- মন খারাপের অবহেলা নিয়ে স্ট্যাটাস
- মন খারাপের ডিপ্রেশন নিয়ে স্ট্যাটাস
- মন খারাপের স্ট্যাটাস বাংলা
- ছেলেদের কষ্টের স্ট্যাটাস।
১.মন খারাপের অবহেলা নিয়ে স্ট্যাটাস
জীবনে প্রচুর হাসতে হবে! মানুষ ‘পাগল’ বললে বলুক,তবুও হাসা থামানো যাবেনা৷ হাসির শব্দে দেওয়াল ফেটে যাক,বাসা উড়ে যাক তবুও মন খুলে হাসতে হবে৷ আপনার হাসি দেখে যাতে অন্য মানুষ এর ও হাসি চলে আসে এমন ভাবেই হাসতে হবে। মন খারাপ টারাপ রে পাত্তা দেওয়া যাবেনা৷ খারাপ সময়েও মুখে হাসি টা রাখতেই হবে। আপনাকে দেখেই যাতে মানুষ এর প্রথমে মাথায় আসে ‘এই মানুষ টার মুখে সব সময় হাসি লেগে থাকে!’
আপনার হাসি ছড়িয়ে যাক অন্য মানুষ এর কাছেও৷ প্রচুর হাসতে হবে,প্রচুর ভালো থাকতে হবে!
………………………..
………………………..
– কেমন আছো?
– এইতো আছি, দেয়ালের কোণে পড়ে থাকা ন”ষ্ট ঘড়িটার মত। শুধুই আছি; কোনো গতি নেই, প্রকাশ নেই, উদ্দেশ্য নেই।
………………………..
……………………………………..
জন্মিলে মরিতে হয়,
আকাশে প্রস্তর নিক্ষেপ করিলে,
তাহাকে ভূমিতে পড়িতে হয়,
খুন করিলে ফাঁসিতে যাইতে হয়,
চুরি করিলে কারাগারে যাইতে হয়,
তেমন ভালোবাসিলে কাঁদিতে হয়—-
অপরাপরের মতো ইহাও একটি জগতের নিয়ম।
____শরৎচন্দ্র চট্টপাধ্যায়
…………………..
ইস যদি তুমি আবার ফিরে আসতে।
………………………
দুজনেই জেনেছি দুজন দ্যাখা হবে, একদিন দ্যাখা হবে কোথাও,
কোথাও দ্যাখা হবে – কোথাও কোথায়?
কতোদূর কেউ জানি না
আকাশ জানে..।
___রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ
২.মন খারাপের ডিপ্রেশন নিয়ে স্ট্যাটাস
অসময়ে মন খারাপে,
চোখের কোণে আদিম ঝড়।
হারিয়ে যাওয়ার গল্প শোনায়,
বৃষ্টি ভেজা এই শহর।
~ অভিজিৎ চৌধুরী
…………………
দিনশেষে মানুষ কোন না কোন ভাবে নিজেকেই ভালোবেসে ফেলে।
তীরে এসে ভিড়লেও, বেলাশেষে সমুদ্রের জল সমুদ্রেই ফিরে যায়।
…………………
ছেলেদের জীবন আসলে বড়ই প্যাথেটিক।
কিছুক্ষণ আগের কথা। আমার ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়ুয়া ভাগ্নে মন খারাপ করে বসে আছে৷ আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘কি হয়েছে?’
সে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, ‘আম্মু বকা দিছে!’
‘কেন?’
‘আজ কোচিং এ যাইনি তাই!’
‘যাসনি কেন?’
‘আজ কোচিং নাই!’
‘তাহলে বকা দিলো কেন?’
‘তামান্নার জন্য!’
আরো কিছুক্ষণ কথা বলার পর ক্লিয়ার হলাম বিষয়টা। আমার ভাগ্নের ক্লাসমেট পাশের বাসার তামান্না নাকি তার আম্মুকে বলেছে, আজ কোচিং এ স্পেশাল পরীক্ষা আছে।
বলে সে কোচিং এ গেছে৷ অথচ একই কোচিং এ পড়ুয়া আমার ভাগ্নে যায়নি। এটা নিয়েই আপু ক্ষেপে আছে।
আমার ভাগ্নে নাকি বোঝানোর চেষ্টা করেছিলো, কোচিং থেকে পরীক্ষার ব্যাপারে কিছু বলেনি তাকে।
তামান্নার মা নাকি কটাক্ষ করে বলেছে, ‘তা তো বলবেই না৷ এই পরীক্ষা শুধু স্পেশাল অল্প কয়েকজন ছাত্রছাত্রীর জন্য৷ যারা টানা তিনমাস টপ রেজাল্ট করেছে শুধু তারাই দিবে। পরীক্ষায় ফার্স্ট সেকেন্ড হলে গিফট তো আছেই। সাথে পিকনিকও নাকি হচ্ছে। রাতে একবারে খাওয়াদাওয়া করে আসবে তামান্না কোচিং থেকে!’
আপু দেখলাম ভাগ্নেকে শুনায়ে জোরে জোরে বলতেছে, ‘মানুষের ছেলেমেয়ে এগিয়ে যাবে। আর তুই বসে থাক ঘরে৷ লেখাপড়া তো করবি না৷ সবার পেছনে পড়ে থাকবি৷ তামান্নার কি এমন আছে যা তোর নেই। বল।’
আমি মনে মনে বললাম, ‘তামান্নার জীবনে প্রেম আছে যা ওর নেই!’
আপু খেতে বসেও ভাগ্নেকে কথা শোনালো।
‘মানুষের মেয়ে কোচিং এর টাকায় লাঞ্চ ডিনার করে। আর তুই বাপের হোটেলে বসে বসে খা। তোর দিয়ে কিছুই হবে না!’
এবার ভাবলাম, আমার কিছু একটা করা উচিত। ভাগ্নেকে বললাম, ‘মন খারাপ?’
‘হু!’
‘মন খারাপ করিস না। আজ কি দিবস জানিস?’
‘হ্যা জানি!’
‘কি দিবস?’
‘ভালোবাসা দিবস।’
‘তামান্না কোচিং এর নাম করে কোথায় যাবে জানিস?’
‘কোথায়!’
‘বয়ফ্রেন্ড এর সাথে ডেটিং এ!’
‘কি বলো! আসলেই? ওর আম্মুকে বলে আসি দাঁড়াও।’
‘আরে নাহ, থাক। কি দরকার।’ আমি ওকে থামালাম। ‘যে ডেটিং এ গেছে যাক। আমাদের কি!’
‘বলব না?’
‘দরকার নেই।’
‘শুধু শুধু বকা খাচ্ছি!’
‘মন খারাপ করিস না। আমাদের ছেলেদের জীবনই এমন! থাক, আসি আমি।’
‘কই যাচ্ছ?’
‘কাজ আছে!’
আমি দ্রুত বের হয়ে গেলাম। তামান্না আবার আমার জন্য কলেজের পেছনের গলিতে অপেক্ষা করছে৷ ওকে নিয়ে ঘুরতে যাব। আমাদের সাত মাসের প্রেম। ওক আজ গিফট কিনে দিতে হবে, লাঞ্চ আর ডিনার করাতে হবে৷ অথচ এগুলার ক্রেডিট সব যাবে কোচিং সেন্টারের নামে। আফসোস।
ছেলেদের জীবন আসলেই অনেক প্যাথেটিক৷
৩.মন খারাপের স্ট্যাটাস বাংলা
কাউকে সব সময় হাসি খুশি দেখো তার জন্যে এটা ভেবো না মানুষ টা খুব ভালো আছে
মন খারাপের স্টাটাস দেয়া মানে এটা না যে মানুষ টা প্রেমে ব্যর্থ একটা মানুষের চিন্তা ধারার শেষ নেই
তাই কে ভালো আছে আর কে খারাপ আছে বোঝা দায় এ জগতের মানুষের জীবনে আনন্দের চেয়ে ডিপ্রেশন বেশি
আসলে আমরা এমন যে ভালো থাকতে থাকতে হঠাৎ করেই মন খারাপ হয়ে যায় আমাদের হ্যাঁ এটাই ঠিক
মন খারাপের কোন কারণ লাগে না আবার মনে করতে পারো মন খারাপের কারণ তুমি নিজেই
অতিরিক্ত চিন্তা ভাবনা আমাদের মন খারাপের কারণও হতে পারে সব মিলিয়ে আমরা কিছু সময় ভালো
কিছু সময় খারাপ থাকি অবশ্য আমাদের নিজের জন্য এমনটা হয় অযথা কারো দোষ দিয়ে লাভ নেই
……………
…………….
# দরজার ওপাশে
প্রচন্ড মেজাজ খারাপ নিয়ে বাসর ঘরে ঢুকলাম। ঢুকে দেখি আমার নববিবাহিত স্ত্রী মিলা মন খারাপ করে বসে আছে।
উচ্চবিত্ত পরিবারের একমাত্র মেয়ে মিলা, আমাদের তিন বছরের সম্পর্কের এই বিয়েতে ওর বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজন কেউ রাজি ছিল না ,একমাত্র ওর জেদের কারণে বিয়েটা সম্ভব হয়েছে।
-আমি খুব দুঃখিত মিলা, প্লিজ আমার ছোট ভাই আসিফের ব্যবহারে তুমি কিছু মনে করো না।
আসলে গাড়ি থেকে নামার পর আমি কিছু বোঝার আগেই আসিফ মিলাকে কোলে তুলে নিয়ে আসলো ঘরের দরজার সামনে। মিলা হতচকিত হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো, আমিও তখন কি বলবো বুঝতে না পেরে চুপ করে থাকলাম। মোটামুটি আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে যখন সবাই চলে গেল, মিলা তখন বাসর ঘরে।
আমি আসিফ কে ডেকে পাঠালাম, এবং মায়ের সামনেই প্রচন্ড কড়া ভাষায় কিছু কথা বললাম।
আসিফ আমতা আমতা করে বলতে লাগলো,
– আসলে আমি কিছু করতে চাইনি, বড়রাই আমাকে বলেছে এরকম নাকি নিয়ম।
-আরে আরিফ ছাড় না এসব, কিছু কিছু নিয়মকানুন মজা করার জন্য করা হয় , তোর মামা খালারা বলছিল-এই বেচারাকে দোষ দিচ্ছিস কেন? মা পাশ থেকে বলে উঠলেন
আমি ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে রুমে ঢুকে গেলাম।
তার পরদিন বিকেলে মিলাকে নিয়ে বাইরে যাবো, মিলা ডাইনিং রুমে গেল পানি খাওয়ার উদ্দেশ্যে। তারপরেই চিৎকার ভেসে আসলো ।চিৎকার করছিলেন আমার মা,
এটা তুমি কি করলে বৌমা ? অলুক্ষণে কাজ বিয়ের পর পর এসেই এরকম কাচের জিনিষপত্র ভাঙছো?
তাকিয়ে দেখি মিলা থর থর করে কাঁপছে। আমি আমার মায়ের চোখে একটা ক্রোধ দেখতে পাচ্ছি, বুঝলাম না মিলা কে নিয়ে তার সমস্যা কোথায় ? বরং উনিই তো মিলাকে পুত্রবধূ করার জন্য আমাকে উৎসাহিত করেছিলেন।
-মা কি শুরু করলে একটা গ্লাস ভেঙেছে শুধু?
-গ্লাসটা ভেঙেছে সেটা বড় ব্যাপার না কিন্তু আমি স্পষ্ট দেখলাম ইচ্ছে করে তোর বৌ হাত থেকে গ্লাসটা ফেলে দিয়েছে
মিলা ভয়ার্ত চোখে চুপ করে আমার পেছনে লুকিয়ে আছে। -তুমি ভুল দেখেছো মা ।আমি ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে মায়ের দিকে কথাগুলো ছুড়ে মিলার হাত ধরে ঘরে ঢুকলাম।
মিলা বড় হয়েছে খুব আদরে, আমি জানতাম ও যেই ফ্যামিলি থেকে এসেছে সেরকম লাইফস্টাইল ওকে আমি দিতে পারবো না কিন্তু এটা কখনো আশা করিনি যে আমার পরিবার থেকে ও দুঃখ পাবে। কি বলবো সান্ত্বনা দেয়ার ভাষা আসলে আমার ছিলনা। মিলা খুব চুপচাপ হয়ে গেছে। ও আর আগের মত হাসে না, আমাকে জড়িয়ে ধরে আইসক্রিমের বায়না ধরে না, মন খুলে আমার সাথে কথা বলে না , সব সময় কেমন একটা ভয়ে থাকে।
একদিন মাঝরাতে ওর গোঙানির শব্দ পেলাম, পাশ ফিরে দেখি কেমন একটা ছটফট করছে। ডেকে তুললাম রীতিমতো ঘেমে গেছে মনে হয় কোন স্বপ্ন দেখেছে। আমাকে জড়িয়ে ধরে শুধু একটাই কথা বললো
-আরিফ আমি এখানে থাকবো না।
-কেন, কি হয়েছে? আমি সাইড টেবিল থেকে পানির গ্লাসটা দিতে দিতে ওকে বললাম।
মুহূর্তে ওর মুখ ফাকাসে হয়ে গেল, “না কিছুনা শুয়ে পড়ো।”
আমি আর চাপাচাপি করলাম না, সকাল হোক দেখা যাবে।
আমাদের বিয়ের আট মাসেও আমি মিলাকে ঠিকঠাকমতো এই বাড়িতে হাসতে দেখি নি। নিজেকে কেমন যেন অপরাধী মনে হচ্ছিল তবে কি আমি মিলার জীবনটা নষ্ট করে দিলাম?
অফিস থেকে ফিরে নেটে একটু সময় কাটাচ্ছিলাম,
-তোমার একটু সময় হবে ?কেমন যেন আড়ষ্ঠ ভাবে মিলা বলে উঠলো
-এভাবে বলছ কেন মিলা ?তোমার জন্য আমি সব সময় ফ্রী, বসো আমার পাশে কি হয়েছে বলো।
-তুমি কিছু মনে করবে না তো?
-আরে আগে বলেই দেখো না
-দেখো আরিফ ,আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি, আমি তোমাকে ছাড়া এক মুহূর্ত থাকতে পারবো না কিন্তু এই বাড়িতে থাকাটা আমার জন্য খুব মুশকিল হয়ে গেছে।
-আমি বুঝতে পারছি মিলা
-না আরিফ তুমি আসলে কিছুই বুঝতে পারোনি ।এখন আমি তোমাকে যে কথাটা বলবো সেটা তোমার বিশ্বাস হবেনা আর হয়তো তুমি আমাকে কাল সকালে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেবে
আমি একমনে মিলার দিকে তাকিয়ে থাকলাম ওকে বলার সুযোগ দিলাম
-আরিফ প্লিজ কিছু মনে করো না কিন্তু তোমার ভাই আসিফের মতিগতি ভাল না, ওর চোখ আমার দিকে যেন অন্য ভাবে তাকায় বলতে বলতে মিলা চোখ নামিয়ে নিলো।
যতক্ষণ বাসায় থাকে আমার খুব অসহায় লাগে।
-তুমি আগে কেন এসব কথা বলোনি?
-মাকে বলেছিলাম কিন্তু মা বললেন, ছেলেমানুষ সব ঠিক হয়ে যাবে ।তোমাকে বলতে বারণ করেছিলেন তাই কিছু বলিনি। কিন্তু গতকাল ও আমার গায়ে হাত দিয়েছে, আমাকে বাজে ইঙ্গিত করেছে।
মুহূর্তে আমার রক্তে যেন আগুন জ্বলে উঠলো মনে হলো এই মুহূর্তে আসিফ কে ডেকে এনে ওর হাড় গুলো সব ভেঙ্গে দেই। তাছাড়া আমি নিজেও লক্ষ্য করেছি ওর সামনে মিলা সবসময় তটস্থ থাকে। মায়ের ব্যবহারও মিলার প্রতি কেমন যেন।
-তুমি চিন্তা করো না মিলা, আমি এর একটা ব্যবস্থা করবো।
-প্লিজ আরিফ তুমি ওকে কিছু জিজ্ঞাসা করো না, আমি ওর চোখে আমার জন্য বাজে ইঙ্গিত গুলো সব সময় দেখতে পাই এখন যদি তুমি ওর সাথে ঝামেলা করো তাহলে আমার গর্ভে আসা তোমার সন্তানের যদি কোন ক্ষতি করে দেয়
-তুমি সত্যি বলছো মিলা আমি বাবা হতে যাচ্ছি? আমি খানিকটা থতমত হয়ে জিজ্ঞেস করলাম।
মিলা আলতো করে হাসলো।
মুহূর্তে আমার সব রাগ পানি হয়ে গেল, না এই সময়ে মিলাকে আমি মানসিক অশান্তির মধ্যে রাখতে পারবো না, ওকে নিয়ে ওর বাবার বাড়ি চলে যাবো। ওটাই ওর জন্য এখন একমাত্র সুরক্ষিত জায়গা।
পরদিন সকালে আমাদেরকে বেরোতে দেখে মা ছুটে বেড়িয়ে আসলেন। কিছু জিজ্ঞেস করার আগে আমি বললাম,
– আমি আর তোমাদের মুখ দেখতে চাই না, আমি চলে যাচ্ছি।
-কিন্তু কি হয়েছে , কেন চলে যাবি?
-তোমার ছোট ছেলেকে জিজ্ঞেস করো সে মিলার সাথে কি করতে চেয়েছিল? পারভার্ট একটা, ছি ওকে ভাই বলতে আমার লজ্জা করে। আমি মিলা কে নিয়ে বের হয়ে আসলাম। আসিফ পেছনে ছুটে আসলো
– ভাইয়া তোমার কোথাও ভুল হচ্ছে ।ওর চেহারা দেখেই আমার রাগ যেন মাথায় উঠে গেল একটাও কথা না বলে ঠাস করে একটা থাপ্পর মারলাম ,পেছন থেকে মা আহাজারি করে চলেছেন।
মিলাদের বাড়িতে ঢুকতেই মিলা যেন প্রাণ ফিরে পেল। পরদিন সকাল থেকেই আমি আমার সেই পুরনো মিলাকে খুঁজে পেলাম যেন আমার স্ত্রী নয় সেই পুরনো প্রেমিকা, পুরনো হাসি, পুরনো ভালবাসা। কিছু মাস পরেই মিলার কোল জুড়ে আসলো আমাদের প্রথম পুত্র সন্তান, বছর দুয়েক পরে আমি আবার একজন পুত্র সন্তানের পিতা হলাম। বলাই বাহুল্য আমি আমার ফ্যামিলির সাথে আর কোন যোগাযোগ করিনি। ওরকম নোংরা জায়গায় আমার মিলাকে মানায় না আর এখন তো আমার সাথে আমার দুই ছেলেও আছে। কি আশ্চর্য সে দিন যদি সাহস করে মিলার হাত ধরে বের হয়ে না আসতাম তাহলে আজকে আমার জীবনটা এত সুন্দর হতো না। এত সুন্দর একটা ফ্যামিলি আমি নিজে থেকে ওই বাড়িতে কখনোই পেতাম না। আমার শ্বশুর মারা গেছেন বেশ কিছুদিন হয়েছে তার অবর্তমানে উনার বিজনেস আমি সামলাচ্ছি। আমি মাঝে মাঝে খুব চিন্তা করি মানুষের ভাগ্য আসলেই হাতে থাকে না, কোথায় ছিলাম আমি এক অতি সাধারণ মধ্যবিত্ত ফ্যামিলির ছেলে আর আজ আমি কোথায়, সবটাই মিলার জন্য। অথচ এই মিলা কত কষ্ট পেয়েছে আমার ফ্যামিলির কাছ থেকে, শুধু কষ্ট না সাথে ছিল অপমান। দেখতে দেখতে ছেলেরা বড় হয়ে গেল। একজন ক্লাস নাইন আরেকজন সেভেন। ওদের দুই ভাইকে যখন খুনসুটি করতে দেখি আমার বুকের মধ্যে কেমন একটা আঁচড় লাগে আমি আর আসিফ ঠিক এমন ছিলাম।
অনেকগুলো বছর পর নিজের বাড়িতে এসে দাঁড়ালাম
কেমন যেন পর পর লাগছে। দরজা খুলে দিলেন আমার মা। চুলগুলো একেবারে সাদা হয়ে গেছে, একদম নাজুক হয়ে গিয়েছেন। মা ইশারায় আমাকে বসতে বললেন যেন আমি কোনো মেহমান ।
“আসিফ কোথায় মা?”
মা কোন কথা না বলে ভেতরে চলে গেলেন, মায়ের হাতে একটি চিঠি। উনি প্রায় রোবটের মত আমার হাতে ধরিয়ে দিলেন, কাগজটা অনেক পুরনো
ভাইয়া,
আমায় ক্ষমা করো আমি জানিনা তোমাদের মধ্যে কি সমস্যা হয়েছে ? তবে আত্মীয়-স্বজন আর পাড়া-প্রতিবেশীদের মুখে যতটুকু শুনেছি তাদের মূল বক্তব্য হলো সমস্যার কারণ হচ্ছি আমি , যার কোন কিছু আমি জানিইনা। স্ত্রীকে অবিশ্বাস করা কোন স্বামীর কর্তব্য বা দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না কিন্তু ঠিক তেমনভাবে নিজের পরিবারের কাউকে মনে মনে দোষারোপ করার আগে সেটা যাচাই করা উচিত ভাইয়া। আমায় মাফ করো আমি এই দোষারোপ নিয়ে আর বাঁচতে পারছি না, বাইরে বের হতে পারি না আত্মীয়-স্বজন বন্ধুবান্ধব সবাই কেমন চোখে যেন তাকায়। পারলে মাকে দেখে রেখো, জানি সেটা তোমার দ্বারা সম্ভব না, কারণ তুমি একপাক্ষিক কথা শুনেই বিচারের দণ্ড ঝুলিয়ে দাও, তোমার মনে আছে বিয়ের দ্বিতীয় দিনেই ভাবির হাত থেকে একটা গ্লাস পড়ে গিয়েছিল না ওটা পড়ে যায় নি ভাবি ইচ্ছে করে ভেঙেছিল এবং মায়ের সামনে খুব ডেসপারেটলি, যেন মা রিএক্ট করে বসেন। আসলে ভাবি কখনোই চায়নি আমাদের সঙ্গে থাকতে , ভাবি শুধু তোমাকে নিয়ে থাকতে চেয়েছে আর সে সফল হয়েছে। ভাইয়া চিঠিটা তোমার উদ্দেশ্যে যদি কখনো আসো তাহলে হয়তো হাতে পাবে আমি জানি যে গন্তব্যের পথে আমি যাচ্ছি তা কোন সমাধান না কিন্তু এই সমাজ থেকে পালিয়েও আর বাঁচতে পারছিনা, সবাই আমাকে দেখে হাসে, তবে কষ্টটা সেখানে না মূল কষ্টটা হলো তুমি একবারও আমাকে জিজ্ঞেস করো নি, জানতে পর্যন্ত চাওনি আসল সত্যটা কি? উল্টো আমার গায়ে হাত তুলেছো। ভালো থেকো ভাইয়া ,খুব ভালো তোমার নতুন পরিবারের সাথে।
আমি বাচ্চাদের মত কাঁদতে লাগলাম , মা এসে আমার হাত থেকে পরম যত্নে চিঠিটা নিয়ে নিলেন।
-আপনি এবার আসুন
আমি মায়ের কথায় চমকে উঠলাম।
-মা তুমি এভাবে কেন কথা বলছো
-কারণ একজন মা তার সন্তানের খুনি কে কখনোই ক্ষমা করতে পারে না।
-আমি কি তবে তোমার সন্তান নই আর আমি এসব তো জেনে বুঝে ইচ্ছে করে করিনি আমি ,প্রায় চিৎকার করে বলে উঠলাম।
-আমার বড় ছেলে বহু আগে মারা গেছে আর আমার ছোট ছেলে এখনো আমার সঙ্গেই আছে, ওপারে চলে গিয়েও আমি ওর স্মৃতিকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছি সেখানে কোন খুনির জায়গা নেই। দরজাটা ওদিকে, কঠোর কন্ঠে মা বলে উঠলেন, মায়ের এইরূপ আমি কখনো দেখিনি।
আমি বের হতেই সশব্দে দরজাটা লাগিয়ে দিলেন। আমি জানিনা আমি এখন কি করবো ,কোথায় যাবো, কার কাছে যাবো, কেন যাবো ,আমার কি করা উচিত ?একের পর এক প্রশ্ন যার কোন উত্তর নেই। বদ্ধ দরজার এপাশে দাঁড়িয়ে আমি অপেক্ষা করতে লাগলাম হয়তো দরজাটা খুলবে কখনো। কিন্তু আজ মাকে দেখে বুঝে গেছি আমি শুধু অপেক্ষাই করবো, ওই দরজা আমার জন্য আর কখনোই খুলবে না।
………………….
একজন মায়াবতী
————————–
( ডাঃ সুমনা তনু )
আমার যে খুব মন খারাপ, তা কিন্তু নয়। আজ আমার বিয়ে। সব মেয়েই মনে হয়, বুদ্ধি হওয়ার পর থেকে বিয়ে নিয়ে একটা স্বপ্ন দেখে। আমি ও দেখেছিলাম । শোভনের সাথে আমার পরিচয় ভার্সিটিতে । এক সাথে পড়লে ও, প্রথম আলাপ হয় তৃতীয়বর্ষে । ঠিক প্রেম বলা যাবে না । আসলে ওকে আমি খুব পছন্দ করতাম । ওকে বিয়ে করে, ওর সাথেই বুড়ো হবো, এ রকম ইচ্ছা ছিল মনে । ছোটবেলা থেকেই আমি খুব কল্পনা বিলাসী ছিলাম। কল্পনায় – ‘শোভনের হাত ধরে হেঁটে বেড়াতাম। এক সাথে জোস্নার চাদর গায়ে জড়িয়ে চুটিয়ে আড্ডা দিতাম। ধুম বৃষ্টিতে দুজনে একসাথে কফি খেতাম।’ আমার ধারণা ছিল, শোভনও আমাকে পছন্দ করে । কিন্তু একদিন শোভন প্রথম বর্ষের দীপাকে এনে তার গার্ল ফ্রেন্ড বলে পরিচয় করিয়ে দিলো। আমি বোকার মত দীপার সামনেই বললাম, ” কিন্তু আমি তো তোকে ভালোবাসি !!!! আমার ধারণা ছিল, তুই ও আমাকে ভালোবাসিস !! ” শোভন মনে হয় জীবনে কোনদিন এত অপ্রস্তুত হয়নি। আমার চেয়ে ও বেশি অবাক হয়ে বললো, ” তুই তো কোনদিন বলিসনি ?!!!! ” আমি রাগ করে বললাম, ” আমি কেন বলবো ?! মেয়েরা কি কখনো প্রেমের প্রস্তাব দেয় ?!” শোভন ভীষণ হতাশ হয়ে বললো, ” নীতু, তুই এত সুন্দর, স্মার্ট, বিশাল ধনীর মেয়ে, তোর সাথে শুধু বন্ধুত্ব করবো, এই সাহস অর্জন করতেই আমার তিন বছর লেগেছিল । আমি কোন সাহসে তোকে প্রস্তাব দিবো ?!! ” এতক্ষণে ক্ষোভে, দুঃখে দীপার কথা ভুলেই গিয়েছিলাম । হঠাৎ করে দীপার দিকে তাকিয়ে দেখি, সে ভাষাহীন হয়ে আমাদের দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে । বেচারার চোখে ও পানি । আমি বুঝতে পারলাম, আমার ভুল হয়েছে, দীপার সামনে এরকম বলাটা ঠিক হয়নি। তাই চুপ হয়ে গেলাম। কিন্তু শোভন তখনও বুঝতে পারেনি বলে আরও কিসব বলে যাচ্ছিল। আমি আর কনসেনট্রেট করতে পারিনি। তবে শোভন ও সম্ভাবত বুঝতে পেরেছিল, আমি ওখান থেকে চলে যাওয়ার পরে । কারন পরের দিন থেকেই শোভন আর আমার সাথে কথা বলেনি। সম্ভবত দীপার নিষেধ ছিল, অথবা নিজেই বুঝেছে, এরপর আর যোগাযোগ রাখা ঠিক নয়।
বেশ কিছুদিন সময় লেগেছিল আমার নর্মাল হতে । কিন্তু বিয়ে – শাদী, প্রেম – ভালোবাসা, এই ব্যাপারগুলোর প্রতি একধরণের বিতৃষ্ণা এসেছিল। নিজের পড়ালেখা নিয়ে ব্যস্ত থাকতাম। পাশ করার পরে বাসার থেকে উঠে পড়ে লাগলো বিয়ে দেওয়ার জন্য । আমি বিয়ে করতে রাজি ছিলাম না । বাবার বাড়ির এই আরাম, আয়েশ আর ভালোবাসা ছেড়ে, বিয়ে করার কোন মানে হয়না, তাই। কিন্তু সবার জোরাজুরিতে শেষ পর্যন্ত রাজি হতে হলো।
আমার ছোট চাচু থাকেন আমেরিকাতে। তিনি এক ইন্জিনিয়ার ছেলের সাথে আমার বিয়ে ঠিক করলেন। ছেলেরা সবাই আমেরিকা তে সেটেল। ছেলের মা নেই। তবে ছেলে এবং ছেলের পরিবারের সবাই নাকি খুব ভালো । ছোট চাচুর সাথে ওদের পারিবারিক সম্পর্ক খুব ভালো । ওদের আমাকে নাকি ভীষণ পছন্দ । আমি হ্যা বললেই বিয়েটা হয়ে যায়। আমাদের বাসায় দেখি সবাই খুশিতে নাচছে। কি আর করা, আমি রাজি হয়ে গেলাম ।
কি এক অভিমানে ছেলের ছবি পর্যন্ত দেখিনি। ছেলেটা ফোন দিয়েছিল, আমি কথা বলিনি। পরে বাসার সবার সাথে কথা বলেছে। এবং এখন প্রায় প্রতিদিনই বাসার সবার সাথে ভিডিও কল করে । আমি ইচ্ছা করেই সামনে থাকি না। কি দরকার তাকে দেখে? মামদো ভূতের সাথে বিয়ে হলেও আমার আপত্তি নেই ।
সেদিন ফেসবুকের ফ্রেন্ড রিকোয়েস্টগুলো দেখছিলাম । দেখি ছেলেটা কবেই ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাইছে, খেয়াল করিনি।
প্রোফাইল পিক দেখে হাসবো না কাঁদবো বুঝতে পারছি না । ছেলেটা দেখতে খুব স্মার্ট, সুন্দর। কিন্তু বয়স আনুমানিক চল্লিশ/পয়তাল্লিশ হবে ! আমি বেশ কিছুক্ষণ থম মেরে বসে ছিলাম । শেষ পর্যন্ত আমার কপালে এই ছিল ?!! আমি অবাক হয়ে ভাবছি, আমার বাবা মা কেমনে এরকম একটা ছেলের সাথে আমার বিয়ে ঠিক করলো? শুধুমাত্র আমেরিকা পাঠানোর জন্য?!!! আমি ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করলাম না । কিছুক্ষন কাঁদলাম । বাবা মা এর উপর প্রচন্ড অভিমান হলো । তারা হয়তো ছেলের বয়সটাই জিজ্ঞাসা করেনি। ছোট চাচু কে অন্ধের মত বিশ্বাস করে । উনি বলেছেন ভালো, কাজেই ভালো । আমার ও জেদ বাড়লো। মনে মনে ভাবলাম, এই ছেলেকেই বিয়ে করবো। বাবা মার চোখের সামনে বুড়া জামাই ঘুরে বেড়াবে; আমি ও দেখতে চাই, ব্যাপারটা তাদের কেমন লাগে ।
ওরা যে বিয়ের বাজার পাঠিয়েছে , তা দেখে তো সবার চোখ ছানাবড়া। এত গর্জিয়াস সব কিছু ! মিছেই সবাই আমাদের কে ধনী বলে। আসলে পৃথিবীতে ধনী, দরিদ্র ব্যাপারটা আপেক্ষিক । কিন্তু আমার কথা শুনে সবার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো । আমি জেদ ধরলাম, বিয়েতে আমি আমার দাদীর বিয়ের শাড়িটা পরবো। মনে মনে ভাবছি, বুড়া ছেলে, আগের আমলের শাড়ি দেখে ভিমড়ি খাবে কেন ? বরং নিজেদের জামানার কথা ভেবে নস্টালজিক হবে। তবে এই শাড়িটা পরার পিছনে অন্য একটা কারনও আছে। আমার দাদার প্রচুর সম্পত্তি ছিল । ছোটখাটো একজন জমিদার ও বলা যায়। দাদী মারা যাবার পরে দাদার কেমন সংসার এর প্রতি একটা বৈরাগ্য আসে। সে তার জমিজমা সব বিক্রি করে দিয়ে, ছেলেমেয়েদের কে ভাগ করে দেয়। দাদার কাছে ছোট একটা ব্যাগ ছিল । এই ব্যাগটা সে দাদী মারা যাবার পরে, প্রায় দশ বছর আগলে রেখেছে। যেখানেই বেড়াতে যেতো, সাথে করে ব্যাগটা নিয়ে যেতো। প্রথম প্রথম সবাই খুব বিরক্ত হতো। কোথাও এক দুই ঘন্টার জন্য বেড়াতে গেলেও সাথে করে ব্যাগটা তার নেওয়া চাই ই চাই । শেষে সবার ধারণা হলো, ব্যাগটার ভিতরে কোন গুপ্তধন আছে। যেদিন দাদা মারা গেলেন, সেদিন রাতেই মেঝে চাচী প্রসংগটা টানলেন । মেঝে চাচী খুব বৈষয়িক মানুষ । পাছে মরা বাড়ির এই সব ঝুট ঝামেলায় সবাই ব্যাগটার কথা ভুলে যায়। কার না কার হাতে গুপ্তধন গুলো পড়ে, আল্লাই জানে । তাই মেঝে চাচী বাবা কে বললেন, ” বড় ভাইয়া, বাসাতে সবাই আজ আছে। বাবার ব্যাগটা সবার সামনে খোলা ই ভালো ।
গুপ্তধন যদি থাকে, তাহলে আপনি সবার বড়, আপনিই সবাই কে সমান ভাগ করে দিবেন ।” দেখলাম বাকি সবাই ও তাই চাচ্ছে। তখন ব্যাগটা এনে খোলা হলো। ব্যাগের ভিতর থেকে বেরিয়ে এলো, দাদীর বিয়ের শাড়ি আর নোলকটা। সেদিন সবার মুখটা দেখার মত ছিল । ব্যাগটা কেউ বন্ধ করার ও প্রয়োজন মনে করলো না । সেখানেই ফেলে রেখে, যে যার কাজে লেগে গেলো। আমার কিন্তু ব্যাপারটা দারুণ লাগলো । দাদার প্রতি শ্রদ্ধা হাজার গুন বেড়ে গেল । কি দারুন ভালোবাসা দাদীর প্রতি !! আমি শাড়িটা আর নোলকটা নিয়ে আমার আলমারিতে রেখে দিয়েছিলাম । এই শাড়িটা পরলে আমার নিজের ও খুব ভালো লাগবে। হয়তো দাদা দাদীর দোয়াতে আমাকে ও আমার বর প্রচুর ভালোবাসবে ! তাই জেদ ধরলাম এই শাড়ি আর নোলকটাই আমি পরবো। ওরা আনান, মানে আমার হবু বরকে ব্যাপারটা জানালো। সে বললো, তার কোন সমস্যা নেই । বাবা, মা শুনিয়ে দিলো, আনান বলেই আমার এই পাগলের মত প্রস্তাব মেনে নিয়েছে। পৃথিবীর অন্য কোন ছেলে এটা মানতো না।
তো যেটা বলছিলাম, আমার যে খুব মন খারাপ, তা কিন্তু নয়। ওরা গতকাল রাতেই বাংলাদেশে পৌঁছাইছে। আমাদের গায়ে হলুদ হচ্ছে না । সরাসরি বিয়েই হচ্ছে । আমি সেজেগুজে বসে আছি । গহনা আর মেকাপের ভারে মানুষ মনে হয় শাড়িটা বেশি খেয়াল করতে পারছে না । বর যাত্রীর সবাই কমিউনিটি সেন্টারের একতলা তে আছে। আমি আছি দোতলায়। বিয়েটা হয়ে গেল । কিছুক্ষন পরে আনান আসলো উপরে। এবার সত্যি সত্যিই আমার মন খারাপ হলো। জেদের বশে এরকম বয়স্ক একজন কে বিয়ে করলাম !!! যদি ও সে মনে হয় খুব হাসি খুশি । আমার দিকে একবার মিষ্টি একটা হাসি দিয়েই ব্যস্ত হয়ে পড়লো অন্যদের সাথে কথাবার্তা বলাতে। স্টেজে বসে ঠিক বুঝতে পারছি না, কি নিয়ে কথা বলছে। কিন্তু সবাই দেখি, তাকেই ঘিরে আছে। বাবা মার দিকে একবার তাকালাম। আমার আমেরিকা লোভী বাবা, মা, কি পরিমান শকড হয়েছে, দেখার ইচ্ছা হলো। কিন্তু দেখি, তারা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুখী বাবা মার মত ঘুরে বেড়াচ্ছে !!!
প্রায় আধা ঘন্টা পরে হঠাৎ করে আমার সব কাজিনরা এবং আমার বন্ধু বান্ধবীরা হৈ হৈ করে শেরোয়ানী পরা এক রাজপুত্র কে নিয়ে স্টেজে উঠে আসলো । আমি অবাক হয়ে একবার একে দেখছি আর একবার তাকে দেখছি। আমি যে নতুন বউ, ভুলে গেলাম। আমার পাশের চেয়ারে বসা রাজপুত্র কে জিজ্ঞাসা করলাম, ” উনি কে ?” হাত দিয়ে দেখিয়ে দিলাম, যাকে আমি আনান ভেবেছিলাম । রাজপুত্র বললো, ” আমার বাবা !!! কেন তুমি উনার ছবি দেখোনি ?!!! আমার প্রোফাইল পিকচারে ও তো বাবার ছবি দেওয়া আছে!!”
আনানদের বাসাটা ছোট খাটো একটা রাজ প্রাসাদ বলা যায়। এমনি সময়ে বাসাটাতে কেউ থাকে না । বিয়ে উপলক্ষে বাসাটা কে নতুন করে সাজানো হয়েছে । বিদেশ থেকে যেসব আত্মীয় স্বজন বিয়ে উপলক্ষে এসেছেন, তাঁরা সবাই এই বাসাতেই উঠেছেন। রাতে আনান আমাকে ছাদে নিয়ে গেলো। আজ যে পূর্ণিমা, আগে খেয়াল করিনি । আনান বললো, ” তুমি কি খেয়াল করেছো, দেখে দেখে পূর্ণিমার দিনে আমাদের বিয়ের দিনটা ঠিক করেছি ? আসলে তোমার আমার প্রথম রাতটা, পূর্ণিমা রাতে এই বাসার ছাদে উৎযাপন করতে চেয়েছি।” আমি অবাক হয়ে আনানের মুখের দিকে চেয়ে রইলাম । আনান বলতে থাকলো, ” আমাদের পরিবারের সবাই আমেরিকার নাগরিক । কিন্তু আমার মা কখনো আমেরিকা যেতে চায়নি। তাই বাবা, মায়ের জন্যই এদেশেই থেকে গিয়েছিলেন। প্রতি পূর্ণিমা রাতে মা নানা রকম খাবার রান্না করতেন । আমি, বাবা, মা, আমরা অনেক রাত পর্যন্ত ছাদে থাকতাম। খাওয়া দাওয়া করতাম। মা গান শোনাতো। আমার মা খুব ভালো গান গাইতেন। আমার বয়স যখন বারো বছর, তখন মা মারা যান । বাবা , মাকে ছাড়া, এই বাসায় একা একা থাকতে খুব কষ্ট পাচ্ছিলেন। তাই আমি আর বাবা ও চলে গেলাম আমেরিকা ।” আনান ফ্লাক্স থেকে কফি ঢেলে আমাকে দিল আর নিজে নিলো। আনান আবার বলতে শুরু করলো, ” আমার বাবা আমার পৃথিবী । নিজের বাবা বলে বলছি না, আসলে উনার মত ভালো মানুষ, পৃথিবীতে খুব বিরল। দুদিন গেলে তুমি ও বুঝতে পারবে। আমার মাকে, বাবা প্রচন্ড ভালোবাসতেন। আমার মা ছিলেন একজন মায়াবতী। তোমার দাদার এবং দাদীর শাড়ির গল্প যখন শুনলাম, তখন মনে হলো, তোমার দাদী ও ছিলেন একজন মায়াবতী।”
আনান কখন যে আমার হাতটা ধরেছে, আমি টের পাইনি। হাতে আলতো করে একটু চাপ দিয়ে বললো,” সুন্দরী, আধুনিক, স্মার্ট মেয়েটাকে যখন দেখলাম, দাদীর পুরনো বিয়ের শাড়িটা পরে স্টেজে, তখন মনে হলো, আর একজন মায়াবতী বসে আছে স্টেজে।”
আনান কি অদ্ভুত মমতা নিয়ে, তাকিয়ে আছে আমার দিকে । আমার দুচোখ দিয়ে আনন্দের অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। বার বার মনে হচ্ছে, পৃথিবীটা এত অসহ্য সুন্দর কেন ?!!!!
৪.ছেলেদের কষ্টের স্ট্যাটাস
আমার পরিচিত এক ছেলে আছে, মাসের শুরুতে নতুন টাকা জমায়। চকচকে নোট চোখে পড়লেই, তা সংগ্রহ করে। মাসের শেষের দিকে এসে সে টাকা খরচ করতে থাকে। আবার নতুন মাস আসে, নতুন টাকা জমায়। মাসের শেষে আবার তা খরচ হয়ে যায়।
নতুন টাকা সংগ্রহ করা তার শখ; খরচ করা তার প্রয়োজন।
মানুষ তার এক জীবনে ভালোবেসে কিংবা শখের বসে এমন কত প্রিয় মানুষ জমায়; অথচ, দুঃসময়ে তা খরচ হয়ে যায়। কাউকেই আটকানো যায়না। না চকচকে টাকা; না চকচকে মানুষ।
……………………………..
………………………………………….
পুরুষ মানুষের মন খারাপের অনেক কারন থাকে। টাকা পয়সা তার একটি, এই জিনিষ টা ছাড়া পুরুষ হয়ে যায় হাঁফ লেডিস।
আপনি পুরুষ মানুষ হয়েছেন, আর আপনার ধনসম্পদ নাই পারিবারিক স্টাটাস নাই আবার টাকাও নাই। ভুলেও নিজেকে পুরুষ ভাববেন না। ‘ভালবাসার সাথে টাকার সম্পর্ক নেই’ এই কথা যে বলে তার দুই গালে কষে থাপ্পড় দিন। নিকৃষ্টতম মিথ্যাটি সে আপনাকে বলেছে।
টাকা সবারই লাগে, অথচ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটি থাকে পুরুষের পকেটে। এর ওজন ও ব্যাথা প্রতিটা পুরুষকে বইতে হয়। টাকা না থাকলে কোন মেয়ে অমানুষ হয়ে যায় না, কিন্তু একটি পুরুষ মহিলা হয়ে যায়। টাকা আসে, আবার চলে যায়। মাঝ থেকে ভালবাসাটা নিয়ে গেলে আর কষ্টের সীমা থাকে না।
হঠাৎ একদিন মাথা চক্কর দিয়ে দাড়ানো থেকে মাঠিতে লুটে পড়েছিলাম রুমে , রুমের রুমমেট এবং বন্ধুরা মিলে হসপিটালে পাঠালো। চিকিৎসার সুবাদে ডাক্তার অনেক কথা councelling করেছিলাে। আসলে টাকা দিয়ে হয়ত সুখ কেনা যায়, জীবন তো আর কেনা যায় না। তবুও আমাদের টাকাই সব।
………………
……………………
#সুটকেস
গতকাল একটি চাকরিতে জয়েন করে আজ রিজাইন করে চলে এসেছি। এই অবস্থায় মানুষের মন খারাপ হয়, ভেঙে পড়ে, হতাশায় ভুগে কিন্তু আমার কাজটি করতে পেরে খুব হাল্কা লাগছে। ভাল লাগছে।
আমার মাকে আমি ছোটবেলা থেকে দেখেছি, খুব ছোট-খাটো কারণে বাবার সংগে ঝগড়া করে। ঝগড়া করলে আমাদের ভাইবোনদের মারধর করে। অনেক রাতে মা-বাবার রুম থেকে ঝগড়া ও ধস্তাধস্তির আওয়াজ পেতাম। আমরা ভাইবোনেরা ঘুমের ভান করে পড়ে থাকতাম। মায়ের সংসারের প্রতিও তেমন মন ছিল না। আত্মভোলা মনভোলা টাইপের ছিলেন। তবুও মায়ের জন্য আমার খুব মায়া হতো। একা একা ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতে দেখেছি তাকে অনেক। মাকে আমার মাঝে মাঝে খুব সহজ সরল মনে হতো। কখনও কঠিন। অল্প বয়সের ছবিগুলো দেখেছি কী মায়াবী চেহারা। উচ্ছল চঞ্চল উড়ন্ত ফড়িংএর মতো হাসিখুশি ছবি। নানীজানের মুখেও তার অনেক দুষ্টুমির গল্প শুনেছি যা আমার এখনকার মায়ের সঙ্গে একদমই মেলে না।
আমার মা নিজকে অবহেলা করে দীর্ঘ রোগশোকের পরে ক্যানসার আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি কখনও বাবাকে ডাক্তার দেখানোর কথা বলতেন না। তার যে স্তনে ক্যান্সার হয়েছে তিনি নিজে বুঝতে পেরেও গোপন করেছেন। যখন আমরা জানতে পেরেছি অনেক দেরি হয়ে গেছে। তিনি কখনও বাবার বাড়িও যেতে চাইতেন না। শেষ সময়েও বাবা, আমরা সেধেছিলাম, মা রাজি হননি।
মায়ের একটি সুটকেস ছিল যেটা মা কখনও কাউকে ধরতে দেননি। আমরা অনেকবারই জিজ্ঞেস করেছি কিন্তু মা এড়িয়ে গেছেন। বলেছেন ওটার মধ্যে তার কি কি দরকারি কাগজ। বাবাও বলেছেন, থাক্ তোদের মা যখন দেখাতে চায় না দেখবি না। অনধিকার ভাল না। তার মানে বিষয়টি বাবা জানতেন।
আমাদের বাড়িটি ছিল দেড়তলা। ঠিক দোতলা না, একতলা বাড়ির উপরে অর্ধেক মাচান। সেখানে ইচ্ছা করলে থাকাও যায়। আবার অর্ধেক জায়গায় আমরা কিছু জিনিসপত্র রেখে দিয়েছি। মায়ের সুটকেসটি ছিল ওখানে।
মায়ের মৃত্যুর তিন চার বছর পরে আমাদের বাড়িটি ডেপলপারের কাছে দেয়া হবে সিদ্ধান্ত হয়েছে। কি মনে করে আমি উপরে উঠে ধুলোপড়া সুটকেসটি খুলেছি। সুটকেসের ভিতরে মায়ের অল্প বয়সের দুই বেণী করা সাদা-কালো কিছু ছবি, কয়েকটি চিঠি, চিঠিগুলো খুব বেশি বড় না, অল্প ছোট ছোট লেখা। সুটকেসের সবচেয়ে নীচে একটি খামে ভরা একজন যুবকের বিভিন্ন বয়সের– সদ্য যুবক হয়ে ওঠা, পরিণত যুবকের কয়েকটি ছবি। খুব সুন্দর পরিপাটি, বিশ্বাস করবেন কিনা জানিনা দেখতে অনেকটাই উত্তম কুমারের মতো।
চিঠিগুলো মা পোস্ট করেননি। লিখে নিজের কাছেই রেখে দিয়েছেন। তার মধ্যে একটি চিঠি,
প্রিয় প্রিয় প্রিয় শাহেদ
——————————
‘তুমি আমাকে নিতে আসলে না কেন স্টেশনে। আমি শীতের রাতে সারারাত স্টেশনে বসে ছিলাম তুমি আসবে বলে। রাত সাড়ে দশটার ট্রেনে তোমার আসবার কথা ছিল। এরপরে যে কত ট্রেন আসলো গেলো! তুমি আসলে না। অনেক রকমের দুশ্চিন্তাই হচ্ছিল। ভোর রাতে আমাদের গ্রামের স্কুল মাস্টার আমাকে স্টেশনে দেখে বাড়িতে ফেরত নিয়ে যায়। সম্ভবত বাবাই পাঠিয়েছিলেন। আমি বাড়ি যাবার পর আমাকে বড় ভাইয়েরা ও বাবা খুব মেরেছে। আমাকে ঘরে আটকে রাখা হতো, পড়াশুনা বন্ধ। গ্রামে খবর পৌঁছে গেছে আমি সারারাত বাইরে ছিলাম। আলোচনা শুনছি আমাকে মামার বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হবে। ওখানে থেকে আমার বিয়ে হবে। তুমি তাড়াতাড়ি আসো। আমাকে এসে নিয়ে যাও। তুমি আসো।’
আরও ছোট ছোট লেখা তার মধ্যে বেশিরভাগই আকুতি,
‘আমার অন্য জায়গায় বিয়ে হবে।’
‘আমার শরীর ঘিনঘিন করবে।’
‘বড় ভাইয়া খবর নিয়েছে তুমি যৌতুক নিয়ে অন্য জায়গায় বিয়ে করবে।’
‘তুমি এমন করলে কেন। ‘
‘তুমি আসো। আমাকে নিয়ে যাও।’
‘আমার দোষ হলে আমাকে মাফ করে দাও। শাস্তি দাও। তবুও আমাকে নাও।’ ইত্যাদি ছোট ছোট লেখা যার একটিও পোস্ট করা হয়নি। শেষের ছবিটার উপরে রক্ত শুকিয়ে যাওয়া ছাপ এবং আমি মায়ের হাতে কয়েকটি কাটা দাগ দেখেছি।
সুটকেসটি ধরে আমি অনেক্ষণ কাঁদলাম। সুটকেসের উপরে হাত বুলিয়ে আদর করলাম। একজন মানুষ আরেকজনকে এতো ভালবাসতে পারে! মায়ের কবর জেয়ারত করলাম। কবরের কাছে অনেক্ষণ কেঁদেছি। সেই মূহুর্তে আমার একটি উপলব্ধি হয়েছে, বাবার প্রতি সম্মান আরও বেড়ে গেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স পাশ করে বিভিন্ন যায়গায় চাকরির ইন্টারভিউ দিচ্ছি, পেপার দেখে দেখে। হঠাৎ চোখে পড়লো ‘শাহেদ গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ’। বিরাট ধনী, বহুমুখী ব্যবসা।
মালিক এ কে শাহেদ চৌধুরী। বয়স হওয়া সত্বেও দাঁড়ি গোফ রাখা সত্বেও মুখটি আমার খুব পরিচিত লাগছে। দাড়ি ছাড়া কল্পনা করে দেখলাম আমার কেন এতো পরিচিত লাগছে! কৌতুহলবশত আমার মনে হলো ওই লোকটিই। ওই শাহেদ। যা যা চেয়েছে যোগ্যতা থাকায় আমি আবেদন করলাম। আমার ইন্টারভিউ চিঠি এসেছে। বাবাকে সালাম করে দোয়া নিলাম ‘বাবা দোয়া কর আমার এই চাকরিটা যেন হয়।’ ইন্টারভিউ বোর্ডে আমি তার সামনাসামনি বসলাম। সেই চেহারা, সেই দৃষ্টি। খোঁজ নিয়ে জেনেছি সেই লোক। আমাকে তাদের পছন্দ হয়েছে। আশ্বাস দিয়েছে কয়েকদিন পরই আমার জয়েনিং লেটার পৌঁছে যাবে। আমার অপেক্ষার প্রহর যেন আর শেষ হয় না। আমার অস্থিরতা বাড়ছে।
আজ সেই দিন। এক সপ্তাহ পর আমার জয়েনিং লেটার এসেছে। প্রথম দিন অফিস করেছি খুব অস্বস্তির মধ্যে। লোকটির আমি মুখোমুখিই হতে পারছি না। দ্বিতীয় দিনও তাই। আমি ঠিক করলাম আমি এই চাকরি ছেড়ে দেবো।আমি রিজাইন লেটার নিয়ে তার রুমে গিয়ে পরিচয় দিতে তিনি অপরাধি চেহারায় নড়েচড়ে বসলেন। আমি জিজ্ঞেস করেছি কেন আপনি আমার মায়ের সাথে এমন করলেন! কেন একজন মানুষকে এরকম তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিলেন? আপনি কি জানেন আপনি অপরাধি? এরপরে তিনি আমার সাথে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু আমি আর করিনি।
বাসায় এসে আমি বাবাকে বললাম চল বাবা, আজ তোমাকে নিয়ে সারাদিন ঘুরবো আর তোমাকে একটি পাঞ্জাবী কিনে দেবো আর মায়ের কবর জেয়ারত করবো। বাবা বললেন, বেতন পেয়ে নে আগে? বললাম বেতন পেতে হবে না। বেতনে কি যায় আসে। আজ সারাদিন আমরা দুজন শিশুদের মতো আইসক্রিম খাব, হাওয়াই মিঠাই খাব, পার্কে বসে গল্প করবো। বাবা অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন।
চাকরি ছেড়ে ভাল লাগছে এই কারণে যে, আমি ঘৃণার জায়গায় ঘৃণা করতে পেরেছি। আমি তার দিকে ঘৃণার দৃষ্টি ছুড়েছি।
………….
……………….
#রম্য
সালেহা খাতুনের ভীষণ মন খারাপ। তার ছেলের বউটা একদম তার মন মতো হয়নি। সে ঘুম থেকে ওঠে দেরিতে, ঘরের কোনো কাজ করতে চায় না, সারাদিন শুয়ে শুয়ে কেবল ফেসবুক চালায় আর ফেসবুকে নিজের অনলাইন শপের প্রমোশন করে বেড়ায়। দেখে-শুনে সালেহা খাতুন একদম অতিষ্ঠ হয়ে গেলেন।
তিনি অনেক চেষ্টা করেছেন বউকে বোঝানোর, কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। ছেলেকে বলেও কোনো লাভ হয় না, ছেলেটা হয়েছে একদম ভেড়া, বউয়ের সামনে উঁচু গলায় কথা বলতে পারে না। এ অবস্থায় সবচেয়ে কাজে লাগতো যে মানুষটিকে, তিনি আজ দশ বছর হলো ওপারে পাড়ি দিয়েছেন। নইলে তার হুংকারে বউটার সোজা হতে দু’মিনিটও লাগতো না। প্রচন্ড বিরক্তি নিয়েই সালেহা খাতুন দিনাতিপাত করতে লাগলেন।
কিন্তু একদিন হঠাৎ করে তিনি আবিষ্কার করলেন, তার বউটা একদম পাল্টে গেছে। সে সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে সব কাজ নিজের হাতে করে শেষ করে রাখছে, সালেহা খাতুনের কিছু বলা লাগছে না। তিনি ঘুম থেকে উঠেই দেখছেন সব কাজ সারা। তার বাসায় যে ছুটা বুয়াটি প্রতিদিন এসে কাজ করে যায়, সে এই কয়দিন কোনো কাজ না পেয়ে বাড়ির ওয়াইফাই দিয়ে ইমোতে তার বয়ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলে সময় পার করে দিলো। শেষমেষ ছুটা বুয়াটিকে বাদই দিলেন তিনি।
শুধু কাজকর্মের বেলাতেই নয়, সালেহা খাতুনের মন জোগাতেও বউটা সারাদিন ব্যস্ত। ‘কি খাবেন মা’, ‘কি পরবেন মা’, ‘কি করবো মা’ করে করে বউটা তাকে অস্থির করে ফেলছে। মনে মনে ভীষণ খুশি হলেন সালেহা খাতুন- যাক, বউটা তবে এতোদিনে লাইনে এসেছে।
তবে শুধু সালেহা খাতুন নন, তার ছেলে সৌমিকও বউয়ের এই পাল্টে যাওয়াটা খেয়াল করে। যে শম্পা রাতে তাকে কাছে ঘেঁষতে দিতো না, সে এখন আদরে আদরে তাকে অস্থির করে ফেলে। ‘মানুষ মরে গেলে পচে যায়, বেঁচে থাকলে বদলায়’- এই আপ্তবাক্য অনুসরণ করে বউ পাল্টে গেছে, এটা ধরেই সে আর ব্যাপারটা নিয়ে বেশি ভাবলো না।
এর মাঝেই একদিন সালেহা খাতুন বসে টিভি দেখছেন, তার পাশে শম্পা। রিমোটটা তিনি ভুলে খাবার টেবিলে রেখে এসেছিলেন, শম্পাকে সেই রিমোট আনতে বললেই সে হাত ইয়া লম্বা করে রিমোটটা নিয়ে এলো। দেখে, সালেহা খাতুন ভয়ে কাঁপতে লাগলেন।
কিন্তু তিনি একটু বুদ্ধিমান কি না, ভয় যে পেয়েছেন বউকে বুঝতে দিলেন না। সন্ধ্যাবেলায় সৌমিক বাসায় ফিরে কলিংবেল দেয়ার আগেই তিনি দরজা খুলে সৌমিককে ডেকে নিয়ে গেলেন ভেতরে। এরপর বললেন, ‘তোকে একটা জিনিস দেখাবো।’
বলেই তিনি ছেলেকে নিয়ে লুকিয়ে রান্নাঘরের দিকে গেলেন। রান্নাঘরে শম্পা রান্না করছিলো, মা-ছেলে সবিস্ময়ে এবং সভয়ে দেখলো, শম্পা দুহাতে দেয়ালে ভর দিয়ে দু’পা চুলার নিচে দিয়ে রেখেছে। পায়ে দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে, আর সে আগুনেই রান্না হচ্ছে খাবার।
রুমে এসে সৌমিককে সালেহা খাতুন বললেন, ‘দেখলি?’
‘হু।’
‘কি করবি এবার?’
‘মা, দাদি একটা গল্প করতেন না, আমাদের এলাকার মাথায় শ্যাওড়া গাছে একটা শাকচুন্নি আছে, সেটা সুযোগ পেলেই বাড়ির বউদের লুকিয়ে সে বাড়ির বউ সেজে গিয়ে ঘর-সংসার করে? আমার মনে হয় এটা ঐ শাকচুন্নি। শম্পাকে কোথাও লুকিয়ে রেখে তার রুপ ধরে এসেছে।’
‘এখন কি করবো?’
‘আমার এক বন্ধু একবার ভূত তাড়াতে ওঝা বাবা এজেন্সির নাম্বার দিয়েছিলো। ওদের একবার ফোন করি দাঁড়াও।’
কিন্তু ফোনটা হাতে নিয়েও সৌমিক ফোন দিলো না। সালেহা বললেন, ‘কি হলো?’
‘মা, ফোন দেয়া কি খুব দরকার? শাকচুন্নি হোক আর যাই হোক, আমাদের তো উপকারই করছে।’
‘হ্যাঁ, ঠিকই বলেছিস। কি সুন্দর গুছিয়ে সব কাজ করছে। আর এত্তো ভদ্র ব্যবহার! আজ-কালকের মেয়েদের মধ্যে তো এসব দেখাই যায় না।’
‘ঠিক তাই। দেখো, তোমার এখন বুয়া লাগছে না। আবার গ্যাস ইউজ না করে পায়ে আগুন জ্বালিয়েই রান্না করছে। গ্যাসের খরচটাও বাঁচছে আমাদের। আরো কতো চমৎকার কি করতে পারে ও কে জানে।’
সালেহা খাতুন হঠাৎ ছেলের হাত ধরে বললেন, ‘বাবা, তাহলে ফোন দিস না এখন ওঝাকে। আরো কয়েকদিন দেখি।’
সেসময়ই শম্পা এসে দরজার সামনে দাঁড়ালো। জিজ্ঞেস করলো, ‘মা-ছেলে মিলে কি ফুসুরফুসুর করো?’
সৌমিক হেসে বললো, ‘মাকে বলছিলাম, তোমাকে দেখতো ভীষণ সুন্দর লাগছে আজকে। আই লাভ ইউ, বউ।’ বলেই শম্পার গালে চকাস করে চুমু খেয়ে ফেললো সে।
শম্পা লজ্জায় লাল হয়ে বললো, ‘যাহ, দুষ্টু। মায়ের সামনে এমন কেউ করে?’
বউ আর ছেলের কাণ্ড দেখে সালেহা খাতুনও মুচকি মুচকি হাসতে লাগলেন।
(শেষ)
#একটি_আধুনিক_শাকচুন্নির_গল্প
লেখা- সোয়েব বাশার