প্রিয়োসিনী পর্ব ১২
#নীরা_আক্তার
নওরিন নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে অন্ধকার হাতড়ে বসার ঘরে আসতে থাকে।সেখানে তার ফোনটা রাখা আছে।আলো জ্বালানো দরকার।চারদিকটা ঘুটঘুটে অন্ধকার হয়ে আছে।হটাৎ কিছু একটার সাথে ধাক্কা খেয়ে হুমড়ি খেয়ে পরতে নিলে দুটো হাত আবারো তাকে জাপটে ধরে,
-এমন কানার মতো হাটছো কেন?
-দেখেন না কতো অন্ধকার,নিজেকেই তো দেখা যায় না অন্যকিছু কি করে দেখবো?
ইসরাক পকেট থেকে ফোনটা বার করে আলো জ্বালিয়ে নওরিনের মুখের সামনে ধরে…
-এবার দেখো কি দেখবা
-চোখে লাগে সরান,
ইসরাক আলোটা সরিয়ে নেয়।
-বাহিরে তো আলো আছে এখানে কি হলো।দাড়াও দেখছি।
ইসরাক দেখছি বলে দুকদম সামনে যেতেই ক্যারেন্ট চলে আসে।
নওরিন রাগী চোখে তাকায় ইসরাকের দিকে,
-ফোনটা যখন কাছেই ছিলো তখন আগে আলো জ্বালালেন না কেন?অন্ধকারে আর এতো কষ্ট করতে হতো না!পরে গেলে কি হতো
ইসরাক ভ্রু কুচকে তাকায়।
-আলো জ্বালানোর সুযোগটা তো দেবে।তুমি আসার সাথে সাথেই তো জ্বালালাম।
-গ্যাসটা অফ করেছেন?নাকি সেটাও করেন নি।
-কিসের গ্যাস!
-ধ্যাৎ
নওরিন রান্না ঘরে যায়।ইসরাকও পিছু পিছু যায়।রান্না ঘরে গ্যাসটা অলরেডি অফ করা!
-কি আশ্চর্য অফ করে দিয়েছেন বললেন না কেন?শুধু শুধু কষ্ট করা লাগলো
-কি সব বলো!
ইসরাক নওরিনকে আর কিছু বলতে না দিয়ে ইসরাক তাকে টেনে বাহিরে নিয়ে যায়।
-সব খুলছো কেন?
-কি খুলছি?
-অর্নামেন্টস…সাজুগুজু সব তো নষ্ট হয়ে গেছে!এখন তোমাকে এভাবে নিয়ে গেলে সবাই তো হায় হায় করবে।বলবে তোমার মতো পেত্নীকে কেন বিয়ে করলাম।ঠোঁটে লিপস্টিক টা ও নেই
নওরিন মুখ বাকিয়ে বলে উঠে,
–আমি পত্নী?
-হো
-দেখুন আমি কি জানতাম আপনি আবার ফিরে আসবেন..আপনার আম্মা না বারণ করলো!এলেন কেন?
ইসরাক জোরে নিঃশ্বাস ফেলে,
-ফোনে টেক্সট করেছি দেখো নাই কেন?বলেছিলাম তো একটু ওয়েট করো!
এখন চলো।আর সাজুগুজু করার সময় নেই এভাবেই যেতে হবে।
কথাটা বলেই ইসরাক নওরিনকে টানতে থাকে,
–আমি যাবো না!এতোই যখন নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে ছিলো, তখন আম্মাকে বললেন না কেন?
ইসরাক নওরনের গালটা টেনে দেয়,
-প্রথমত তুমি না গেলে আমিও যেতে পারবো না।তোমাকে একা বাড়িতে রেখে যাওয়া সম্ভব না।তুমি না গেলে আমাকেও তোমার সাথে থাকতে হবে।আবার এভাবে ফাঁকা বাড়িতে আমাকে একা পুরুষ মানুষ পেয়ে তুমি যদি উল্টা পাল্টা কিছু করো আমার ইজ্জতের দাম নাই নাকি! তাই সেরকম কোনো রিস্ক নিতে চাচ্ছি না দ্বিতীয়ত তখনই যদি আম্মার মুখের উপর কথা বলতাম আম্মা রাগ করতো।ভাবতো আমি আম্মাকে গুরুত্ব না দিয়ে তোমাকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে ফেলছি এতে ঝামেলা আরো বাড়তো।চলো..আম্মাসহ সবাই বড় রাস্তায় ওয়েট করছে।আম্মা নিজে তোমাকে নিয়ে যেতে বলছে।
নওরিন আর কিছু বলে না….
নওরিন কে আসতে দেখে জিনাত সিকদার ইসরাকের গাড়ি থেকে নেমে যান।ইমতিয়াজ সিকদার যেই গাড়িতে ছিলো সেটাতে উঠে বসেন।শিউলি পারভিন বোনের কাছে এসে বলতে শুরু করে,
-নামলা কেন?ঐখানেই থাকতা?বউরে এই গাড়িতে পাঠাইতা।
ইমতিয়াজ সিকদার রাগী চোখে তাকায় শালীর দিকে,
– দেখো শিউলি বোনকে এই সব কুমন্ত্রণা দিও না।আর শোনো বড় বউ এইসব ফালতু লোকের কথা শুনে নিজেকে সিরিয়ালের ডাইনি শ্বাশুড়ির পর্যায়ে নিয়ে যেও না।বউ মাকে মেনে নাও।অতীত ভুলে যাও।তাতেই সংসারের মঙ্গল।তোমার ছেলেও ভালো থাকবে আর আমরাও।
-দুলাভাই আমাকে এমন বলতে পারলেন?
-তুমি এমনই।
ইমতিয়াজ সিকদারের কথা শুনে পেছন থেকে ছোট চাচী হো হো করে হাসে উঠেন।পরে নিজেকে সামনে নেন।জিনাত সিকদার চুপ করে বাহিরের দিকে তাকায়।
“তার কি আসলেই নিওরিনকে মেনে নেওয়া উচিত?কিন্তু সে তো আমানের পাপের ফল “
___________
মোটামুটি একটা লম্বা জার্নির পর তারা পৌছে গেছে ইসরাকের নানা বাড়িতে।সেখানে সবাই ইসরাকের নতুন বউকে সাদরে গ্রহন করে নেয় কোনো রকম সংকোচ ছাড়া।
নওরিনকে একে একে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়।নওরিন সবাইকে সালাম করে।ইসরাকের নানা-নানু নওরিনকে উপহার দেয়।তারা আজকেই প্রথম নওরিনকে দেখলো।
আজকে বিয়ে বাড়িতে মেহেন্দী- সাংগীত দু’টোই একসাথে প্লান করা হয়েছে। সব পরিকল্পনা ইশা আর স্নেহার। ইসরাকের কাজিন রা সবাই নাচ গান করছে।নওরিনও তাদের সাথেই আছে।
[সেখানে শিউলি পারভিনের একমাত্র মেয়ে স্নেহাও উপস্থিত ছিলো।স্নেহা তার মাকে পছন্দ করে না।ছোট বেলায় তার মা তাকে বাবার কাছে ফেলে চলে এসেছিলো।নিজের সুখের কথা চিন্তা করে তাকে বাবার কাছে দিয়ে পালিয়ে এসেছিলো এই মহিলা।একবারও ভাবেনি মা ছাড়া মেয়ের কতোটা কষ্ট হবে।স্নেহা তার দাদা-দাদীর কাছেই মানুষ।মায়ের সাথে সম্পর্ক না থাকলেও নানা বাড়িতে তার যাওয়া আসা ছিলো।মাঝে মাঝে টাকার প্রয়োজন হলে নানুরাই তো তাকে সাহায্য করে।বাবা সহ সৎ মায়ের সংসারের তাকে থাকতে হয়।দুঃখ কষ্টের অভাব নেই।নানা-নানীরাই তার ভরসার জায়গা।বিপদের দিনে শেষ আশ্রয়।মামা-মামী,কাজিন ভাইবোনদের সাথে স্নেহার বেশ ভাব।তবে মাকে সে চিনে না।চিনলেও মানে না!
শিউলি পারভিন স্নেহার সাথে কথা বলার চেষ্টা করে।কিন্তু স্নেহা তার থেকে পালিয়ে পালিয়ে বেরাচ্ছে।মায়ের মুখোমুখি সে হতে চায় না
শিউলি পারভিন যখন স্বামীর অত্যাচারে জরজড়িত ছিলো তখন সে বোন জিনাতের কাছে আশ্রয় চেয়েছিলো।জিনাতও তাকে আশ্রয় দিয়েছিলো।তিনি বোনকে আস্বস্ত করেছিলেন তাকে স্বামীর সংসার করতে হবে না।কিন্তু সমস্যা বাঁধলো তখন যখন শিউলি পারভিন নিজের মেয়েকেও সাথে নিতে চেয়েছিলেন।হয় মেয়ে নিয়ে স্বামীর সংসার করতে হবে নয়তো একা সংসার ছেড়ে বেরিয়ে আসতে হবে।
কেউ স্নেহার দায়িত্ব নিতে চায় নি,বোন জিনাতও নয়।
শিউলি পারভিন নিজেকে সামলান আর তো মাত্র কয়েকটা দিন তারপর মেয়েকে একেবারে নিজের কাছে নিয়ে আসবে সে!
ইসরাক দূরে দাড়িয়ে নওরিনকে দেখছে।নোহা,ইশা, স্নেহা সহ বাকিরা হলুদ লেহেঙ্গা পড়লেও নওরিন শাড়ি পড়েছে।কাঁচা হলুদ রঙ্গের জামদানী শাড়ি।ইসরাক তাকেও বাকিদের মতো লেহেঙ্গা পড়তে বললেও সে শাড়িই পরবে।
এখন প্রায় মাঝ রাত হতে চললো….
মেয়েরা সবাই মেহেদী পরছে।নওরিনও পরছে।ইসরাক সেখানেই নওরিনের পাশে বসে ছিলো।আর স্নেহা নওরিনকে মেহেদী পরিয়ে দিচ্ছে।
নওরিন শান্ত হয়ে মেহেদী পড়ছে আর ইসরাক মাঝে মাঝে তাকে খুঁচিয়ে দিচ্ছে।তো কখনো ইচ্ছে করে হাত নাড়িয়ে দিচ্ছে,
নওরিন বেশ বিরক্ত হয়,
–আশ্চর্য কি শুরু করলেন?
-কি করলাম?
সবাই সেখানে থাকায় নওরিন ইসরাককে তেমন কিছু বলতেও পারছে না।
-কতো মেহেদি দেওয়া লাগে?হাতই তো দেখা যাইতেছে না।এর চেয়ে হাতে একেবারে মেহেদি লেপে দিলেই পারতে?সময় কম লাগতো এতোক্ষণ ঘরে চলে যেতে পারতে
-উফফ।
–আরো কতো সময় লাগবে?
-দেরী হবে
-ঘরে কখন যাবা?
নওরিন বিরক্ত হয়
-আপনি এখান থেকে জানতো…
ইসরাক নওরিনের গালটা টেনে দেয়।
পাশ থেকে স্নেহা বলে ওঠে
-ইসরাক ভাই বউকে ছাড়া থাকতে পারছো না দেখছি?
-না তোর কোনো সামস্যা?
-বারে আমার কেন সমস্যা হতে যাবে…আসলে তোমরা পুরুষমানুষ রা এমনই বিয়ের পর প্রথম প্রথম বউকে ছাড়তে চাও না আর বছর গড়ালে বউকে আর কাছে রাখতে চাওনা!
-তোর এতো পুরুষ বিশেষজ্ঞ হয়ে কাজ নেই….দ্রুত মেহেদী পড়িয়ে আমার বউকে আমার কাছে আসার সুযোগ করে দে
স্নেহা হেসে দেয়….নওরিন লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে নেয়।
ইসরাকও হাসতে হাসতে সেখান থেকে উঠে যায়।
______________
ভীষন মাথা ধরেছে ইসরাকের।ব্যাথ্যায় মাথা ছিড়ে যাচ্ছে।এখন নওরিনকে তার প্রয়োজন। কাছে থাকলে তাকে দিয়ে মাথা টেপাতো।আজকাল মাঝে মাঝেই ইসরাকের মাথা যন্ত্রণা হয়।প্রচুন্ড রকম যন্ত্রনা।
ঘরে এসে বিছানায় গা এলিয়ে দেয় সে।নওরিনের দেরি হবে আসতে।বালিশে মাথা দিতেই মাথা যন্ত্রনা আরো কয়েকগুণ বেড়ে গেলো।ইসরাক উঠে বসে ফোনটা হাতে নিয়ে ডাটা কানেক্ট করে ফোনে নেট পেতেউই হোয়াটাস এ্যাপে কতোগুলো ছবি রিসিভ হয়।আননোন নাম্বার থেকে ছবিগুলো এসেছে।
ইসরাক মেসেজ ফোল্ডারটা ওপেন করতেই বড় সর একটা শক খায়।
ছবিগুলো নওরিন আর আমানের।কতোগুলো ছবিতে দুজন বেশ ক্লোজ অবস্থায় আছে।একে বারে ঘনিষ্ঠ পিকচার যাকে বলে।
ইসরাক ফোনটা দূরে ছুড়ে দেয়।বুকের মধ্যে চিন চিন করছে।সে তো জানতো আমানের সাথে নওরিনের সম্পর্ক ছিলো।সেই সুবাদে এই ধরনের পিকচার থাকা স্বাভাবিক। কিন্তু তবুও মানতে কষ্ট হচ্ছে।অদ্ভুত একটা অনুভূতি হচ্ছে।ঠিক রাগ নয় আবার অভিমানও নয় অন্যরকম একটা অনুভূতি।ভীষন রকম কষ্ট হচ্ছে।
[ইসরাকের জানতো নওরিন আর আমানের মাঝে সম্পর্ক ছিলো।বেশ ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক।আমান নওরিন বলতে পাগল ছিলো।যখন যা চেয়েছে আমান তাই করেছে।দামী গিফট থেকে শুরু করে শপিং বিল কোনোটাই বাদ রাখেনি আমান।ইসরাকের সবই জানা। কিন্তু নওরিন সেই সম্পর্কের তোয়াক্কা না করেই আমানকে ঠকিয়ে সাগরের সাথে বিয়ে করতে চলে যায়।পার্ফেক্ট ধোঁকাবাজি যাকে বলে।
আমান অনতোতো তাকে এটাই জানিয়েছে।তাই সে নওরিনকে ঘেন্না করতো।ঠিক ঘেন্না নয় অন্যরকম একটা অনুভূতি। ইসরাক যেই নওরিনকে দেখছিলো সেই নওরিন আর আমানের দেওয়া নওরিনের ব্যাখ্যা আজও মেলাতে পারে না সে।তবে আমানের কষ্ট সে কাছ থেকে দেখেছে।বিয়ের প্রথম প্রথম নওরিনকে তার অসহ্য লাগতো।বিশ্বাসঘাতক প্রেমিকা কাঠ পোকার মতো ভেতর থেকে একটু একটু করে খেয়ে নিঃশেষ করে দেয়।তাকে শাস্তি দেওয়া প্রয়োজন।
কিন্তু দুদিন আগে যেদিন সাগরের সাথে কথা বলা নিয়ে নওরিনের সাথে ঝামেলা করে ইসরাক ওকে ঘর থেকে বার করে দিয়েছিলো সেদিন একটু পরেই ইশা এসেছিলো তার কাছে।
“জোর গলায় বলেছিলো নওরিন বেঈমান নয়।সাগরের সাথে সম্পর্কটা হয়েছিলো তাদের পরিবারের ইচ্ছেতেই।যেটা আর পাঁচটা স্বাভাবিক সম্পর্কের মতোই একটা সম্পর্ক। এখানে অন্যায়ের কিছু নেই।আর আমানের ভালোবাসা ছিলো একপাক্ষিক।আমানের প্রতি নওরিনের কোনো আবেগ অনুভূতি কিছুই ছিলো না”]
ইসরাক দুই হাতে মুখ ঢেকে বসে পরে।ইশার কথার উপর ভিত্তি করেই তো সে নওরিনের সাথে স্বাভাবিক সম্পর্কে এগিয়েছে।মনের কোনো নওরিনকে নিয়ে অনেক প্রশ্ন থাকলেও ইসরাক সেগুলোকে ঠেলে সরিয়ে দিয়েছে।আমানের বিবরন মানতে চেয়েও অগ্রাহ্য করেছে সে।
একটু একটু করে নওরিনের প্রতি জন্ম নেওয়া অনুভূতিকে সে প্রশ্রয় দিয়েছে।নিজের মনের মধ্যে নওরিনকে বিশাল একটা জায়গা দিয়ে দিয়েছে।সেখানে নওরিনের জন্য সন্মান আর ভালোবাসা দুটোই ছিলো
এখন প্রশ্ন হলো,
নওরিনকে আড়াল করার জন্য কি ইশা তাকে মিথ্যে বলেছে?
মস্তিষ্ক এই মুহূর্তে শূন্য হয়ে গিয়েছে তার….কিছু ভাবতে পারছে না।প্রচুন্ড খারাপ লাগছে।আকাশে উড়তে উড়তে সে যেন ধপ করে মাটিতে পরে গেছে।
ইসরাক ফোনটা কুড়িয়ে নেয়।নাম্বারটাতে কল দেয়।কিন্তু সুইচড অফ দেখাচ্ছে।
তবুও বার বার ট্রাই করছে সে।কিন্তু অপর পাশ থেকে একই উওর।ইসরাকের গলা শুকিয়ে গেছে।বেড সাইডে থাকা পানির জাগটা নিয়ে ঢক ঢক করে পানি খেতে থাকে
এমন সময় ঘরে নওরিন প্রবেশ করে।দুই হাত ভর্তি মেহদী তার।ইসরাকের সামনে দুই হাত মেলে ধরে,
–আমার হাতের মেহেদীর মধ্যে আপনার নাম লুকানো আছে যদি খুজে বার করতে পারেন তাহলে ধরে নেবেন আমাদের কেউ কখনো আলাদা করতে পারবে না….
ইসরাক নওরিনের দিকে তাকায়।রক্ত মাথায় চড়ে গিয়েছে।ভীষন রাগ হচ্ছে।হাতে থাকা কাঁচের জাগটা সজোরে মেঝেতে ছুড়ে দেয়।নওরিন দুই কদম পিছিয়ে যায়….নওরিন ভয় পেয়েছে
-কি হলো?
ইসরাক বিছানা থেকে উঠে এসে নওরিনের বাহু দুটো শক্ত করে চেপে ধরে বলতে শুরু করে,
-“নাটক করো আমার সাথে?লজ্জা করে না তোমার? নিজের প্রতি একটুও ঘেন্না হয় না?পুরুষ মানুষ নিয়া খেলতে খুব ভালো লাগে তাই না?কয়টা লাগে তোমার? আমার ভাইয়ের লাইফটা তো শেষ করে দিছো,আমারেও শেষ করে দিলা। সবকিছু শেষ হয়ে গেলো..।যদি একবার নিজের মুখে সব স্বীকার করতা ক্ষমা করে দিতাম”
নওরিন অবাক চোখে তাকিয়ে আছে,
-কি করছি আমি?
ইসরাক নওরিনকে দূরে সরিয়ে দেয়
–আবার প্রশ্ন করো কি করছো?সত্যিই লজ্জা নাই না তোমার? বিশ্বাস করো আমান যেটা করেছে তোমার সাথে সেটা অন্যায় আমি মানছি কিন্তু তুমি যেটা করছো সেটাকে কি বলে জাস্টিফাই করবা?কেন ঠকাইলা ওরে?ওর গিফট গুলো নিতে খুব মজা লাগতো তাই না?এতো যখন ওর সাথে তোমার ঢলা ঢলি ছিলো বিয়ে করলা না কেন?ছাইড়া দিলা কেন?
নওরিন জোরে জোরে কেঁদে উঠে,
ইসরাক নিজেকে একটু সামলে নেয়।জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে থাকে,
ততোক্ষণে ইশা আর নোহা ঘরে চলে এসেছে,
বাহিরে থেকে ইসরাকের চেচামেচি স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে…
দুজনই ঘরে এসে দেখে দূরে নওরিন অবাক চোখে ইসরাকের দিকে তাকিয়ে আছে,চোখ দিয়ে মুক্তার ন্যায় অশ্রু ঝড়ছে আর ঠিক তার সামনে ইসরাক রক্ত চোখে দাঁড়িয়ে আছে।রাগে তার সারা শরীর কাঁপছে।
নোহা ধীরে ধীরে প্রশ্ন করে,
-কি হয়েছে দাভাই?বাড়ি ভর্তি লোকজন সবাই শুনছে তো
ইসরাক নওরিনের দিকে ইশারা করে বলে উঠে,
-এটারে সরা।আমার চোখের সামনে থেকে দূরে নিয়া যা।আমি নিজেরে কন্ট্রোল করতে পারছিনা।এমন কিছু একটা করে বসবো যেটা আমি করতে চাই না…..চোখের সামনে থেকে দূর কর।
নোহা আর কিছু বলে না নওরিনকে নিয়ে যেতে থাকে।নওরিন কিছু বলতে গেলে ইশারায় তাকে থামিয়ে দেয়।এই মূহুর্তে কিছু বলা মানে আগুনে ঘি ঢালা।ইশা,নোহা আর নওরিন চলে যেতে নিলে ইসরাক ইশাকে থামিয়ে দেয়…
ইশার সাথে সাথে বাকিরাও থেমে যায়।
ইসরাক ধমক দেয়,
-যাইতে বলি নাই তোদের!
নোহা আর নিওরিন চলে যায়।ইশা ভাইয়ের সামনে দাড়িয়ে কাঁপতে থাকে।
____________
নোহা নওরিনকে নিয়ে বাড়ির বাহিরে পুকুর পাড়ে নিয়ে আসে।বাড়ি ভর্তি মানুষ।নওরিন এখন কান্না করবে এটাই স্বাভাবিক।সবার সামনে এইসব তামাশা হলে নানা জন নানারকম কথা বলবে।আপাতোতো নওরিনকে আলাদা রাখাই ভালো।
নওরিন মাথা নিচু করে কাঁদছে।হাতের মেহেদীটা ঘেটে গেছে।মেহেদীতে এখনো রং আসেনি।ভালোবাসায় রং লাগার পূর্বেই বিবর্ণ হয়ে উঠেছে।
-কি হয়েছে নওরিন?দাভাই হটাৎ করেই এমন রং বদলালো কেন?
নওরিন মাথা নাড়ে।সে জানে না কি হয়েছে।
নোহা একটু চিন্তায় পড়ে যায়।কি হয়েছে সেটা সে বুঝে উঠতে পারছে না।নোহা নওরিনকে সান্তনা দিয়ে বলে উঠে
-সম্পর্কে একজন আগুন হলে অপর জনকে পানি হতে হয়।আপাতোতো দাভাই আগুনের রোল প্লে করছে তুমি পানির রোল প্লে করো।
–আমার কি কোনো আত্মসন্মান নেই?আর কতো অপমানিত হবো আমি।বিয়ের প্রথম দিন থেকে একই ভাবে চলছে!হয় আমি বাবা কাছে চলে যাবো নয়তো এই পুকুরে ঝাপ দিয়ে মরে যাবো।
কথাটা বলেই নওরিন হাউ মাউ করে কান্না করে দেয়,
-নওরিন আমি সত্যিই বুঝতে পারছি না হটাৎ কি হলো তবে,কিছু একটা হয়েছে।বড় রকম ভুলবোঝাবুঝি হয়েছে।একটু ধৈর্য ধরো।সবটা মিটে যাক দেখবে দাভাই তোমায় মাথায় চড়িয়ে রাখবে।আত্মসন্মান দেখানোর জন্য আগে নিজের সন্মানটাতো অর্জন করো।তারপর না হয় দেখাবে…!!
চলবে…..
(ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)