ন’টায় সাজ্জাদ আসবে। সেই করবে কাজটা।’
রুদ্র স্হির দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, ‘ভীষণ ভয়ানক মৃত্যু হতে চলেছে আমার।’
সপ্রশংস হাসি হাসল করিম। বলল, ‘আরেকটা জানিস আবিষ্কার করলাম।’
রুদ্র নিরাসক্ত কন্ঠে বলল, ‘সেটা কী?’
‘ভয় তুমি পাওনি রুদ্র। তুমি চিনতেনা আমার জঙ্গলের এই ডেরাটা। তাই আমাদের ফাঁদে ইচ্ছাকৃতভাবে পা দিয়েছো এখানে পৌঁছানোর জন্যে। ঐ পেনড্রাইভটা হাতাতেই এখানে এসেছো রুদ্র। তাইনা?’
‘ আপনিও ভীষণ বুদ্ধিমান।’ হেসে বলল রুদ্র। করিম তাজওয়ারও হাসলেন। হিংস্র হাসি।
*
রাত সাড়ে আটটা বাজে। একটা চেয়ারে দু-হাত পেছনদিকে বাঁধা অবস্থায় চুপচাপ বসে আছে রুদ্র। দরজায় দুজন পাহারায়। সেটা দেখে প্রথমে হেসেছে রুদ্র। সম্পূর্ণ নিরস্ত্র অবস্থায় বেঁধে রেখেও করিম তাজওয়ার নিরাপদ বোধ করছেন না? এই সাহস নিয়ে একটা গ্যাং চালাচ্ছে? হাহ্। সাহসের সাথে বুদ্ধিরও যথেষ্ট অভাব। নয়তো একটা মেয়েকে ওর ঘরে পাঠিয়ে ওকে জব্দ করার কথা ভাবতো না। ‘কেউ কোনদিন রুদ্রর প্রিয় হতে পারবেনা’। কথাটা আপনমনেই দ্বিতীয়বার আওড়ালো রুদ্র। এরমধ্যেই রুমে এসে উপস্থিত হলো করিম তাজওয়ার। সাথে আরও তিনজন বন্দুকধারী প্রহরী। করিম তাজওয়ার রুদ্রর সামনে একটা চেয়ার টেনে বসল। ধুসর চোখজোড়া রুদ্রর ওপর ফেলে বলল, ‘কেমন অনুভব করছো রুদ্র?’
‘ ভালো, এতক্ষণ বসে বসে বিশ্রাম অনেকদিন নেওয়া হয়নি। আপনার বাকি দুই সাঙ্গোপাঙ্গো কই?’
‘ ওরা শহরের দিকে গেছে। সাজ্জাদ আসছে। আর আধঘন্টা পরে তোমার মৃত্যুদণ্ড শুরু হবে। তৈরী আছো?’
চোখে হাসল রুদ্র। করিম নিজের পকেট থেকে একটা পেনড্রাইভ বের করে বলল, ‘পনেরোদিন। আজ থেকে পনেরোদিন আগে ভারত থেকে চোরাপথে এই পেইনড্রাইভটা নিয়ে আসা হচ্ছিল। উদ্দেশ্য ছিল রাশেদ আমেরের কাছে পৌঁছনো। কয়েক কোটি টাকার একটা প্রজেক্টের ব্যাপার। কিন্তু পথেই ওদের ওপর হামলা করা হয়। ওদের মেরে পেনড্রাইভটা হাতিয়ে নেই আমরা। আর তুমি এটা উদ্ধার করতেই নিজের প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে এখানে এসেছো। বাবার এক কথায় মরতে চলে এলো। আরেকটা কথা মানতে হচ্ছে, তুমি যতবড় জানোয়ারই হও পিতৃপ্রেমের আদর্শ তুমি।’
রুদ্র কিছু বলল না। ওর মাথায় অন্যচিন্তা চলছে। করিম কৌতুক হেসে বলল, ‘রাশেদ আমের ভীষণ দুঃখ পাবে যখন কালকে ও তোমার ভয়ানক মৃত্যু সংবাদ শুনবে। তবে চিন্তা নেই। তোমার মৃতদেহ আমি নিরাপদে_’
কথাটা শেষ করার আগেই তীক্ষ্ম আর্তনাদ বের হল করিমের মুখ দিয়ে। পেটে লাথি মেরেছে রুদ্র। কেউ কিছু করার আগেই পেছন থেকে হাত সামনে এনে করিমকে ঘুরিয়ে একটা ছুড়ি ওর গলায় ধরল। ব্যাপারটা এতো তাড়াতাড়ি হল যে উপস্থিত সকলে হতভম্ব হয়ে গেল। রুদ্র চিবিয়ে চিবিয়ে বলল, ‘তোমার পোষা কুত্তাগুলোকে বন্দুকগুলো নামিয়ে ঘরের এক কোণে রাখতে বলো তাজওয়ার। এরপর ওদের অন্যপ্রান্তে গিয়ে দাঁড়াতে বলো। নইলে তোমার গলা কাটতে আমি দু’বার ভাবব না।’
করিম ভয় পেয়েছে। বিষ্ফোরিত হয়ে গেছে চোখ দুটো। প্রয়োজনে গলা কাটতে রুদ্র দু সেকেন্ড নেবেনা সেটা সে জানে। সঙ্গেসঙ্গেই সবগুলোকে ইশারা করল বন্দুক এক কোণে ফেলে রাখতে। দলনেতার আদেশ পেয়ে পাঁচজনই বন্দুক রেখে দিল ঘরের পূর্বপাশে। এরপর দ্রুত পশ্চিমপাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে রইল। রুদ্র করিমের হাত থেকে কেড়ে নিল পেনড্রাইভটা। ছুড়িটা এখনো গলায় ধরা। করিম দাঁতে দাঁত চেপে বলল, ‘ভুল করছো রুদ্র। এভাবে বের হতে পারবেনা তুমি এখান থেকে।’
করিমের কথায় কর্ণপাত না করে তার কোমরের হোলস্টার থেকে পিস্তলটা বের করে তারই পেটে চেপে ধরল রুদ্র। ওপর হাতে প্যান্টের ভেতর জুতোর সাথে আটকে রেখে দিল ছুড়িটা। করিমকে নিয়ে পাঁচজন প্রহরির দিকে তাকিয়ে থেকেই রুম থেকে বের হল। এক হাতে করিমকে ধরে রেখেই ওপর হাতে দরজাটা বন্ধ করে ফেলল দ্রুত। এক হাতে বেশিক্ষণ ধরে রাখা যাবেনা করিমকে। কিন্তু দেরী হয়ে গেল। ঝাড়া দিতেই রুদ্রর হাত ফসকে গেল করিম। দৌড়ে পালাতে চেষ্টা করল কিন্তু ধরে ফেলল রুদ্র। করিম রুদ্রকে একটা ঘুষি মারতে গেলে রুদ্র সাথেসাথেই পিস্তলের বাট দিয়ে প্রচন্ড জোরে আঘাত করল করিমের মাথায়। জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পরল সে। রুদ্রর ইচ্ছে করছিল এর মাথার খুলিটা উড়িয়ে রেখে যেতে। কিন্তু রাশেদের কঠোর নির্দেশ ছিল বাধ্য না হলে কাউকে প্রাণে মারা যাবেনা। হাতে সময় খুব কম। দরজা প্রচন্ড জোরে জোরে ধাক্কাচ্ছে ঐ পাঁচজন। কিছুক্ষণের মধ্যেই ভেঙ্গে ফেলবে দরজা। সবাই এসে পড়বে। জ্যাকেটটা খুলে কোমরে বেঁধে নিয়ে রুদ্র সোজা ডান দিকে ছুটলো। এখানে আসার আগে এই জায়গাটার ম্যাপ একপ্রকার মুখস্হ করে এসেছে ও। এদিকে দিয়ে সিঁড়ি বেয়ে নামলেই বের হওয়ার একটা দরজা আছে। দরজা খুললেই একটা গ্যারেজ। তার সাথেই দ্বিতীয় গেইট। পুলিশ অ্যাটাক হলে পালানোর জন্যেই তৈরী করা হয়েছে ঐ গোপন পথ। হিসেবমতো ওখানে চারজনের বেশি গার্ড থাকবেনা। ওখান দিয়েই পালাতে হবে। সিঁড়ি দিয়ে নেমে দরজার কাছে যেতেই থমকে গেল রুদ্র। দরজায় দু’জন গার্ড দাঁড়িয়ে আছে। দেখলেই গুলি ছুড়বে কোন সন্দেহ নেই। রুদ্র অপেক্ষা করলোনা। খরচ করে ফেলল দুটো বুলেট। মাটিতে লুটিয়ে পরল দুজন প্রহরী। রুদ্র দরজা খুলে বাঁ দিকে গেল। ততক্ষণে সবার কানে পৌঁছে গেছে খবরটা। এখন শুধু আসার অপেক্ষা। কয়েকজন ছাঁদ থেকে গুলি ছুড়তে শুরু করল। একটা গুলি বেরিয়ে গেল রুদ্রর বাঁ হাত কিছুটা মাংস থেতলে দিয়ে। বাকিগুলো মিস হল ওর অসাধারণ কৌশলের কারণে। গুলি লাগা সত্ত্বেও থামলোনা রুদ্র। দ্বিতীয় গেইটের কাছেও একই কাজ করল। খরচ করল আরও দুটো বুলেট। বেরিয়ে এলো চট্টগ্রামের জঙ্গলের মধ্যের এই নিরব বাংলোটার ভেতর থেকে। আশেপাশে শুধু জঙ্গল আর জঙ্গল। এখন কোন একটা নিরাপদ জায়গায় গিয়ে হাতটা বেঁধে নিতে হবে। ক্ষত গভীর না। কিন্তু রক্ত ঝড়ছে। জ্বলে যাচ্ছে জায়গাটা। কিন্তু বাঁধবে কী দিয়ে? দৌড়ে জঙ্গলের অন্ধকারে হারিয়ে গেল রুদ্র। ওরাও এক্ষুনি আসবে পেছন পেছন খুঁজবে রুদ্রকে। বেশ কিছুক্ষণ দৌড়নোর পর একটা গাছ ধরে দাঁড়াল রুদ্র। পেছন ফিরে তাকালো। না, এখনো এদিকে আসছেনা। সৌভাগ্যবশত তখন খাওয়ার টেবিলে কথার ছলে ফলের ঝুড়ি থেকে ছুড়িটা সরিয়ে ফেলেছিল রুদ্র। খুব বেগ পেতে হয়েছিল কাজটা করতে। আর পোকার নাম করে তখন ঝুঁকেছিল পেছনে প্যান্টের সাথে ছুড়িটা আটকে রাখার জন্যে। ওকে বেঁধে রেখে যাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই ঐ ছুড়ি দিয়ে দড়ি কেটে ফেলেছিল রুদ্র। পরিকল্পনা ছিল করিম এলেই ওর গলায় ছুড়ি ধরে আগে ঐ প্রেইনড্রাইভের কাছে যাবে। তারপর ওটা নিয়ে পালাবে। কাজটা অসম্ভব রিস্কি ছিল। কিন্তু করিম বোকামি করে নিজেই পেইনড্রাইভটা নিয়ে চলে এলো। ভেবেছিল নিরস্ত্র অবস্থায় এতোজন বন্দুকধারীর সামনে রুদ্র কিছুই করতে পারবেনা। ওর এই বোকামির জন্যেই কাজ সেড়ে এতো সহজে বেরিয়ে আসতে পেরেছে রুদ্র।
এখানে বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকাটা বিপদজ্জনক। এগোতে হবে। রুদ্র জায়গাটা ছেড়ে এগোতে নিলেই কেউ একটানে গাছের আড়ালে নিয়ে এলো ওকে। রুদ্র কিছু বলার আগেই ঠেলে গাছের সাথে লাগিয়ে নরম এক হাত চেপে ধরল রুদ্রর মুখ। মিষ্টি চাপা গলায় বলল, ‘শশ্ নড়বেন না প্লিজ। ওরা দেখে ফেলবে আমাকে।’
নারী কন্ঠ শুনে রুদ্র অবাক চোখে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইল। আবছা অন্ধকারে একটা নারী অবয়ব দেখতে পাচ্ছে। মেয়েটা ওর কাঁধ পর্যন্ত। একহাতে রুদ্রর ডান হাত ধরে আছে আরেক হাতে চেপে ধরেছে রুদ্রর মুখ। আবছা যেটুকু আলো আসছে তাতে মেয়েটার ঘন পাপড়িযুক্ত গভীর চোখজোড়া ফুটে ওঠেছে। সে চোখে একরাশ ভয়। রুদ্র ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে সেই গভীর চোখে। একচুলও নড়ছেনা। মেয়েটা আতঙ্কিত দৃষ্টিতে গাছের আড়াল থেকে উঁকি দিয়ে দেখল একবার। কয়েকটা ছেলে ছুটে চলে গেল সোজা। ওদের মতে এদিকে খোঁজা শেষ হয়তো। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল মেয়েটা। হাত নামিয়ে নিল রুদ্রর মুখ থেকে। ‘এবার চলুন’ বলে মেয়েটা ওখান থেকে বেরোতে নিলেই রুদ্র ওর কোমর চেপে ধরে মিশিয়ে নিল নিজের সাথে। মেয়েটা অবাক চোখে তাকাল রুদ্রর দিকে। রুদ্রর ভ্রু দুটো এখনো কোঁচকানো। চোখদুটো স্থির। মেয়েটা বলল, ‘আপনি ছাড়ুন আমাকে। ভয় পাবেন না। বিপদ কেটে গেছে।’
রুদ্র মেয়েটাকে ঘুরিয়ে চেপে ধরল গাছের সাথে। শক্ত গলায় বলল, ‘তোমার বিপদ কেটে গেছে, কিন্তু আমার না।’
বলতে বলতে তুলে ধরল নিজের হাতের পিস্তলটা। সেটা দেখে বিষ্ফরিত হয়ে উঠল মেয়েটার সুন্দর গভীর চোখদুটো। চিৎকার করতে নিলেই রুদ্র এক হাতে মুখ চেপে ধরে ফিসফিসিয়ে বলল, ‘এই চুপ! একটা আওয়াজ করলে এখানেই মেরে ফেলব। চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকো।’
গুটিয়ে গেল মেয়েটা। রুদ্র মেয়েটার মুখ থেকে হাত নামিয়ে গাছের আড়াল দিয়ে পিস্তল তাক করে কিছুটা দূরে আসা লোকগুলোর দিকে তাকাল। মেয়েটা ভয়ে জমে গেছে। আতঙ্কিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রুদ্রর মুখের দিকে। একদম গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে ওর। বিড়বিড় করে বলছে, ‘কতগুলো গুন্ডার হাত থেকে বাঁচতে গিয়ে আরেক গুন্ডার হাতে এসে পড়লাম অবশেষে? সকাল সকাল কার মুখ দেখেছিলাম কে জানে? একটার পর একটা ঝামেলা। আজ মৃত্যু নিশ্চিত। আমার আর ধুমকেতু দেখা হলোনা।’
রুদ্র শুনতে পেল কথাগুলো। এরমধ্যেই কান ফাটা গুলির আওয়াজ এলো। মেয়েটা ভয়ে জাপটে ধরল রুদ্রকে। রুদ্র নিজের অজান্তেই মেয়েটাকে একহাতে জড়িয়ে ধরল। আরও দুটো গুলির শব্দ। এরপর সব শান্ত হয়ে গেল। কিন্তু মেয়েটার ভয় কমেনি বোধ হয়। গায়ের সব শক্তি দিয়ে জড়িয়ে ধরে রেখেছে রুদ্রকে। রুদ্র পিস্তল রাখতে রাখতে গম্ভীর কন্ঠে বলল, ‘বিপদ কেটে গেছে। এবার আমায় ছাড়তে পারো।’
মেয়েটা আস্তে আস্তে ছেড়ে দিল রুদ্রকে। কিন্তু রুদ্রর হাত এখনো খামচে ধরে আছে। চারশাশে একবার ভীত দৃষ্টি বুলালো। রুদ্র মুখের দিকে তাকিয়ে শুকনো ঢোক গিলে অসহায় গলায় বলল, ‘ওরা কী আমাকে মেরে ফেলতে এসেছিল?’
রুদ্র বিরক্তি নিয়ে তাকাল মেয়েটার দিকে। একে হাতের অসহ্য যন্ত্রণা। তারওপর এই মেয়ে। দাঁতে দাঁত চেপে বলল, ‘না, আমাকে মারতে এসছিল। একটু হলে আমার ওপরে যাওয়ার টিকেট কেটে ফেলছিলে তুমি।’
মেয়েটা অবাক হল। ওর কী দোষ? মুখ ফুলিয়ে বলল, ‘আমি কী করলাম? আমি বলেছি আপনাকে মারতে আসতে?’
রুদ্র ধমক দিয়ে বলল, ‘ চুপ! রাতের বেলায় এই জঙ্গলে কী ভুতেদের সাথে আড্ডা দিতে এসছিলে?’
মেয়েটা মাথা নিচু করে ফেলল। ভয়ে ভয়ে অস্ফুট স্বরে বলল, ‘ঐ ছেলেগুলো আমাকে তুলে নিয়ে এসছিলো এখানে। আরেকটু হলে_’
চুপ হয়ে গেল মেয়েটা। রুদ্র মেয়েটার দিকে ভালোভাবে তাকালো এবার। আবছা অন্ধকারে যেটুকু দেখা যাচ্ছে তাতে দেখল কুর্তিটার হাতা এক পাশ ছেঁড়া। আর বিশেষ কিছুই বোঝা যাচ্ছেনা অন্ধকারের জন্যে। কিন্তু মাঘের এই শীতে কাঁপছে মেয়েটা। রুদ্র বুঝতে পারল ব্যাপারটা। কোমর থেকে জ্যাকেটটা খুলে মেয়েটার দিকে এগিয়ে দিয়ে আশেপাশে চোখ বুলিয়ে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করতে করতে জিজ্ঞেস করল, ‘কী নাম তোমার?’
জ্যাকেটটা নিয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় মেয়েটা বলল, ‘প্রিয়-প্রিয়তা। আমার নাম প্রিয়তা।’
#চলবে…
[ রি-চেইক হয়নি। আরেকবার মনে করিয়ে দিচ্ছি। এটা একটা ক্রাইম থ্রিলার উপন্যাস। সুতরাং কেউ যদি আশা করেন যে আমরা নিত্যদিন চোখের সামনে যেসব ঘটনা দেখি কেবল সেরকম সুস্থ-স্বাভাবিক ঘটনাই উপন্যাসটায় থাকবে তাহলে বারবার নিরাশ হবেন।
দেরী করে দিয়েছি বলে আজ কিন্তু বিশাল পর্ব দিয়েছি। তাই যারা পড়বেন সবাই রেসপন্স করবেন। আর ছোট ছোট মন্তব্য না করে গঠনমূলক এবং উৎসাহমূলক মন্তব্য করবেন। হ্যাপি রিডিং ]